দর্শনীয় স্থান Archives - Proggapan https://proggapan.com/category/interest_place/ Notice | Job Circular News In Bangladesh Sat, 26 Feb 2022 08:25:49 +0000 en-US hourly 1 https://wordpress.org/?v=6.5.3 https://proggapan.com/wp-content/uploads/2022/01/favicon.ico দর্শনীয় স্থান Archives - Proggapan https://proggapan.com/category/interest_place/ 32 32 টিলাগাঁও ইকো ভিলেজ কমলগঞ্জ, তথ্য ও অবস্থান | Tilagaon Eco Village Kamalganj https://proggapan.com/%e0%a6%9f%e0%a6%bf%e0%a6%b2%e0%a6%be%e0%a6%97%e0%a6%be%e0%a6%81%e0%a6%93-%e0%a6%87%e0%a6%95%e0%a7%8b-%e0%a6%ad%e0%a6%bf%e0%a6%b2%e0%a7%87%e0%a6%9c-%e0%a6%95%e0%a6%ae%e0%a6%b2%e0%a6%97%e0%a6%9e/ https://proggapan.com/%e0%a6%9f%e0%a6%bf%e0%a6%b2%e0%a6%be%e0%a6%97%e0%a6%be%e0%a6%81%e0%a6%93-%e0%a6%87%e0%a6%95%e0%a7%8b-%e0%a6%ad%e0%a6%bf%e0%a6%b2%e0%a7%87%e0%a6%9c-%e0%a6%95%e0%a6%ae%e0%a6%b2%e0%a6%97%e0%a6%9e/#respond Fri, 25 Feb 2022 16:25:48 +0000 https://proggapan.com/?p=3214 টিলাগাঁও ইকো ভিলেজ চায়ের রাজধানী খ্যাত মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়নের টিলাগাও গ্রামে অবস্থাতিত। Tilagaon Eco Village Kamalganj, প্রাকৃতিক ছন, বাঁশ, কাঠ ও মাটির সাথে আধুনিকতার ছোঁয়ায় সুউচ্চ টিলার বুকে নির্মান করা হয়েছে ইকো কটেজ। দূর থেকে অথবা পাখির চোঁখে দেখলে মনে হবে গভীর অরেণ্যের মধ্যে কোন আদিবাসী সম্প্রদায়ের পল্লী। টিলাগাঁও ইকো ভিলেজটি নির্মান […]

The post টিলাগাঁও ইকো ভিলেজ কমলগঞ্জ, তথ্য ও অবস্থান | Tilagaon Eco Village Kamalganj appeared first on Proggapan.

]]>
টিলাগাঁও ইকো ভিলেজ চায়ের রাজধানী খ্যাত মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়নের টিলাগাও গ্রামে অবস্থাতিত। Tilagaon Eco Village Kamalganj, প্রাকৃতিক ছন, বাঁশ, কাঠ ও মাটির সাথে আধুনিকতার ছোঁয়ায় সুউচ্চ টিলার বুকে নির্মান করা হয়েছে ইকো কটেজ। দূর থেকে অথবা পাখির চোঁখে দেখলে মনে হবে গভীর অরেণ্যের মধ্যে কোন আদিবাসী সম্প্রদায়ের পল্লী।

টিলাগাঁও ইকো ভিলেজ কমলগঞ্জ, মৌলভীবাজার
টিলাগাঁও ইকো ভিলেজ কমলগঞ্জ, মৌলভীবাজার

টিলাগাঁও ইকো ভিলেজটি নির্মান করা হয়েছে উপরে ছন ও চৌদিক মাটি দিয়ে । মাটির এমন কুঁড়ে ঘর দেখে হয়তো মনে হবে ভুল করে চলে এসেছেন আফ্রিকার কোন আদিবাসী গ্রামে। কিন্তু না, এটি আফ্রিকা বা কোন আদিবাসী পল্লী নয়। এটি একটি পরিবেশ বান্ধব পল্লী যার নাম টিলাগাঁও ইকো ভিলেজ। মূলত আফ্রিকার আদিবাসীদের ঘরের আদলে ইকো কটেজটি তৈরি করা হয়েছে।

টিলাগাঁও ইকো ভিলেজটি কেনো এভাবে বানানো হয়েছে:

টিলাগাঁও ইকো ভিলেজটি মূলত, ইট পাটকেলের নগরীর চার দেয়ালে বসবাস করা নগরকেন্দ্রিক মানুষের গ্রামের অনুভূতি দিতেই এমন উদ্যোগ। শহরের অনেকেই কখনো গ্রাম বা গ্রামীণ জনপদের সাথে পরিচিত নয়। আবার অনেকেই আধুনিক ও যান্ত্রিক বেড়াজাল থেকে একটু স্বস্তি পেতে খোঁজেন প্রাকৃতিক পরিবেশ, সেখানে সাময়িক আবাস করে নিতে চান প্রকৃতির স্বাদ।

টিলাগাঁও ইকো ভিলেজের আশপাশে আর কি কি দৃষ্টিনন্দন যায়গা আছে:

টিলাগাঁও ইকো ভিলেজে বসেই সারিবদ্ধ দৃষ্টি নন্দন চা বাগান, সুউঁচু টিলা, গ্রামীণ জনপদ ও জীবনযাত্রা উপলব্ধি করতে পারবেন। ইকো ভিলেজটি প্রকৃতি প্রেমিক ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে একটি আর্দশ স্থান।

টিলাগাঁও ইকো ভিলেজের অবস্থান কোথায়:

টিলাগাঁও ইকো ভিলেজটির অবস্থান মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়নের টিলাগাঁও গ্রামে। ঢাকা থেকে ২০৬ কিলোমিটার ও শ্রীমঙ্গল উপজেলা থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে কমলগঞ্জ থানায় টিলাগাঁও ইকো ভিলেজ এর অবস্থান।।

টিলাগাঁও ইকো ভিলেজে নিবাসমূল্য কত:

টিলাগাঁও ইকো ভিলেজটিতে রয়েছে পরিবেশ বান্ধব পাঁচটি কটেজ, যার নিবাস মূল্য ২৭০০ টাকা থেকে ৩২০০ টাকার মধ্যে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ট্যুর গ্রুপ বিডি সাথে যোগাযোগ করেই পরিবেশ বান্ধব ইকো কটেজে পরিবেশের সাথে রাত্রি যাপন করতে পারেন।
কলাম তথ্য সংগ্রাহকঃ সাংবাদিক মোঃ আহাদ মিয়া

Tilagaon Eco Village Kamalganj দেখতে কিভাবে যাবেন:

টিলাগাঁও ইকো ভিলেজ দেখতে ঢাকা থেকে কমলগঞ্জ ভানুগাছ ট্রেন হচ্ছে সবচেয়ে ভাল মাধ্যম। ঢাকা থেকে ট্রেনে করে কমলগঞ্জ ভানুগাছ রেল স্টেশনে যেতে কমলাপুর কিংবা বিমান বন্দর রেলওয়ে স্টেশান হতে উপবন, জয়ন্তিকা, পারাবত অথবা কালনী এক্সপ্রেস ট্রেনকে বেছে নিতে পারেন আপনার ভ্রমণ সঙ্গী হিসাবে। শ্রেণী ভেদে জনপ্রতি ট্রেনে যেতে ভাড়া ২৪০ থেকে ৫৫২ টাকা। ট্রেনে যেতে সময় লাগে পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা।

বাসে করে ঢাকা থেকে শ্রীমঙ্গল হয়ে কমলগঞ্জ ভানুগাছ যেতে ফকিরাপুল অথবা সায়দাবাদ থেকে ৪৭০ থেকে ৬০০ টাকা ভাড়ায় হানিফ এন্টারপ্রাইজ, শ্যামলী পরিবহন, সিলেট এক্সপ্রেস, এনা ইত্যাদি এসি/নন এসি বাস পাওয়া যায়। বাসে যেতে সময় লাগে ৪ ঘন্টার মত।

চট্টগ্রাম থেকে বাসে বা ট্রেনে শ্রীমঙ্গল কিংবা কমলগঞ্জ ভানুগাছ যেতে পারবেন। চট্টগ্রাম থেকে ট্রেনে শ্রীমঙ্গল যেতে, পাহাড়িকা এবং উদয়ন এক্সপ্রেস নামের দুটি ট্রেন সপ্তাহে ৬ দিন চলাচল করে। ট্রেন ভাড়া ক্লাস অনুযায়ী ৩০০ থেকে ৬৮৫ টাকা।

শ্রীমঙ্গল পৌঁছে সেখান থেকে আপনার চাহিদা অনুযায়ী কোন গাড়ি নিয়ে যেতে পারবেন কমলগঞ্জ ভানুগাছ টিলাগাঁও ইকো ভিলেজ । ইজিবাইক/সিএনজি/জীপ/মাইক্রোবাস যে কোন কিছুতেই যাওয়া যায়। যাওয়া আসা ও সেখানে ঘুরে বেড়ানোর সময়সহ রিজার্ভ নিলে সিএনজি ৪০০-৫০০ টাকা নিবে।

টিলাগাঁও ইকো ভিলেজ এক দিনের ভ্রমণ পরিকল্পনা:

টিলাগাঁও ইকো ভিলেজ ঘুরে দেখার জন্যে হয়ত ২-৪ ঘন্টা সময়ই যথেষ্ট মনে হতে পারে। বাকি সময় চাইলে ঘুরে দেখতে পারবেন শ্রীমঙ্গ্‌ল কমলগঞ্জ এর আশেপাশের অন্যান্য দর্শনীয় স্থান। তারমধ্যে লাউয়াছড়া, মাধবপুর লেক, বাংলাদেশ চা গবেষনা ইনস্টিটিউট, সীতেশ বাবুর চিড়িয়াখানা, নীলকন্ঠ চা কেবিন, বাইক্কাবিল ও সুন্দর সুন্দর চা বাগানগুলো। আপনার সময় এবং আগ্রহ অনুযায়ী সাজিয়ে নিতে পারেন পরিকল্পনা। এক দিনে ঘুরে দেখার জন্যে আপনি একটি সিএনজি রিজার্ভ করে নিতে পারেন। চা বাগানের ভিতর সুন্দর করে সাজানো মাধবপুর লেক দেখার জন্যে সকাল বা বিকেলের সময়টাই ভালো। সকালে ভোরে চলে যান মাধবপুর লেক, সেখান ঘন্টাখানেক সময় ঘুরে দেখার পর দপুরের আগেই চলে আসেন লাউয়্যাছড়া উদ্যানে। আপনার পছন্দমত ট্রেইলে ঘুরে ফিরে যেতে পারেন শ্রীমঙ্গল শহরে। দুপুরের খাওয়া দাওয়া পর্ব শেষ করে বিকেলে চলে যান বাংলাদেশ চা গবেষনা ইনস্টিটিউটে, বিকেল ৫টার আগেই বের হয়ে পড়ুন সেখান থেকে, তারপর চলে যান বিখ্যাত সাত রঙের চায়ের দোকান নীলকন্ঠ চা কেবিনে। সন্ধ্যায় চা খেয়ে আবার চলে আসুন শ্রীমঙ্গলে। সারাদিনের জন্যে সিএনজি রিজার্ভ নিবে ১২০০-১৫০০ টাকা। তবে ঠিক করার আগে অবশ্যই কোথায় যাবেন, কতক্ষণ থাকবেন, কি দেখবেন এইসব ভালো করে আলাপ করে নিন।

টিলাগাঁও ইকো ভিলেজ দেখার পর খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা কিভাবে করবেন:

টিলাগাঁও ইকো ভিলেজ দেখার পর খাওয়াদাওয়ার জন্য টিলাগাঁও ইকো ভিলেজের আশে পাশে খাবারের তেমন কোন ব্যবস্থা নেই তাই প্রয়োজনে নিজ দায়িত্বে কিছু হালকা খাবার সাথে নিতে পারেন। এছাড়াও কমলগঞ্জ ভানুগাছ বাজারে দু একটা ভালো খাবারের হোটেল আছে তার মধ্যে অন্যতম, ফুড সাফারি, পানাহার হোটেল। এছাড়াও শ্রীমঙ্গল ফিরে খেতে পারবেন। নানা ধরণের রেস্তোরা আছে। আছে সবার প্রিয় পানশী রেস্টুরেন্ট। ভর্তা ভাজিসহ নানা পদের খাবার খেতে পারবেন ১০০-৫০০ টাকায়।

আশপাশে আর কোথায় থাকতে পারবেন:

টিলাগাঁও ইকো ভিলেজটি দেখার পর কমলগঞ্জ থাকার জন্য তেমন কোনো ভাল হোটেল নেই। গ্রামের বাড়ি নামের একটা থাকার হোটেল আছে, হীড বাংলাদেশ নামক এনজিও এর হোটেল আছে । এছাড়া শ্রীমঙ্গলে থাকার জন্যে রয়েছে বেশ কিছু সুন্দর মনোরম রিসোর্ট। আছে চা বাগান ঘেঁষা অনেক কটেজ ও সরকারি বেসরকারি গেস্ট হাউজ। শ্রীমঙ্গল শহরেও রয়েছে বিভিন্ন মানের হোটেল। আপনার চাহিদা মত যে কোন জায়গায় থাকতে পারবেন। লাউয়াছড়ার খুব কাছে গ্রান্ড সুলতান গলফ রিসোর্ট নামে পাঁচ তারকা মানের রিসোর্ট রয়েছে। চা বাগান ঘেঁষা ও সুন্দর পরিবেশের রিসোর্ট গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ।

টি রিসোর্ট ও মিউজিয়াম : বাংলাদেশ টি বোর্ডের অধীনে এই রিসোর্ট শ্রীমঙ্গল – ভানুগাছা রোডের পাশে অবস্থিত, বাংলো ধরণের প্রতিটি কটেজে ৪-৮ জন থাকা যাবে। প্রতি রাতের ভাড়া ৫,০০০ – ৮,০০০ টাকা। যোগাযোগঃ 01749-014306 , ওয়েবসাইট

নভেম ইকো রিসোর্ট : অবস্থানঃ বিশামনি, রাধানগর, শ্রীমঙ্গল। আধুনিক সুযোগ সুবিধা তো দৃষ্টিনন্দন নানা কটেজ রয়েছে। মাটির ঘর, কাঠের ঘর, ফ্যামিলি ভিলা, তাবুতে থাকার ব্যবস্থা আছে। প্রতিরাত ২-৮ জন থাকার জন্যে মান অনুযায়ী ভাড়া ৮,০০০ – ১৭৫০০ টাকা। যোগাযোগঃ 01709 882000ওয়েবসাইট

নিসর্গ ইকো কটেজ : এই কটেজ শ্রীমঙ্গল – ভানুগাছা রোডের পাশে অবস্থিত, গ্রামীন আবহে তৈরি কটেজ গুলোতে ৩-৫ জন থাকার ব্যবস্থা সহ ভাড়া প্রতি রাত ২০০০-৩৫০০ টাকা। যোগাযোগঃ 01766-557780ওয়েবসাইট

নিসর্গ লিচিবাড়ি কটেজ : এই কটেজ শ্রীমঙ্গল – ভানুগাছা রোডের পাশে অবস্থিত, গ্রামীন আবহে তৈরি কটেজ গুলোতে ৩-৮ জন থাকার ব্যবস্থা সহ ভাড়া প্রতি রাত ২০০০-৪৫০০ টাকা। যোগাযোগঃ 01766-557780ওয়েবসাইট

লেমন গার্ডেন রিসোর্ট : লাউয়াছড়া উদ্যানের পাশেই এই রিসোর্টে ইকোনমি, ডিলাক্স, লাক্সারি, সুইট মানের রুম ভাড়া ৩,০০০ – ৮,০০০ টাকা। যোগাযোগঃ 01763555000ওয়েবসাইট

শান্তি বাড়ি রিসোর্ট : শ্রীমঙ্গল – ভানুগাছা রোড ধরে লাউয়াছড়ার আগে একটু ভিতরের দিকের এই রিসোর্টে আছে নানা ধরণের কটেজ। এই নাম্বারে যোগাযোগ করে বিস্তারিত জেনে নিন 01716189288ওয়েবসাইট

সিজন ও উপলক্ষ্য অনুযায়ী উপরোক্ত রিসোর্ট ও কটেজ গুলোর ভাড়া পরিবর্তন হতে পারে। বিভিন্ন সময় অনেক রকম ডিসকাউন্ট থাকে। কোথায় থাকবেন ঠিক করার আগে তাদের সাথে কথা বলে নিবেন, প্রয়োজনে ভাড়ার ক্ষেত্রে একটু দরদাম করে নিবেন। এছাড়া আরও কম খরচে শ্রীমঙ্গল থাকতে চাইলে শহরে নানা মানের হোটেল আছে, একটু খুঁজে দেখলেই পেয়ে যাবেন আপনার মন মত হোটেল।

ভ্রমণের সময় যেসব বিষয় মনে রাখবেন:

  • ইকো ভিলেজের যেখানে সেখানে ময়লা ফেলবেন না এতে বনের জীব বৈচিত্রের উপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে পারে।
  • খুব বেশি হৈ চৈ করবেন না এতে বন্য প্রানীদের স্বাভাবিক চলাফেরা ব্যহত হয়।
  • শীতকাল ছাড়া অন্য সময়ে ভ্রমণের ক্ষেত্রে জোঁক ও সাপের থেকে সতর্ক থাকুন।
  • অপরিচিত কারো সাথে একা একা বনের গভীরে যাবেন না এতে আপনি ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারেন
  • কম খরচে ভ্রমণ করতে চাইলে রিজার্ভ গাড়ি না করে শ্রীমঙ্গল-ভানুগাছ রোডের লোকাল সিএনজি অথবা বাস দিয়ে যাতায়াত করতে পারেন।

আরও পড়ুনঃ

এছাড়াও আপনারা আমাদের সাইটে জানতে পারবেন নিত্য নতুন নিয়োগ, সরকারি চাকরি, বেসরকারি চাকরি, বিজ্ঞপ্তি, শিক্ষা নিউজ, তথ্য, আইন , দর্শনীয় স্থান ইত্যাদি । সবার আগে এসব সম্পর্কে জানতে আমাদের ফেসবুক পেইজটি লাইক দিয়ে আমাদের সাথে থাকুন।

The post টিলাগাঁও ইকো ভিলেজ কমলগঞ্জ, তথ্য ও অবস্থান | Tilagaon Eco Village Kamalganj appeared first on Proggapan.

]]>
https://proggapan.com/%e0%a6%9f%e0%a6%bf%e0%a6%b2%e0%a6%be%e0%a6%97%e0%a6%be%e0%a6%81%e0%a6%93-%e0%a6%87%e0%a6%95%e0%a7%8b-%e0%a6%ad%e0%a6%bf%e0%a6%b2%e0%a7%87%e0%a6%9c-%e0%a6%95%e0%a6%ae%e0%a6%b2%e0%a6%97%e0%a6%9e/feed/ 0
আফ্রিকান টিকওক গাছ, লাউয়াছড়া- কমলগঞ্জ তথ্য ও বিবরণ | African Teak Oak Tree Lawachara kamalgonj https://proggapan.com/%e0%a6%86%e0%a6%ab%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%bf%e0%a6%95%e0%a6%be%e0%a6%a8-%e0%a6%9f%e0%a6%bf%e0%a6%95%e0%a6%93%e0%a6%95-%e0%a6%97%e0%a6%be%e0%a6%9b-%e0%a6%b2%e0%a6%be%e0%a6%89%e0%a7%9f%e0%a6%be/ https://proggapan.com/%e0%a6%86%e0%a6%ab%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%bf%e0%a6%95%e0%a6%be%e0%a6%a8-%e0%a6%9f%e0%a6%bf%e0%a6%95%e0%a6%93%e0%a6%95-%e0%a6%97%e0%a6%be%e0%a6%9b-%e0%a6%b2%e0%a6%be%e0%a6%89%e0%a7%9f%e0%a6%be/#respond Mon, 21 Feb 2022 16:32:25 +0000 https://proggapan.com/?p=3072 আফ্রিকান টিকওক গাছ, লাউয়াছড়া- কমলগঞ্জ তথ্য ও বিবরণ | African Teak Oak Tree Lawachara kamalgonj . বাংলাদেশের একমাত্র বিরল উদ্ভিদ আফ্রিকান টিকটক গাছটির লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে অবস্থান। উদ্ভিদটির বৈজ্ঞানিক নাম ক্লোরোফরা chlorophora spp এবং বাংলা নাম আফ্রিকান টিকওক গাছ। আফ্রিকান টিকওক গাছ, লাউয়াছড়া- কমলগঞ্জ আফ্রিকান টিকওক গাছ, লাউয়াছড়ায়। মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে ১৬৭ […]

The post আফ্রিকান টিকওক গাছ, লাউয়াছড়া- কমলগঞ্জ তথ্য ও বিবরণ | African Teak Oak Tree Lawachara kamalgonj appeared first on Proggapan.

]]>
আফ্রিকান টিকওক গাছ, লাউয়াছড়া- কমলগঞ্জ তথ্য ও বিবরণ | African Teak Oak Tree Lawachara kamalgonj . বাংলাদেশের একমাত্র বিরল উদ্ভিদ আফ্রিকান টিকটক গাছটির লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে অবস্থান। উদ্ভিদটির বৈজ্ঞানিক নাম ক্লোরোফরা chlorophora spp এবং বাংলা নাম আফ্রিকান টিকওক গাছ।

আফ্রিকান টিকওক গাছ, লাউয়াছড়া- কমলগঞ্জ

আফ্রিকান টিকওক গাছ, লাউয়াছড়া- কমলগঞ্জ

আফ্রিকান টিকওক গাছ, লাউয়াছড়ায়। মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে ১৬৭ প্রজাতির উদ্ভিদ এর মধ্যে দুটি বিরল প্রজাতির আফ্রিকান টিকওক গাছের সন্ধান মিললো। এর মধ্যে প্রায় ১৫ বছর পৃর্বে বড় আকৃতির আফ্রিকান টিকওক গাছটি ঝড়ে পরে যায়। বর্তমানে লাউয়াছড়া উদ্যানের প্রধান প্রবেশ পথে জীবিত আছে একটি আফ্রিকান টিকওক গাছ। , যা বাংলাদেশের একমাত্র বিরল উদ্ভিদ।

আফ্রিকান টিকওক গাছগুলো কত বছরের পুরোনো?

আফ্রিকান টিকওক গাছটি জানা যায় প্রায় শত বছরের পুরনো। কয়েকশত ফুট উপরে ডালপালা মেলে দাড়িয়ে আছে কালের সাক্ষী হয়ে আফ্রিকান টিকওক গাছটি। বিরল উদ্ভিদ আফ্রিকান টিকওক গাছটি সম্পর্কে সঠিক তথ্য পাওয়া না গেলেও ধারনা করা হচ্ছে- কোন ব্রিটিশ নাগরিক উদ্ভিদটিকে লাউয়াছড়া বনে রোপণ করেছিলেন।

লাউয়াছড়া উদ্যানটির উৎপত্তি কবে হয়?

লাউয়াছড়া উদ্যানটি মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম ভানুগাছ রির্জাব ফরেষ্টের ২৭৪০ হেক্টর সংরক্ষিত বনের ১২৫০ হেক্টরকে বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ সংশোধন আইন ১৯৭৪ অনুযায়ী ১৯৯৬ সালে লাউয়াছড়া বনটিকে জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ব্রিটিশ সময়ে লাউয়াছড়া প্রাকৃতিক বনের অধিকাংশ গাছ কেটে কৃত্রিম ভাবে চাপালিশ, সেগুন, গর্জন, লোহাকাট, রক্তন সহ বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদ রোপন করা হয়। ধারনা করা হচ্ছে তখনকার সময়েই এই আফ্রিকান টিকওক উদ্ভিদটি রোপণ করা হয়েছে। উদ্যানের ইকো ট্যুরিষ্ট গাইড মোঃ ইউসুফ মিয়া জানান লাউয়াছড়া ভ্রমণে আসা আগত দর্শনার্থীরা বিরল প্রজাতির উদ্ভিদ আফ্রিকান টিকওক গাছটি সম্পর্কে পরিচয় করিয়ে দেয়। আমরা ইকো ট্যুরিষ্ট গাইডরা গাছটি সম্পর্কে কোন বিশেষ প্রশিক্ষণ পাইনি। বন বিভাগের কাছ থেকে যা শিখেছি তাই পর্যটকদের বলি। বিরল উদ্ভিদ আফ্রিকান টিকওক গাছটি সম্পর্কে বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক শ্যামল কান্তি মিত্র বলেন, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে আফ্রিকান টিকওক প্রজাতির ২ টি গাছ ছিলো। একটি মারা গেছে। বর্তমানে একটি জীবিত রয়েছে। যা দেশের একমাত্র বিরল উদ্ভিদ। বন বিভাগের সিলভিকালচার টিচার্স বিভাগ সূত্রে জানা যায় গাছটি থেকে কোন বংশবিস্তার হচ্ছে না। কারন এই গাছের কোন বিচি নেই। ফুল ধরে আবার ঝড়ে পরে যায়। তবে কয়েক বছর পৃর্বে গাছ থেকে কাটিং সংগ্রহ করা হয়েছে।
কলাম ও তথ্য সংগ্রাহকঃ আহাদ মিয়া সাংবাদিক ও পরিবেশ কর্মী

African Teak Oak Tree Lawachara kamalgonj

আফ্রিকান টিকওক গাছগুলো দেখতে লাউয়াছড়া কিভাবে যাবেনঃ গাছগুলো দেখতে ঢাকা থেকে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে যেতে ট্রেন হচ্ছে সবচেয়ে ভাল মাধ্যম। ঢাকা থেকে ট্রেনে করে শ্রীমঙ্গল যেতে কমলাপুর কিংবা বিমান বন্দর রেলওয়ে স্টেশান হতে উপবন, জয়ন্তিকা, পারাবত অথবা কালনী এক্সপ্রেস ট্রেনকে বেছে নিতে পারেন আপনার ভ্রমণ সঙ্গী হিসাবে। শ্রেণী ভেদে জনপ্রতি ট্রেনে যেতে ভাড়া ২৪০ থেকে ৫৫২ টাকা। ট্রেনে যেতে সময় লাগে পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা।

বাসে করে ঢাকা থেকে শ্রীমঙ্গল যেতে ফকিরাপুল অথবা সায়দাবাদ থেকে ৪৭০ থেকে ৬০০ টাকা ভাড়ায় হানিফ এন্টারপ্রাইজ, শ্যামলী পরিবহন, সিলেট এক্সপ্রেস, এনা ইত্যাদি এসি/নন এসি বাস পাওয়া যায়। বাসে যেতে সময় লাগে ৪ ঘন্টার মত।

চট্টগ্রাম থেকে বাসে বা ট্রেনে শ্রীমঙ্গল যেতে পারবেন। চট্টগ্রাম থেকে ট্রেনে শ্রীমঙ্গল যেতে, পাহাড়িকা এবং উদয়ন এক্সপ্রেস নামের দুটি ট্রেন সপ্তাহে ৬ দিন চলাচল করে। ট্রেন ভাড়া ক্লাস অনুযায়ী ৩০০ থেকে ৬৮৫ টাকা।

শ্রীমঙ্গল পৌঁছে সেখান থেকে আপনার চাহিদা অনুযায়ী কোন গাড়ি নিয়ে যেতে পারবেন লাউয়াছড়া উদ্যানে। ইজিবাইক/সিএনজি/জীপ/মাইক্রোবাস যে কোন কিছুতেই যাওয়া যায়। যাওয়া আসা ও সেখানে ঘুরে বেড়ানোর সময়সহ রিজার্ভ নিলে সিএনজি ৪০০-৫০০ টাকা নিবে।

লাউয়াছড়ায় প্রবেশে টিকেট মূল্য কত?

আফ্রিকান টিকওক গাছটি দেখতে হলেঃ লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে ছাত্র ও অপ্রাপ্ত বয়স্কদের জন্যে প্রবেশ মূল্য ২০ টাকা (জনপ্রতি), প্রাপ্ত বয়স্ক পর্যটক (দেশী) এর প্রবেশ মূল্য ৫০ টাকা। আর বিদেশী পর্যটকদের ক্ষেত্রে প্রবেশ মূল্য ৫০০ টাকা। গাড়ি, জীপ ও মাইক্রোবাস পার্কিং এর জন্য আপনাকে গুনতে হবে ২৫ টাকা। যদি গাইড নিতে চান তবে এখানে তিন ক্যাটাগরির গাইড পাওয়া যায় যাদের ২০০ থেকে ৬০০ টাকা মধ্যে সাথে নিতে পারবেন।

লাউয়াছড়ায় এক দিনের ভ্রমণ পরিকল্পনা

আফ্রিকান টিকওক গাছটি দেখার জন্যঃ লাউয়াছড়া ঘুরে দেখার জন্যে হয়ত ২-৪ ঘন্টা সময়ই যথেষ্ট মনে হতে পারে। বাকি সময় চাইলে ঘুরে দেখতে পারবেন শ্রীমঙ্গল এর আশেপাশের অন্যান্য দর্শনীয় স্থান। তারমধ্যে মাধবপুর লেক, বাংলাদেশ চা গবেষনা ইনস্টিটিউট, সীতেশ বাবুর চিড়িয়াখানা, নীলকন্ঠ চা কেবিন, বাইক্কাবিল ও সুন্দর সুন্দর চা বাগানগুলো। আপনার সময় এবং আগ্রহ অনুযায়ী সাজিয়ে নিতে পারেন পরিকল্পনা। এক দিনে ঘুরে দেখার জন্যে আপনি একটি সিএনজি রিজার্ভ করে নিতে পারেন। চা বাগানের ভিতর সুন্দর করে সাজানো মাধবপুর লেক দেখার জন্যে সকাল বা বিকেলের সময়টাই ভালো। সকালে ভোরে চলে যান মাধবপুর লেক, সেখান ঘন্টাখানেক সময় ঘুরে দেখার পর দপুরের আগেই চলে আসেন লাউয়্যাছড়া উদ্যানে। আপনার পছন্দমত ট্রেইলে ঘুরে ফিরে যেতে পারেন শ্রীমঙ্গল শহরে। দুপুরের খাওয়া দাওয়া পর্ব শেষ করে বিকেলে চলে যান বাংলাদেশ চা গবেষনা ইনস্টিটিউটে, বিকেল ৫টার আগেই বের হয়ে পড়ুন সেখান থেকে, তারপর চলে যান বিখ্যাত সাত রঙের চায়ের দোকান নীলকন্ঠ চা কেবিনে। সন্ধ্যায় চা খেয়ে আবার চলে আসুন শ্রীমঙ্গলে। সারাদিনের জন্যে সিএনজি রিজার্ভ নিবে ১২০০-১৫০০ টাকা। তবে ঠিক করার আগে অবশ্যই কোথায় যাবেন, কতক্ষণ থাকবেন, কি দেখবেন এইসব ভালো করে আলাপ করে নিন।

লাউয়াছড়ায় খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা কিভাবে করবেন

আফ্রিকান টিকওক গাছটি দেখার পর খাওয়াদাওয়ার জন্যঃ লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে ভিতরে কিংবা আশে পাশে খাবারের তেমন কোন ব্যবস্থা নেই তাই প্রয়োজনে নিজ দায়িত্বে কিছু হালকা খাবার সাথে নিতে পারেন। এছাড়া শ্রীমঙ্গল ফিরে খেতে হবে। নানা ধরণের রেস্তোরা আছে। আছে সবার প্রিয় পানশী রেস্টুরেন্ট। ভর্তা ভাজিসহ নানা পদের খাবার খেতে পারবেন ১০০-৫০০ টাকায়।

লাউয়াছড়ায় কোথায় থাকবেন

আফ্রিকান টিকওক গাছটি দেখার পরঃ শ্রীমঙ্গলে থাকার জন্যে রয়েছে বেশ কিছু সুন্দর মনোরম রিসোর্ট। আছে চা বাগান ঘেঁষা অনেক কটেজ ও সরকারি বেসরকারি গেস্ট হাউজ। শ্রীমঙ্গল শহরেও রয়েছে বিভিন্ন মানের হোটেল। আপনার চাহিদা মত যে কোন জায়গায় থাকতে পারবেন। লাউয়াছড়ার খুব কাছে গ্রান্ড সুলতান গলফ রিসোর্ট নামে পাঁচ তারকা মানের রিসোর্ট রয়েছে। চা বাগান ঘেঁষা ও সুন্দর পরিবেশের রিসোর্ট গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য –

টি রিসোর্ট ও মিউজিয়াম : বাংলাদেশ টি বোর্ডের অধীনে এই রিসোর্ট শ্রীমঙ্গল – ভানুগাছা রোডের পাশে অবস্থিত, বাংলো ধরণের প্রতিটি কটেজে ৪-৮ জন থাকা যাবে। প্রতি রাতের ভাড়া ৫,০০০ – ৮,০০০ টাকা। যোগাযোগঃ 01749-014306 , ওয়েবসাইট

নভেম ইকো রিসোর্ট : অবস্থানঃ বিশামনি, রাধানগর, শ্রীমঙ্গল। আধুনিক সুযোগ সুবিধা তো দৃষ্টিনন্দন নানা কটেজ রয়েছে। মাটির ঘর, কাঠের ঘর, ফ্যামিলি ভিলা, তাবুতে থাকার ব্যবস্থা আছে। প্রতিরাত ২-৮ জন থাকার জন্যে মান অনুযায়ী ভাড়া ৮,০০০ – ১৭৫০০ টাকা। যোগাযোগঃ 01709 882000ওয়েবসাইট

নিসর্গ ইকো কটেজ : এই কটেজ শ্রীমঙ্গল – ভানুগাছা রোডের পাশে অবস্থিত, গ্রামীন আবহে তৈরি কটেজ গুলোতে ৩-৫ জন থাকার ব্যবস্থা সহ ভাড়া প্রতি রাত ২০০০-৩৫০০ টাকা। যোগাযোগঃ 01766-557780ওয়েবসাইট

নিসর্গ লিচিবাড়ি কটেজ : এই কটেজ শ্রীমঙ্গল – ভানুগাছা রোডের পাশে অবস্থিত, গ্রামীন আবহে তৈরি কটেজ গুলোতে ৩-৮ জন থাকার ব্যবস্থা সহ ভাড়া প্রতি রাত ২০০০-৪৫০০ টাকা। যোগাযোগঃ 01766-557780ওয়েবসাইট

লেমন গার্ডেন রিসোর্ট : লাউয়াছড়া উদ্যানের পাশেই এই রিসোর্টে ইকোনমি, ডিলাক্স, লাক্সারি, সুইট মানের রুম ভাড়া ৩,০০০ – ৮,০০০ টাকা। যোগাযোগঃ 01763555000ওয়েবসাইট

শান্তি বাড়ি রিসোর্ট : শ্রীমঙ্গল – ভানুগাছা রোড ধরে লাউয়াছড়ার আগে একটু ভিতরের দিকের এই রিসোর্টে আছে নানা ধরণের কটেজ। এই নাম্বারে যোগাযোগ করে বিস্তারিত জেনে নিন 01716189288ওয়েবসাইট

সিজন ও উপলক্ষ্য অনুযায়ী উপরোক্ত রিসোর্ট ও কটেজ গুলোর ভাড়া পরিবর্তন হতে পারে। বিভিন্ন সময় অনেক রকম ডিসকাউন্ট থাকে। কোথায় থাকবেন ঠিক করার আগে তাদের সাথে কথা বলে নিবেন, প্রয়োজনে ভাড়ার ক্ষেত্রে একটু দরদাম করে নিবেন। এছাড়া আরও কম খরচে শ্রীমঙ্গল থাকতে চাইলে শহরে নানা মানের হোটেল আছে, একটু খুঁজে দেখলেই পেয়ে যাবেন আপনার মন মত হোটেল।

লাউয়াছড়ায় উদ্যানে ভ্রমণের সময় যেসব বিষয় মনে রাখবেন

  • বনের যেখানে সেখানে ময়লা ফেলবেন না এতে বনের জীব বৈচিত্রের উপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে পারে।
  • খুব বেশি হৈ চৈ করবেন না এতে বন্য প্রানীদের স্বাভাবিক চলাফেরা ব্যহত হয়।
  • শীতকাল ছাড়া অন্য সময়ে ভ্রমণের ক্ষেত্রে জোঁক ও সাপের থেকে সতর্ক থাকুন।
  • অপরিচিত কারো সাথে একা একা বনের গভীরে যাবেন না এতে আপনি ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারেন।
  • রেললাইন ধরে হাটার সময় ট্রেনের ব্যাপারে সতর্ক থাকুন।
  • কম খরচে ভ্রমণ করতে চাইলে রিজার্ভ গাড়ি না করে শ্রীমঙ্গল-ভানুগাছ রোডের লোকাল সিএনজি অথবা বাস দিয়ে যাতায়াত করতে পারেন।

এছাড়াও আপনারা আমাদের সাইটে জানতে পারবেন নিত্য নতুন নিয়োগ, সরকারি চাকরি, বেসরকারি চাকরি, বিজ্ঞপ্তি, শিক্ষা নিউজ, তথ্য, আইন , দর্শনীয় স্থান ইত্যাদি । সবার আগে এসব সম্পর্কে জানতে আমাদের ফেসবুক পেইজটি লাইক দিয়ে আমাদের সাথে থাকুন।

The post আফ্রিকান টিকওক গাছ, লাউয়াছড়া- কমলগঞ্জ তথ্য ও বিবরণ | African Teak Oak Tree Lawachara kamalgonj appeared first on Proggapan.

]]>
https://proggapan.com/%e0%a6%86%e0%a6%ab%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%bf%e0%a6%95%e0%a6%be%e0%a6%a8-%e0%a6%9f%e0%a6%bf%e0%a6%95%e0%a6%93%e0%a6%95-%e0%a6%97%e0%a6%be%e0%a6%9b-%e0%a6%b2%e0%a6%be%e0%a6%89%e0%a7%9f%e0%a6%be/feed/ 0
আড়াপাড়া জমিদার বাড়ি ঢাকা | Arapara Zamindar Bari Dhaka https://proggapan.com/%e0%a6%86%e0%a6%a1%e0%a6%bc%e0%a6%be%e0%a6%aa%e0%a6%be%e0%a6%a1%e0%a6%bc%e0%a6%be-%e0%a6%9c%e0%a6%ae%e0%a6%bf%e0%a6%a6%e0%a6%be%e0%a6%b0-%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%a1%e0%a6%bc%e0%a6%bf-%e0%a6%a2/ https://proggapan.com/%e0%a6%86%e0%a6%a1%e0%a6%bc%e0%a6%be%e0%a6%aa%e0%a6%be%e0%a6%a1%e0%a6%bc%e0%a6%be-%e0%a6%9c%e0%a6%ae%e0%a6%bf%e0%a6%a6%e0%a6%be%e0%a6%b0-%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%a1%e0%a6%bc%e0%a6%bf-%e0%a6%a2/#respond Tue, 08 Feb 2022 15:47:46 +0000 https://proggapan.com/?p=2509 আড়াপাড়া জমিদার বাড়ি ঢাকা | Arapara Zamindar Bari Dhaka. ঢাকার সাভার উপজেলা সবার কাছেই বেশ পরিচিত। কেননা এই উপজেলাতেই রয়েছে জাতীয় স্মৃতিসৌধ। এবং এখানে একটি নামি বিশ্ববিদ্যালয় আছে, যার নাম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। আর এই উপজেলাতেই রয়েছে ঐতিহ্যবাহী এক জমিদার বাড়ি। এই জমিদার বাড়িটির নাম হচ্ছে আড়াপাড়া জমিদার বাড়ি। তবে অনেকেই এই জমিদার বাড়ি সম্পর্কে জানেন না। অর্থাৎ এই জমিদার বাড়িটি তেমন পরিচিত না।  আড়াপাড়া জমিদার বাড়ি […]

The post আড়াপাড়া জমিদার বাড়ি ঢাকা | Arapara Zamindar Bari Dhaka appeared first on Proggapan.

]]>
আড়াপাড়া জমিদার বাড়ি ঢাকা | Arapara Zamindar Bari Dhaka. ঢাকার সাভার উপজেলা সবার কাছেই বেশ পরিচিত। কেননা এই উপজেলাতেই রয়েছে জাতীয় স্মৃতিসৌধ। এবং এখানে একটি নামি বিশ্ববিদ্যালয় আছে, যার নাম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। আর এই উপজেলাতেই রয়েছে ঐতিহ্যবাহী এক জমিদার বাড়ি। এই জমিদার বাড়িটির নাম হচ্ছে আড়াপাড়া জমিদার বাড়ি। তবে অনেকেই এই জমিদার বাড়ি সম্পর্কে জানেন না। অর্থাৎ এই জমিদার বাড়িটি তেমন পরিচিত না। 

আড়াপাড়া জমিদার বাড়ি ঢাকা

আড়াপাড়া জমিদার বাড়ির ইতিহাস: প্রায় একশত সতেরো বছর আগে সাভার উপজেলার আড়াপাড়া নামক জায়গা এই জমিদার বাড়িটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এখানে দুটি প্রাসাদ নির্মাণ করা হয়েছিল। একটি করা হয়েছিল ১৯০০ সালে। পরবর্তীতে আবার আরেকটি ১৯৩৭ সালে করা হয়েছিল। মূল প্রাসাদটিতে লেখা রয়েছে রাই শশী নিবাস।  আর পরবর্তীতে যে প্রাসাদ তৈরি করা হয়েছিল সেটিতে লেখা রয়েছে রাই নিকেতন। আর একদম উপরে লেখা রয়েছে RM House যা ইংরেজি অক্ষরে লেখা।  এই প্রাসাদগুলোর প্রবেশ পথে রয়েছে সিংহের মূর্তি এবং দুটি নারী মূর্তি, যা পাথর দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল। এবং জমিদার বাড়ির প্রবেশ পথে আরো রয়েছে সবুজ পানা পুকুর ও মন্দির।

আড়াপাড়া জমিদার বাড়ি গেলে কি কি দেখতে পাবে

আড়াপাড়া জমিদার বাড়িতে ঢোকার পথে প্রথমেই চোখে পড়বে হাজামজা একটা সবুজ পানা পুকুর এটি রাধামন্দিরের । অন্যান্য রাধামন্দিরের  চেয়ে এই মন্দির বেশ বড়।মন্দিরের পাশেই রয়েছে কাঠের তৈরী দোলনা ।ফাল্গুনে পূর্ণিমা তিথিতে রাধা-কৃষ্ণকে এই দোলনায় দোল খাওয়ানো হয়।

আড়াপাড়া জমিদার বাড়ির মন্দির থেকে বের হয়ে ডানে কালীমন্দির এবং আরেকটু ডানে গেলে পড়বে জমিদারবাড়ির সিংহদ্বার ।আড়াপাড়া জমিদার বাড়ির ডানের মূল পিলারের নিচে চোয়াল ভাঙা একটা সিংহ এবং বাঁ পিলারের সঙ্গী সিংহটি নেই

সিংহদ্বার থেকে একটা গলি রাস্তা গিয়ে থেমেছে জমিদারবাড়ির মূল প্রবেশপথে। সেখানে রয়েছে পাথরের দুইটি নারী মূর্তি।

মূল প্রবেশপথের দুই পাশে বারান্দাযুক্ত রুমের বাড়তি অংশ ।বারান্দায় রয়েছে চমৎকার লোহার কারুকাজ । প্রবেশ অংশ পার হয়ে মূল বাড়ির মাঝে খালি অংশ, উঠান। তারপর মূল ভবন। পাশে অপেক্ষাকৃত নতুন আরো একটা বর্ধিত ভবন। সিমেন্টে খোদাই করা নেমপ্লেট অনুসারে সিংহদরজার সোজাসুজি ‘রাই শশী নিবাস’-এর নির্মাণকাল বাংলা ১৩০৭ অনুযায়ী ইংরেজি ১৯০০ ।

আড়াপাড়া জমিদার কত বছর পুরনো

আড়াপাড়া জমিদার প্রায় ১১৯ বছরের পুরনো ।সিঁড়ির দুই পাশেও দুটি ভাস্কর্য। পাশের ভবনের দেয়ালে ‘রাই নিকেতন’ লেখা এই যুগের নেমপ্লেট, সাল ১৩৪৪ বঙ্গাব্দ। মানে প্রায় ৭৮ বছর আগের। আর বিল্ডিংয়ে একেবারে ওপরে ইংরেজিতে শুধু লেখা ‘আরএম হাউস’ ।চারদিকে বারান্দা ঘেরা বাড়িটির মাঝে খোলা জায়গা। একই রকম দুটি অংশ ।দুই পাশে দুটি চমৎকার সিঁড়ি।

Arapara Zamindar Bari Dhaka

আড়াপাড়া জমিদার বাড়ির বর্তমান অবস্থা: এই জমিদার বাড়িটি বর্তমান সময়ে অযত্ন ও অবহেলার কারণে প্রাসাদের দেয়ালগুলোর ভাঙ্গণ ধরেছে। এবং যে ভাস্কর্য বা মূর্তি ছিল সেগুলোও প্রায় ধ্বংসের মুখে। এই জমিদার বাড়িটিতে কিছু হিন্দু পরিবার বসবাস করে। 

আড়াপাড়া জমিদার বাড়ি কিভাবে যাবেন

সাভার বাসস্ট্যান্ড ফুট ওভারব্রিজের পশ্চিম পাশ থেকে ব্যাটারিচালিত অটোগুলো যায় সাভার বাজার। সঙ্গে কিছু অটো যায় আড়াপাড়ার পাশ দিয়ে পোড়াবাড়ী। ১০ টাকা ভাড়ায় ওই অটোতে উঠে আড়াপাড়া নেমে একটু হেঁটে পৌঁছানো যাবে আড়াপাড়া জমিদারবাড়ি। রিকশায় গেলে ভাড়া পড়বে ২৫-৩০ টাকা।

আরও পড়ুন:

এছাড়াও আপনারা আমাদের সাইটে জানতে পারবেন নিত্য নতুন নিয়োগ, সরকারি চাকরি, বেসরকারি চাকরি, বিজ্ঞপ্তি, শিক্ষা নিউজ, তথ্য, আইন , দর্শনীয় স্থান ইত্যাদি । সবার আগে এসব সম্পর্কে জানতে আমাদের ফেসবুক পেইজটি লাইক দিয়ে আমাদের সাথে থাকুন।

The post আড়াপাড়া জমিদার বাড়ি ঢাকা | Arapara Zamindar Bari Dhaka appeared first on Proggapan.

]]>
https://proggapan.com/%e0%a6%86%e0%a6%a1%e0%a6%bc%e0%a6%be%e0%a6%aa%e0%a6%be%e0%a6%a1%e0%a6%bc%e0%a6%be-%e0%a6%9c%e0%a6%ae%e0%a6%bf%e0%a6%a6%e0%a6%be%e0%a6%b0-%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%a1%e0%a6%bc%e0%a6%bf-%e0%a6%a2/feed/ 0
ওসমানী জাদুঘর সিলেট | Osmani Museum Sylhet https://proggapan.com/%e0%a6%93%e0%a6%b8%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a6%a8%e0%a7%80-%e0%a6%9c%e0%a6%be%e0%a6%a6%e0%a7%81%e0%a6%98%e0%a6%b0-%e0%a6%b8%e0%a6%bf%e0%a6%b2%e0%a7%87%e0%a6%9f-osmani-museum-sylhet/ https://proggapan.com/%e0%a6%93%e0%a6%b8%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a6%a8%e0%a7%80-%e0%a6%9c%e0%a6%be%e0%a6%a6%e0%a7%81%e0%a6%98%e0%a6%b0-%e0%a6%b8%e0%a6%bf%e0%a6%b2%e0%a7%87%e0%a6%9f-osmani-museum-sylhet/#respond Thu, 03 Feb 2022 14:57:56 +0000 https://proggapan.com/?p=2265 ওসমানী জাদুঘর সিলেট | Osmani Museum Sylhet. ওসমানী জাদুঘর হচ্ছে বাংলাদেশের সিলেট জেলার কোতোয়ালী থানায় অবস্থিত একটি জাদুঘর। বাংলাদেশ সামরিক বাহিনীর সর্বাধিনায়ক (১২ এপ্রিল ১৯৭১– ৭ এপ্রিল ১৯৭২) বঙ্গবীর জেনারেল মুহাম্মদ আতাউল গনি ওসমানীর পৈতৃক নিবাস থেকে পরিবর্তন করে বর্তমান ওসমানী জাদুঘরে স্থানান্তর করা হয়। এটি সিলেটের ধোপা দিঘীর পাড় এলাকায় অবস্থিত। ওসমানী জাদুঘর সিলেট অবস্থান এবং বিবরণ: ওসমানী জাদুঘরের প্রবেশপথ। ওসমানী জাদুঘর সিলেট ওসমানী […]

The post ওসমানী জাদুঘর সিলেট | Osmani Museum Sylhet appeared first on Proggapan.

]]>
ওসমানী জাদুঘর সিলেট | Osmani Museum Sylhet. ওসমানী জাদুঘর হচ্ছে বাংলাদেশের সিলেট জেলার কোতোয়ালী থানায় অবস্থিত একটি জাদুঘর। বাংলাদেশ সামরিক বাহিনীর সর্বাধিনায়ক (১২ এপ্রিল ১৯৭১– ৭ এপ্রিল ১৯৭২) বঙ্গবীর জেনারেল মুহাম্মদ আতাউল গনি ওসমানীর পৈতৃক নিবাস থেকে পরিবর্তন করে বর্তমান ওসমানী জাদুঘরে স্থানান্তর করা হয়। এটি সিলেটের ধোপা দিঘীর পাড় এলাকায় অবস্থিত।

ওসমানী জাদুঘর সিলেট

অবস্থান এবং বিবরণ: ওসমানী জাদুঘরের প্রবেশপথ। ওসমানী জাদুঘর সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে এবং সিলেট রেলওয়ে স্টেশন থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বাংলাদেশের মহান মুক্তিযোদ্ধা এম এ জি ওসমানীর অসামান্য অবদানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর কর্তৃক এই জাদুঘরটি রক্ষণাবেক্ষণ এবং পরিচালিত হয়। এই জাদুঘর নতুন প্রজন্মের জন্য নিঃসন্দেহে উদ্দীপনার উৎস হয়ে কাজ করবে। এই জাদুঘরের ভিত্তি প্রস্তর ১৯৮৫ সালের ১৬ই ফেব্রুয়ারি স্থাপন করা হয় এবং ৪ মার্চ ১৯৮৭ সালে তৎকালীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ কর্তৃক উদ্বোধন করা হয়।

ওসমানী জাদুঘর এর নূর মঞ্জিল

নূর মঞ্জিল হচ্ছে পাশের এবং কিছু কক্ষ সমেত টিনের-চালার একটি বিশাল ভবন যার সামনে একটি বারান্দা রয়েছে। জাদুঘরে পৌঁছানোর জন্য প্রধান গেট থেকে মাত্র কয়েক মিটার হাঁটতে হয়। প্রবেশকক্ষে দর্শনার্থীদের অভ্যর্থনা জানাতে জেনারেলের বিপুল প্রতিকৃতি রয়েছে। অথিতিদের স্বাগত জানানোর জন্য অভ্যর্থনাকারীরা রয়েছেন। অভ্যর্থনা কক্ষে একজন দর্শনার্থীদের নাম এবং ঠিকানা লিখায় নিয়োজিত থাকেন। প্রবেশকক্ষে বসার জন্য একটি মানানসই জায়গাও রয়েছে। ঐতিহাসিক এই জাদুঘরটিতে তিনটি গ্যালারী আছে, যেখানে জেনারেল ওসমানীর ব্যক্তিগত জিনিসপত্র এবং উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ঐতিহাসিক আলোকচিত্র সংরক্ষিত করে রাখা হয়েছে। ভবনের পশ্চিম এবং পূর্ব উভয় পাশে দুটি ছোট্ট কক্ষ বিদ্যমান, যেখানে সহকারী রক্ষক এবং তত্ত্বাবধায়কের কামরা অবস্থিত।

ওসমানী জাদুঘর এর গ্যালারী ১

সম্পূর্ণ কক্ষটি নানান ধরনের শোপিস দিয়ে শয়নকক্ষের মতো করে সাজানো হয়েছে। বেতের তৈরি ৪ টি চেয়ার এবং দুটি কেন্দ্রীয়-টেবিল, একটি সাধারণ ওয়ারড্রব এবং উভয় দিকে টেবিল সহ একটি কাঠের পালঙ্ক রয়েছে। জেনারেল ওসমানীর হাতঘড়ি, যা তিনি মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত পড়েছেন; সামরিক লাঠি, দুটি ব্রিফক্যাস, একটি টেলিফোন সেট, কিছু সংখ্যক বইপত্র এবং ব্যবহৃত মাটির বাসনপত্র একপাশে রয়েছে। অন্যপাশে একটি আলনা, যেটাতে দুটি স্যুট, দুটি ইউনিফিরম (খাকি এবং গাঁড় সবুজ), দুটি শার্ট (সাদা এবং ঈষৎ নীল), দুটি পাঞ্জাবী, বাদামী হাতাসহ একটি কোট, চার জোড়া জুতা যার মধ্যে একজোড়া হচ্ছে মিলিটারি বুট, একটি কালো ছাতা এবং পিঙ্গলবর্ণের সুসজ্জিত চলার লাঠি দিয়ে কক্ষটি সাজানো। একটি চক্রাকার টেবিল এবং কাঠের বইয়ের-তাক আছে যেটাতে “হোজ হো ইন দ্য ওয়ার্ল্ড” (সংস্করণ: ১৯৭৮–১৯৭৯ এবং ১৯৮০–১৯৮১) সহ দেশি বিদেশি বই ও ম্যাগাজিন এক কোণায় রয়েছে। ওসমানীর অতিপ্রিয় পিতার কোলে ছবি সহ দেয়ালে একজন মানবসম প্রতিকৃতি রয়েছে এমনকি প্রদর্শনের জন্য অনেক আলোকচিত্রও রয়েছে।

ওসমানী জাদুঘর এর গ্যালারী ২

বসার কক্ষের মতো করে সাজানো কক্ষে রয়েছে, বেতনির্মিত কিছু আসবাবপত্র, যেমন– চারটি ১-আসন বিশিষ্ট, একটি ৩-আসন বিশিষ্ট এবং একটি ২-আসন বিশিষ্ট চেয়ার, একটি কেন্দ্রীয় টেবিল, দুটি পার্শ্ব টেবিল ইত্যাদি। বহু মূল্যবান এবং ঐতিহাসিক জিনিসপত্র সমেত তিনটি সোকেস রয়েছে। এর প্রথমটিতে জেনারেলের ব্যাজসমূহ, পদক, পদমর্যাদা ক্রম এবং জেনারেল ওসমানীর পাসপোর্ট রয়েছে। দ্বিতীয়টিতে স্মারকচিহ্ন, স্মরণিকা এবং ক্রেস্টসমূহ রয়েছে। এবং তৃতীয় সোকেসে বহুসংখ্যক প্রমাণপত্রাদি প্রদর্শন করা হয়, যেগুলোর মধ্যে স্বাধীনতা পুরস্কার-১৯৮৫ এবং এর নিমন্ত্রণ পত্র, একই সাথে পুরস্কার বিজেতার সংক্ষিপ্ত জীবনীও রয়েছে। একটি কার্ডে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর অটোগ্রাফ সংবলিত খাম রয়েছে যা তিনি জেনারেল ওসমানীর কাছে প্রেরণ করেছিলেন। আটটি বিশাল চিত্রকর্ম উপরের দেয়ালে টাঙানো আছে। কক্ষটির দেয়ালে অনেক ঐতিহাসিক ছবিও রয়েছে। সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু হল; ১৯৭২ সালে সিলেট বিমানবন্দরে অবতরণের পর, জেনারেল ওসমানী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশে প্রত্যাবর্তনের পর আগমন উপলক্ষে ১০ মার্চ ১৯৭২ সালে সেনাবাহিনী কর্তৃক আয়োজিত সম্মান প্রদর্শন অনুষ্ঠানে দর্শকদের সামনে বক্তৃতা দিচ্ছেন, জেনারেল ওসমানী বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডারদের সাথে, মুজিবনগর সরকারের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের সাথে, বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর সাথে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সাথে,বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদের সাথে, ১৯৮১ সালে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট কেন্দ্রে শহীদ পরিবারের সাথে ইত্যাদি।

ওসমানী জাদুঘর এর গ্যালারী ৩

কালো বর্ণের একটি পড়ার টেবিল এবং চেয়ার, পালঙ্ক, নামাযের চৌকি, জায়নামাজ, নামাযের টুপি ইত্যাদি প্রদর্শনের জন্য নিখুঁতভাবে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। অন্যান্য যেসব জিনিসপত্র আছে তার মধ্যে- একটি কৃষ্ণকায় আলমারি, একটি ফ্রিজ, ছয়টি চেয়ার সহ একটি খাবার-টেবিল, প্রাচীন চীনামাটির বাসনকোসন এবং অন্যান্য জিনিস উল্লেখযোগ্য। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে জেনারেলের ব্যবহৃত বাংলাদেশের অপারেশনাল মানচিত্রও (স্কেল ১: ২,৫০,০০) প্রদর্শনের জন্য এই কামরায় রাখা হয়েছে, যেখানে সভ্য সমাজ কর্তৃক উপস্থাপিত বহু প্রমাণপত্রাদিও রয়েছে।

ওসমানী জাদুঘর  সম্পর্কিত তথ্য

ওসমানী জাদুঘর শুধুমাত্র বৃহস্পতিবার ছাড়া বাকি দিনগুলোতে খোলা থাকে। রবি থেকে বুধবার পর্যন্ত এটি সকাল ১০ঃ৩০ থেকে বিকাল ৫ঃ৩০ পর্যন্ত খোলা থাকে। শুক্র এবং শনিবার এটি বিকাল ৩ঃ৩০ থেকে ৫ঃ৩০ পর্যন্ত খোলা থাকে। জাদুঘর কর্তৃপক্ষ এম এ জি ওসমানীর জন্মদিন (১লা সেপ্টেম্বর) এবং মৃত্যুবার্ষিকী (১৬ ফেব্রুয়ারি) উদ্‌যাপন করে থাকে, এর পাশাপাশি জাদুঘর প্রাঙ্গণে বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস (২৬শে মার্চ) এবং বিজয় দিবস (১৬ই ডিসেম্বর) পালন করা হয়।

ওসমানী জাদুঘর এর বিশেষত্ব

বঙ্গবীর জেনারেল মুহাম্মাদ আতাউল গনি ওসমানীর পৈতৃক নিবাস “নূর মঞ্জিল”-কে বর্তমানে ‘ওসমানী জাদুঘর’ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। ১৯৮৫ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি এই জাদুঘরটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয় এবং বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদ ১৯৮৭ সালের ৪ মার্চ এর উদ্বোধন করেন।

‘নুর মঞ্জিল’ কয়েকটি কক্ষ সমৃদ্ধ একটি টিনশেড ভবন যার সামনে রয়েছে একটি চমৎকার চত্বর। জাদুঘরে পৌছাতে হলে মূল ফটক থেকে কয়েক মিটার পথ অতিক্রম করতে হয়। জাদুঘরে ঢোকার মুখেই জেনারেল ওসমানীর একটি বিশাল প্রতিকৃতি আছে। অভ্যর্থনা কক্ষে রক্ষিত রেজিস্টারে নাম ও ঠিকানা লিপিবদ্ধ করতে হয়। জাদুঘরটির তিনটি চিত্রশালাতে জেনারেল ওসমানীর ব্যবহার করা জিনিসপত্র ছাড়াও বেশকিছু ঐতিহাসিক ছবি যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা হয়েছে। জাদুঘর ভবনের পশ্চিম এবং পূর্ব প্রান্তে জাদুঘরের তত্ত্বাবধায়ক এবং সহযোগী তত্ত্বাবধায়কের কক্ষ অবস্থিত।

বৃহস্পতিবার ব্যাতিত সপ্তাহের অন্যান্য সবদিন এই জাদুঘরটি খোলা থাকে। এই জাদুঘরটি দুপুর ৩:৩০ মিনিট থেকে বিকাল ৫:৩০ মিনিট পর্যন্ত খোলা থাকে। জাদুঘরটি পরিদর্শনের জন্য দর্শনার্থীদের পূর্বে কোন প্রবেশ মূল্য দিতে হতো না; বর্তমানে ২০ টাকা দিতে হয়। জাদুঘরের পক্ষ থেকে জেনারেল এম এ জি ওসমানীর জন্মদিবস (১ সেপ্টেম্বর), মৃত্যুদিবস (১৬ ফেব্রুয়ারি), স্বাধীনতা দিবস (২৬ মার্চ) এবং বিজয় দিবস (১৬ ডিসেম্বর) পালন করা হয়ে থাকে।

ওসমানী জাদুঘরে স্থলপথে কীভাবে যাবেন

সড়কপথে ঢাকা হতে প্রথমে সিলেট যেতে হবে; অতঃপর সেখান থেকে জাদুঘরটিতে যেতে হবে। ঢাকা হতে সড়কপথে সিলেটের দূরত্ব ২৪১ কিলোমিটার এবং রেলপথে ঢাকা হতে সিলেট রেল স্টেশনের দূরত্ব ৩১৯ কিলোমিটার। সিলেট এসে সেখান থেকে রিক্সা বা সিএনজি অটো রিক্সায় অতি সহজেই নাইওর পুল আসা যায়।

  • সিলেটের মূল বাস স্ট্যান্ড কদমতলী বাস টার্মিনাল অথবা রেল স্টেশন থেকে নাইওর পুলস্থ জাদুঘরটিতে আসার জন্য ভাড়া হবেঃ
    • রিক্সায় – ৩০/- – ৫০/-;
    • সিএনজিতে – ৮০/- – ১২০/-।

ওসমানী জাদুঘরে সড়কপথে কীভাবে যাবেন

ঢাকার সায়েদাবাদ বাস স্টেশন থেকে সিলেটে আসার সরাসরি দুরপাল্লার এসি ও নন-এসি বাস সার্ভিস আছে; এগুলোতে সময় লাগে ৪.৩০ হতে ৬ ঘণ্টা। ঢাকা থেকে সিলেটের উদ্দেশ্যে আল-মোবারাকা সোহাগ, হানিফ, শ্যামলী, এনা, ইউনিক, মামুন, সাউদিয়া, গ্রীনলাইন, মিতালি প্রভৃতি পরিবহন কোম্পানীর বাস আছে প্রতি ১০ মিনিট পর পর।

  • সোহাগ পরিবহন: ☎ ০২-৯৩৩১৬০০ (ফকিরাপুল), ৯১৩২৩৬০ (কমলাপুর), ৯১৩২৩৬০ (কল্যাণপুর), ৭১০০৪২২ (আরমবাগ), ০৮২১-৭২২২৯৯ (সোবাহানীঘাট, সিলেট);
  • আল-মোবারকা পরিবহন: ☎ ০২-৭৫৫৩৪৮৩, ০৪৪৭৭৮০৩৪২২, মোবাইল: +৮৮০১৭২০-৫৫৬১১৬, +৮৮০১৮১৯-১৮৩৬১১, +৮৮০১৭১৫-৮৮৭৫৬৬;
  • গ্রীন লাইন পরিবহন: ☎ ০২-৭১৯১৯০০ (ফকিরাপুল), +৮৮০১৭৩০-০৬০০৮০ (কল্যাণপুর), ০৮২১-৭২০১৬১ (সোবাহানীঘাট, সিলেট);
  • হানিফ এন্টারপ্রাইজ: মোবাইল +৮৮০১৭১৩-৪০২৬৬১ (কল্যাণপুর), +৮৮০১৭১১৯২২৪১৩ (কদমতলী বাসস্ট্যান্ড, সিলেট);
  • শ্যামলী পরিবহন: ☎ ০২-৯০০৩৩১, ৮০৩৪২৭৫ (কল্যাণপুর), +৮৮০১৭১৬০৩৬৬৮৭ (কদমতলী বাসস্ট্যান্ড, সিলেট)।
  • ঢাকা-সিলেট রুটে সরাসরি চলাচলকারী পরিবহনে আসার ক্ষেত্রে ভাড়া হলোঃ
    • এসি বাসে – ৯০০/- (রেগুলার) ও ১২০০/- (এক্সিকিউটিভ) এবং
    • নন-এসি বাসে – ৪৭০/-।

ওসমানী জাদুঘরে রেলপথে কীভাবে যাবেন

ঢাকার কমলাপুর রেল স্টেশন বা চট্টগ্রাম রেল স্টেশন থেকে সিলেটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা ট্রেনে সরাসরি আসা যায়। কমলাপুর রেল স্টেশন থেকে প্রতিদিন একাধিক ট্রেন সিলেটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। ঢাকা – সিলেট এবং চট্টগ্রাম – সিলেট রুটে চলাচলকারী ট্রেনগুলো হলোঃ

  • ৭১০ পারাবত এক্সপ্রেস – সিলেট হতে দুপুর ০৩ টায় ছাড়ে এবং ঢাকায় রাত ০৯ টা ৪৫ মিনিটে পৌছে (মঙ্গলবার বন্ধ) ও ঢাকা থেকে ভোর ০৬ টা ৩৫ মিনিটে ছাড়ে এবং সিলেট পৌছে দুপুর ০১ টা ৪৫ মিনিটে (মঙ্গলবার বন্ধ);
  • ৭১৮ জয়ন্তীকা এক্সপ্রেস – সিলেট হতে সকাল ০৮ টা ৪০ মিনেটে ছাড়ে এবং ঢাকায় বিকাল ০৪ টায় পৌছে (বৃহস্পতিবার বন্ধ) ও ঢাকা থেকে দুপুর ১২ টায় ছাড়ে এবং সিলেট পৌছে সন্ধ্যা ০৭ টা ৫০ মিনিটে (কোন বন্ধ নেই);
  • ৭২০ পাহাড়ীকা এক্সপ্রেস (শনিবার বন্ধ) সিলেট হতে সকাল ১০ টা ১৫ মিনিটে ছাড়ে এবং চট্টগ্রামে রাত ০৭ টা ৪৫ মিনিটে পৌছে;
  • ৭২৪ উদয়ন এক্সপ্রেস (রবিবার বন্ধ) সিলেট হতে রাত ০৭ টা ২০ মিনিটে ছাড়ে এবং চট্টগ্রামে ভোর ০৫ টা ৫০ মিনিটে পৌছে;
  • ৭৪০ উপবন এক্সপ্রেস – সিলেট হতে রাত ১০ টায় ছাড়ে এবং ঢাকায় ভোর ০৫ টা ১০ মিনিটে পৌছে (কোন বন্ধ নেই) ও ঢাকা থেকে রাত ০৯ টা ৫০ মিনিটে ছাড়ে এবং সিলেট পৌছে ভোর ৫ টা ১০ মিনিটে (বুধবার বন্ধ);
  • ৭৭৪ কালনী এক্সপ্রেস – সিলেট হতে সকাল ০৭ টায় ছাড়ে এবং ঢাকায় দুপুর ০১ টা ২৫ মিনিটে পৌছে (শুক্রবার বন্ধ) ও ঢাকা থেকে বিকাল ০৪ টায় ছাড়ে এবং সিলেট পৌছে রাত ১০ টা ৪৫ মিনিটে (শুক্রবার বন্ধ)।

ঢাকা-সিলেট রুটে চলাচলকারী রেলে ঢাকা হতে সিলেট আসার ক্ষেত্রে ভাড়া হলো –

  • ২য় শ্রেণির সাধারণ – ৮০ টাকা;
  • ২য় শ্রেণির মেইল – ১১০ টাকা;
  • কমিউটার – ১৩৫ টাকা;
  • সুলভ – ১৬০ টাকা;
  • শোভন – ২৬৫ টাকা;
  • শোভন চেয়ার – ৩২০ টাকা;
  • ১ম শ্রেণির চেয়ার – ৪২৫ টাকা;
  • ১ম শ্রেণির বাথ – ৬৪০ টাকা;
  • স্নিগ্ধা – ৬১০ টাকা;
  • এসি সীট – ৭৩৬ টাকা এবং
  • এসি বাথ – ১,০৯৯ টাকা।

ট্রেন সম্পর্কিত তথ্যের জন্য যোগাযোগ করতে পারেন:

  • কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন, ☎ ০২-৯৩৫ ৮৬৩৪, ৮৩১ ৫৮৫৭, ৯৩৩ ১৮২২, মোবাইল নম্বর: +৮৮০১৭১১-৬৯১ ৬১২
  • বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন, ☎ ০২-৮৯২ ৪২৩৯
  • ওয়েবসাইট: http://www.railway.gov.bd/

ওসমানী জাদুঘরে আকাশপথে কীভাবে যাবেন

সিলেটে সরাসরি বিমানে আসা যায়; ঢাকা থেকে সিলেটের সাথে সরাসরি বিমান যোগাযোগ ব্যবস্থা রয়েছে। বাংলাদেশ বিমান, জেট এয়ার, নোভো এয়ার, রিজেন্ট এয়ার, ইউনাইটেড এয়আর – প্রভৃতি বিমান সংস্থার বিমান পরিষেবা রয়েছে ঢাকা থেকে সিলেটে আসার জন্য।

ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের একটি করে ফ্লাইট সপ্তাহে ৪ দিন ঢাকা- সিলেট ও সিলেট-ঢাকা রুটে চলাচল করে; ভাড়া লাগবে একপথে ৩,০০০/- এবং রিটার্ণ টিকিট ৬,০০০/-। সময়সূচী হলোঃ

  • ঢাকা হতে সিলেট – শনি, রবি, মঙ্গল, বৃহস্পতি – সকাল ১১ টা ২০ মিনিট এবং দুপুর ১২ টায়।
  • সিলেট হতে ঢাকা – শনি, রবি, মঙ্গল, বৃহস্পতি – দুপুর ১২ টা ২০ মিনিট এবং দুপুর ০১ টায়।

এই সম্পর্কিত তথ্যের জন্য যোগাযোগ করতে পারেন:

  • কর্পোরেট অফিস: উত্তরা টাওয়ার (৬ষ্ঠ তলা), ১ জসিম উদ্দিন এভিনিউ, উত্তরা, ঢাকা-১২৩০, ☎ ০২-৮৯৩ ২৩৩৮, ৮৯৩ ১৭১২, ইমেইল: [email protected], ফ্যাক্স: ০২-৮৯৫ ৫৯৫৯
  • ঢাকা এয়ারপোর্ট সেলস অফিস: ডমেস্টিক উইং কুর্মিটোলা, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, ঢাকা-১২৩০, ☎ ০২-৮৯৫ ৭৬৪০, ৮৯৬ ৩১৯১, মোবাইল: +৮৮০১৭১৩-৪৮৬ ৬৬০
  • ওয়েবসাইট:  http://www.uabdl.com/

ওসমানী জাদুঘরে নৌপথে কীভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে বা সিলেট শহর হতে সরাসরি কোনো নৌযান চলাচল করে না।

ওসমানী জাদুঘরে গেলে খাওয়া দাওয়ার সুযোগ সুবিধা

জাদুঘরটির আশেপাশেই প্রচুর হোটেল – রেস্তোরা আছে খাওয়া – দাওয়া করার জন্য। স্থানীয় পর্যায়ের বিখ্যাত খাদ্য হলো আথনী পোলাও ও সাতকরা (হাতকরা)। আরও কিনতে পারবেন স্থানীয় আনারস, কমলা, পান, লেবু, কাঠাল, চা-পাতা, তাজা মাছ। স্থানীয় হোটেল ও রেস্তোরাঁগুলোতে এসকল দ্রব্যাদির তৈরি নানারকম খাদ্যও পাওয়া যায়। জাদুঘরটির খুব নিকটেই রয়েছে কিছু উন্নতমানের হোটেল-রেস্তোরাঁঃ

  • পানশী রেস্তোরাঁ, জল্লারপাড় রোড, জিন্দাবাজার, সিলেট;
  • পাঁচভাই রেস্তোরাঁ, জল্লারপাড় রোড, জিন্দাবাজার, সিলেট;
  • ভোজনবাড়ি রেস্তোরাঁ, জল্লারপাড় রোড, জিন্দাবাজার, সিলেট;
  • প্রীতিরাজ রেস্তোরাঁ, জল্লারপাড় রোড, জিন্দাবাজার, সিলেট;
  • স্পাইসি রেস্তোরাঁ, সিটি সেন্টার, জিন্দাবাজার, সিলেট, ☎ ০৮২১-২৮৩২০০৮;
  • রয়েলশেফ, মির্জাজাঙ্গাল, সিলেট, ☎ ০৮২১-৭২৩০৯৬।

ওসমানী জাদুঘরে গেলে থাকা ও রাত্রিযাপনের স্থান

জাদুঘরটির নিকটে কিছু আবাসিক হোটেল রয়েছে; তবে তুলনামূলক ভালো মানের হোটের রয়েছে শাহজালালের দরগা এলাকায়। সেখানে থাকার জন্য প্রচুর আবাসিক হোটেল রয়েছে যেগুলোতে সিলেট ভ্রমণে আসা অধিকাংশ পর্যটক অবস্থান করে। এসি এবং নন-এসি – এই উভয় ধরনের রুমের ব্যবস্থা সমৃদ্ধ ঐসকল হোটেলে মান ও বর্ডার ভেদে ভাড়া নেয়া হয় ৩০০/- হতে ২,৫০০/-। এছাড়াও থাকার জন্য আশেপাশেই কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে কিছু উন্নতমানের হোটেলও রয়েছে –

  • হোটেল রোজভিউ ইন্টারন্যাশনাল (৫ স্টার) : উপশহর, সিলেট; ☎ ০৮২১-৭২১৮৩৫, ২৮৩১২১৫০৮-১৪, ২৮৩১৫১৬-২১, মোবাইল: ০১১৯৫১১৫৯৬৪, ইমেইল- [email protected], [email protected]
  • হোটেল ফরচুন গার্ডেন : জেল রোড, সিলেট, ☎ ০৮২১-৭১৫৫৯০, ৭২২৪৯৯, ফ্যাক্স: ০৮২১-৭১৫৫৯০, মোবাইল: +৮৮০১৭১১-১১৫১৫৩, ইমেইল- [email protected], ওয়েব: www.hotelfortunegarden.com
  • হোটেল ডালাস : তামাবিল রোড, মিরাবাজার, সিলেট, ☎ ০৮২১-৭২০৯৪৫, ৭২০৯২৯, ইমেইল- [email protected], ওয়েব: www.hoteldallassylhet.com
  • হোটেল সুপ্রিম : তামাবিল রোড, মিরাবাজার, সিলেট, ☎ ০৮২১-৮১৩১৬৯, ৭২০৭৫১, ৮১৩১৭২, ৮১৩১৭৩, ফ্যাক্স: ০৮২১-৮১৩১৭১, মোবাইল: +৮৮০১৭১১-১৯৭০১২, +৮৮০১৬৭৪-০৭৪১৫৭, ইমেইল- [email protected], [email protected]
  • হোটেল হিলটাউন : ভিআইপি রোড, তেলি হাওড়, সিলেট, ☎ ০৮২১-৭১৮২৬৩, মোবাইল:- +৮৮০১৭১১৩৩২৩৭১, ৭১৬০৭৭, ওয়েব: www.hiltownhotel.com
  • নাজিমগড় রিসোর্ট : ☎ ০৮২১-২৮৭০৩৩৮-৯, ওয়েব: https://nazimgarh.com/

ওসমানী জাদুঘরে গেলে জরুরি নম্বরসমূহ

চিকিৎসা সম্পর্কিত যোগাযোগের জন্য

  • ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল: ☎ ০৮২১-৭১৭ ০৫৫;
  • রাগিব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল: ☎ ০৮২১-৭১৯ ০৯০, ৭১৯ ০৯১-৬;
  • সিলেট ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল: ☎ ০৮২১-২৮৩ ০৫২০;

জননিরাপত্তা সম্পর্কিত যোগাযোগের জন্য

  • ওসি কোতয়ালী, সিলেট: +৮৮০১৭১৩-৩৭৪ ৩৭৫।

আরও পড়ুন:

এছাড়াও আপনারা আমাদের সাইটে জানতে পারবেন নিত্য নতুন নিয়োগ, সরকারি চাকরি, বেসরকারি চাকরি, বিজ্ঞপ্তি, শিক্ষা নিউজ, তথ্য, আইন , দর্শনীয় স্থান ইত্যাদি । সবার আগে এসব সম্পর্কে জানতে আমাদের ফেসবুক পেইজটি লাইক দিয়ে আমাদের সাথে থাকুন।

The post ওসমানী জাদুঘর সিলেট | Osmani Museum Sylhet appeared first on Proggapan.

]]>
https://proggapan.com/%e0%a6%93%e0%a6%b8%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a6%a8%e0%a7%80-%e0%a6%9c%e0%a6%be%e0%a6%a6%e0%a7%81%e0%a6%98%e0%a6%b0-%e0%a6%b8%e0%a6%bf%e0%a6%b2%e0%a7%87%e0%a6%9f-osmani-museum-sylhet/feed/ 0
আলী আমজদের ঘড়ি সিলেট | Ali Amjad Watch Sylhet https://proggapan.com/%e0%a6%86%e0%a6%b2%e0%a7%80-%e0%a6%86%e0%a6%ae%e0%a6%9c%e0%a6%a6%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%98%e0%a6%a1%e0%a6%bc%e0%a6%bf-%e0%a6%b8%e0%a6%bf%e0%a6%b2%e0%a7%87%e0%a6%9f-ali-amjad-watch-sylhet/ https://proggapan.com/%e0%a6%86%e0%a6%b2%e0%a7%80-%e0%a6%86%e0%a6%ae%e0%a6%9c%e0%a6%a6%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%98%e0%a6%a1%e0%a6%bc%e0%a6%bf-%e0%a6%b8%e0%a6%bf%e0%a6%b2%e0%a7%87%e0%a6%9f-ali-amjad-watch-sylhet/#respond Thu, 03 Feb 2022 13:27:34 +0000 https://proggapan.com/?p=2260 আলী আমজদের ঘড়ি সিলেট | Ali Amjad Watch Sylhet. আলী আমজদের ঘড়ি (আলী আমজাদের ঘড়ি নামেও পরিচিত) বাংলাদেশের সিলেট শহরে অবস্থিত ঊনবিংশ শতকের একটি স্থাপনা । যা মূলত একটি বিরাটাকায় ঘড়ি। একটি ঘরের চূড়ায় স্থাপিত। আলী আমজদের ঘড়ি সিলেট অবস্থানঃ সুরমা নদীর তীর ঘেঁষে সিলেট সদর উপজেলায় অবস্থিত এই ঘড়ির ডায়ামিটার আড়াই ফুট এবং ঘড়ির কাঁটা দুই ফুট লম্বা। যখন ঘড়ির অবাধ প্রচলন ছিল […]

The post আলী আমজদের ঘড়ি সিলেট | Ali Amjad Watch Sylhet appeared first on Proggapan.

]]>
আলী আমজদের ঘড়ি সিলেট | Ali Amjad Watch Sylhet. আলী আমজদের ঘড়ি (আলী আমজাদের ঘড়ি নামেও পরিচিত) বাংলাদেশের সিলেট শহরে অবস্থিত ঊনবিংশ শতকের একটি স্থাপনা । যা মূলত একটি বিরাটাকায় ঘড়ি। একটি ঘরের চূড়ায় স্থাপিত।

আলী আমজদের ঘড়ি সিলেট

অবস্থানঃ সুরমা নদীর তীর ঘেঁষে সিলেট সদর উপজেলায় অবস্থিত এই ঘড়ির ডায়ামিটার আড়াই ফুট এবং ঘড়ির কাঁটা দুই ফুট লম্বা। যখন ঘড়ির অবাধ প্রচলন ছিল না, সেসময় অর্থাৎ ১৮৭৪ খ্রিষ্টাব্দে সিলেট মহানগরীর প্রবেশদ্বার (উত্তর সুরমা) কীন ব্রিজের ডানপার্শ্বে সুরমা নদীর তীরে এই ঐতিহাসিক ঘড়িঘরটি নির্মাণ করেন সিলেটের কুলাউড়ার পৃত্থিমপাশার জমিদার আলী আহমদ খান, তার ছেলে আলী আমজদের নামকরণে। লোহার খুঁটির উপর ঢেউটিন দিয়ে সুউচ্চ গম্বুজ আকৃতির স্থাপত্যশৈলীর ঘড়িঘরটি তখন থেকেই আলী আমজদের ঘড়িঘর নামে পরিচিতি লাভ করে।

Ali Amjad Watch Sylhet

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন হানাদার বাহিনীর গোলার আঘাতে এই প্রাচীন ঘড়িঘর বিধ্স্ত হয়। স্বাধীনতার পর সিলেট পৌরসভা ঘড়িটি মেরামতের মাধ্যমে সচল করলেও কিছুদিনের মধ্যেই ঘড়ির কাঁটা বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৮৭ খ্রিষ্টাব্দে আলী আমজদের ঘড়ি মেরামত করে পুনরায় চালু করা হয়। এসময় ঘড়িটি চালু করার পর ঢাকার একটি কোম্পানীর কারিগররা ঘড়িটি চালু রাখার জন্য রিমোট কন্ট্রোলের ব্যবস্থা করে দেয়। পৌর চেয়ারম্যানের অফিসকক্ষ থেকে রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে ঘড়ির কাঁটা ঘুরতো। কিন্তু দুই-চার বছর যেতে না যেতেই ঘড়ির কাঁটা আবার বন্ধ হয়ে যায়। এরপর সিজান কোম্পানীর দ্বারা ইলেক্ট্রনিক পদ্ধতিতে ঘড়িটি পূনরায় চালু করা হয়। কিন্তু বছর না ঘুরতেই ঘড়িটির কাঁটা আবারও বন্ধ হয়ে যায়। ২০১১ খ্রিষ্টাব্দে সিলেট সিটি কর্পোরেশন এই ঘড়িটিকে পূণরায় মেরামত করলে তা আবার দৈনিক ২৪ ঘণ্টাব্যাপী সচল রয়েছে।

আলী আমজদের ঘড়ি দেখতে স্থলপথে কিভাবে যাবেন

সড়কপথে ঢাকা হতে প্রথমে সিলেট যেতে হবে; অতঃপর সেখান থেকে ঘড়িঘরে যেতে হবে। ঢাকা হতে সড়কপথে সিলেটের দূরত্ব ২৪১ কিলোমিটার এবং রেলপথে ঢাকা হতে সিলেট রেল স্টেশনের দূরত্ব ৩১৯ কিলোমিটার। সিলেট এসে সেখান থেকে রিক্সা বা সিএনজি অটো রিক্সায় অতি সহজেই ঘড়িঘরে আসা যায়।

  • সিলেটের মূল বাস স্ট্যান্ড কদমতলী বাস টার্মিনাল অথবা রেল স্টেশন থেকে ঘড়িঘরে আসার জন্য ভাড়া হবেঃ
    • রিক্সায় – ১০/- – ২০/-;
    • সিএনজিতে – ৩০/- – ৫০/-।

আলী আমজদের ঘড়ি দেখতে সড়কপথে কিভাবে যাবেন

ঢাকার সায়েদাবাদ বাস স্টেশন থেকে সিলেটে আসার সরাসরি দুরপাল্লার এসি ও নন-এসি বাস সার্ভিস আছে; এগুলোতে সময় লাগে ৪.৩০ হতে ৬ ঘণ্টা। ঢাকা থেকে সিলেটের উদ্দেশ্যে আল-মোবারাকা সোহাগ, হানিফ, শ্যামলী, এনা, ইউনিক, মামুন, সাউদিয়া, গ্রীনলাইন, মিতালি প্রভৃতি পরিবহন কোম্পানীর বাস আছে প্রতি ১০ মিনিট পর পর।

  • সোহাগ পরিবহন: ☎ ০২-৯৩৩১৬০০ (ফকিরাপুল), ৯১৩২৩৬০ (কমলাপুর), ৯১৩২৩৬০ (কল্যাণপুর), ৭১০০৪২২ (আরমবাগ), ০৮২১-৭২২২৯৯ (সোবাহানীঘাট, সিলেট);
  • আল-মোবারকা পরিবহন: ☎ ০২-৭৫৫৩৪৮৩, ০৪৪৭৭৮০৩৪২২, মোবাইল: +৮৮০১৭২০-৫৫৬১১৬, +৮৮০১৮১৯-১৮৩৬১১, +৮৮০১৭১৫-৮৮৭৫৬৬;
  • গ্রীন লাইন পরিবহন: ☎ ০২-৭১৯১৯০০ (ফকিরাপুল), +৮৮০১৭৩০-০৬০০৮০ (কল্যাণপুর), ০৮২১-৭২০১৬১ (সোবাহানীঘাট, সিলেট);
  • হানিফ এন্টারপ্রাইজ: মোবাইল +৮৮০১৭১৩-৪০২৬৬১ (কল্যাণপুর), +৮৮০১৭১১৯২২৪১৩ (কদমতলী বাসস্ট্যান্ড, সিলেট);
  • শ্যামলী পরিবহন: ☎ ০২-৯০০৩৩১, ৮০৩৪২৭৫ (কল্যাণপুর), +৮৮০১৭১৬০৩৬৬৮৭ (কদমতলী বাসস্ট্যান্ড, সিলেট)।
  • ঢাকা-সিলেট রুটে সরাসরি চলাচলকারী পরিবহনে আসার ক্ষেত্রে ভাড়া হলোঃ
    • এসি বাসে – ৯০০/- (রেগুলার) ও ১২০০/- (এক্সিকিউটিভ) এবং
    • নন-এসি বাসে – ৪৭০/-।

আলী আমজদের ঘড়ি দেখতে রেলপথে কিভাবে যাবেন

ঢাকার কমলাপুর রেল স্টেশন বা চট্টগ্রাম রেল স্টেশন থেকে সিলেটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা ট্রেনে সরাসরি আসা যায়। কমলাপুর রেল স্টেশন থেকে প্রতিদিন একাধিক ট্রেন সিলেটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। ঢাকা – সিলেট এবং চট্টগ্রাম – সিলেট রুটে চলাচলকারী ট্রেনগুলো হলোঃ

  • ৭১০ পারাবত এক্সপ্রেস – সিলেট হতে দুপুর ০৩ টায় ছাড়ে এবং ঢাকায় রাত ০৯ টা ৪৫ মিনিটে পৌছে (মঙ্গলবার বন্ধ) ও ঢাকা থেকে ভোর ০৬ টা ৩৫ মিনিটে ছাড়ে এবং সিলেট পৌছে দুপুর ০১ টা ৪৫ মিনিটে (মঙ্গলবার বন্ধ);
  • ৭১৮ জয়ন্তীকা এক্সপ্রেস – সিলেট হতে সকাল ০৮ টা ৪০ মিনেটে ছাড়ে এবং ঢাকায় বিকাল ০৪ টায় পৌছে (বৃহস্পতিবার বন্ধ) ও ঢাকা থেকে দুপুর ১২ টায় ছাড়ে এবং সিলেট পৌছে সন্ধ্যা ০৭ টা ৫০ মিনিটে (কোন বন্ধ নেই);
  • ৭২০ পাহাড়ীকা এক্সপ্রেস (শনিবার বন্ধ) সিলেট হতে সকাল ১০ টা ১৫ মিনিটে ছাড়ে এবং চট্টগ্রামে রাত ০৭ টা ৪৫ মিনিটে পৌছে;
  • ৭২৪ উদয়ন এক্সপ্রেস (রবিবার বন্ধ) সিলেট হতে রাত ০৭ টা ২০ মিনিটে ছাড়ে এবং চট্টগ্রামে ভোর ০৫ টা ৫০ মিনিটে পৌছে;
  • ৭৪০ উপবন এক্সপ্রেস – সিলেট হতে রাত ১০ টায় ছাড়ে এবং ঢাকায় ভোর ০৫ টা ১০ মিনিটে পৌছে (কোন বন্ধ নেই) ও ঢাকা থেকে রাত ০৯ টা ৫০ মিনিটে ছাড়ে এবং সিলেট পৌছে ভোর ৫ টা ১০ মিনিটে (বুধবার বন্ধ);
  • ৭৭৪ কালনী এক্সপ্রেস – সিলেট হতে সকাল ০৭ টায় ছাড়ে এবং ঢাকায় দুপুর ০১ টা ২৫ মিনিটে পৌছে (শুক্রবার বন্ধ) ও ঢাকা থেকে বিকাল ০৪ টায় ছাড়ে এবং সিলেট পৌছে রাত ১০ টা ৪৫ মিনিটে (শুক্রবার বন্ধ)।

রাতের বেলায় আলী আমজদের ঘড়ি।

ঢাকা-সিলেট রুটে চলাচলকারী রেলে ঢাকা হতে সিলেট আসার ক্ষেত্রে ভাড়া হলো –

  • ২য় শ্রেণির সাধারণ – ৮০ টাকা;
  • ২য় শ্রেণির মেইল – ১১০ টাকা;
  • কমিউটার – ১৩৫ টাকা;
  • সুলভ – ১৬০ টাকা;
  • শোভন – ২৬৫ টাকা;
  • শোভন চেয়ার – ৩২০ টাকা;
  • ১ম শ্রেণির চেয়ার – ৪২৫ টাকা;
  • ১ম শ্রেণির বাথ – ৬৪০ টাকা;
  • স্নিগ্ধা – ৬১০ টাকা;
  • এসি সীট – ৭৩৬ টাকা এবং
  • এসি বাথ – ১,০৯৯ টাকা।

ট্রেন সম্পর্কিত তথ্যের জন্য যোগাযোগ করতে পারেনঃ

  • কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন, ☎ ০২-৯৩৫ ৮৬৩৪, ৮৩১ ৫৮৫৭, ৯৩৩ ১৮২২, মোবাইল নম্বর: +৮৮০১৭১১-৬৯১ ৬১২
  • বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন, ☎ ০২-৮৯২ ৪২৩৯
  • ওয়েবসাইট: http://www.railway.gov.bd/

আলী আমজদের ঘড়ি দেখতে আকাশপথে কিভাবে যাবেন

সিলেটে সরাসরি বিমানে আসা যায়; ঢাকা থেকে সিলেটের সাথে সরাসরি বিমান যোগাযোগ ব্যবস্থা রয়েছে। বাংলাদেশ বিমান, জেট এয়ার, নোভো এয়ার, রিজেন্ট এয়ার, ইউনাইটেড এয়আর – প্রভৃতি বিমান সংস্থার বিমান পরিষেবা রয়েছে ঢাকা থেকে সিলেটে আসার জন্য।

ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের একটি করে ফ্লাইট সপ্তাহে ৪ দিন ঢাকা- সিলেট ও সিলেট-ঢাকা রুটে চলাচল করে; ভাড়া লাগবে একপথে ৩,০০০/- এবং রিটার্ণ টিকিট ৬,০০০/-। সময়সূচী হলোঃ

  • ঢাকা হতে সিলেট – শনি, রবি, মঙ্গল, বৃহস্পতি – সকাল ১১ টা ২০ মিনিট এবং দুপুর ১২ টায়।
  • সিলেট হতে ঢাকা – শনি, রবি, মঙ্গল, বৃহস্পতি – দুপুর ১২ টা ২০ মিনিট এবং দুপুর ০১ টায়।

এই সম্পর্কিত তথ্যের জন্য যোগাযোগ করতে পারেনঃ

  • কর্পোরেট অফিস: উত্তরা টাওয়ার (৬ষ্ঠ তলা), ১ জসিম উদ্দিন এভিনিউ, উত্তরা, ঢাকা-১২৩০, ☎ ০২-৮৯৩ ২৩৩৮, ৮৯৩ ১৭১২, ইমেইল: [email protected], ফ্যাক্স: ০২-৮৯৫ ৫৯৫৯
  • ঢাকা এয়ারপোর্ট সেলস অফিস: ডমেস্টিক উইং কুর্মিটোলা, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, ঢাকা-১২৩০, ☎ ০২-৮৯৫ ৭৬৪০, ৮৯৬ ৩১৯১, মোবাইল: +৮৮০১৭১৩-৪৮৬ ৬৬০
  • ওয়েবসাইট: http://www.uabdl.com/

আলী আমজদের ঘড়ি দেখতে জলপথে কিভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে বা সিলেট শহর হতে সরাসরি কোনো নৌযান চলাচল করে না। তবে ক্বীন ব্রীজের পার্শ্ববর্তী এলাকা নৌকায় ভ্রমণ করা যায়।

আলী আমজদের ঘড়ি দেখতে গেলে খাওয়া দাওয়া কিভাবে করবেন

ঘড়িঘরটির সন্নিকটেই প্রচুর হোটেল – রেস্তোরা আছে খাওয়া – দাওয়া করার জন্য। স্থানীয় পর্যায়ের বিখ্যাত খাদ্য হলো আথনী পোলাও ও সাতকরা (হাতকরা)। আরও কিনতে পারবেন স্থানীয় আনারস, কমলা, পান, লেবু, কাঠাল, চা-পাতা, তাজা মাছ। স্থানীয় হোটেল ও রেস্তোরাঁগুলোতে এসকল দ্রব্যাদির তৈরি নানারকম খাদ্যও পাওয়া যায়। ঘড়ির খুব নিকটেই রয়েছে কিছু উন্নতমানের হোটেল-রেস্তোরাঁঃ

  • পানশী রেস্তোরাঁ, জল্লারপাড় রোড, জিন্দাবাজার, সিলেট;
  • পাঁচভাই রেস্তোরাঁ, জল্লারপাড় রোড, জিন্দাবাজার, সিলেট;
  • ভোজনবাড়ি রেস্তোরাঁ, জল্লারপাড় রোড, জিন্দাবাজার, সিলেট;
  • প্রীতিরাজ রেস্তোরাঁ, জল্লারপাড় রোড, জিন্দাবাজার, সিলেট;
  • স্পাইসি রেস্তোরাঁ, সিটি সেন্টার, জিন্দাবাজার, সিলেট, ☎ ০৮২১-২৮৩২০০৮;
  • রয়েলশেফ : মির্জাজাঙ্গাল, সিলেট, ☎ ০৮২১-৭২৩০৯৬।

আলী আমজদের ঘড়ি দেখতে গেলে থাকা ও রাত্রিযাপনের স্থান

ঘড়িঘরটির নিকটে কিছু আবাসিক হোটেল রয়েছে; তবে তুলনামূলক ভালো মানের হোটের রয়েছে শাহজালালের দরগা এলাকায়। সেখানে থাকার জন্য প্রচুর আবাসিক হোটেল রয়েছে যেগুলোতে সিলেট ভ্রমণে আসা অধিকাংশ পর্যটক অবস্থান করে। এসি এবং নন-এসি – এই উভয় ধরনের রুমের ব্যবস্থা সমৃদ্ধ ঐসকল হোটেলে মান ও বর্ডার ভেদে ভাড়া নেয়া হয় ৩০০/- হতে ২,৫০০/-। এছাড়াও থাকার জন্য আশেপাশেই কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে কিছু উন্নতমানের হোটেলও রয়েছে –

  • হোটেল রোজভিউ ইন্টারন্যাশনাল (৫ স্টার) : উপশহর, সিলেট; ☎ ০৮২১-৭২১৮৩৫, ২৮৩১২১৫০৮-১৪, ২৮৩১৫১৬-২১, মোবাইল: ০১১৯৫১১৫৯৬৪, ইমেইল- [email protected], [email protected]
  • হোটেল ফরচুন গার্ডেন : জেল রোড, সিলেট, ☎ ০৮২১-৭১৫৫৯০, ৭২২৪৯৯, ফ্যাক্স: ০৮২১-৭১৫৫৯০, মোবাইল: +৮৮০১৭১১-১১৫১৫৩, ইমেইল- [email protected], ওয়েব: www.hotelfortunegarden.com
  • হোটেল ডালাস : তামাবিল রোড, মিরাবাজার, সিলেট, ☎ ০৮২১-৭২০৯৪৫, ৭২০৯২৯, ইমেইল- [email protected], ওয়েব: www.hoteldallassylhet.com
  • হোটেল সুপ্রিম : তামাবিল রোড, মিরাবাজার, সিলেট, ☎ ০৮২১-৮১৩১৬৯, ৭২০৭৫১, ৮১৩১৭২, ৮১৩১৭৩, ফ্যাক্স: ০৮২১-৮১৩১৭১, মোবাইল: +৮৮০১৭১১-১৯৭০১২, +৮৮০১৬৭৪-০৭৪১৫৭, ইমেইল- [email protected], [email protected]
  • হোটেল হিলটাউন : ভিআইপি রোড, তেলি হাওড়, সিলেট, ☎ ০৮২১-৭১৮২৬৩, মোবাইল:- +৮৮০১৭১১৩৩২৩৭১, ৭১৬০৭৭, ওয়েব: www.hiltownhotel.com
  • নাজিমগড় রিসোর্ট : ☎ ০৮২১-২৮৭০৩৩৮-৯, ওয়েব: https://nazimgarh.com/

আলী আমজদের ঘড়ি দেখতে গেলে জরুরি নম্বরসমূহ

  • ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল: ☎ ০৮২১-৭১৭০৫৫;
  • রাগিব-রাবেয়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল: ☎ ০৮২১-৭১৯০৯০, ৭১৯০৯১-৬;
  • সিলেট ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল: ☎ ০৮২১-২৮৩০৫২০;

আলী আমজদের ঘড়ি দেখতে গেলে জননিরাপত্তা সম্পর্কিত যোগাযোগের জন্য

  • ওসি কোতয়ালী, সিলেট: +৮৮০১৭১৩৩৭৪৩৭৫;
  • ওসি দক্ষিণ সুরমা: +৮৮০১৭১৩৩৭৪৩৮৬।

আরও পড়ুন:

এছাড়াও আপনারা আমাদের সাইটে জানতে পারবেন নিত্য নতুন নিয়োগ, সরকারি চাকরি, বেসরকারি চাকরি, বিজ্ঞপ্তি, শিক্ষা নিউজ, তথ্য, আইন , দর্শনীয় স্থান ইত্যাদি । সবার আগে এসব সম্পর্কে জানতে আমাদের ফেসবুক পেইজটি লাইক দিয়ে আমাদের সাথে থাকুন।

The post আলী আমজদের ঘড়ি সিলেট | Ali Amjad Watch Sylhet appeared first on Proggapan.

]]>
https://proggapan.com/%e0%a6%86%e0%a6%b2%e0%a7%80-%e0%a6%86%e0%a6%ae%e0%a6%9c%e0%a6%a6%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%98%e0%a6%a1%e0%a6%bc%e0%a6%bf-%e0%a6%b8%e0%a6%bf%e0%a6%b2%e0%a7%87%e0%a6%9f-ali-amjad-watch-sylhet/feed/ 0
ঢাকা জেলার বিখ্যাত ৭০টি দর্শনীয় স্থান, ইতিহাস, অবস্থান ও বিবরন https://proggapan.com/%e0%a6%a2%e0%a6%be%e0%a6%95%e0%a6%be-%e0%a6%9c%e0%a7%87%e0%a6%b2%e0%a6%be%e0%a6%b0-%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%96%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%a4-%e0%a7%ad%e0%a7%a6%e0%a6%9f%e0%a6%bf-%e0%a6%a6/ https://proggapan.com/%e0%a6%a2%e0%a6%be%e0%a6%95%e0%a6%be-%e0%a6%9c%e0%a7%87%e0%a6%b2%e0%a6%be%e0%a6%b0-%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%96%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%a4-%e0%a7%ad%e0%a7%a6%e0%a6%9f%e0%a6%bf-%e0%a6%a6/#respond Tue, 11 Jan 2022 12:19:35 +0000 https://proggapan.com/?p=880 ঢাকা জেলার বিখ্যাত ৭০টি দর্শনীয় স্থান, ইতিহাস, অবস্থান ও বিবরন । ঢাকা জেলার দর্শনীয় স্থান, ঐতিহাসিক স্থান ও স্থাপনা, পার্ক ও বিনোদন কেন্দ্র, পুরান ঢাকার ভ্রমণ স্থান, ঢাকার আশেপাশে ও ঢাকার ভিতর ঘুরে বেড়ানোর জায়গা সমূহের তথ্য নিয়ে ঢাকা ভ্রমণ গাইড। কিভাবে যাবেন, কি দেখবেন, কোথায় খাবেন ও খরচ কেমন সেইসব কিছুর বিস্তারিত তথ্য জানুন […]

The post ঢাকা জেলার বিখ্যাত ৭০টি দর্শনীয় স্থান, ইতিহাস, অবস্থান ও বিবরন appeared first on Proggapan.

]]>
ঢাকা জেলার বিখ্যাত ৭০টি দর্শনীয় স্থান, ইতিহাস, অবস্থান ও বিবরন । ঢাকা জেলার দর্শনীয় স্থান, ঐতিহাসিক স্থান ও স্থাপনা, পার্ক ও বিনোদন কেন্দ্র, পুরান ঢাকার ভ্রমণ স্থান, ঢাকার আশেপাশে ও ঢাকার ভিতর ঘুরে বেড়ানোর জায়গা সমূহের তথ্য নিয়ে ঢাকা ভ্রমণ গাইড। কিভাবে যাবেন, কি দেখবেন, কোথায় খাবেন ও খরচ কেমন সেইসব কিছুর বিস্তারিত তথ্য জানুন এই পোস্টে।

ঢাকা জেলার বিখ্যাত ৭০টি দর্শনীয় স্থান

ঢাকা জেলার বিখ্যাত স্থান অনেক আছে তার মধ্যে অন্যতম ৭০টি স্থান তুলে ধরলাম। উক্ত দর্শণীয় স্থানগুলো নিম্নে দেওয়া হলোঃ-

  1. আড়াপাড়া জমিদার বাড়ি
  2. আর এন সাহা হাউজ
  3. আর্মেনীয় গির্জা
  4. আহসান মঞ্জিল
  5. ঢাকা জেলার ওয়ারী
  6. করতলব খান মসজিদ
  7. কলম্বো শাহীব সমাধি
  8. কাটরা (ঢাকা)
  9.  কার্জন হল
  10.  কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার
  11. কোকিলপেয়ারি জমিদার বাড়ি
  12. খান মোহাম্মদ মৃধা মসজিদ
  13. খেলারাম দাতার মন্দির
  14. গৌড়ীয় মাধব মঠ
  15. চন্দ্রিমা উদ্যান
  16. ছোট কাটারা
  17. জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান, বাংলাদেশ
  18. জাতীয় স্মৃতিসৌধ
  19. জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
  20.  জিঞ্জিরা প্রাসাদ
  21. জোসেফ প্যাগেট সমাধি
  22.  ঢাকা শিশু পার্ক
  23. তাজমহল বাংলাদেশ
  24. তারা মসজিদ
  25.  তিন নেতার মাজার
  26. দেওয়ানবাড়ি মসজিদ (সাভার)
  27.  দোয়েল চত্বর
  28. ধানমন্ডি লেক
  29. ধানমন্ডি শাহী ঈদগাহ
  30. নওয়াব কামুরদ্দৌলা সমাধি
  31. নওয়াব গিয়াসউদ্দিন হায়দার সমাধি
  32. নওয়াব নসরত জং সমাধি
  33. নওয়াব সামসুদ্দৌলা সমাধি
  34.  নন্দন পার্ক
  35. নর্থব্রুক হল
  36. নিমতলী কুঠি
  37. পরিবিবির মাজার
  38. ফ্যান্টাসি কিংডম
  39. বঙ্গবন্ধু চত্বর স্মৃতিস্তম্ভ
  40. বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটার
  41. বড় কাটরা
  42.  বলধা গার্ডেন
  43. বাংলাদেশ সামরিক জাদুঘর
  44.  বায়তুর রউফ মসজিদ
  45. বাহাদুর শাহ পার্ক
  46. বিনত বিবির মসজিদ
  47. বিবি চম্পার সমাধি
  48. বিবি মরিয়ম কামান
  49. বেরাইদ ভূঁইয়াপাড়া মসজিদ
  50. ভজহরি লজ
  51. মুসা খান মসজিদ
  52.  মৈনট ঘাট
  53. রাজা হরিশচন্দ্রের প্রাসাদ
  54. রাজাসন ঢিবি
  55.  রাধাকৃষ্ণ মন্দির, সূত্রাপুর
  56. রূপলাল হাউজ
  57.  রোজ গার্ডেন
  58. লালবাগের কেল্লা
  59. শঙ্খনিধি নাচঘর
  60. শঙ্খনিধি হাউজ
  61. শাঁখারিবাজার
  62. শাপলা চত্বর
  63. সন্ত্রাস বিরোধী রাজু স্মারক ভাস্কর্য
  64. সাত গম্বুজ মসজিদ
  65. সাদুল্লাপুর
  66.  সূত্রাপুর জমিদার বাড়ি
  67.  সেন্ট থমাস চার্চ, ঢাকা
  68.  স্বাধীনতা জাদুঘর
  69. হাজী শাহাবাজের মাজার ও মসজিদ
  70. হলি রোজারি চার্চ

১/ আড়াপাড়া জমিদার বাড়ি

আড়াপাড়া জমিদার বাড়ি
আড়াপাড়া জমিদার বাড়ি

ঢাকার সাভার উপজেলা সবার কাছেই বেশ পরিচিত। কেননা এই উপজেলাতেই রয়েছে জাতীয় স্মৃতিসৌধ। এবং এখানে একটি নামি বিশ্ববিদ্যালয় আছে, যার নাম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। আর এই উপজেলাতেই রয়েছে ঐতিহ্যবাহী এক জমিদার বাড়ি। এই জমিদার বাড়িটির নাম হচ্ছে আড়াপাড়া জমিদার বাড়ি। তবে অনেকেই এই জমিদার বাড়ি সম্পর্কে জানেন না। অর্থাৎ এই জমিদার বাড়িটি তেমন পরিচিত না। 

আড়াপাড়া জমিদার বাড়ির ইতিহাস

প্রায় একশত সতেরো বছর আগে সাভার উপজেলার আড়াপাড়া নামক জায়গা এই জমিদার বাড়িটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এখানে দুটি প্রাসাদ নির্মাণ করা হয়েছিল। একটি করা হয়েছিল ১৯০০ সালে। পরবর্তীতে আবার আরেকটি ১৯৩৭ সালে করা হয়েছিল। মূল প্রাসাদটিতে লেখা রয়েছে রাই শশী নিবাস।  আর পরবর্তীতে যে প্রাসাদ তৈরি করা হয়েছিল সেটিতে লেখা রয়েছে রাই নিকেতন। আর একদম উপরে লেখা রয়েছে RM House যা ইংরেজি অক্ষরে লেখা।  এই প্রাসাদগুলোর প্রবেশ পথে রয়েছে সিংহের মূর্তি এবং দুটি নারী মূর্তি, যা পাথর দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল। এবং জমিদার বাড়ির প্রবেশ পথে আরো রয়েছে সবুজ পানা পুকুর ও মন্দির।

আড়াপাড়া জমিদার বাড়ির বর্তমান অবস্থা

এই জমিদার বাড়িটি বর্তমান সময়ে অযত্ন ও অবহেলার কারণে প্রাসাদের দেয়ালগুলোর ভাঙ্গণ ধরেছে। এবং যে ভাস্কর্য বা মূর্তি ছিল সেগুলোও প্রায় ধ্বংসের মুখে। এই জমিদার বাড়িটিতে কিছু হিন্দু পরিবার বসবাস করে। 

২/ আর এন সাহা হাউজ

আর এন সাহা হাউজ
আর এন সাহা হাউজ

আর এন সাহা হাউজ বাংলাদেশের একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা। এটি ইছামতি নদীর পাশে অবস্থিত। 

আর এন সাহা হাউজ এর ইতিহাস

নবকুমার সাহা মুর্শিদাবাদ থেকে এসে ১৮২৫ সালের মাঝামাঝি হতে ১৮৫০ সাল পর্যন্ত এই ভবনটি নির্মাণ করেন। রাধা নাথ সাহার নামে এই ভবনটির নামকরণ করা হয়।

আর এন সাহা হাউজ এর বিবরণ

চারিদিকে কক্ষ ঘেরা এই বাড়ির অংশে ছিল অতিথিশালা, অন্দর মহল, মন্দির, রয়েছে সুন্দর দোতলা বাড়ি মাঝে ছোট একটি খোলা জায়গা। চমৎকার স্থাপত্যশৈলী সমৃদ্ধ এই স্থানটি ভ্রমণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন স্পট হিসেবে আখ্যায়িত।

আর এন সাহা হাউজ এর বর্তমান অবস্থা ও কারুকার্য

ইট থেকে চুন সুরকি খসে ধ্বংসের প্রহর গুণলেও এখনও স্বগর্বে বাড়িটি তার জৌলুস জানান দিচ্ছে, আর এন সাহা হাউস বর্তমানে মেরামতধীন।

৩/ আর্মেনীয় গির্জা

আর্মেনীয় গির্জা
আর্মেনীয় গির্জা

আর্মেনীয় গির্জা পুরান ঢাকার একটি প্রাচীন খ্রিস্টধর্মীয় উপাসনালয়। এটি ১৭৮১ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি পুরানো ঢাকার আর্মানিটোলায় অবস্থিত।ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রয়োজনে অষ্টাদশ ও ঊনবিংশ শতকে ঢাকায় অনেক আর্মেনীয় ব্যক্তির আগমন ঘটে। গীর্জা নির্মাণের পূর্বে ঐ স্থানে ছিলো আর্মেনীয়দের একটি কবরস্থান। এই গির্জার জন্য জমি দান করেন আগা মিনাস ক্যাটচিক। ১৮৮০ সালে আর্থিক অনটনে পড়ে গির্জার ঘণ্টাটি বাজানো বন্ধ করে দেওয়া হয়। ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে গির্জার ঘড়িঘর বিধ্বস্ত হয়। গির্জার অঙ্গনে আর্মেনীয়দের কবরস্থান অবস্থিত।

আর্মেনীয় গির্জার নির্মাণকাল

আর্মেনীয় গির্জাটি আরমানিটোলা ও স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ এর মাঝে চার্চ রোডে অবস্থিত। অষ্টাদশ শতকে পুরান ঢাকার আর্মেনীয় বসতি থেকেই গির্জাটি আর্মেনীয় গির্জা নামে পরিচিত হয়। একটি প্রাচীন প্রতিষ্ঠাফলক থেকে জানা যায় গির্জাটি ১৭৮১ সালে নির্মিত হয়েছিল। গির্জার ঘণ্টাঘরের পাশে ক্লক টাওয়ার হিসেবে একটি সুদৃশ্য গির্জাচূড়া ১৮৩৭ সালে নির্মাণ করা হয় যা ১৮৯৭ সালের বিধ্বংসী ভূমিকম্পে ভেঙে পড়ে।

আর্মেনীয় গির্জার ইতিহাস

১৭৮১ খ্রিস্টাব্দের পূর্বে গির্জার স্থানটিতে একটি কবরস্থান ছিল। আগা ক্যাটচিক মিনাস (Aga Catchick Minas) গির্জার জন্য এই জমিটি দান করেন। তাঁর স্ত্রী সোফি ১৭৬৪ সালে মৃত্যুবরণ করেন এবং তাকে গির্জায় সমাধিস্থ করা হয়। লেফটেন্যান্ট কর্নেল ডেভিডসন ১৮৪০ সালে গির্জাটি পরিদর্শন করেন এবং সেখানে বড়দিন উদ্‌যাপন প্রত্যক্ষ করেন।

আর্মেনীয় গির্জার গঠনশৈলী

গির্জার মূল ভবনটিতে ১৪ ফুট প্রশস্ত আঙিনা রয়েছে। আয়তাকার ভবনটি তিনটি অংশে বিভক্ত- একপাশে রেলিংবেষ্টিত উচ্চ বেদী, একটি কেন্দ্রীয় প্রার্থনাগৃহ এবং নারী ও শিশুদের জন্য সংরক্ষিত গ্যালিরিযুক্ত একটি অংশ। ১০ ফুট উঁচু বেদীটি সম্ভবত কাঠের তৈরি। বেদীটি দেয়াল থেকে ৪ ফুট দূরবর্তী অর্ধবৃত্তাকার গম্বুজবিশিষ্ট ছাদের নিচে স্থাপিত। 

৪/ আহসান মঞ্জিল

আহসান মঞ্জিল
আহসান মঞ্জিল

আহসান মঞ্জিল পুরান ঢাকার ইসলামপুরের কুমারটুলী এলাকায় বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত। এটি পূর্বে ছিল ঢাকার নবাবদের আবাসিক প্রাসাদ ও জমিদারীর সদর কাচারি। বর্তমানে এটি জাদুঘর হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এর প্রতিষ্ঠাতা নওয়াব আবদুল গনি।তিনি তার পুত্র খাজা আহসানুল্লাহ-র নামানুসারে এর নামকরণ করেন।১৮৫৯ খ্রিষ্টাব্দে আহসান মঞ্জিলের নির্মাণ কাজ শুরু হয়ে ১৮৭২ খ্রিষ্টাব্দে সমাপ্ত হয়। ১৯০৬ খ্রিষ্টাব্দে এখানে এক অনুষ্ঠিত বৈঠকে মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত হয়। আহসান মঞ্জিল কয়েকবার সংস্কার করা হয়েছে। সর্বশেষ সংস্কার করা হয়েছে অতি সম্প্রতি। এখন এটি বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর কর্তৃক পরিচালিত একটি জাদুঘর।

আহসান মঞ্জিল এর ইতিহাস

অষ্টাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে জামালপুর পরগনার জমিদার শেখ ইনায়েতউল্লাহ আহসান মঞ্জিলের বর্তমান স্থান রংমহল নামে একটি প্রমোদভবন তৈরি করেন। পরবর্তীতে তার পুত্র শেখ মতিউল্লাহ রংমহলটি ফরাসি বণিকদের কাছে বিক্রি করে দেন। বাণিজ্য কুঠি হিসাবে এটি দীর্ঘদিন পরিচিত ছিল। এরপরে ১৮৩০-এ বেগমবাজারে বসবাসকারী নওয়াব আবদুল গনির পিতা খাজা আলীমুল্লাহ এটি ক্রয় করে বসবাস শুরু করেন। এই বাসভবনকে কেন্দ্র করে খাজা আবদুল গনি মার্টিন অ্যান্ড কোম্পানী নামক একটি ইউরোপীয় নির্মাণ ও প্রকৌশল-প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে একটি মাস্টারপ্ল্যান তৈরী করান, যার প্রধান ইমারত ছিল আহসান মঞ্জিল। ১৮৫৯ সালে নওয়াব আবদুল গনি প্রাসাদটি নির্মাণ শুরু করেন যা ১৮৭২ সালে সমাপ্ত হয়। তিনি তার প্রিয় পুত্র খাজা আহসানুল্লাহর নামানুসারে এর নামকরণ করেন ‘আহসান মঞ্জিল’। ওই যুগে নবনির্মিত প্রাসাদ ভবনটি রংমহল ও পুরাতন ভবনটি অন্দরমহল নামে পরিচিত ছিল।

১৮৮৮ সালের ৭ এপ্রিল প্রবল ভূমিকম্পে পুরো আহসান মঞ্জিলের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়। ক্ষতিগ্রস্ত আহসান মঞ্জিল পুনর্নির্মাণের সময় বর্তমান উঁচু গম্বুজটি সংযোজন করা হয়। পুনর্নির্মাণ ও মেরামতের জন্য রাণীগঞ্জ থেকে উন্নতমানের ইট আনা হয়। মেরামতকর্ম পরিচালনা করেন প্রকৌশলী গোবিন্দ চন্দ্র রায়।  সে আমলে ঢাকা শহরে আহসান মঞ্জিলের মতো এতো জাঁকালো ভবন আর ছিল না। এর প্রাসাদোপরি গম্বুজটি শহরের অন্যতম উঁচু চূড়া হওয়ায় তা বহুদূর থেকেও সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করত।

১৮৯৭ সালে ১২ই জুন ঢাকায় ভূমিকম্প আঘাত হানলে আহসান মঞ্জিলের ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়। আহসান মঞ্জিলের দক্ষিণের বারান্দাসহ ইসলামপুর রোড সংলগ্ন নহবত খানাটি সম্পূর্ণ ভেঙ্গে পড়ে। পরবর্তীকালে নবাব আহসানুল্লাহ তা পুনঃনির্মাণ করেন। ১৯৫২ সালে জমিদারী উচ্ছেদ আইনের আওতায় ঢাকা নওয়াব এস্টেট সরকার অধিগ্রহণ করে। কিন্তু নওয়াবদের আবাসিক ভবন আহসান মঞ্জিল এবং বাগানবাড়িসমূহ অধিগ্রহণের বাইরে থাকে। কালক্রমে অর্থাভাব ও নওয়াব পরিবারের প্রভাব প্রতিপত্তি ক্ষয়িষ্ণু হওয়ার ফলে আহসান মঞ্জিলের রক্ষণাবেক্ষণ দুরূহ হয়ে পড়ে। ১৯৬০’র দশকে এখানে থাকা মূল্যবান দ্রব্যাদি নওয়াব পরিবারের সদস্যরা নিলামে কিনে নেয়।

আহসান মঞ্জিল এর স্থাপত্যশৈলী

এই প্রাসাদের ছাদের উপর সুন্দর একটি গম্বুজ আছে। এক সময় এই গম্বুজের চূড়াটি ছিল ঢাকা শহরের সর্বোচ্চ। মূল ভবনের বাইরে ত্রি-তোরণবিশিষ্ট প্রবেশদ্বারও দেখতে সুন্দর। একইভাবে উপরে ওঠার সিঁড়িগুলোও সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তে দু’টি মনোরম তোরণ আছে যা সবচেয়ে সুন্দর। আহসান মঞ্জিলের অভ্যন্তরে দু’টি অংশ আছে। বৈঠকখানা ও পাঠাগার আছে পূর্ব অংশে। পশ্চিম অংশে আছে নাচঘর ও অন্যান্য আবাসিক কক্ষ। নিচতলার দরবারগৃহ ও ভোজন কক্ষ রয়েছে।

১ মিটার উঁচু বেদির ওপর স্থাপিত দ্বিতল প্রাসাদ ভবনটির পরিমাপ ১২৫ দশমিক ৪ মিটার এবং ২৮ দশমিক ৭৫ মিটার। নিচতলায় মেঝে থেকে ছাদ পর্যন্ত উচ্চতা ৫ মিটার ও দোতলায় ৫ দশমিক ৮ মিটার। প্রাসাদের উত্তর ও দক্ষিণ দিকে একতলার সমান উঁচু করে গাড়ি বারান্দা। দক্ষিণ দিকের গাড়ি বারান্দার ওপর দিয়ে দোতলার বারান্দা থেকে একটি সুবৃহৎ খোলা সিঁড়ি সম্মুখের বাগান দিয়ে নদীর ধার পর্যন্ত নেমে গেছে। সিঁড়ির সামনে বাগানে একটি ফোয়ারা ছিল, যা বর্তমানে নেই। প্রাসাদের উভয় তলার উত্তর ও দক্ষিণ দিকে রয়েছে অর্ধবৃত্তাকার খিলানসহযোগে প্রশস্ত বারান্দা। বারান্দা ও কক্ষগুলোর মেঝে মার্বেল পাথরে শোভিত। 

আহসান মঞ্জিলের গম্বুজটি নির্মাণের জন্য প্রথমে নিচতলার বর্গাকার কক্ষটির চারকোণায় ইট দিয়ে ভরাট করে গোলাকার রূপ দেওয়া হয়েছে। এর ওপর দোতলায় নির্মিত অনুরূপ গোলাকার কক্ষের ঊর্ধ্বাংশে স্কুইঞ্চের মাধ্যমে ছাদের কাছে কক্ষটিকে অষ্টভূজাকৃতির করা হয়েছে। এই অষ্টকোণ কক্ষটিই ছাদের ওপর গম্বুজের পিপায় পরিণত হয়েছে। পরিশেষে অষ্টবাহুর সূচ্যগ্র মাথাগুলোকে কেন্দ্রের দিকে ক্রমে হেলিয়ে চূড়াতে নিয়ে কুমদ্র কলির আকারের গম্বুজটি তৈরী করা হয়েছে।ভূমি থেকে গম্বুজ শীর্ষের উচ্চতা ২৭ দশমিক ১৩ মিটার। 

আহসান মঞ্জিল জাদুঘরের ইতিহাস

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর অযত্ন ও অপব্যবহারে আহসান মঞ্জিল ধ্বংসপ্রাপ্তির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে। এমতাবস্থায় ১৯৭৪ সালে ঢাকা নওয়াব পরিবারের উত্তরসূরিরা আহসান মঞ্জিল প্রাসাদ নিলামে বিক্রির পরিকল্পনা করেন। সরকারের ভূমি প্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পক্ষে নিলাম বিক্রির প্রস্তাবটি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবের কাছে পেশ করা হয়। কিন্তু শেখ মুজিব আহসান মঞ্জিলের স্থাপত্য সৌন্দর্য ও ঐতিহাসিক গুরুত্ব উপলব্ধি করে ১৯৭৪ সালের ২রা নভেম্বর এটি নিলামে বিক্রির প্রস্তাব নাকচ করে দেন।

‘আহসান মঞ্জিলের সংস্কার, সৌন্দর্যবর্ধন ও জাদুঘরে রুপান্তর’ শীর্ষক প্রকল্পের বাস্তবায়ন আরম্ভ হয় ১৯৮৬ সালের মার্চ মাসে।জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাস ও স্থাপত্য নিদর্শন সংরক্ষণের জন্য আহসান মঞ্জিল ভবনটি সংস্কার করে জাদুঘরে রুপান্তর ও প্রাসাদের সাথে সামঞ্জস্য রেখে ভবনটির পারিপার্শ্বিক এলাকার উন্নয়ন করা প্রকল্পটির মূল উদ্দেশ্য ছিল। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন এ প্রকল্পের নির্বাহী সংস্থা ছিল বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর। তবে প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর ও গণপূর্ত অধিদপ্তরের ওপর যৌথ ভাবে ন্যস্ত ছিল। সংস্কার ও সংরক্ষণ কাজ গণপুর্ত অধিদপ্তর কর্তৃক সম্পাদিত হয়। নিদর্শন সংগ্রহ ও প্রদর্শনী উপস্থাপনের মাধ্যমে জাদুঘরে রুপান্তরের কাজ সম্পাদন করে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর। ১৯৮৫ সালের ৩ নভেম্বর আহসান মঞ্জিল প্রাসাদ ও তৎসংলগ্ন চত্বর সরকার অধিগ্রহণ করার মাধ্যমে সেখানে জাদুঘর তৈরীর কাজ শুরু হয়। ১৯৯২ সালের ২০ সেপ্টেম্বর আহসান মঞ্জিল জাদুঘরের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ও জনসাধারণের পরিদর্শনের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।

আহসান মঞ্জিল জাদুঘরের গ্যালারীসমুহ

রংমহলের ৩১টি কক্ষের ২৩টিতে প্রদর্শনী উপস্থাপন করা হয়েছে। ৯টি কক্ষ লন্ডনের ইন্ডিয়া অফিস লাইব্রেরীতে প্রাপ্ত ও মি. ফ্রিৎজকাপ কর্তৃক ১৯০৪ সালে তোলা আলোকচিত্রের সাথে মিলিয়ে সাজানো হয়েছে। আহসান মঞ্জিলের তোষাখানা ও ক্রোকারীজ কক্ষে থাকা তৈজসপত্র ও নওয়াব এস্টেটের পুরোনো অফিস এডওয়ার্ড হাউজ থেকে প্রাপ্ত বিভিন্ন নিদর্শন সংরক্ষণ করে প্রদর্শনীতে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া উক্ত আলোকচিত্রের সাথে মিলিয়ে বিভিন্ন আসবাবপত্র তৈরী ও সমসাময়িককালের সাদৃশ্যপূর্ণ নিদর্শনাদি ক্রয় ও সংগ্রহ করে গ্যালারীতে উপস্থাপন করা হয়েছে। আহসান মঞ্জিল জাদুঘরে এ যাবৎ সংগৃহীত নিদর্শন সংখ্যা মোট ৪০৭৭টি।

আহসান মঞ্জিল গ্যালারী ১: আহসান মঞ্জিল পরিচিতি (১)

আহসান মঞ্জিলের নিচ তলার পূর্বাংশে অবস্থিত কক্ষটিতে ভবনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস, সংস্কার-পূর্ব ও পরবর্তী আলোকচিত্র ও পেইন্টিং প্রদর্শিত হচ্ছে। এছাড়া আছে তারজালি কাজের তৈরী প্রাসাদের একটি মডেল।

আহসান মঞ্জিল গ্যালারী ২: আহসান মঞ্জিল পরিচিতি (২)

প্রাসাদ ভবনের সাথে জড়িত উল্লেখযোগ্য ঐতিহাসিক তথ্যাদি এখানে তুলে ধরা হয়েছে। এর আদি স্থাপত্য বৈশিষ্ট্য, বিবর্তিত রূপ আলোকচিত্রের মাধ্যমে প্রদর্শিত হয়েছে। এছাড়াও আছে প্রাসাদে ব্যবহৃত কাটগ্লাসের ঝাড়বাতি ও তৈজসপত্রের নমুনা।

আহসান মঞ্জিল গ্যালারী ৩: প্রাসাদ ডাইনিং রুম

আহসান মঞ্জিলের ডাইনিং রুম

নওয়াবদের আনুষ্ঠানিক ভোজন কক্ষ। লন্ডনের ইন্ডিয়া অফিস লাইব্রেরিতে সংরক্ষিত ১৯০৪ সালের ফ্রিৎজকাপের তোলা আলোকচিত্র অনুযায়ী কক্ষটি সাজানো হয়েছে। এই কক্ষে প্রদর্শিত চেয়ার, টেবিল, ফ্যান ও লাইট ফিটিংসগুলো মূলানুরূপে তৈরী অথবা সংগৃহীত হয়েছে। এখানে প্রদর্শিত বড় বড় আলমারী, আয়না, কাঁচ ও চীনামাটির তৈজসপত্রগুলো প্রায় সবই আহসান মঞ্জিলে প্রাপ্ত নওয়াবদের ব্যবহৃত মূল নিদর্শন।

আহসান মঞ্জিল গ্যালারী ৪: গোলঘর (নিচতলা)

আহসান মঞ্জিল প্রাসাদশীর্ষে দৃশ্যমান সুউচ্চ গম্বুজটি এই গোলাকার কক্ষের উপরেই নির্মিত। দক্ষিণ পোর্চের নিচে থেকে বারান্দা পেরিয়ে এই গোলাকার কক্ষ দিয়ে দোতলায় উঠা-নামার জন্য নির্মিত বৃহৎ কাঠের সিঁড়িতে যাওয়া যায়। হাতির মাথার কঙ্কালসহ এ কক্ষে প্রদর্শিত ঢাল- তরবারি, অলংকৃত কাঠের বেড়া ইত্যাদি আহসান মঞ্জিলে প্রাপ্ত নওয়াবদের ব্যভৃত মূল নিদর্শন।

আহসান মঞ্জিল গ্যালারী ৫: প্রধান সিঁড়িঘর (নিচতলা)

নিচতলার সিড়িঘর

বাংলার স্থাপত্যে এরূপ বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত কাঠের সিঁড়ি সাধারণত দেখা যায় না। ১৯০৪ সালে গৃহীত আলোকচিত্র অনুযায়ী সিঁড়িটি সংস্কার সাধন ও মূলানুরূপ নিদর্শন দিয়ে সজ্জিত করা হয়েছে। এখানে প্রদর্শিত বর্শা- বল্লম, ঢাল-তলোয়ারগুলো আহসান মঞ্জিলে প্রাপ্ত। নওয়াবদের আমলে এই সিঁড়িকক্ষে স্বর্ণমণ্ডিত ভিজিটর বুক রাখা হতো।

আহসান মঞ্জিল গ্যালারী ৬: আহসানুল্লাহ মেমোরিয়াল হাসপাতাল

নওয়াব আহসানুল্লাহর কন্যা নওয়াবজাদী আখতার বানু বেগম ঢাকার টিকাটুলিতে ‘স্যার আহসানুল্লাহ মেমোরিয়াল হসপিটাল’ নামে একটি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৩৫ সালের ৯ জুলাই বাংলার তৎকালীন গভর্নর হাসপাতালটি উদ্বোধন করেন। কিন্তু ১৯৪০ সালে সেটা বন্ধ হয়ে যায়। আহসান মঞ্জিল অধিগ্রহণের সময় উক্ত হাসপাতালে ব্যবহৃত বেশকিছু সরঞ্জামাদি ও খাতাপত্র এখানে পাওয়া যায়, যার কিছু এই কক্ষে প্রদর্শন করা হয়েছে।

আহসান মঞ্জিল গ্যালারী ৭: মুসলিম লীগ কক্ষ

এই বৃহৎ কক্ষটি নওয়াবদের সময় দরবার হল হিসেবে ব্যবহৃত হতো। ঢাকার ঐতিহ্যবাহী পঞ্চায়েত প্রথানুযায়ী নওয়াবগণ এখানে বিচারকার্য পরিচালনা করতেন। নওয়াব সলিমুল্লাহ প্রতিষ্ঠিত ‘নিখিল ভারত মুসলিম লীগ’ ও ‘বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগ’ এর সাথে ভবনটি বিশেষভাবে জড়িত। এই প্রেক্ষিতে ‘নিখিল ভারত মুসলিম লীগ’ প্রতিষ্ঠার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস এই গ্যালারীতে তুলে ধরা হয়েছে। ১৯০৬ সালে মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠাকালীন শাহবাগের সম্মেলনে আগত সর্বভারতীয় মুসলিম নেতৃবৃন্দের একটি বড় তৈলচিত্র এই গ্যালারীতে স্থান পেয়েছে। নওয়াবদের সময়কার কিছু তৈজসপত্র ও আনুষঙ্গিক নিদর্শন কয়েকটি শোকেসে প্রদর্শিত হচ্ছে। এছাড়া ইটালি থেকে দেওয়া ঢাকার নওয়াবদের উপহার একটি সুন্দর অষ্টকোণ টেবিল এখানে প্রদর্শিত হচ্ছে।

আহসান মঞ্জিল গ্যালারী ৮: বিলিয়ার্ড কক্ষ

১৯০৪ সালে তোলা আলোকচিত্র অনুযায়ী মূলানুরূপ বিলিয়ার্ড টেবিল, লাইট ফিটিংস, সোফা ইত্যাদি তৈরি করে কক্ষটি সাজানো হয়েছে। দেয়ালে প্রদর্শিত নওয়াবদের আমলের বিভিন্ন জীব-জন্তুর শিংগুলো এডওয়ার্ড হাউজ থেকে সংগৃহীত। আউটডোর খেলাধুলার পাশাপাশি ঢাকার নওয়াবরা ইনডোর খেলারও যে বিশেষ পৃষ্ঠপোষক ছিলেন, প্রাসাদ অভ্যন্তরের এই কক্ষটি তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ।

আহসান মঞ্জিল গ্যালারী ৯: সিন্দুক কক্ষ

ঢাকার নওয়াবের কোষাগার হিসেবে ব্যবহৃত কক্ষটিকে তাদের প্রাচুর্যের সাথে সঙ্গতি রেখে সাজানো হয়েছে। বৃহদাকার লোহার সিন্দুকসহ এখানে থাকা সিন্দুক ও কাঠের আলমারীগুলো নওয়াবদের আমলের নিদর্শন।

আহসান মঞ্জিল গ্যালারী ১০: নওয়াব পরিচিতি

ঢাকার নওয়াব পরিবারের স্বনামধন্য ব্যক্তিদের পরিচিতি এই গ্যালারীতে স্থান পেয়েছে। প্রতিকৃতি ও লাইফ সাইজ তৈলচিত্র প্রদর্শনের পাশাপাশি তাদের সংক্ষিপ্ত জীবনী এখানে তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়া এই গ্যালারীতে ঢাকার নওয়াবদের কাশ্মীরবাসী আদিপুরুষ থেকে সাম্প্রতিককাল পর্যন্ত বংশধরের বিভিন্ন শাখা প্রশাখা দেখিয়ে একটি বংশতালিকা প্রদর্শিত হয়েছে।

আহসান মঞ্জিল গ্যালারী ১০(ক): কোনার সিঁড়িঘর

এখানে নিচে এবং উপরে দু’টি কক্ষ ছিল। দর্শক চলাচলের সুবিধার্থে তা ভেঙ্গে কংক্রিটের সিঁড়ি তৈরি করা হয়েছে। এখানে থাকা বড় বড় আলমারী ও প্রদর্শিত তৈজসপত্রগুলো নওয়াবদের আমলের নিদর্শন।

আহসান মঞ্জিল আহসান মঞ্জিল গ্যালারী ১১: প্রতিকৃতি (১)

নানা কাজে ঢাকার খাজা পরিবারের লোকেরা সমসাময়িক কালের যেসব খ্যাতনামা ব্যক্তির সংস্পর্শে এসেছিলেন তাঁদেরকে দর্শকদের সামনে তুলে ধরাই এই গ্যালারীর পরিকল্পনার উদ্দেশ্য। এছাড়া নওয়াবদের সমসাময়িককালে দেশ বরেণ্য রাজনীতিবিদ, সমাজসেবী, ভূস্বামী, বুদ্ধিজীবী, সমাজ সংস্কারক, কবি, সাহিত্যিকদের প্রতিকৃতি এখানে রাখা হয়েছে।

আহসান মঞ্জিল গ্যালারী ১২: নওয়াব সলিমুল্লাহ স্মরণে

নওয়াব স্যার খাজা সলিমুল্লাহ বাহাদুরের প্রতি বিশেষ সম্মান দেখানোর উদ্দেশ্যে কক্ষটিকে ‘সলিমুল্লাহ স্মরণে’ গ্যালারী হিসেবে সাজানো হয়েছে। সলিমুল্লাহর ছোটবেলা থেকে বিভিন্ন সময়ের আলোকচিত্র ও তথ্যাদি দ্বারা এই গ্যালারী সাজানো হয়েছে। এছাড়া নওয়াব সলিমুল্লাহ ও নওয়াবদের ব্যক্তিগত/ অফসিয়ালি ব্যবহার্য দ্রব্যাদি এখানে প্রদর্শন করা হয়েছে।

আহসান মঞ্জিল গ্যালারী ১৩: প্রতিকৃতি (২)

এই কক্ষ দিয়ে নওয়াব পরিবারের সদস্যগণ আহসান মঞ্জিলের পূর্বাংশের রঙমহল থেকে গ্যাংওয়ের মাধ্যমে পশ্চিমাংশে যাতায়াত করতেন। গ্যালারী নং-১১ এর অনুরূপ নওয়াবদের সমসাময়িক বিশিষ্ট মনীষীদের প্রতিকৃতি দিয়ে এই কক্ষটি সাজানো হয়েছে। এছাড়া এই গ্যালারীর শো-কেসে প্রদর্শিত হাতির দাঁতের নিদর্শনগুলো আহসান মঞ্জিলে প্রাপ্ত নওয়াব পরিবারের ব্যবহৃত মূল নিদর্শন।

আহসান মঞ্জিল গ্যালারী ১৪: হিন্দুস্থানী কক্ষ

১৯০৪ সালে ফ্রিৎজকাপের তোলা আলোকচিত্রে কক্ষটিকে হিন্দুস্থানী রুম বলা হয়েছে। উক্ত আলোকচিত্রের সাথে মিলিয়ে কক্ষটি সাজানোর অপেক্ষায় আছে।

আহসান মঞ্জিল গ্যালারী ১৫: প্রধান সিঁড়িঘর (দোতলা)

দোতলার সিড়িঘর

প্রাসাদের নিচতলা থেকে উপর তলায় উঠানামার জন্য তৈরী কাঠের সিঁড়ির উপরাংশের দৃশ্য। ১৯০৪ সালে তোলা আলোকচিত্র অনুযায়ী সিঁড়িটি সংস্কার করা হয়েছে। সিঁড়ির রেলিঙ-এ ঢালাই লোহার তৈরী আঙ্গুর লতাগুচ্ছ নকশা সংবলিত বালুস্টারগুলি মূলানুরূপে তৈরি। ছাদে দৃশ্যমান কাঠের অলঙ্কৃত সিলিং নওয়াবদের আমলের মূল বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী সংস্কার করা হয়ছে।

আহসান মঞ্জিল গ্যালারী ১৬: লাইব্রেরী কক্ষ

কক্ষটি ছিল নওয়াবদের ব্যক্তিগত প্রাসাদ লাইব্রেরী। ১৯০৪ খিস্টাব্দের আলোকচিত্র অনুযায়ী কক্ষটি সাজানো হবে। নওয়াবদের ব্যবহৃত আইন, বিচার, উপন্যাস ও ক্রীড়া বিষয়ক দুষ্প্রাপ্য গ্রন্থের এক বিশাল সংগ্রহ এখানে রয়েছে।

আহসান মঞ্জিল গ্যালারী ১৭: কার্ড রুম

ঢাকার নওয়াবদের তাস খেলার কক্ষ। ১৯০৪ সালে তোলা আলোকচিত্রের অনুকরণে মূলানুরূপে সাজানো হবে।

আহসান মঞ্জিল গ্যালারী ১৮: নওয়াবদের অবদান, ঢাকায় পানীয় জলের ব্যবস্থা

নওয়াবগণ কর্তৃক ঢাকায় পানীয় জল সরবরাহ বিষয়ক নিদর্শন ও তথ্যাদি দিয়ে গ্যালারীটি সাজানো হয়েছে। নওয়াবদের ব্যবস্থা গ্রহণের পূর্বে ঢাকায় ফিল্টার করা পানীয় জল ব্যবহারের কোনো সুযোগ ছিল না। জনকল্যাণমনা নওয়াব আবদুল গনি আড়াই লাখ টাকা ব্যয়ে ঢাকা শহরে ফিল্টার পানির কল স্থাপন করেন। পানীয় জলের সাথে সম্পৃক্ত বিভিন্ন প্রকারের যেসব নিদর্শন আহসান মঞ্জিলে এবং এডওয়ার্ড হাউজে পাওয়া গেছে সে সব নিদর্শন দিয়ে গ্যালারীটি সাজানো হয়েছে। ঢাকা ওয়াটার ওয়ার্কস-এর কয়েকটি দুষ্প্রাপ্য আলোকচিত্র এখানে প্রদর্শিত হচ্ছে।

আহসান মঞ্জিল গ্যালারী ১৯: স্টেট বেডরুম

বিশিষ্ট ও রাজকীয় অতিথিদের বিশ্রামের জন্য এ প্রাসাদে স্টেট বেডরুম নির্দিষ্ট থাকতো। এরূপ একটি মাত্র কক্ষের আলোকচিত্র পাওয়া গেছে এবং তার নমুনা প্রদর্শনের জন্য ছবির দৃশ্যানুযায়ী এই কক্ষটি সাজানো হয়েছে। এখানে প্রদর্শিত আসবাবপত্রগুলো মূলানুরূপে নতুনভাবে তৈরী।

আহসান মঞ্জিল গ্যালারী ২০: নওয়াবদের অবদান, ঢাকায় বিদ্যুৎ ব্যবস্থা

এই কক্ষটিতে নওয়াবগণ কর্তৃক ঢাকায় প্রথম বিদ্যুৎ ব্যবস্থা প্রবর্তন বিষয়ক নিদর্শন, তথ্য ও চিত্র দিয়ে সাজানো হয়েছে। ১৯০১ সালের পূর্বে ঢাকায় কোন বৈদ্যুতিক বাতির ব্যবস্থা ছিল না। সন্ধ্যা নামলে সারা ঢাকা শহর ভূতুড়ে অন্ধকারে ছেয়ে ফেলতো। নগরবাসীর দুর্দশা লাঘব, ঢাকার সৌন্দর্যবৃদ্ধি এবং আধুনিকায়নের জন্য নওয়াব আহসানুল্লাহ ১৯০১ সালের ৭ ডিসেম্বর প্রায় সাড়ে চার লাখ টাকা ব্যয় করে ঢাকায় প্রথম বিজলি বাতির ব্যবস্থা করেন। দেশে দেশে জনকল্যাণমূলক কাজে নওয়াবদের অর্থদানের একটি বিস্তারিত তালিকাও এই কক্ষে প্রদর্শিত হচ্ছে।

আহসান মঞ্জিল গ্যালারী ২১: প্রাসাদ ড্রয়িং রুম

প্রাসাদ ড্রয়িং রুমটি ১৯০৪ সালে তোলা আলোকচিত্র অনুযায়ী সাজানো হয়েছে। আহসান মঞ্জিলে আগত নওয়াবের বিশেষ অতিথিবৃন্দকে এখানে অভ্যর্থনা জানানো হতো। দোতলায় এই কক্ষটির বৈশিষ্ট্য হচ্ছে- এর মেঝেটি কাঠের পাটাতনে তৈরী এবং ছাদে কাঠের তৈরী কারুকার্যম্য ভল্টেড সিলিং। সিলিং-এর সাথে লাগানো বৃহৎ বাটির ন্যায় কাটগ্লাসের ঝাড়বাতিগুলো নওয়াবদের সময়কার। তবে অন্যান্য আসবাবপত্র, ঝাড়বাতি ও লাইট ফিটিংসগুলো ছবির সাথে মিলিয়ে তৈরী করা হয়েছে। তৈজসপত্র ও ফুলদানীসহ এখানে প্রদর্শিত নিদর্শনের অধিকাংশই আহসান মঞ্জিল ও এডওয়ার্ড হাউজে প্রাপ্ত নওয়াবদের সময়কালের নিদর্শন।

আহসান মঞ্জিল গ্যালারী ২২: গোলঘর (দোতলা)

প্রাসাদের শীর্ষে দৃশ্যমান সুউচ্চ গম্বুজটি এই কক্ষের উপরেই নির্মিত। এ কক্ষটিকে কেন্দ্র করে পুরো রঙমহলকে দুটি সুষম অংশে বিভক্ত করা যায়। এখানে প্রদর্শিত অস্ত্রশস্ত্রগুলো আহসান মঞ্জিলে প্রাপ্ত। দোতলার এই কক্ষটির সম্মুখস্থ বারান্দা থেকেই প্রাসাদের দক্ষিণদিকের বৃহৎ খোলা সিঁড়িটি ধাপে ধাপে বুড়িগঙ্গার পাড়ে প্রাকৃতিক দৃশ্য সংবলিত মনোরম ও বিস্তৃত অঙ্গনে গিয়ে মিশেছে।

আহসান মঞ্জিল গ্যালারী ২৩: বলরুম (নাচঘর)

১৯০৪ সালে তোলা আলোকচিত্র অনুযায়ী মূলানুরূপে এ গ্যালারীটি সাজানো হয়েছে। উনিশ শতকে ঢাকা শহরে এত বড় ও জাঁকজমকপূর্ণ নাচঘরের দৃষ্টান্ত আর ছিল না। ঢাকার নওয়াবগণ ছিলেন প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য উভয় প্রকার সংস্কৃতির সমঝদার। নওয়াব আবদুল গনি নাচ, জ্ঞান ও কবিতা চর্চার পৃষ্ঠপোষকতা করতেন। তার পুত্র নওয়াব আহসানুল্লাহ নিজেই একজন উঁচুদরের সঙ্গীতজ্ঞ, বাদক ও কবি ছিলেন। নওয়াবদের মানসিকতার সাথে সামঞ্জস্য রেখে এই কক্ষে একত্রে পাশাপাশি প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য উভয় প্রকার নাচ-গানের একশটি কাল্পনিক দৃশ্য বৃহদাকার তৈলচিত্রের মাধ্যমে দেখানো হয়েছে। এখানে প্রদর্শিত সিংহাসন ও ক্রিস্টাল চেয়ার- টেবিলগুলো নওয়াবদের আমলের মূল নিদর্শন। তবে অন্যান্য আসবাবপত্র ও আয়নাগুলো ছবিতে দৃশ্যমান আসবাবপত্রের অনুকরণে তৈরী।

৫/ ঢাকা জেলার ওয়ারী

ওয়ারী
ওয়ারী

ওয়ারীবুড়িগঙ্গা নদীর ওপর গড়ে ওঠা আদি ঢাকা শহরের প্রথম পরিকল্পিত আবাসিক এলাকা। ঢাকার বিখ্যাত দর্শনীয় স্থান বলধা গার্ডেনও ওয়ারীতে অবস্থিত। সপ্তদশ শতাব্দীতে চকবাজার, বাংলাবাজার, নবাবপুর ইত্যাদি এলাকায় নাগরিক বসতির পত্তন হয়েছিল ; ধীরে ধীরে সম্পূর্ণ অপরিকল্পিতভাবে যার বিস্তার ঘটেছিল ব্যক্তিগত প্রয়োজনের তাগিদে। একটি পরিকল্পিত আবাসিক এলাকা স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী-র শাসনামলে, উনিশ শতকের শেষ ভাগে। বর্তমান ওয়ারীর খাস জমি পত্তন দিয়ে জনবসতি গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। সে সময় ওয়ারীর ছয় ভাগের পাঁচ ভাগই ছিল জঙ্গলাকীর্ণ। ১৮৮৪ সালে ঢাকার রাজস্ব প্রশাসক বা ডিস্ট্রিক্ট কালেক্টর ছিলেন ফ্রেডরিক ওয়্যার। তিনি জনবসতি স্থাপনের লক্ষ্যে পুরো এলাকাটিকে তিন ভাগে বিভক্ত করে উন্নয়ন শুরু করেন। তার উদ্যোগে জঙ্গল কেটে রাস্তা তৈরি করা হয়। এসব ছিল লাল সুড়কি বিছানো পথ। এছাড়া রাস্তার দুপাশে তৈরি করা হয় ড্রেন। তৈরি করা হয় পানি সরবরাহের জন্য ওভারহেড পানির ট্যাংক বা রিজার্ভার। ঐতিহাসিকেরা মনে করেন যে ফ্রেডারিক ওয়্যারের নাম অনুসারেই এ আবাসিক এলাকাটির নামকরণ হয়েছিল ওয়ারী। প্রথমত সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে বিনামূল্যে আবাসিক প্লট বরাদ্দ করা হয় তবে শর্ত দেয় হয় যে তিন বছরের মধ্যে বসত বাড়ি তৈরি করে বসবাস শুরু করতে হবে। বাড়ীর নকশা অনুমোদন করিয়ে নেয়ার শর্তও যুক্ত ছিল। প্রতি ভিটার খাজনা ধরা হয় ছয় টাকা। যেহেতু অধিকাংশ সরকারি চাকুরে ছিল হিন্দু ধর্মালম্বী তাই ওয়ারী হিন্দু-প্রধান এলাকা হিসেবে গড়ে উঠেছিল। সে সময় ওয়ারী ছিল সবুজ নিবিড় একটি চমৎকার আবাসিক এলাকা। তৎকালীন ঢাকার সুন্দর ছিমছাম নিরিবিলি একটি আবাসিক এলাকা হয়ে উঠেছিল ওয়ারী। অধিকাংশই ছিল এক তলা বাড়ী, দুয়েকটি দোতলা। প্রায় প্রতিটি বাড়ী্র সম্মুখভাগে একটি ফুল বাগান, ভেতরাংশে উঠোন। এখানে-ওখানে পুকুর, সুপরিসর খেলার মাঠ, এসবও ছিল। বিংশ শতাব্দীর শেষ পাদে ওয়ারী হেরে যায় ক্রমবর্ধনশীল নতুন ঢাকা শহরের নতুন নতুন আবাসিক এলাকাগুলোর কাছে। ওয়ারী পরিণত হয় পুরোনো বাড়ী ও ভাঙ্গা সড়কের একটি শ্রীহীন এলাকায়। অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠে বহুতল ভবন। যানজটে আবদ্ধ এই এলাকা দেখে এখন (২০০৯) বোঝা দুষ্কর যে একদিন ওয়ারী ছিল ঢাকার সবচেয়ে অভিজাত আবাসিক এলাকা।

৬/ করতলব খান মসজিদ

করতলব খান মসজিদ
করতলব খান মসজিদ

করতলব খান মসজিদ বাংলাদেশের পুরনো ঢাকার বেগম বাজার এলাকায় অবস্থিত একটি প্রাচীন মসজিদ। এটি নওয়াব দেওয়ান মুর্শিদ কুলি খান কর্তৃক নির্মিত হয়েছিল। এটি ঢাকা শহরের আধুনিক কারাগারের পাশে অবস্থিত।

করতলব খান মসজিদ এর ইতিহাস

১৭০১-১৭০৪ সালের মধ্যে এই মসজিদটি নির্মাণ করেন এবং দেওয়ান মুর্শিদ কুলি খানের নামে এর নাম করণ করা হয়, তিনি কর্তালাব খান নামে পরিচিত ছিলেন। স্থানীয়রা মসজিদটিকে বেগমবাজার মসজিদ নামে চেনে।

১৭৭৭ সালে তৎকালীন নায়েব-ই-নাজিম শরফরাজ খানের কন্যা বেগম বাজারের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করেন। স্থানীয় এলাকা ‘বেগমবাজার’ এবং মসজিদের নাম তার নাম থেকে উৎপন্ন হয়। বাংলায় এই ধরনের একমাত্র পরিচিত উদাহরণ যা ‘বাওলি’ উত্তর ভারতীয় বা ডেকান বংশোদ্ভূত বলে বিবেচিত হয়, পরবর্তী সম্ভাবনাটি আরও বেশি যেহেতু এর নির্মাতা ঢাকায় আসার আগে ডেকানে ছিলেন।

করতলব খান মসজিদ এর অবস্থান

এ মসজিদটি পুরান ঢাকার বেগমবাজারে অবস্থিত।

করতলব খান মসজিদ এর স্থাপত্যশৈলী

পাঁচ গম্বুজ বিশিষ্ট এই মসজিদটি উঁচু ভিত্তির উপর নির্মাণ করা হয়। 

৭/ কলম্বো শাহীব সমাধি

কলম্বো শাহীব সমাধি
কলম্বো শাহীব সমাধি

কলম্বো শাহীব সমাধি ঢাকা জেলার সূত্রাপুরের ওয়ারীতে অবস্থিত একটি পুরাতন সমাধি ও বাংলাদেশের অন্যতম প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা। কলম্বো শাহীব সমাধি খ্রিস্টান সমাধিক্ষেত্রে অবস্থিত। খ্রিস্টান সমাধিক্ষেত্রে মূলত ছয় ধরনের সমাধির মধ্যে এর টাইপ হলো ‘এফ’। ১৭২৪ সালে কলম্বো সাহেব নামক জনৈক একজনকে এখানে সমাহিত করা হয়।

কলম্বো শাহীব সমাধি এর অবকাঠামো

‘নাগাপন ঘাট’, জোহান জোফানি, ক্যানভাসে তেলরং, ১৭৮৭ সংগ্রহ: চার্লস গ্রেগ; ‘নাগাপন ঘাট’ ছবিতে কলম্বো সাহেবের সমাধিসৌধ।

কলম্বো শাহীব সমাধিটি মোঘল স্থাপত্যরীতিতে বর্গাকারভাবে তৈরি করা হয়েছে। এর চারদিকের প্রতিটি দেয়ালে ৪টি করে প্রবেশপথ রয়েছে। সমাধিক্ষেত্রটির সামনের অংশে নকশা অঙ্কিত পিলার রয়েছে। সামনে রয়েছে অষ্টাভুজাকৃতির একটি পিলার ও পিলারে একটি পরীর ছবি আঁকা রয়েছে। সমাধিক্ষেত্রটিতে বেশ কয়েকটি শিলালিপি দেখতে পাওয়া যায় যদিও সেগুলো কালের বিবর্তনে নষ্ট হয়ে গিয়েছে।১৮৭৫ সালে কলম্বো শাহীব সমাধি(ডানে)

পুরো সমাধিক্ষেত্রটি তিনটি ভিন্ন ভিন্ন সমাধির সমন্বয়ে তৈরি। যদি যখন সমাধিটি নির্মাণ করা হয়েছিল তখনকার কাঠামোর সাথে বর্তমান কাঠামোর অনেক পার্থক্য রয়েছে কারণ বিভিন্ন সময়ে সমাধিক্ষেত্রটির ক্ষতিসাধিত হয়েছিল।

কলম্বো শাহীব এর পরিচয়

ব্রাডলি বার্ট লিখেছেন “It stands namelessly, dominating the whole cemetery and jealously keeping watch over the three graves that lie within.” অস্পষ্ট ভাবে জানা যায়, সমাধিটি কলম্বো সাহিব নামক একজন ব্যক্তির, যিনি কোম্পানির কর্মচারী ছিলেন। ১৮২৪ সালে বিশপ হেবার যখন খ্রিস্টান সমাধিক্ষেত্র, ঢাকা পরিদর্শন করেন, তখন তিনিও এই কলম্বো সাহিবের পরিচয় উদ্ঘাটন করতে পারেন নি।

৮/ কাটরা (ঢাকা)

কাটরা (ঢাকা)
কাটরা (ঢাকা)

কাটরা বা কাটারা এর আরবি ও ফরাসি অর্থ হলো ক্যারাভ্যানসারাই বা অবকাশযাপন কেন্দ্র। বাংলাদেশের ঢাকায় মুঘল শাসনামলে দুটি অন্যন্য কাটরা নির্মাণ করা হয়। এরমধ্যে একটি হলো বড় কাটারা ও অপরটি হলো ছোট কাটারা।

বড় কাটরা

মূল নিবন্ধ: বড় কাটরা১৮২৩ সালে অঙ্কিত বড় কাটারার চিত্র।

সম্রাট শাহজাহানের পুত্র শাহ সুজার নির্দেশে ১৬৪১ খ্রিষ্টাব্দে (হিজরী ১০৫৫) বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে এই ইমারতটি নির্মাণ করা হয়।[১] এর নির্মাণ করেন আবুল কাসেম যিনি মীর-ই-ইমারত নামে পরিচিত ছিলেন। প্রথমে এতে শাহ সুজার বসবাস করার কথা থাকলেও পরে এটি মুসাফিরখানা হিসাবে ব্যবহৃত হয়। মুঘল আমলে এটি নায়েবে নাজিমদের বাসস্থান তথা কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হত। এটি চকবাজারের পাশেই অবস্থিত।

ছোট কাটরা

মূল নিবন্ধ: ছোট কাটরা১৮১৭ সালে অঙ্কিত ছোট কাটারার চিত্র।

সুবেদার শায়েস্তা খান ছোট কাটারা নির্মাণ করেছিলেন। আনুমানিক ১৬৬৩ – ১৬৬৪ সালের দিকে এ ইমারতটির নির্মাণ কাজ শুরু হয় এবং এটি ১৬৭১ সালে শেষ হয়েছিল। এটির অবস্থান ছিল বড় কাটারার পূর্বদিকে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে। পরবর্তিতে ইংরেজ শাসনামলে বেশ কিছু অংশ সংযোজন করা হয়েছিল।

৯/ কার্জন হল

কার্জন হল
কার্জন হল

কার্জন হল বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাতে অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক ভবন, যা পুরাকীর্তি হিসেবে স্বীকৃত। এটি নির্মাণ করা হয় ঢাকা কলেজের ব্যবহারের জন্য। বর্তমানে, এটি বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান ও জীব বিজ্ঞান অণুষদের কিছু শ্রেনীকক্ষ ও পরীক্ষার হল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

কার্জন হল এর ইতিহাস

ফেব্রুয়ারি ১৯, ১৯০৪ সালে ভারতের তৎকালীন ভাইসরয় ও গভর্নর জেনারেল – লর্ড কার্জন এটির ভিত্তি-প্রস্তর স্থাপন করেন। বঙ্গভঙ্গ ঘোষিত হওয়ার পর প্রাদেশিক রাজধানী হিসেবে ঢাকাকে গড়ে তোলার জন্য রমনা এলাকার যেসব ইমারতের গুরুত্ব বৃদ্ধি পায় কার্জন হল তার মধ্যে অন্যতম। দানী লিখেছেন, ‘কার্জন হল নির্মিত হয়েছিল টাউন হল হিসেবে’। কিন্তু শরীফউদ্দীন আহমদ এক প্রবন্ধে দেখিয়েছেন এ ধারণাটি ভুল। এটি নির্মিত হয় ঢাকা কলেজের পাঠাগার হিসেবে। এবং নির্মাণের জন্য অর্থ প্রদান করেন ভাওয়ালের রাজকুমার। ১৯০৪ সালের ঢাকা প্রকাশ লিখেছিল_ “ঢাকা কলেজ নিমতলীতে স্থানান্তরিত হইবে। এই কলেজের সংশ্রবে একটি পাঠাগার নির্মাণের জন্য সুযোগ্য প্রিন্সিপাল ডাক্তার রায় মহাশয় যত্নবান ছিলেন। বড়লাট বাহাদুরের আগমন উপলক্ষে ভাওয়ালের রাজকুমারগণ এ অঞ্চলে লর্ড কার্জন বাহাদুরের নাম চিরস্মরণীয় করিবার নিমিত্তে ‘কার্জন হল’ নামে একটি সাধারণ পাঠাগার নির্মাণের জন্য দেড় লক্ষ টাকা দান করিয়াছেন।” ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রদ হলে, ঢাকা কলেজের ক্লাস নেয়া হতে থাকে কার্জন হলে। পরবর্তী সময়ে ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হলে কার্জন হল অন্তর্ভুক্ত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের জন্য, যা আজও ব্যবহৃত হচ্ছে।

কার্জন হল এর স্থাপত্য

১৯০৪ সালে ভারতের ভাইসরয় লর্ড জর্জ নাথানিয়েল কার্জন এই হলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন এবং তারই নামানুসারে এ ভবনের নাম হয় কার্জন হল। এ ভবনটিতে সংযোজিত হয়েছে ইউরোপ ও মুগল স্থাপত্য রীতির দৃষ্টিনন্দন সংমিশ্রণ; আংশিকভাবে মুসলিম স্থাপত্যরীতিও অনুসরণ করা হয় এতে। ভবনের বহির্পৃষ্ঠে কালচে লাল রঙের ইট ব্যবহার করা হয়েছে। আধুনিক স্থাপত্য বিদ্যা এবং মোগল কাঠামোর সমন্বয়ে তৈরি করা হয়েছে এর খিলান ও গম্বুজগুলো।

কার্জন হল এর ভৌগোলিক অবস্থান

ভৌগোলিক স্থানাঙ্কে কার্জন হলের অবস্থান ২৩.৭২৭২৯৬০° উত্তর ৯০.৪০১৮৭২৪° পূর্ব।

কার্জন হল এর ভাষা আন্দোলনে ভূমিকা

ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসের সাথে কার্জন হল জড়িয়ে আছে। ১৯৪৮ সালে এখানেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা তদানীন্তন পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু এতদসংক্রান্ত জিন্নাহর ঘোষণার প্রতি প্রথম প্রতিবাদ জানিয়েছিল।১৯৪৮ সালের ২৪ মার্চ কার্জন হলে অনুষ্ঠিত বিশেষ সমাবর্তনে জিন্নাহ পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা উর্দু হবে বলে ঘোষণা করলে কার্জন হলে উপস্থিত ছাত্ররা তখনই ‘নো-নো’ বলে প্রতিবাদ করে।

১০/ ঢাকা জেলার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দের ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিসৌধ। এটি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার কেন্দ্রস্থলে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের বহিপ্রাঙ্গণে অবস্থিত। প্রতি বছর ২১শে ফেব্রুয়ারি তারিখে এখানে হাজার হাজার মানুষ উপস্থিত হয়ে ভাষা আন্দোলনের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করে। এটি ঢাকার কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত অন্যতম পর্যটন বিন্দু।

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এর ইতিহাস

প্রথম শহীদ মিনার যেটি ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে তৈরি করা হয়েছিল কিন্তু পাকিস্তান পুলিশ ও পাকস্তানী সেনাবাহিনী সেটা ভেঙে ফেলে।

প্রথম শহীদ মিনার নির্মিত হয়েছিল অতিদ্রুত এবং নিতান্ত অপরিকল্পিতভাবে। ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্ররা ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ ফেব্রুয়ারি বিকেলে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ শুরু করে রাত্রির মধ্যে তা’ সম্পন্ন করে। শহীদ মিনারের খবর কাগজে পাঠানো হয় ঐ দিনই। শহীদ বীরের স্মৃতিতে – এই শিরোনামে দৈনিক আজাদ পত্রিকায় ছাপা হয় শহীদ মিনারের খবর।

মিনারটি তৈরি হয় মেডিকেলের ছাত্র হোস্টেলের (ব্যারাক) বার নম্বর শেডের পূর্ব প্রান্তে। কোণাকুণিভাবে হোস্টেলের মধ্যবর্তী রাস্তার গা-ঘেঁষে। উদ্দেশ্য বাইরের রাস্তা থেকে যেন সহজেই চোখে পড়ে এবং যে কোনো শেড থেক বেরিয়ে এসে ভেতরের লম্বা টানা রাস্তাতে দাঁড়ালেই চোখে পড়ে। শহীদ মিনারটি ছিল ১০ ফুট উচ্চ ও ৬ ফুট চওড়া। মিনার তৈরির তদারকিতে ছিলেন জিএস শরফুদ্দিন (ইঞ্জিনিয়ার শরফুদ্দিন নামে পরিচিত), ডিজাইন করেছিলেন বদরুল আলম; সাথে ছিলেন সাঈদ হায়দার। তাদের সহযোগিতা করেন দুইজন রাজমিস্ত্রী। মেডিকেল কলেজের সম্প্রসারণের জন্য জমিয়ে রাখা ইট, বালি এবং পুরান ঢাকার পিয়ারু সর্দারের গুদাম থেকে সিমেন্ট আনা হয়। ভোর হবার পর একটি কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয় মিনারটি। ঐ দিনই অর্থাৎ ২৪ ফেব্রুয়ারি সকালে, ২২ ফেব্রুয়ারির শহীদ শফিউরের পিতা অনানুষ্ঠানিকভাবে শহীদ মিনারের উদ্বোধন করেন। ২৬ ফেব্রুয়ারি সকালে দশটার দিকে শহীদ মিনার উদ্বোধন করেন আজাদ সম্পাদক আবুল কালাম শামসুদ্দিন। উদ্বোধনের দিন অর্থাৎ ২৬ ফেব্রুয়ারি পুলিশ ও সেনাবাহিনী মেডিকেলের ছাত্র হোস্টেল ঘিরে ফেলে এবং প্রথম শহীদ মিনার ভেঙ্গে ফেলে। এরপর ঢাকা কলেজেও একটি শহীদ মিনার তৈরি করা হয়, এটিও একসময় সরকারের নির্দেশে ভেঙ্গে ফেলা হয়।

অবশেষে, বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি দেবার পরে ১৯৫৭ খ্রিষ্টাব্দে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। এর নকশা করেছিলেন ভাস্কর হামিদুর রহমান। কিন্তু ১৯৫৮তে ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খান পাকিস্তানে সামরিক আইন জারীর পর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীকালে লেফটিন্যাণ্ট জেনারেল আযম খানের আমলে এর নির্মাণ কাজ পুনরায় শুরু করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত একটি কমিটি এর নির্মাণ কাজের তত্ত্বাবধান করে। মূল নকশা ছেঁটে-কেটে দ্রুত নির্মাণ কাজ শেষ করা হয়। মূল নকশার ফোয়ারা ও নভেরা আহমেদ এর ম্যুরাল ইত্যাদি বাদ পড়ে। নির্মাণ কাজ শেষ হয় ১৯৬৩ খ্রিষ্টাব্দের শুরুতে। ১৯৬৩ খ্রিষ্টাব্দের ২১শে ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলনের অন্যতম শহীদ ব্যক্তিত্ব আবুল বরকতের মাতা হাসিনা বেগম কর্তৃক নতুন শহীদ মিনারের উদ্বোধন করা হয়। [

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন

১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দে আবু হোসেন সরকারের মুখ্যমন্ত্রীত্বের আমলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের বর্তমান স্থান নির্বাচন এবং ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয়। তৎকালীন পূর্ত সচিব (মন্ত্রী) জনাব আবদুস সালাম খান মেডিক্যাল কলেজ হোস্টেল প্রাঙ্গণে ‘শহীদ মিনারের’ ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের জন্য চূড়ান্তভাবে একটি স্থান নির্বাচন করেন।

১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দের ২১শে ফ্রেব্রুয়ারি তারিখে জনৈক মন্ত্রীর হাতে ‘শহীদ মিনারের’ ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের কথা থাকলেও তাতে উপস্থিত জনতা প্রবল আপত্তি জানায় এবং ভাষা আন্দোলনের অন্যতম শহীদ রিক্সাচালক আওয়ালের ৬ বছরের মেয়ে বসিরণকে দিয়ে এই স্মৃতিসৌধের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়।

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এর স্থাপত্য নকশা

শেরেবাংলা এ.কে. ফজলুল হক এবং আওয়ামী লীগের উদ্যোগে যুক্তফ্রন্ট সরকার কর্তৃক ১৯৫৬ সালে পূর্ব পাকিস্তানের সর্বত্র স্বতঃস্ফূর্তভাবে একুশে ফেব্রুয়ারি পালিত হয়। এর ফলেই শহীদ মিনারের নতুন স্থাপনা নির্মাণ করা সহজতর হয়ে ওঠে। বাংলাদেশের বিখ্যাত চিত্রশিল্পী হামিদুর রহমান মহান ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত শহীদ মিনারের স্থপতি হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছেন। তারই রূপকল্পনায় ছিল স্নেহময়ী আনত মস্তক মাতার প্রতীক হিসেবে মধ্যস্থলে সুউচ্চ কাঠামো, এবং দুই পাশে সন্তানের প্রতীক স্বরূপ হ্রস্বতর দুটি করে কাঠামো। সামনে বাঁধানো চত্বর। পেছনভাবে দেয়ালচিত্র। সম্মুখ চত্বরে ভাস্কর নভেরা আহমেদের দুটি ম্যুরাল স্থাপনের পরিকল্পনাও ছিল। এছাড়া ছিল বেদনাঘন শহীদ দিবসের প্রতীক হিসেবে একটি ফোয়ারা স্থাপনের পরিকল্পনা। এ পরিকল্পনা মফিক ১৯৫৭ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। এ নকশায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হোস্টেলের সম্মুখভাগের বিস্তৃত এলাকা এর অন্তর্ভুক্ত ছিল। পরবর্তীকালে দ্রুত কাজ সমাপ্তির উদ্দেশ্যে মূল নকশার সরলীকরণ করা হয়। 

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পবিত্রতা ও মর্যাদা

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর ন্যস্ত। যদিও বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় এ শহীদ মিনারে ২১শে ফেব্রুয়ারির শ্রদ্ধার্ঘ্য অনুষ্ঠানের জন্য অনুদান প্রদান করে থাকে, সার্বিক দেখ-ভাল ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

শহীদ মিনার এলাকায় বিভিন্ন রকম কর্মকাণ্ড পরিচালিত হলেও এটি এখনো অসম্পূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। ২১ ফেব্রুয়ারি ব্যতীত শহীদ মিনার অবহেলিত অবস্থায় পড়ে থাকে। এ সময় শহীদ মিনার এলাকায় বিভিন্ন অসামাজিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়। মাদক সেবন থেকে শুরু করে ভাসমান মানুষের বর্জ্য ত্যাগের স্থানে পরিণত হয় এই ঐতিহাসিক এলাকা। ফলে শহীদ মিনার এলাকার পবিত্রতা ও মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকার ২০ কাঠা জায়গা দখলকারীরা দখল করে রেখেছে।

১১/ কোকিলপেয়ারি জমিদার বাড়ি

কোকিলপেয়ারি জমিদার বাড়ি
কোকিলপেয়ারি জমিদার বাড়ি

কোকিলপেয়ারি জমিদার বাড়ি বাংলাদেশ এর ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত এক ঐতিহাসিক জমিদার বাড়ি।

কোকিলপেয়ারি জমিদার বাড়ি এর ইতিহাস

আনুমানিক ১৮০০ শতকে জমিদার ব্রজেন কুমার প্রায় ৪ একর জায়গার উপর এই জমিদার বাড়িটি প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এই জমিদারের আরেক নাম হচ্ছে সুদর্শন রায়।

কোকিলপেয়ারি জমিদার বাড়ি এর অবকাঠামো ও বর্তমান অবস্থা বর্তমানে

এই ঐতিহাসিক জমিদারবাড়িটি শিক্ষক আবাসন হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছ।

১২/ খান মোহাম্মদ মৃধা মসজিদ

খান মোহাম্মদ মৃধা মসজিদ
খান মোহাম্মদ মৃধা মসজিদ

খান মহম্মদ মৃর্ধার মসজিদ (ইংরেজি: Khan Mohammad Mridha Mosque) বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহরের পুরানো ঢাকা এলাকার আতশখানায় অবস্থিত একটি প্রাচীন মসজিদ। এটি ১৭০৬ খ্রিস্টাব্দে নায়েবে নাযিম ফররুখশিয়ারের শাসনামলে নির্মিত হয়। ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুনের মতে ঢাকার প্রধান কাজী ইবাদুল্লাহের আদেশে খান মহম্মদ মৃর্ধা এটি নির্মাণ করেন। ১৭০৪-০৫ সালে তিনি নির্মাণের আদেশ দিয়েছিলেন।খান মোহাম্মদ মৃধা মসজিদ, ২০১৭।

বর্তমানে বাংলাদেশ সরকারের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ এই মসজিদের রক্ষণাবেক্ষণ করে থাকে।

১৩/ খেলারাম দাতার মন্দির

খেলারাম দাতার মন্দির
খেলারাম দাতার মন্দির

খেলারাম দাতার মন্দির বা খেলারাম দাতার বিগ্রহ মন্দির ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জে অবস্থিত একটি প্রাচীন মন্দির ও বাংলাদেশের অন্যতম প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা।

খেলারাম দাতার মন্দির এর নির্মাণকাল

মন্দিরটির প্রতিষ্ঠা তারিখ সঠিকভাবে জানা যায় না। তবে এর নির্মাণশৈলী দেখে প্রত্নতত্ত্ব বিশেষজ্ঞদের ধারণা এ স্থাপনাটি উনিশ শতকের শেষ দিকে অথবা বিশ শতকের শুরুর দিকে নির্মিত হয়েছিল।

খেলারাম দাতার মন্দির এর ইতিহাস

কিংবদন্তী অনুসারে, খেলারাম দাতা ছিলেন তৎকালীন সময়ের উক্ত অঞ্চলের বিখ্যাত ডাকাত সর্দার। তিনি ইছামতি নদীতে ডাকাতি পরিচালনা করতেন। জনশ্রুতি অনুসারে, ডাকাতির ধনসম্পদ তিনি ইছামতি নদী থেকে সুড়ঙ্গপথে তার বাড়িতে নিয়ে রাখতেন ও পরবর্তীতে সেগুলো গরীবদের মাঝে দান করতেন। তিনি পূজা-অর্চনার জন্য একটি মন্দিরও নির্মাণ করেছিলেন। সেই থেকে মন্দিরটি খেলারাম দাতার বিগ্রহ মন্দির নামে পরিচিত।

খেলারাম দাতার মন্দির এর নির্মানশৈলী

মন্দিরটিতে নির্মানকৌশলে বঙ্গীয় বা গৌড়ীয় রীতির প্রতিফলন রয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ইউরোপীয় ধারা। অতীতে মন্দিরটির মূল রং ছিল লালচে। সাম্প্রতিক সময়ে সংস্কার কাজের মাধ্যমে মন্দিরের গায়ে সাদা রঙের প্রলেপ দেওয়া হয়েছে। পুরো কমপ্লেক্সটি আটকক্ষ বিশিষ্ট একটি দ্বিতল ভবন। বর্তমানে ভবনটির শুধু ওপরের দোতলা টিকে রয়েছে। নিচতলায় অনেকগুলো কক্ষ থাকলেও এখন প্রায় সবই মাটিতে ঢেকে আছে। ভবনের ভারী দেয়াল ও পিলার দেখে নির্মাণকৌশল সম্পর্কে ধারণা করা যায়। দোতলার চারপাশে ও চার কোণে রয়েছে বাংলা ঘরের আকৃতিতে এক কক্ষবিশিষ্ট আটটি ঘর। মাঝে মঠ আকৃতির আরেকটি ঘর রয়েছে। ঘরটি মন্দির হিসেবে ব্যবহৃত হতো। জনশ্রুতি অনুসারে, প্রাপ্ত অনেক মূল্যবান মূর্তি ও ধনসম্পদ তিনি এখানে লুকিয়ে রাখতেন।

১৪/ গৌড়ীয় মাধব মঠ

গৌড়ীয় মাধব মঠ
গৌড়ীয় মাধব মঠ

গৌড়ীয় মাধব মঠ বা শ্রী শ্রী মাধব গৌড়ীয় মঠ হল বাংলাদেশের পুরনো ঢাকার নারিন্দায় অবস্থিত একটি মঠ৷ এটি গৌড়ীয় বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের মঠ।

গৌড়ীয় মাধব মঠ এর ইতিহাস

১৯২১ সালে এই মঠের প্রতিষ্ঠা ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী ঠাকুর করেন ৷ শ্রী শ্রী মাধব গৌড়ীয় মঠের সর্বশেষ সভাপতি ছিলেন শ্রী গিরিধারী লাল মোদী।

গৌড়ীয় মাধব মঠ এর মন্দির

মঠের মধ্যে রয়েছে একটি কৃষ্ণ মন্দির, নাটমণ্ডপ ও যাত্রীনিবাস ৷ কৃষ্ণমন্দিরটি শ্বেতপাথর দিয়ে তৈরি । মঠের নাটমণ্ডপটি খুব সুন্দর।এছাড়া এখানে ভক্তি বিলাস তীর্থ ভবন রয়েছে।

১৫/ ঢাকা জেলার চন্দ্রিমা উদ্যান

চন্দ্রিমা উদ্যান
চন্দ্রিমা উদ্যান

চন্দ্রিমা উদ্যান বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহরের প্রাণকেন্দ্র সংসদ ভবনের পাশে অবস্থিত। সাবেক রাষ্ট্রপতি বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সমাধি এখানে অবস্থিত। সমাধিকে কেন্দ্র করে এখানে মাজার কমপ্লেক্স প্রতিষ্ঠা করা হয়। প্রতিদিন অসংখ্য দর্শনার্থী এই উদ্যানটি এবং লেকটি দেখতে আসেন। শহরের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রাতঃভ্রমণকারীদের জন্য এটি একটি উত্তম স্থান। ঢাকা শহরের উদ্যানগুলির মধ্যে এটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি উদ্যান।

চন্দ্রিমা উদ্যান এর নামকরণ

প্রথম দিকে এই উদ্যানের নামকরণ করা হয়েছিল “চন্দ্রিমা উদ্যান”। এই নামকরণের প্রেক্ষাপট নিয়ে কিছু মতামতও পাওয়া যায়। কারো কারো মতে, এখানে চন্দ্রিমা নামে একজনের বাড়ি ছিল, সেখান থেকেই এই নামের উৎপত্তি। আবার কারো কারো মতে, দক্ষিণপাশে অর্ধচন্দ্রাকৃতির ক্রিসেন্ট লেকের সাথে মিল রেখে রাষ্ট্রপতি এরশাদ এর নাম চন্দ্রিমা উদ্যান রেখেছিলেন। দীর্ঘদিন একে গবাদিপশুর খামার, খাস জমি এবং চাষাবাদ জমি হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। ১৯৮১ সালে এই স্থানে মরহুম রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে সমাধিস্থ করা হয় এবং এলাকাটিকে পরিষ্কার করে দর্শণার্থীদের জন্য মনোরম স্থান হিসেবে গড়ে তোলা হয়। পরবর্তী সময়ে মরহুম জিয়াউর রহমানের স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর চন্দ্রিমা উদ্যানের নাম পরিবর্তন করে একে জিয়া উদ্যান নামকরণ করেন। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ সরকার জিয়া উদ্যানের নাম পরিবর্তন করে আবার চন্দ্রিমা উদ্যান করেছিল। পরে বিএনপি ক্ষমতায় এসে সেটার নাম পরিবর্তন করে জিয়া উদ্যান নাম করে। বর্তমানে আওয়ামী লীগ সরকার আবার নাম পরিবর্তন করে চন্দ্রিমা উদ্যান রেখেছে। এখন এই স্থানটি কারো কাছে চন্দ্রিমা উদ্যান আবার কারো কাছে জিয়া উদ্যান নামে পরিচিত।

চন্দ্রিমা উদ্যান এর অবস্থান ও আয়তন

চন্দ্রিমা উদ্যানটি শেরে বাংলানগরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত। জিয়া উদ্যানের দক্ষিণে জাতীয় সংসদ ভবন, উত্তরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র ও বাণিজ্যমেলার মাঠ, পশ্চিমে গণভবন এবং পুর্বে তেজগাঁও পুরানো বিমানবন্দর অবস্থিত। এটির অবস্থান । এ উদ্যানটি ৭৪ একর জায়গা জুড়ে অবস্থিত।

চন্দ্রিমা উদ্যান সমাধি কমপ্লেক্স

জিয়া উদ্যান ও শহীদ জিয়ার সমাধি কমপ্লেক্স দেশের একটি দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা। প্রতিদিন ঢাকা মহানগরীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার মানুষ আসেন এই সমাধি কমপ্লেক্স ও উদ্যান দেখার জন্য। উদ্যানে ভ্রমণ করে হাজার হাজার মানুষ। জিয়া উদ্যানে শহীদ জিয়ার সমাধি কমপ্লেক্স নির্মাণ শুরু হয় ২০০২ সালের ডিসেম্বর মাসে। ৭৪ একর জমির বিশাল সবুজ শ্যামলিমায় এর অবস্থান। গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ওই প্রকল্প বাস্তবায়ন করে। সমাধির পুর্ব ও পশ্চিমে রয়েছে ক্যান্টিন, দক্ষিণে ঝুলন্ত সেতু, উত্তরে মেমোরিয়াল হল ও মসজিদ।

চন্দ্রিমা উদ্যান এ ক্রিসেন্ট লেক ও ফোয়ারা

জিয়াউর রহমানের সমাধির দক্ষিণ পাশে ক্রিসেন্ট লেক অবস্থিত। এটি বাঁকা চাঁদের মত দেখতে বিধায় ক্রিসেন্ট লেক নাম রাখা হয়েছে। এটির দক্ষিণ পাশে চমৎকার করে সিঁঁড়ি তৈরি করা হয়েছে ও দর্শণার্থীদের বসার স্থান করা হয়েছে চারপাশজুড়ে। ভিতরে প্রবেশের জন্য লেকের মাঝখান দিয়ে তৈরি হয়েছে মনোরম সেতু। ক্রিসেন্ট লেকের মাঝে ঝুলন্ত সেতুর দুই পাশে দুটি ফোয়ারা রয়েছে। সন্ধ্যার পর ফোয়ারাগুলো চালু করা হলে এক নয়নাভিরাম দৃশ্যের অবতারণা ঘটে।

চন্দ্রিমা উদ্যান এর ঝুলন্ত সেতু

ক্রিসেন্ট লেকের উপর অবস্থিত ঝুলন্ত সেতু।

শহীদ জিয়ার সমাধিতে যাওয়ার জন্য ক্রিসেন্ট লেকের ওপর নির্মাণ করা হয়েছে ঝুলন্ত সেতু। নয়নাভিরাম ওই প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হয়েছিল ৩৫ কোটি টাকা। জাতীয় সংসদের স্থপতি লুই আই ক্যানের মাস্টারপ্ল্যান নকশার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে জিয়া উদ্যানের আধুনিকায়ন করা হয়েছিল। কাজের সময় প্রাধান্য দেয়া হয়েছিল নৈসর্গিক সৌন্দর্যের বিস্তৃতিকে। ২০০৪ সালের ৭ই নভেম্বর ব্রিজটি উদ্বোধন করেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ড. ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ ও প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। বাঁকা চাঁদ লেক বা ক্রিসেন্ট লেকের ওপর স্থাপিত হয়েছে এই সাসপেন্ডেড ব্রিজটি। এই সেতু সংসদ ভবনের উত্তর পাশ থেকে সমাধি পর্যন্ত জায়গাটিকে দিয়েছে বাড়তি সৌন্দর্য। অর্ধচন্দ্রাকৃতির সেতুটি বিশেষত্ব হল বিশেষভাবে স্টিল হ্যাঙ্গারের ওপর তৈরি হয়েছে। দাঁড়িয়ে আছে সিঙ্গেল আরসিসি আর্চের ওপর। হ্যাঙ্গার পাইপ দিয়ে বিশেষ কৌশলে চাপিয়ে দেয়া হয়েছে ব্রিজের ওজন। আর্চটি ত্রিমাত্রিক কনক্রিট দিয়ে তৈরি। বিদেশিরা এটা করে থাকেন স্টিল দিয়ে। সেতুর পাটাতন বা ডেকে বসানো হয়েছে আধুনিক উন্নত মানের গ্লাস।

বিদেশ থেকে আমদানি করা ওই গ্লাসের নাম টেম্পারড গ্লাস। এর পুরুত্ব ৩১ মিলিমিটার। মাঝে ভিপিএফ দিয়ে দু’টি গ্লাস পরস্পরের সঙ্গে সংযুক্ত। হট ডিডপ গ্যালভানাইজিং স্টিল ফ্রেমের ওপর টেম্পারড গ্লাস বসানো। সেতুর কম্পন মাত্রা ৫ হার্জ, লাইভ লোড ১৪০ পিসিআই এবং ব্রিজের ওজন ১২০ টন। আর ব্রিজটি ওজন সইতে পারে ২০০ টনেরও বেশি। ব্রিজটির রেলিং তৈরি করা হয়েছে অ্যাসেস স্টেইনলেস স্টিল দিয়ে। মাঝে আছে স্টিলের চিকন ক্যাবল। সেতুর নিচে স্থাপন করা হয়েছে ৩০টি বিশেষ ধরনের লাইট। পাটাতন থেকে রঙিন আলোর বিচ্ছুরণ সেতু পথটিকে আলোকময় রাস্তায় পরিণত করে। ঝুলন্ত সেতুর পশ্চিম ও পূর্ব পাশে বসানো হয়েছে বেশ কয়েকটি বড় বড় ফোয়ারা। উপরের দিকে ধাবমান ফোয়ারার পানি আর সেতুর আর্চ মিলে চতুর্মাত্রিক আবহ সৃষ্টি করে এখানে আগতদের মনে। সেতুর গোড়ার দিকে মাটির নিচ থেকে নেমে এসেছে রঙিন পানির ঝর্ণা। সেতুর ওপরে মাঝখানে রয়েছে কৌণিক রঙিন আলোর বিচ্ছুরণ। দেশের প্রতিটি অন্ধকার কোণায় আলো ছড়িয়ে দেওয়াই এর মূল থিম।

চন্দ্রিমা উদ্যান এর সমাধি

রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সমাধি।

তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান ১৯৮১ সালের ৩০শে মে ভোর রাতে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে শহীদ হন। পরদিন তার লাশ চট্টগ্রাম শহর থেকে ১৭ মাইল দূরে রাঙ্গুনিয়া ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের পাশে পাহাড়ের ঢালুতে দাফন করা হয়। সেখান থেকে ১লা জুন জিয়াউর রহমানের লাশ ঢাকায় নিয়ে আসা হয়। মানিক মিয়া এভিনিউতে ওই সময় স্মরণকালের বৃহত্তম জানাজা শেষে তৎকালীন চন্দ্রিমা উদ্যানে তার লাশ দাফন করা হয়েছিল, যা পরবর্তী সময়ে জিয়া উদ্যান হিসেবে নামকরণ করা হয়।

শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মূল সমাধির নকশা করেছিলেন প্রয়াত স্থপতি রাজিউল আহসান। সংসদ ভবনের সঙ্গে একই সরল রেখায় এর অবস্থান। সমগ্র উদ্যানের রাস্তা, অন্যান্য অবকাঠামো বিন্যস্ত হয়েছে এই সমাধির কেন্দ্র থেকেই। সমাধির পূূর্ব ও পশ্চিমে রয়েছে ক্যন্টিন, দক্ষিণে ঝুলন্ত সেতু, উত্তরে মেমোরিয়াল হল ও মসজিদ। সমাধিকে ঘিরে সাদা মার্বেল পাথরে তৈরি হয়েছে ৩৬ ফুট ব্যাসের বেদি। মূল কবর এবং বেদির মাঝে বসানো হয়েছে কালো রংয়ের ট্রান্সপারেন্ট পাথর। বৃত্তাকার বেদির বাইরে চারপাশে মার্বেল পাথরে বসানো চত্বর। সমাধির ওপরে স্থাপন করা হয়েছে স্টিল ও গ্লাসের তৈরি স্বপ্নিল চাঁদোয়া ছাউনি যা ভূমি থেকে ৩৭ ফুট উচ্চতায় রয়েছে।সমাধির চারপাশের কনক্রিটের দেয়ালে সংযোজিত হয়েছে ট্রান্সপারেট ফেয়ার ফেস। যাকে বলা হয় ফেয়ার ফেস কনক্রিট ব্লক। বাইরের কনক্রিটের দেয়ালের ওপর হেলান দিয়ে আছে সবুজ ঘাসের সুশোভিত চত্বর। সমাধিতে প্রবেশের রাস্তা রয়েছে চারটি। উদ্যানের সুবিন্যস্ত রাস্তাগুলো আপন গন্তব্যে চলে গেছে এই চার রাস্তার উৎস থেকে। সব মিলিয়ে সমাধির অভ্যন্তরীণ আয়তন হচ্ছে ১৪ হাজার ৪০০ বর্গফুট।

চন্দ্রিমা উদ্যান এর মসজিদ ও মেমোরিয়াল হল

সংসদ ভবনের উত্তর পাশের প্রধান ফটক থেকে একই সরল রেখায় ঝুলন্ত সেতু, সমাধির ছাউনির চূড়া এবং মসজিদের মিনারের কেন্দ্র। উদ্যানের উত্তর পাশে নির্মিতব্য দ্বিতল ভবনের উপর রয়েছে মসজিদ। ওই ভবনে রয়েছে বিশ্রামের জায়গা। নিচে আর্কাইভ ও গবেষণাগার, পাঠাগার ও ১০০ জন ধারণ ক্ষমতার একটি সেমিনার হল। এটি ২০০৬ সালের ১৯শে মার্চ উদ্বোধন করেন তৎকালীন গণপূর্ত মন্ত্রী মির্জা আব্বাস। কিন্তু এখন পর্যন্ত এটার কাজ সম্পূর্ণ হয়নি।

চন্দ্রিমা উদ্যান এর সুশোভিত বাগান

জিয়া উদ্যানের পূর্ব ও পশ্চিম চত্বরে রয়েছে দু’টি সুশোভিত বাগান। তাতে রয়েছে বিভিন্ন রকমের ফুল আর পাতা বাহারের সমাহার। লাগানো হয়েছে দেশি-বিদেশি সবুজ ঘাস ও গাছগাছালি। বাগানে রয়েছে নানা প্রজাতির গাছ। এর মাঝে উল্লেখযোগ্য গাছগুলো হচ্ছে, পাম গাছ, ঝাউ গাছ, আকাশিয়া গাছ, আম গাছ, কাঁঁঠাল গাছ, বকুল গাছ, ক্যাক্টাস , জারুল, খরখরিয়া, সাইকাস পাম, অ্যারাবিয়ান জেসমিন, কৃষ্ণচূড়া, আমলকি, হরিতকী, নিম, মেহগনি সহ নানা প্রকারের কড়ই ইত্যাদি।

চন্দ্রিমা উদ্যান এর খোলা চত্বর

বাগানের মধ্যে রয়েছে খোলা চত্বর, যা ওপেন থিয়েটার বা পথ নাটকের জন্য একটি আদর্শ স্থান। পূর্ব ও পশ্চিম অক্ষ বরাবর সুদৃশ্য দু’টি ল্যান্ডস্কেপের মাধ্যমে করা হয়েছে এই খোলা চত্বর। উদ্যানে যারা প্রাত্যহিক ভ্রমণ, বিশ্রাম বা সমাধি জিয়ারতের জন্য আসেন তাদের জন্য রাস্তাগুলো তৈরি রয়েছে আলাদাভাবে। এখানে টয়লেট, বিশ্রামাগার, ফাস্টফুডের দোকান, বসে বিশ্রাম নেয়ার জন্য চমৎকার সব বেঞ্চ রয়েছে। বসার স্থানগুলোয় সাদা পাথর বসানো হয়েছে। রোদ-বৃষ্টিতে দর্শনার্থীদের জন্য তৈরি হয়েছে ছাউনি। সমাধি কমপ্লেক্সে রাখা হয়েছে অত্যাধুনিক সিসিটিভি ক্যামেরা। কম্পিউটারের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা যায় পুরো এলাকার নিরাপত্তা ও সাউন্ড সিস্টেম। রাস্তায় লাইট পোস্টের সঙ্গে রয়েছে গোপন সাউন্ড বক্স, যা এখানে আসা দর্শণার্থীদের জন্য এক নতুন চমক। বিভিন্ন সময় বক্সগুলোতে বাজানো হয় কোরআন তেলাওয়াত, দেশাত্মবোধক গান ইত্যাদি। এ ধরনের সাউন্ড বক্স সেতু ও সমাধির চারপাশেও সংযোজন করা হয়েছে।

চন্দ্রিমা উদ্যান এর পুকুর

শহীদ জিয়ার সমাধির পূর্ব ও পশ্চিম পাশের উদ্যানের ভেতরে আছে দু’টি পুকুর। এ দু’টি পুকুরকে সংস্কার করে দর্শনীয় করার জন্য শানবাঁধানো ঘাট করা হয়েছে। আগেই পুকুরের মাঝখান দিয়ে সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা ছিল। ওই সময় প্রকৌশলীরা এগুলো অর্নামেন্টাল ব্রিজ বা অলঙ্কারিক সেতু হিসেবে আখ্যায়িত করেন। প্রকৌশলীরা ওই সময় পুকুরগুলোকে ইলিপস বা ডিম্বাকৃতির রূপ দেয়ার চেষ্টা করেন। যদিও শেষ পর্যন্ত পুকুরের ওপরের সেতুগুলো নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়নি।

চন্দ্রিমা উদ্যান এর শরীর চর্চা নিয়ে উদ্যান

প্রতিদিন প্রভাত বেলা ভোর ৫টা থেকে সকাল ৮টা পযর্ন্ত এখানে চলে বিভিন্ন দলে, বিভিন্ন নামে ভাগ হয়ে গ্রুপ ভিত্তিক শরীরচর্চা। এখানে যে সব শরীরচর্চার গ্রুপ গুলো আছে তার মধ্যে সবচেয়ে বড় গ্রুপ হচ্ছে প্রায় ১০০০ সদস্যের “চন্দ্রিমা ফিটনেস ক্লাব”, যা বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ফিটনেস ক্লাব হিসাবে পরিচিত। দীর্ঘ দেড় যুগ ধরে শরীরচর্চাবিদ ওস্তাদ আমির হোসেনের আন্তরিক নিদের্শনার মধ্যে দিয়ে সম্পূর্ণ ফ্রিতে এক সাথে ৪০০ থেকে ৫০০ জন লোক নিয়মিত সকালে ব্যায়াম করেন এই ক্লাবে। যেখানে দেশের সংসদ সদস্য, সাবেক মন্ত্রী, সরকারী উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা থেকে শুরু করে চালের আড়তদার পর্যন্ত সবাই এক কাতারে, একই সাথে শরীরচর্চা করে থাকেন। এই ক্লাবের একটি আলোচিত শ্লোগান হলো “সকাল বেলার হাওয়া, কোটি টাকার দাওয়াহ্”। এছাড়া ইন্সট্রাক্টর সেলিমের নির্দেশনায় “শুভ্র সকাল” প্রায় ১০০ সদস্যকে শরীরর্চচা করায়। এছাড়া ছোট ছোট দল গুলোর মধ্যে “ভোরের শিশির”, “বন্ধন ফিটনেস ক্লাব”, “প্রভাতে চন্দ্রিমা”, “ভোরের শিশির ফিটনেস ক্লাব”, “চন্দ্রিমা আলাপন ফিটনেস ক্লাব” উল্লেখযোগ্য। প্রতি শুক্রবার টাকার বিনিময়ে শরীরর্চচা ও কারাতে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে “ডায়মন্ড মার্শাল আর্ট ট্রেনিং সেন্টার”। এছাড়া আছে বাচ্চাদের স্কেটিং শেখার সুব্যবস্থা।

চন্দ্রিমা উদ্যান এর সার্বিক ব্যবস্থাপনা

চন্দ্রিমা উদ্যানের সার্বিক তত্ত্বাবধানের দায়িত্ত্বে রয়েছে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনে তিনটি বিভাগের উপর পার্কের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব রয়েছে।

  • গণপূর্ত: পার্কের কাঠামোগত যাবতীয় নির্মাণ এবং দেখাশোনার দায়িত্বে রয়েছে এই বিভাগ।
  • আরবারি কালচার: মাঠের গাছপালা লাগানো, এগুলোর যত্ন নেয়া, ঘাস লাগানো ও পরিচর্যা ইত্যাদি দায়িত্ব পালন করে এই বিভাগ।
  • ইলেক্ট্রনিক্স: বৈদ্যুতিক যাবতীয় কর্মকাণ্ড এই বিভাগের দায়িত্বে রয়েছে। এছাড়া লেক এবং পুকুরের মাছের দেখাশোনার দায়িত্বে রয়েছে এই বিভাগ।

পার্কের বিভিন্ন বিষয় তদারকির দায়িত্বে রয়েছেন একজন কার্য সহকারী। ১০ জন মালি উদ্যানটির গাছপালা পরিচর্যার দায়িত্ব পালন করছেন। তারা পূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনে চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী হিসেবে নিয়োজিত আছেন। তাদের বেতন স্কেল হল ৪১০০ টাকা। শাখা অফিসারের মাধ্যমে তারা বেতন পেয়ে থাকেন।

চন্দ্রিমা উদ্যান এর নিরাপত্তা ব্যবস্থা

উদ্যানের সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার দায়িত্বে রয়েছেন ২২ জন আনসারের একটি দল এবং কিছু পুলিশ সদস্য। আনসাররা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে রয়েছেন। তারা তিনটি শিফটে ভাগ হয়ে তাদের দায়িত্ত্ব পালন করেন। তাদের প্রধান দায়িত্ব হল উদ্যানের নিরাপত্তার দিকটি দেখাশোনা করা এবং অসামাজিক কার্যকলাপ মুক্ত রাখা। উদ্যানের পশ্চিমপ্রান্তে ২৫ থেকে ৩০ জন পুলিশ সদস্য নিয়োজিত আছেন, তবে তাদের প্রধান দায়িত্ব হল গণভবনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। উদ্যানের নিরাপত্তার বিষয়ে তারা আনসার সদস্যদের সহায়তা দিয়ে থাকেন।

১৬/ ছোট কাটারা

ছোট কাটারা
ছোট কাটারা

ছোট কাটারা শায়েস্তা খানের আমলে তৈরি ঢাকায় একটি ইমারত। আনুমানিক ১৬৬৩ – ১৬৬৪ সালের দিকে এ ইমারতটির নির্মাণ কাজ শুরু হয় এবং তা ১৬৭১ সালে শেষ হয়েছিল। এটির অবস্থান ছিল বড় কাটারার পূর্বদিকে হাকিম হাবিবুর রহমান লেনে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে। ইমারতটি দেখতে অনেকটা বড় কাটারার মত হলেও এটি আকৃতিতে বড় কাটারার চেয়ে ছোট এবং এ কারণেই হয়তো এর নাম হয়েছিল ছোট কাটারা। তবে ইংরেজ আমলে এতে বেশ কিছু সংযোজন করা হয়েছিল। ১৮১৬ সালে খ্রিস্টান ধর্মপ্রচারক লিওনার্দ এখানে ঢাকার প্রথম ইংরেজি স্কুল খুলেছিলেন।

বর্তমানে ছোট কাটারা বলতে কিছুই বাকি নেই শুধু একটি ভাঙা ইমারত ছাড়া। যা শুধু বিশাল তোরণ মতন সরু গলির উপর দাঁড়িয়ে আছে। চারদিকে অসংখ্য দোকান এমন ভাবে ঘিরে ধরেছে যে দেখে বোঝার উপায় নেই যে এখানে মুঘল আমলের এমন একটি স্থাপত্য ছিল।

ছোট কাটারা এর ব্যবহার

শায়েস্তা খানের আমলে ছোট কাটরা নির্মিত হয়েছিল সরাইখানা বা প্রশাসনিক কাজে ব্যবহারের জন্য। কোম্পানি আমলে ১৮১৬ সালে খ্রিস্টান ধর্মপ্রচারক লিওনারদ ছোট কাটরায় খুলেছিলেন ঢাকার প্রথম ইংরাজি স্কুল। ১৮৫৭ সালে, এখানে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল ঢাকার প্রথম নরমাল স্কুল। উনিশ শতকের শেষ দিকে অথবা বিশ শতকের প্রথম দিকে ছোট কাটরা ছিল নবাব পরিবারের দখলে। এবং তাতে তখন ‘ কয়লা ও চুনার কারখানার কাজ’ চলত।

ছোট কাটারা এর বিবি চম্পার স্মৃতিসৌধ

ছোট কাটরার সাথে বিবি চম্পার স্মৃতিসৌধ অবস্থিত ছিল।, এক গম্বুজ, চার কোণা, প্রতিপাশে ২৪ ফুট দীর্ঘ ছিল স্মৃতিসৌধটি। তায়েশ লিখেছেন, ‘পাদ্রী শেফার্ড ওটা ধ্বংস করে দিয়েছেন।’ শেফার্ড বোধহয় কবরটি মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছেন। বিবি চম্পা কে ছিলেন তা সঠিক জানা যায় নি। তবে কারো মতে তিনি শায়েস্তা খাঁর মেয়ে।

ছোট কাটরার বর্তমান অবস্থা

বর্তমানে, ছোট কাটরাকে প্রায় ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। কিন্তু এখনও এর ধ্বংসাবশেষ দেখলে বোঝা যায় মোঘল আমলে নদীতীরে দাঁড়িয়ে থাকা কাটরাকে কী সুন্দরই না দেখাত।

১৭/ জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান, বাংলাদেশ

জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান, বাংলাদেশ
জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান, বাংলাদেশ

জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান বা বাংলাদেশ ন্যাশনাল হার্বেরিয়াম বাংলাদেশে উদ্ভিদ প্রজাতি সংরক্ষণ, গবেষণা ও প্রদর্শনের সবচেয়ে বড় কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত। কেন্দ্রটি ন্যাশনাল বোটানিক্যাল গার্ডেন নামেও পরিচিত। উদ্যানটি ঢাকার মিরপুরে ঢাকা চিড়িয়াখানার পাশে অবস্থিত। ১৯৬১ সালে প্রায় ২০৮ একর (৮৪ হেক্টর) জায়গা জুড়ে উদ্যানটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ঢাকার আরেকটি উদ্যান বলধা গার্ডেন প্রশাসনিক দিক দিয়ে এই উদ্যানেরই অংশ। জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ উদ্ভিদ উদ্যান। প্রতিবছর প্রায় ১৫ লক্ষ দর্শনার্থী উদ্যানটিতে বেড়াতে আসেন।

জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান, বাংলাদেশ এর ব্যবস্থাপনা ও সংগ্রহ

জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানে বর্তমানে ১১৭টি গোত্রভুক্ত ৯৫২ প্রজাতির গাছপালা রয়েছে। এর মধ্যে ২৫৬টি প্রজাতির ৩৫ হাজার বৃক্ষ, ৩১০ প্রজাতির ১০ হাজার গুল্ম , ৩৭৮ প্রজাতির ১২ হাজার বিরুৎ ও লতা জাতীয় উদ্ভিদ। ২০৮ একর উদ্যানটি মোট ৫৭টি সেকশনে বিভক্ত। এতে আছে বিভিন্ন আকারের মোট ৭টি জলাশয়। জলাশয়গুলোর মোট আয়তন ১১ একর। একটি জলাশয়ের পাশে রয়েছে কৃত্রিম জলপ্রপাত ও ডেক। আরও রয়েছে শাপলা পুকুর ও গোলাকৃতির পদ্মপুকুর। শাপলা পুকুরে বছরের এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাসে শাপলা ফোটে। একসময় শীতকালে বড় জলাশয়গুলোতে হাঁসজাতীয় পরিযায়ী পাখিরা আসত। এখন আর আসে না। জাতীয় উদ্যানের ১.৫ একর জুড়ে রয়েছে মৌসুমি ফুলের বাগান। সালভিয়া, মর্নিংগ্লোরি, মেরিগোল্ড, ডালিয়াসহ প্রায় ৫২ জাতের বিদেশি মৌসুমি ফুলের চাষ করা হয় এ বাগানে। বাগান ঘিরে রয়েছে একটি আঁকাবাঁকা কৃত্রিম লেক। ১৯৮০ সালে প্রায় ৩.৫ একর জায়গার উপর নির্মিত হয় উদ্যানের গোলাপ বাগান। দু’টি পৃথক বাগানে প্রায় ২০০ প্রজাতির গোলাপ সংগ্রহে রয়েছে। একটি গোলাপ বাগানের মাঝে রয়েছে গোলাকৃতির একটি জলাশয়। এই জলাশয়ে সংরক্ষিত রয়েছে ব্রাজিলের আমাজন লিলি। ১৯৮০-৮১ সালে নির্মাণ করা হয় উদ্যানের দেবদারু-ইউক্যালিপটাস বাগান। ইউক্যালিপটাসগুলো অস্ট্রেলিয়া থেকে সংগ্রহ করা। ১৬ প্রজাতির ইউক্যালিপটাস ও আকাশমণি রয়েছে এখানে। বাঁশবাগানে রয়েছে প্রায় ২২ প্রজাতির বাঁশ। গর্জন বাগানের উত্তর পাশে সৃষ্টি করা হয়েছে ভেষজ উদ্ভিদের বাগান। এই বাগানে রয়েছে কালমেঘ, তুলসী, আতমোরা, শতমূলী, পুনর্নভা, থানকুনি, আদা, বোতল ব্রাশ, তেলাকুচা, কুমারি লতা, বাসক, বচসহ হরেক ভেষজ উদ্ভিদের সংগ্রহ।

জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান, বাংলাদেশ এর গ্রিন হাউজ ও নেট হাউজ

উদ্যানের ক্যাকটাস গ্রিন হাউজে ৮০ প্রজাতির ক্যাকটাস ও সাকুলেন্ট সংরক্ষিত রয়েছে। গ্রিন হাউজটি ১৯৯৪ সালে নির্মিত হয়। বিভিন্ন প্রজাতির ক্যাকটাসের মধ্যে রয়েছে ওল্ডম্যান, ফিসহুক ক্যাকটাস, ম্যামিলারিয়া, ক্ষেপালিয়া, মেলো ক্যাকটাস, গোল্ডেন ব্যারেল, সিরিয়াম হেক্সোজেনাস, র‌্যাট টেইল, আপাংসিয়া সিডাম, হাওয়ার্থিয়া, পিকটোরিয়া ইত্যাদি। বেশিরভাগ ক্যাকটাস মেক্সিকো থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। অর্কিড গ্রিন হাউজে দেশি-বিদেশি প্রায় ৮৫ প্রজাতির অর্কিড সংরক্ষিত রয়েছে। নেট হাউজে ছায়াতরু সংরক্ষণ করা হয়েছে। প্রায় ১০০ প্রজাতির ছায়াতরু রয়েছে এ হাউজে।

জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান, বাংলাদেশ এর আন্তর্জাতিক উদ্ভিদ শাখা

উদ্ভিদ উদ্যানে বিদেশি বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদ নিয়ে ১৯৭৩ সালে আন্তর্জাতিক এলাকা নামে একটি শাখা সৃষ্টি করা হয়। এই শাখায় রয়েছে অস্ট্রেলিয়ার সিলভার ওক, জ্যাকারান্ডা ও ট্যাবে বুইয়া, জাপানের কর্পূর, মালয়েশিয়ার ওয়েল পাম, থাইল্যান্ডের রামবুতাম।

জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান, বাংলাদেশ এর নার্সারি

উদ্ভিদ উদ্যানের প্রায় ৫ একর জায়গা জুড়ে একটি নার্সারি রয়েছে। এ নার্সারিতে ফুল, ফল, লতা, গুল্ম ইত্যাদি উদ্ভিদের চারা চাষ করা হয়। সরকার নির্ধারিত মূল্যে এই নার্সারি থেকে চারা কেনা যায়।

জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান, বাংলাদেশ এর অন্যান্য উদ্ভিদ সংগ্রহ

উদ্যানের অন্যসব সংগ্রহের মধ্যে রয়েছে অশোক, বাওবাব, তসবিহ গাছ, ফার্ন কড়ই, তুন, কেশিয়া নড়ুসা, চেরি গাছ, মহুয়া, কৃষ্ণচূড়া, কামিনী, নাগেশ্বর, বহেড়া, শ্বেতচন্দন, ম্যাগনোলিয়া, গিলরিসিভিয়া, কুম্ভি, আমলকি, জারবেরা, অ্যানথুরিয়াম, ব্রুন ফেলসিয়া, ক্যামিলিয়া, পারুল, হেলকুনিয়া, হিজল, রক্ত কম্বল, সেগুন, মেহগনি, রাজকড়ই,আকাশমনি,অ্যামহাসটিয়া অ্যাভোকাডো, বেগুনি এলামান্ডা, থাইল্যান্ডের গন্ধরাজ, অর্জুন প্রভৃতি।

১৮/ জাতীয় স্মৃতিসৌধ

জাতীয় স্মৃতিসৌধ
জাতীয় স্মৃতিসৌধ

জাতীয় স্মৃতিসৌধ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে নিহত মুক্তিযোদ্ধা ও নিহত বেসামরিক বাঙালি ও অবাঙ্গালিদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে নিবেদিত একটি স্মারক স্থাপনা। এটি সাভারে অবস্থিত। এর নকশা প্রণয়ন করেছেন স্থপতি সৈয়দ মাইনুল হোসেন। এখানে মুক্তিযুদ্ধে নিহতদের দশটি গণকবর রয়েছে। বিদেশি রাষ্ট্রনায়কগণ সরকারিভাবে বাংলাদেশ সফরে আগমন করলে এই স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন রাষ্ট্রাচারের অন্তর্ভুক্ত।

জাতীয় স্মৃতিসৌধ এর ইতিহাস

১৯৭২ খ্রিস্টাব্দের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকা শহর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাশে নবীনগরে এই স্মৃতিসৌধের শিলান্যাস করেন। ১৯৭৮ খ্রিষ্টাব্দে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান স্মৃতিসৌধটি নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেন এবং নকশা আহবান করা হয়। ১৯৭৮-এর জুন মাসে প্রাপ্ত ৫৭টি নকশার মধ্যে সৈয়দ মাইনুল হোসেন প্রণীত নকশাটি গৃহীত হয়। ১৯৭৯ খ্রিষ্টাব্দে মূল স্মৃতিসৌধের নির্মাণ কাজ শুরু হয় এবং ১৯৮২ খ্রিষ্টাব্দে বিজয় দিবসের অল্প পূর্বে সমাপ্ত হয়। ২০০২ খ্রিষ্টাব্দে গৃহীত প্রকল্প অনুযায়ী এখানে একটি অগ্নিশিখা, সুবিস্তৃত ম্যুরাল এবং একটি গ্রন্থাগার স্থাপনের পরিকল্পনা আছে। বাংলাদেশ সফরকারী বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধানগণ নিজ হাতে এখানে স্মারক বৃক্ষরোপণ করে থাকেন। স্মৃতিসৌধের মিনার ব্যতীত প্রকল্পটির মহা-পরিকল্পনা ও নৈসর্গিক পরিকল্পনাসহ অন্য সকল নির্মাণ কাজের স্থাপত্য নকশা প্রণয়ন করে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্থাপত্য অধিদপ্তর। নির্মাণ কাজের গোড়াপত্তন হয় ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দের জুলাই মাসে এবং শেষ হয় ১৯৮৮ খ্রিষ্টাব্দের মাসে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ধীন গণপূর্ত অধিদপ্তর সমগ্র নির্মাণকাজ সম্পন্ন করে। বর্তমানে সৌধটির নির্মাণকাজ তিন পর্যায়ে মোট ১৩.০০ কোটি টাকা ব্যয়ে সম্পন্ন হয়।

জাতীয় স্মৃতিসৌধ এর স্থাপত্য ও তাৎপর্য

১৯৭১’র ২৬শে মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হয়। একই বছর ১৬ই ডিসেম্বর বিজয়ের মাধ্যমে এর পরিসমাপ্তি ঘটে। এই যুদ্ধে প্রায় ত্রিশ লক্ষ মানুষের প্রাণহানি হয়। এই স্মৃতিসৌধ বাংলাদেশের জনসাধারণের বীরত্বপূর্ণ লড়াইয়ের স্মরণে নিবেদিত এবং মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি জাতির শ্রদ্ধার উজ্জ্বল নিদর্শন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। স্মৃতিস্তম্ভ এবং এর প্রাঙ্গণের আয়তন ৩৪ হেক্টর (৮৪ একর)। এ ছাড়াও রয়েছে একে পরিবেষ্টনকারী আরও ১০ হেক্টর (২৪ একর) এলাকা নিয়ে বৃক্ষরাজি পরিপূর্ণ একটি সবুজ বলয়। এই স্মৃতিসৌধ সকল দেশ প্রেমিক নাগরিক এবং মুক্তিযোদ্ধাদের বিজয় ও সাফল্যের যুগলবন্দি রচনা করেছে। সাতটি ত্রিভুজাকৃতি মিনারের শিখর দেশের মাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের সাতটি পর্যায়ের প্রতিটি এক ভাবব্যঞ্জনাতে প্রবাহিত হচ্ছে। এই সাতটি পর্যায়ের প্রতিটি সূচিত হয় বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে। পরবর্তীতে চুয়ান্ন, ছাপান্ন, বাষট্টি, ছেষট্টি ও ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের মধ্যে দিয়ে অগ্রসর হয়ে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা সংগ্রামের চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়। মিনারটি ৪৫ মিটার (১৫০.০০ ফুট)উঁচু এবং জাতীয় শহীদ স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণের গুরুত্বপূর্ণ একটি বিন্দুতে অবস্থিত। মিনার ঘিরে আছে কৃত্রিম হ্রদ এবং বাগান। স্মৃতিসৌধ চত্বরে আছে মাতৃভূমির জন্য আত্মোৎসর্গকারী অজ্ঞাতনামা শহীদের দশটি গণসমাধি। স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে আরও রয়েছে উন্মুক্ত মঞ্চ, অভ্যর্থনা কক্ষ, মসজিদ, হেলিপ্যাড, ক্যাফেটেরিয়া।

স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণের সর্বমোট আয়তন ৮৪ একর। স্মৃতিস্তম্ভ পরিবেষ্টন করে রয়েছে ২৪ একর এলাকাব্যাপী বৃক্ষরাজিশোভিত একটি সবুজ বলয়। স্মৃতিসৌধটির উচ্চতা ১৫০ ফুট। সৌধটি সাত জোড়া ত্রিভুজাকৃতির দেয়াল নিয়ে গঠিত। দেয়ালগুলো ছোট থেকে ক্রমশ বড়ক্রমে সাজানো হয়েছে। এই সাত জোড়া দেয়াল বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের সাতটি ধারাবাহিক পর্যায়কে নির্দেশ করে। ১৯৫২-র ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৫৬ শাসনতন্ত্র আন্দোলন, ১৯৬২ শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৬ ছয় দফা আন্দোলন, ১৯৬৯ এর গণ-অভ্যূত্থান, ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ – এই সাতটি ঘটনাকে স্বাধীনতা আন্দোলনের পরিক্রমা হিসাবে বিবেচনা করে সৌধটি নির্মিত হয়েছে।

১৯/ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের একটি অন্যতম এবং একমাত্র পূর্ণাঙ্গ আবাসিক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। ঢাকার অদূরে সাভার এলাকায় প্রায় ৬৯৭.৫৬ একর এলাকা নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি অবস্থিত। ১৯৭০ সালে বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হলেও সম্পূর্ণরূপে এর কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৭২ সালে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে কলা ও মানবিকী, গাণিতিক ও পদার্থবিষয়ক, সমাজ বিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা ও আইন অনুষদ এবং ৪ টি ইনস্টিটিউট রয়েছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্যের নাম ড. ফারজানা ইসলাম। উপাচার্য ড. ফারজানা ইসলাম বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে প্রথম নারী উপাচার্য হিসেবে ২০১৪ সালের ২ রা মার্চ থেকে দায়িত্ব পালন করছেন।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এর ইতিহাস

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রবেশ পথজাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদপরিযায়ী পাখি

১৯৭০ সালে জাহাঙ্গীরনগর মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় নামে দেশের প্রথম ও একমাত্র আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৭৩ সালে এটির নামকরণ করা হয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। ঢাকা শহরের মুঘল আমলের নাম “জাহাঙ্গীরনগর” থেকে এই নামকরণ করা হয়। প্রথম ব্যাচে ১৫০ জন ছাত্র নিয়ে ৪ টি বিভাগ চালু হয়; বিভাগগুলো হচ্ছে অর্থনীতি, ভূগোল, গণিত এবং পরিসংখ্যান। ১৯৭১ সালের ১২ জানুয়ারি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় উদ্বোধন করেন । তার আগে ১৯৭০ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য নিযুক্ত হন অধ্যাপক মফিজ উদ্দিন। পরবর্তীতে বিভিন্ন সময় এই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন প্রখ্যাত কবি সৈয়দ আলী আহসান, লোকসাহিত্যবিদ মজহারুল ইসলাম, লেখক জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী, আ ফ ম কামালউদ্দিন, আমিরুল ইসলাম চৌধুরী, অর্থনীতিবিদ আব্দুল বায়েস, আলাউদ্দিন আহমেদ, খন্দকার মুস্তাহিদুর রহমান প্রমুখ । এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আরো শিক্ষকতা করেছেন অধ্যাপক সুনীল কুমার মুখোপাধ্যায়, লেখক হায়াত্‍ মামুদ, লেখক হুমায়ুন আজাদ, নাট্যকার সেলিম আল দীন, কবি মোহাম্মদ রফিক (সদ্য অবসরপ্রাপ্ত), অধ্যাপক মুস্তাফা নূরুল ইসলাম, আবু রুশদ মতিনউদ্দিন, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী দিলারা চৌধুরী, ইতিহাসবিদ বজলুর রহমান খান, অর্থনীতিবিদ ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব আনু মুহাম্মদ প্রমুখ।

এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধের পরে পুরোদমে একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়। ক্রমে বিভাগের সংখ্যা বাড়তে থাকে। বাংলাদেশের প্রথম নৃবিজ্ঞান ও ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হয় এই বিশ্ববিদ্যালয়ে। বাংলাদেশের একমাত্র প্রত্নতত্ত্ব বিভাগও এই বিশ্ববিদ্যালয়ে। শুরুতে দুইটি অনুষদ নিয়ে যাত্রা করলেও পরের বছর কলা ও মানবিকী অনুষদ খোলা হয়। আইন অনুষদের অধীন আইন ও বিচার বিভাগ ২০১১ সালে পদচারনা শুরু করে। বিভাগের প্রথম সভাপতি ড. শাহাবুদ্দিন। ২০১৫ সালে আইন ও বিচার বিভাগের ১ম ব্যাচ এলএল.বি সম্পন্ন করে। বঙ্গবন্ধু তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউট ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ থেকে কার্যক্রম শুরু করে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে অনুষদ সংখ্যা ৬ টি।

বাংলাদেশের স্বায়ত্বশাসিত প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ছাত্রসংখ্যায় এটি ক্ষুদ্রতম। কিন্তু বিভিন্ন জাতীয় ও অভ্যন্তরীণ আন্দোলনে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। এরশাদ সরকারের আমলে শিক্ষা আন্দোলন ও ১৯৯০ সালের স্বৈরাচার বিরোধী গণআন্দোলনে ছাত্ররা অংশগ্রহণ করে। ১৯৯৮ সালে ধর্ষণের দায়ে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা মানিক ও তার সঙ্গীরা শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে বিতাড়িত হয়। পূণরায় প্রত্যাবর্তন করলে ১৯৯৯ সালের ২রা আগস্ট তারিখে শিক্ষার্থীদের এক অভ্যুত্থানে ওই অভিযুক্তরা পূনরায় বিতাড়িত হয়। এই আন্দোলন দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম যৌন নিপীড়ন বিরোধী আন্দোলন বলে পরিচিত। পরে ২০০৫, ২০০৬, ২০০৮ ও ২০১০ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের চার শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়ন বিরোধী আন্দোলন হয়। এছাড়া বিভিন্ন সময় বেতন ও ডাইনিং চার্জ বৃদ্ধি বন্ধ, গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা, পানি সরবরাহ, আর্থিক স্বচ্ছতাসহ বিভিন্ন দাবিতে ছাত্র সংগঠনগুলো আন্দোলন করে।

বিদ্যায়তনিক পরিসরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের কর্মকাণ্ড উল্লেখযোগ্য। মৌলিক বিজ্ঞানের বিষয়গুলোতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় অত্যন্ত সমৃদ্ধ। এছাড়া উয়ারী ও বটেশ্বরে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের খননকার্য, দেশীয় নাট্যচর্চায় নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের অবদান, বিদ্যায়তনিক নৃবিজ্ঞান চর্চায় নৃবিজ্ঞান বিভাগের পথপ্রদর্শন সুবিদিত।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এর অবস্থান ও ক্যাম্পাস

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় রাজধানী থেকে ৩২ কিলোমিটার দূরে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পশ্চিমে অবস্থিত। এটি ৬৯৭.৫৬ একর (২.৮ বর্গকিলোমিটার) জায়গাজুড়ে বিস্তৃত। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসটি উত্তরে জাতীয় স্মৃতিসৌধ, উত্তর-পূর্বে সাভার সেনানিবাস, দক্ষিণে বাংলাদেশ লোকপ্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এবং পূর্বে একটি বৃহৎ দুগ্ধ উৎপাদন খামার (ডেইরি ফার্ম) দ্বারা পরিবেষ্টিত। বিশ্ববিদ্যালয়টির শ্যামল পরিবেশ এবং জীববৈচিত্র অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর। বিশ্ববিদ্যালয়ের অসংখ্য জলাশয় একে পরিযায়ী পাখির অভয়ারণ্য হিসেবে গড়ে তুলেছে যার ফলে এটি পাখি পর্যবেক্ষকদের এক পছন্দের জায়গা। এটিই বাংলাদেশের একমাত্র আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে সার্বজনীন স্বীকৃত।

২০/ ঢাকা জেলার জিঞ্জিরা প্রাসাদ

জিঞ্জিরা প্রাসাদ
জিঞ্জিরা প্রাসাদ

জিনজিরা প্রাসাদ একটি ঐতিহাসিক পুরাকীর্তি যা বাংলাদেশের ঢাকা শহরের বুড়িগঙ্গা নদীর ওপারে কয়েক শ’ গজ দূরে অবস্থান। সিরাজদ্দৌলার স্ত্রী লুৎফুন্নেছা এবং তার শিশুকন্যাকে মীরজাফর পুত্র মীরনের নির্দেশে ঢাকায় বন্দী করে রাখা হয়েছিল। সিরাজের পতনের পূর্ব পর্যন্ত ষড়যন্ত্রকারীরা ঘষেটি বেগমকে ব্যবহার করলেও সিরাজের পতনের পর আর তাকে কোনো সুযোগই দেয়া হয়নি। এ সময় তারা তাদের মা শরফুন্নেছা, সিরাজের মা আমেনা, খালা ঘষেটি বেগম, সিরাজের স্ত্রী লুৎফুন্নেছা ও তার শিশুকন্যা সবাইকে ঢাকার জিঞ্জিরা প্রাসাদে বন্দী করে রাখা হয়। ঢাকার বর্তমান কেরানীগঞ্জের জিঞ্জিরা প্রাসাদে তারা বেশ কিছুদিন বন্দী জীবন যাপন করার পর মীরনের নির্দেশে ঘষেটি বেগম ও আমেনা বেগমকে নৌকায় করে নদীতে ডুবিয়ে মারা হয়। ক্লাইভের হস্তক্ষেপের ফলে শরফুন্নেছা, সিরাজের স্ত্রী লুৎফুন্নেছা এবং তার শিশুকন্যা রক্ষা পান এবং পরবর্তীতে তাদেরকে মুর্শিদাবাদে আনা হয়। ইংরেজ কোম্পানি সরকার কর্তৃক প্রদত্ত সামান্য বৃত্তির ওপর নির্ভর করে তাদেরকে জীবন ধারণ করতে হয়। সিরাজের মৃত্যুর দীর্ঘ ৩৪ বছর পর লুৎফুন্নেছা ১৭৯০ সালে মৃত্যুবরণ করেন।

জিঞ্জিরা প্রাসাদ এর নির্মাণশৈলী

এ প্রাসাদটির নির্মাণশৈলী বড় কাটরার আদলে হলেও কক্ষ ও আয়তন অনেক কম। পশ্চিমাংশে দু’টি সমান্তরাল গম্বুজ, মাঝ বরাবর ঢাকনাবিহীন অন্য একটি গম্বুজ ও পূর্বাংশ দোচালা কুঁড়েঘরের আদলে পুরো প্রাসাদের ছাদ। প্রাসাদের পূর্বাংশে ছাদ থেকে একটি সিঁড়ি নিচে নেমে গেছে। স্খানীয়রা এ প্রাসাদকে হাবেলী নগেরা বা হাওলি নগেরা বলে। এ প্রাসাদের তিনটি বিশেষ অংশ আজো আংশিক টিকে আছে­ তাহলো­ প্রবেশ তোরণ, পৃথক দু’টি স্খানে দু’টি পৃথক প্রাসাদ, একটি দেখতে ফাঁসির মঞ্চ ও অজ্ঞাত অন্যটি প্রমোদাগার।কয়েক একর জমির ওপর এ প্রাসাদ নির্মাণ করা হয়েছিল অবকাশ যাপন ও চিত্তবিনোদনের প্রান্তনিবাস হিসেবে। চার দিকে সুনীল জলরাশির মাঝখানে একখণ্ড দ্বীপ ভূমি জিনজিরা। নারিকেল-সুপারি, আম-কাঁঠালসহ দেশীয় গাছগাছালির সবুজের সমারোহে ফুলে ফুলে শোভিত অপূর্ব কারুকার্যখচিত মোগল স্খাপত্যশৈলীর অনুপম নিদর্শন জিনজিরা প্রাসাদ।স্থানীয়দের মতে মোগল আমলে লালবাগ দুর্গের সঙ্গে জিঞ্জিরা প্রাসাদের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষার জন্য বুড়িগঙ্গার তলদেশ দিয়ে একটি সুড়ঙ্গ পথ তৈরি করা হয়েছিল। এপথে মোগল সেনাপতি ও কর্মকর্তারা আসা-যাওয়া করত। লালবাগ দুর্গেও এমন একটি সুড়ঙ্গ পথ রয়েছে বলে জনশ্রুতি রয়েছে। বলা হয়ে থাকে এই সুড়ঙ্গ পথে যে একবার যায় সে আর ফিরে আসে না। তবে ইতিহাসে এ সম্পর্কে জোরালোভাবে কিছু বলা নেই।

জিঞ্জিরা প্রাসাদ এর অতীত ইতিহাস

সোয়ারীঘাট সংলগ্ন বড় কাটরা প্রাসাদ বরাবর বুড়িগঙ্গন, ওপারে জিনজিরা। জিনজিরা-জাজিরার অপভ্রংশ, যার অর্থ আইল্যান্ড বা দ্বীপ। এ দ্বীপে ১৬৮৯-১৬৯৭ খ্রিস্টাব্দে জিনজিরা প্রাসাদ ‘নওঘরা’ নির্মাণ করেছিলেন তৎকালীন সুবেদার নওয়াব ইব্রাহিম খাঁ। আজ থেকে প্রায় ৪০০ বছর আগে শহর থেকে জিনজিরার মধ্যে চলাচলের জন্য একটি কাঠের পুল ছিল। পলাশীর যুদ্ধে সর্বস্বান্ত সিরাজদ্দৌলার পরিবার পরিজনকে জরাজীর্ণ জিনজিরা প্রাসাদে প্রেরণ করা হয়েছিল। আর সেই সাথে নবাব আলিবর্দী খাঁর দুই কন্যা­ঘসেটি বেগম ও আমেনা বেগমকেও আনা হয়। তারা দু’জনই পিতার রাজত্বকালে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।অবশেষে এক দিন পরিচারিকাদের সাথে একই নৌকায় তাকে ঢাকায় পাঠানো হয়। সে দিন বুড়িগঙ্গার তীরের জিনজিরা প্রাসাদে বন্দীদের নিয়ে রক্ষীদল উপস্খিত হয়েছিল। উল্লেখ্য, নবাব আলিবর্দী খাঁ ও তার পরিবার আগেই এখানে স্খান লাভ করেছিল। এভাবে পরাজিত নবাবের পরিবার-পরিজন জিনজিরা প্রাসাদে আশ্রয় গ্রহণ করেন। তার পর মীরজাফরের পুত্র মীরনের চক্রান্তে ১৭৬০ খ্রিস্টাব্দের গ্রীষ্মের কোনো এক সন্ধ্যায় সিরাজ পরিবার জিনজিরা প্রাসাদ থেকে নেমে বুড়িগঙ্গা নদীর বুকে এক নৌকায় আরোহণ করে। নৌকা যখন বুড়িগঙ্গা ও ধলেশ্বরীর সঙ্গমমূলে ঢাকাকে পেছনে রেখে এগিয়ে যাচ্ছিল তখন মীরননিযুক্ত ঘাতক বাকির খান নৌকার ছিদ্রস্খান খুলে দিয়ে নৌকাটি ডুবিয়ে দেয়।কিছু বুঝে ওঠার আগেই সবাই তলিয়ে যান বুড়িগঙ্গায়।

জিঞ্জিরা প্রাসাদ এর বর্তমান অবস্থা

একদা এটা ছিল নির্জন গ্রাম­ যার নাম হাওলি বা হাবেলী। বর্তমানে ঘিঞ্জি বসতি। ছোট গলিপথে একটু এগোতে একটা প্রবেশ তোরণ।তোরণের দুই পাশে স্খায়ী ভবন নির্মাণ করে আবাস গড়ে তোলা হয়েছে। চার দিকে দোকানপাট, ঘরবাড়ি, অট্টালিকা প্রবেশ অনেক কষ্টসাধ্য। প্রাসাদটির পূর্বাংশ তিনতলা সমান, দেখতে অনেকটা ফাঁসির মঞ্চ বা সিঁড়িঘর বলে মনে হয়। মাঝ বরাবর প্রকাণ্ড প্রাসাদ তোরণ। মোগল স্খাপত্যের অপূর্ব কারুকার্যখচিত তোরণ প্রাসাদকে দুই ভাগ করে অপর প্রান্তে খোলা চত্বরে মিশেছে। প্রাসাদ তোরণের পূর্বাংশেই ছিল সুড়ঙ্গপথ। ব্রিটিশ-পাকিস্তান আমল থেকে দেখে এলেও আধকার প্রকোষ্ঠে কেউ ঢুকতে সাহস করত না এই সুড়ক পথে। পশ্চিমাংশের অìধকার কুঠরি ময়লা আবর্জনায় পূর্ণ অব্যবহৃত। এ প্রাসাদটির নির্মাণশৈলী বড়কাটরার আদলে হলেও কক্ষ ও আয়তন অনেক কম।

২০১৮ সালে সরকার এটি সংস্কারের উদ্যগ নেয়।

জিঞ্জিরা প্রাসাদ এর সর্বশেষ মালিকানা

পুরো প্রাসাদ ও এর আশপাশ মালিকি ও তত্ত্বাবধায়ক পরিবারের পূর্বপুরুষ হাজী অজিউল্যাহ ব্রিটিশ আমলে ১৪ শতক জমি সাফ কবলা মূলে খরিদসূত্রে মালিক। ওয়ারিশসূত্রে বর্তমান মালিক ও পরিবার প্রধান জাহানারা বেগম (জাহারা) ৬২। হাজী অজিউল্যাহ তার শ্বশুর।

জিঞ্জিরা প্রাসাদ এর ইতিহাসবিদদের চোখে জিনজিরা প্রাসাদ

প্রখ্যাত ব্রিটিশ লেখক জেমস টেইলর তার ‘টপোগ্রাফি অব ঢাকা’ গ্রন্থে নবাব ইব্রাহিম খাঁকে জিঞ্জিরা প্রাসাদের নির্মাতা বলে উল্লেখ করেছেন। প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ অধ্যাপক ড. মুনতাসির মামুন বলেন, জিঞ্জিরা প্রাসাদের সঙ্গে অষ্টাদশ শতাব্দীর বাংলার ইতিহাসের এক বিষাদময় স্মৃতি জড়িত। নবাব সিরাজউদ্দৌলার মা, স্ত্রী ও শিশু কন্যা এক সময় এই জিঞ্জিরা প্রাসাদে বন্দি ছিলেন। উমি চাঁদ, জগত শেঠ এবং রায় দুর্লভদের পরামর্শে প্রাসাদ থেকে মুর্শিদাবাদ নিয়ে যাবার ছল করে নওয়াজিস মহীয়সী ঘসেটি বেগম, নবাব সিরাজের মা আমিনা বেগম, নওয়াজিসের উত্তরাধিকারী একরাম উদ্দৌলার শিশুপুত্র মুরাদউদ্দৌলা, নবাব বেগম এবং শিশু কন্যাকে ধলেশ্বরীর বুকে ৭০ জন অনুচরসহ ডুবিয়ে হত্যা করা হয়। হুসেন কুলি ও সরফরাজের বংশধরগণ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছে দেওয়ানী ভার অর্পণ করার পর বন্দিদশায় জিঞ্জিরা প্রাসাদেই অবস্থান করছিলেন। ইতিহাসবিদ নাজির হোসেনের কিংবদন্তি ঢাকা গ্রন্থে বলা হয়, নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরিবারকে দীর্ঘ ৮ বছর জিঞ্জিরা প্রাসাদে বন্দি করে রাখা হয়। মোগল শাসকদের অনেককে এই দুর্গে নির্বাসন দেয়া হয়েছিল।

২১/ জোসেফ প্যাগেট সমাধি

জোসেফ প্যাগেট সমাধি
জোসেফ প্যাগেট সমাধি

জোসেফ প্যাগেট সমাধি ঢাকার খ্রিস্টান সমাধিক্ষেত্র, ঢাকায় অবস্থিত একটি পুরনো খ্রিস্টান সমাধি। এ সমাধিটি বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের পুরাকীর্তির তালিকাভুক্ত।

জোসেফ প্যাগেট সমাধি এর সময়

সমাধিস্থ জোসেফ প্যাগেট ১৭২৪ সালের ২৬ মার্চ মৃত্যুবরণ করেন।  অতএব সমাধিটি প্রায় ৩০০ বছরের পুরাতন। এ কবরটি খ্রিস্টান কবরস্থানের সবচেয়ে পুরনো কবর।

জোসেফ প্যাগেট সমাধি এর প্যাগেট এর পরিচয়

তার পুরো নাম চ্যাপলিন রেভারেন্ড জোসেফ প্যাগেট (অথবা প্যাজেট)। তিনি কলকাতার মন্ত্রী ছিলেন। তিনি ২৬ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।

২২/ ঢাকা শিশু পার্ক

ঢাকা শিশু পার্ক
ঢাকা শিশু পার্ক

ঢাকা শহরের প্রাণকেন্দ্র শাহবাগে অবস্থিত শাহবাগ শিশু পার্কটি শহীদ জিয়া শিশুপার্ক বা ঢাকা শিশুপার্ক হিসেবেও পরিচিত। ১৯৭৯ সালে ‘শহীদ জিয়া শিশুপার্ক’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। শিশুদের বিনোদনের জন্য পাবলিক সেক্টরে প্রতিষ্ঠিত দেশের প্রথম এই শিশুপার্কটি ১৯৮৩ সাল থেকে বিনোদনকেন্দ্র হিসেবে যাত্রা শুরু করে।

সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের উদ্যোগে ১৫ একর জায়গার ওপর গড়ে উঠা এ পার্ক তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব পালন করছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ঢাকা সিটি কর্পোরেশন। শিশু পার্কটিতে ১২ টি রাইড রয়েছে। যেখানে একটি খেলনা ট্রেন, একটি গোলাকার মেরি গো রাউন্ড রাইড ও একাধিক হুইল রাইড রয়েছে। ১৯৯২ সালে এ পার্কে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর পক্ষ থেকে সৌজন্য হিসেবে একটি জেট বিমান দেয়া হয়।

প্রতি রাইড ১০ টাকা হারে ৬টি রাইড ব্যবহার করতে দেয়া হয়। প্রতি শুক্রবার পার্কটি ২.৩০-৭.৩০ টা পর্যন্ত চালু থাকে। রবিবার ছাড়া শনিবার থেকে বৃহস্পতিবার ২.০০- ৭.০০ টা পর্যন্ত রাইডগুলো চালু থাকে। ঢাকার এই শিশুপার্কে প্রতিদিন সাত থেকে দশ হাজারের অধিক মানুষ এসে থাকে। আর ইদুল ফিতর ও ইদুল আজহার মত আনন্দঘন সময়ে তা কয়েকগুন বেড়ে যায়। বর্তমানে সংস্কার কাজের জন্য পার্কটি বন্ধ আছে।

২৩/ তাজমহল বাংলাদেশ

তাজমহল বাংলাদেশ
তাজমহল বাংলাদেশ

তাজমহল বাংলাদেশ হল বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা থেকে ১০ মাইল পূর্বে পেরাব, সোনারগাঁওয়ে অবস্থিত প্রকৃত তাজমহল (ভারতের আগ্রায় অবস্থিত একটি মুঘল নিদর্শন) এর একটি হুবহু নকল বা অবিকল প্রতিরূপ। তাজমহল বাংলাদেশের মালিক আহসানুল্লাহ মনি একজন ধনবান চলচ্চিত্র নির্মাতা ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে তার ‘তাজমহলের কপিক্যাট সংস্করণ’ প্রকল্পের ঘোষণা করেন। প্রকল্পটির জন্য ব্যয় হয়েছে প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা এবং এটি রাজধানী ঢাকা ২০ মাইল উত্তর পূর্বে সোনারগাঁওয়ের পেরাবে নির্মিত হয়। এটি নির্মাণের কারণ হিসেবে তিনি জানান “এই তাজমহলের রেপ্লিকাটি তৈরি করা হয়েছে যেন তার দেশের দরিদ্র মানুষ, যাদের ভারত গিয়ে প্রকৃত নিদর্শন দেখার সামর্থ্য নেই তারা যেন তাজমহল দেখার স্বপ্ন পূরণ করতে পারেন নিজের দেশে থেকেই”।

তাজমহলের এই অবিকল প্রতিরূপ সৃষ্টির ঘটনায় ভারত ক্ষুব্ধ হয়। বাংলাদেশে অবস্থিত ভারতীয় দূতাবাস থেকে জানানো হয় আহসানুল্লাহ মনিকে প্রকৃত তাজমহলের (৩০০ বছরের ও বেশি পুরোনো) মেধাস্বত্ব লঙ্ঘন করার দায়ে অভিযুক্ত করা হবে।

২০০৩ সালে এটির নির্মাণকাজ শুরু হয়, তবে মনি বলেন যে তিনি ১৯৮০ সালে ভারতের আগ্রায় সত্যিকারের তাজ পরিদর্শন করার সময় তার মাথায় এই ধারণাটি এসেছিলেন। তিনি বলেন যে বাংলাদেশের প্রায় অর্ধেক জনগোষ্ঠী দারিদ্র্যসীমার নিচে রয়েছে , তাঁদের আসল জিনিসটি দেখার জন্য ভারতে ভ্রমণের সামর্থ্য নেই। “সবাই তাজমহল দেখার স্বপ্ন দেখে তবে খুব কম সংখ্যক বাংলাদেশী ভ্রমণ করতে পারে, কারণ তাদের পক্ষে এটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল”। মনি ১৯৮০ সালে তাজমহল দেখেন ও পরে আরো ৬ বার দেখেন। তিনি এর উপর এতটাই মোহিত হয়েছিলেন যে তিনি একদল স্থপতি নিয়োগ করেন এবং তাজ মহলের আকার মাপের জন্য তাদের ভারতে প্রেরণ করেন। তিনি বলেন: “আমি মূল তাজের মত একই মার্বেল এবং পাথর ব্যবহার করেছি। আমরা যন্ত্রপাতি ব্যবহার করেছি, এজন্য সময় কম লেগেছে। তা না হলে এটি সম্পন্ন করতে ২০ বছর এবং ২২,০০০ শ্রমিক লাগত ”।

তাজমহল বাংলাদেশ এর অভ্যর্থনা

স্থাপনাটি বিবিসি, স্কাই, রয়টার্স, ভয়েস অফ আমেরিকা, হিন্দুস্তান টাইমস, দি টাইমস, গার্ডিয়ান সহ বিভিন্ন খবরের চ্যানেল, পত্রিকা ও ওয়েবপাতায় প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট ও ব্লগে স্থাপনাটি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা ও বিতর্ক হয়।

২৪/ তারা মসজিদ

তারা মসজিদ
তারা মসজিদ

তারা মসজিদ পুরান ঢাকার আরমানিটোলায় আবুল খয়রাত সড়কে অবস্থিত। সাদা মার্বেলের গম্বুজের ওপর নীলরঙা তারায় খচিত এ মসজিদ নির্মিত হয় আঠারো শতকের প্রথম দিকে। মসজিদের গায়ে এর নির্মাণ-তারিখ খোদাই করা ছিল না। জানা যায়, আঠারো শতকে ঢাকার ‘মহল্লা আলে আবু সাঈয়ীদ’-এ (পরে যার নাম আরমানিটোলা হয়) আসেন জমিদার মির্জা গোলাম পীর (মির্জা আহমদ জান)। ঢাকার ধণাঢ্য ব্যক্তি মীর আবু সাঈয়ীদের নাতি ছিলেন তিনি। মির্জা মসজিদ নির্মাণ করেন। ‌মির্জা সাহেবের মসজিদ হিসেবে এটি তখন বেশ পরিচিতি পায়। ১৮৬০ সালে মারা যান মির্জা গোলাম পীর। পরে, ১৯২৬ সালে, ঢাকার তৎকালীন স্থানীয় ব্যবসায়ী, আলী জান বেপারী মসজিদটির সংস্কার করেন। সে সময় জাপানের রঙিন চিনি-টিকরি পদার্থ ব্যবহৃত হয় মসজিদটির মোজাইক কারুকাজে।

মোঘল স্থাপত্য শৈলীর প্রভাব রয়েছে এ মসজিদে। ঢাকার কসাইটুলীর মসজিদেও এ ধরনের বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। উল্লেখ্য, দিল্লি, আগ্রা ও লাহোরের সতের শতকে নির্মিত স্থাপত্যকর্মের ছাপ পড়ে মোঘল স্থাপত্য শৈলীতে।তারা মসজিদ বারান্দা

মির্জা গোলামের সময় মসজিদটি ছিল তিন গম্বুজঅলা, দৈর্ঘ্যে ৩৩ ফুট (১০.০৬ মিটার) আর প্রস্থে ১২ ফুট (৪.০৪ মিটার)। আলী জানের সংস্কারের সময়, ১৯২৬ সালে, মসজিদের পূর্ব দিকে একটি বারান্দা বাড়ানো হয়। ১৯৮৭ সালে তিন গম্বুজ থেকে পাঁচ গম্বুজ করা হয়। পুরনো একটি মেহরাব ভেঙে দুটো গম্বুজ আর তিনটি নতুন মেহরাব বানানো হয়।

মসজিদের বতর্মান দৈর্ঘ্য ৭০ ফুট (২১.৩৪ মিটার), প্রস্থ ২৬ ফুট (৭.৯৮ মিটার)।

২৫/ ঢাকা জেলার তিন নেতার মাজার

তিন নেতার মাজার
তিন নেতার মাজার

তিন নেতার মাজার – ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় দোয়েল চত্বরের উত্তর পাশে অবস্থিত, স্বাধীনতা-পূর্ব বাংলার তিন বিখ্যাত রাজনৈতিক নেতা – হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, খাজা নাজিমুদ্দিন ও শেরেবাংলা এ.কে. ফজলুল হক এর কবরের উপর নির্মিত ঢাকার অন্যতম স্থাপত্য নিদর্শন।

তিন নেতার মাজার এর ইতিহাস

১৯৬৩ সালে স্থপতি মাসুদ আহমেদ এবং এস এ জহিরুদ্দিন প্রখ্যাত তিন নেতার স্মরণে এটি নির্মাণ করেন।

তিন নেতার মাজার এর স্থাপত্যধারা

এটি মূলত স্থাপত্যিক ভাস্কর্য।

২৬/ দেওয়ানবাড়ি মসজিদ (সাভার)

দেওয়ানবাড়ি মসজিদ (সাভার)
দেওয়ানবাড়ি মসজিদ (সাভার)

দেওয়ানবাড়ি মসজিদ সাভার উপজেলার আমিনবাজার এলাকায় ১৮ শতকে নির্মিত একটি প্রাচীন মসজিদ। রাজধানী ঢাকা থেকে সাভারের দিকে যেতে আমিনবাজার এলাকায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের ডান দিকে এর অবস্থান।

দেওয়ানবাড়ি মসজিদ এর বর্ণনা

দেওয়ানবাড়ি মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা জনাব আলি হাজী যিনি পেশায় একজন চামড়া ব্যবসায়ী ছিলেন। তিনি ভারত থেকে এখানে এসে বসতি স্থাপন করেন এবং ঐতিহ্যবাহী এ মসজিদটি নির্মান করেন। মসজিদটি তিন গম্বুজ বিশিষ্ট। এর দৈর্ঘ্য ৩৫ ফুট, প্রস্থ ৩৩ ফুট এবং উচ্চতা ৪০ ফুট। মসজিদের বাহির ও অভ্যন্তরীন অংশ কারুকার্যময় শিলালিপি দ্বারা খচিত। এসব শিলালিপি ভারতের আগ্রা থেকে আনা হয়েছে। মসজিদটিতে রয়েছে তিনটি দরজা, আটটি খিলান ও সুদৃশ্য একটি মেহরাব। এর অভ্যন্তরে রয়েছে একটি পুরোনো সুদৃশ্য ঝারবাতি যা দেওয়ানি আমলের ঐতিহ্য বহন করছে।

২৭/ দোয়েল চত্বর

দোয়েল চত্বর
দোয়েল চত্বর

দোয়েল চত্বর ঢাকার শাহবাগে অবস্থিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোর অন্যতম হচ্ছে দোয়েল চত্বর। এর স্থপতি হলেন আজিজুল জলিল পাশা। এটি বাংলাদেশের জাতীয় বৈশিষ্ট্যের ধারক ও বাহক যা বাংলাদেশের ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করে।

দোয়েল চত্বর এর অবস্থান

দোয়েল চত্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার ভিতরে কার্জন হলের সামনে অবস্থিত। বাংলাদেশের জাতীয় পাখি দোয়েলের একটি স্মারক ভাস্কর্য। এর স্থপতি হলেন আজিজুল জলিল পাশা। এটি বাংলাদেশের জাতীয় বৈশিষ্ট্যের ধারক ও বাহক যা দেশের ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করে। শাহবাগে অবস্থিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে দোয়েল চত্বর।

দোয়েল চত্বর এর বাহারি পণ্যের পসরা

লোক ও কারুশিল্পীরা দোয়েল চত্বর এলাকায় প্রায় ৪০টি মৃৎশিল্পের দোকানসহ মোট ৫০টি বাঁশ, বেত ও কাঠের হস্তশিল্পের দোকানে নানা বাহারি পণ্যের পসরা নিয়ে বসে। এখানে পাওয়া যায়, মাটির তৈরি বিভিন্ন তৈজসপত্র, ছোট-বড় বিভিন্ন আকারের হাঁড়ি-পাতিল, কলস, সরা, ফুলদানি, বাহারি খেলনা, মাটির সানকি, কাপ-পিরিচ, জগ, থালা, বাটি, পোড়ামাটির ভাস্কর্য, মাটির তৈরি ফলমূল, অলঙ্কার, বৈশাখী চুড়ি, বেত ও কাঠের শোপিস, পাটের শিকা, পুতুল, হ্যান্ডপার্স, সাইডব্যাগ, হোগলা পাতা ও নারিকেলের খোসার তৈরি নানা ধরনের শোপিস। এছাড়াও নকশী করা তালপাতার পাখা, বাঁশের বাঁশি, কুলো, ডালা, পাখি, নৌকা, একতারা, ডুগডুগি, ঢোল, মাথার মাথাল, সাপের বীণ, পুঁতির মালা, কুড়েঘর ও গ্রাম্য চিত্রকর্মসহ হাজারও বাংলাদেশি ঐতিহ্যবাহী পণ্য রয়েছে।

২৮/ ধানমন্ডি লেক

ধানমন্ডি লেক
ধানমন্ডি লেক

ধানমন্ডি লেক ঢাকার ধানমন্ডি আবাসিক এলাকায় অবস্থিত একটি হ্রদ। লেকটি প্রাথমদিকে কাওরান বাজার নদীর একটি পরিত্যক্ত খাল ছিল যা তুরাগ নদীর সাথে মিলিত হয়েছিল। লেকটি আংশিকভাবে বেগুনবাড়ি খালের সাথে মিলিত হয়েছে। ১৯৫৬ সালে ২৪০.৭৪ হেক্টর জমিতে ধানমন্ডি লেকের আশেপাশের এলাকাকে আবাসিক এলাকা হিসেবে উন্নীত করা হয়। এই উন্নয়ন প্রকল্পে ধানমন্ডি আবাসিক এলাকার ১৬% লেকের জন্য বরাদ্ধ রাখা হয়েছিল।

সময়ের পরিক্রমায় লেকটি একটি দর্শনীয় সাথে পরিণত হয় এবং এর আশেপাশে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কেন্দ্র গড়ে উঠে যার মধ্যে অন্যতম হল, রবীন্দ্র সরোবর যা লেকের পাশেই অবস্থিত।

২৯/ ধানমন্ডি শাহী ঈদগাহ

ধানমন্ডি শাহী ঈদগাহ
ধানমন্ডি শাহী ঈদগাহ

ধানমন্ডি শাহী ঈদগাহ ঢাকার ধানমন্ডি থানায় অবস্থিত একটি প্রাচীন ধর্মীয় স্থাপনা। এটি বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর কর্তৃক তালিকাভুক্ত একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা। ১৬৪০ খ্রিষ্টাব্দে বাংলার সুবাদার সম্রাট শাহজাহানের পুত্র শাহ সুজার প্রধান অমাত্য মীর আবুল কাসেম ধানমন্ডির শাহী ঈদগাহ প্রতিষ্ঠা করেন। ঢাকায় অবস্থিত মুঘল স্থাপত্য নিদর্শনসমূহের অন্যতম এই ঈদগাহ। ঈদগাহটি বর্তমানেও ঈদের (২০১৯ নাগাদ) নামাযের জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে। ১৯৮১ সাল থেকে ঈদগাহটি সংরক্ষণ করছে বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর।

ধানমন্ডি শাহী ঈদগাহ এর ইতিহাস

তৎকালীন সময়ে ধানমন্ডি শাহী ঈদগাহটি মুল শহর থেকে বেশ খানিকটা দূরে ছিল। মূল শহর, অর্থাৎ পুরনো ঢাকায় বেশ কয়েকটি সুলতানি ঈদগাহ থাকলেও বড় আকারে কোন ঈদগাহ ছিল না। তাই মীর আবুল কাসেম ঈদগাহের জন্য জায়গা খুজতে থাকে। অবশেষ তিনি ধানমন্ডি এলাকা বেছে নেন। কাজেই মূল নগর থেকে কিছুটা দূরে খোলা জায়গায় এবং সাত মসজিদের কাছে হওয়ায় ধানমন্ডি এলাকাতে ঈদগাহটি নির্মিত হয়। সেসময় সাত মসজিদে জল ও স্থলপথ – দুইভাবেই যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল ছিল। সেসময় এই ঈদগাহের পাশ দিয়ে পান্ডু নদীর একটা শাখা প্রবাহিত হত, যা বর্তমান সাত মসজিদের কাছে বুড়িগঙ্গার সাথে মিলিত হত। প্রথমদিকে এখানে শুধু সুবেদার, নায়েবে নাজিম ও অভিজাত মুঘল কর্মকর্তা এবং তাদের স্বজন-বান্ধবরাই নামাজ পড়তে পারতেন, সাধারণ নগরবাসীরা এতে প্রবেশ করার তেমন একটা সুযোগ পেতেন না। পরে ঈদগাহটি সকলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। ফলশ্রুতিতে,ঢাকাসহ আশপাশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মুসল্লিরা আসতেন।

ধানমন্ডি শাহী ঈদগাহ এর স্থাপত্য

ধানমন্ডি শাহী ঈদগাহে দৃশ্যমান শিলালিপি।

ধানমন্ডি ঈদগাহের দৈর্ঘ্যে ১৪৫ ফিট ও প্রস্থে ১৩৭ ফিট। ৪ ফিট উচু করে ভূমির উপরে এটি নির্মিত হয় যাতে বন্যার ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। এর চারকোণে অষ্টাভূজাকৃতির বুরুজ রয়েছে। তিন ধাপের মিম্বর ঈদগাহের উত্তর পাশে রয়েছে, এখানে দাঁড়িয়ে ইমামরা নামায পড়ান। ঈদগাহটি চারদিকে ১৫ ফিট উচু প্রাচীর দিয়ে ঘেরা। তবে,বর্তমানে কেবল পশ্চিম দিকের প্রাচীরটিই মোঘল আমলের। পশ্চিম প্রাচীরের মাঝ বরাবর প্রধান মেহরাব। প্রধান মেহরাবের দুই দিকে আছে বহু খাঁজবিশিষ্ট নকশা করা প্যানেল। এছাড়া ছোট আকারের দুইটি মেহরাব আছে এর দুই পাশে। মেহরাবগুলো দেয়ালের আয়তাকার ফ্রেমের ভেতরে অবস্থিত।

৩০/ ঢাকা জেলার নওয়াব কামুরদ্দৌলা সমাধি

নওয়াব কামুরদ্দৌলা সমাধি
নওয়াব কামুরদ্দৌলা সমাধি

বাংলাদেশে শিয়া সম্প্রদায়ের নির্দিষ্ট কিছু কবরস্থানের মধ্যে ইমামবাড়া হোসেনী দালান কবরস্থান অন্যতম। নওয়াব কামুরদ্দৌলা সমাধিটি , আরও ৩ জন নায়েবে নাজিমের সমাধি সহ এই কবরস্থানে অবস্থিত ।এটি বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এর তালিকাভুক্ত একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা।

নওয়াব কামুরদ্দৌলা সমাধি এর অবকাঠামো

মুসলিম রীতিতে তৈরি , খুবই সাধারণ অবকাঠামোতে তৈরি বাহুল্যবর্জিত একটি সমাধি ।পূর্বে কবরস্থানটিতে শুধু খুব সম্ভ্রান্ত শিয়াদের কবর দেয়া হত ।

৩১/ নওয়াব গিয়াসউদ্দিন হায়দার সমাধি

নওয়াব কামুরদ্দৌলা সমাধি
নওয়াব কামুরদ্দৌলা সমাধি

বাংলাদেশে শিয়া সম্প্রদায়ের নির্দিষ্ট কিছু কবরস্থানের মধ্যে ইমামবাড়া হোসেনী দালান কবরস্থান অন্যতম। নওয়াব গিয়াসউদ্দিন হায়দার সমাধিটি, আরও ৩ জন নায়েবে নাজিমের সমাধি সহ এই কবরস্থানে অবস্থিত।এটি বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এর তালিকাভুক্ত একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা।

নওয়াব গিয়াসউদ্দিন হায়দার সমাধি এর অবকাঠামো

মুসলিম রীতিতে তৈরি, খুবই সাধারণ অবকাঠামোতে তৈরি বাহুল্যবর্জিত একটি সমাধি।পূর্বে কবরস্থানটিতে শুধু খুব সম্ভ্রান্ত শিয়াদের কবর দেয়া হত।

৩২/ নওয়াব নসরত জং সমাধি

নওয়াব নসরত জং সমাধি
নওয়াব নসরত জং সমাধি

নওয়াব নসরত জং সমাধি বাংলাদেশে শিয়া সম্প্রদায়ের কবরস্থান ইমামবাড়া হোসেনী দালান কবরস্থানে অবস্থিত। নওয়াব নসরত জং সমাধিটি, আরও ৩ জন নায়েবে নাজিমের সমাধিসহ এই কবরস্থানে অবস্থিত। এটি বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এর তালিকাভুক্ত একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা।

নওয়াব নসরত জং সমাধি এর অবকাঠামো

এটি মুসলিম রীতিতে তৈরি, খুবই সাধারণ অবকাঠামোতে তৈরি বাহুল্যবর্জিত একটি সমাধি। পূর্বে কবরস্থানটিতে শুধু খুব সম্ভ্রান্ত শিয়াদের কবর দেয়া হত।

নওয়াব নসরত জং সমাধি এর জীবনী

নওয়াব নসরত জং ছিলেন ইংরেজ অনুগত, তবে তার ভাই ব্রিটিশবিরোধী নওয়াব শামস-উদ্-দৌলাহকে কারাগার থেকে মুক্ত করেছিলেন। তিনি শিয়া ছিলেন এবং হোসেনী দালান সংস্কারে সম্ভবত অবদান রেখেছিলেন ।

৩৩/ নওয়াব সামসুদ্দৌলা সমাধি

নওয়াব সামসুদ্দৌলা সমাধি
নওয়াব সামসুদ্দৌলা সমাধি

বাংলাদেশে শিয়া সম্প্রদায়ের নির্দিষ্ট কিছু কবরস্থানের মধ্যে ইমামবাড়া হোসেনী দালান কবরস্থান অন্যতম। নওয়াব সামসুদ্দৌলা সমাধিটি , আরও ৩ জন নায়েবে নাজিমের সমাধি সহ এই কবরস্থানে অবস্থিত ।এটি বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এর তালিকাভুক্ত একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা।

নওয়াব সামসুদ্দৌলা সমাধি এর অবকাঠামো

মুসলিম রীতিতে তৈরি , খুবই সাধারণ অবকাঠামোতে তৈরি বাহুল্যবর্জিত একটি সমাধি ।পূর্বে কবরস্থানটিতে শুধু খুব সম্ভ্রান্ত শিয়াদের কবর দেয়া হত ।

৩৪/ নন্দন পার্ক

নন্দন পার্ক
নন্দন পার্ক

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার অদূরে সাভার উপজেলায় অবস্থিত একটি বিনোদন কেন্দ্র। এটি বাংলাদেশের বৃহত্তম বিনোদনমূলক পার্ক। আশুলিয়া থানার নবীনগরে চন্দ্রা মহাসড়কের পাশে বাড়ইপাড়া এলাকায় এর অবস্থান। ১৩৫ বিঘা আয়তনের মনোরম এই পার্কটি যুক্তরাজ্য থেকে প্রযুক্তি ও ডিজাইন নিয়ে ভারতের নিকো পার্কের সহায়তায় নির্মিত হয়েছে।

৩৫/ ঢাকা জেলার নর্থব্রুক হল

নর্থব্রুক হল
নর্থব্রুক হল

নর্থব্রুক হল (বর্তমানে স্থানীয়ভাবে লালকুঠি নামে পরিচিত) বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার অন্যতম প্রাচীন ও সৌন্দর্যময় স্থাপত্যিক একটি নিদর্শন যা বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে ওয়াইজ ঘাটে অবস্থিত। ১৮৭৪ সালে ভারতের গভর্নর জেনারেল জর্জ ব্যরিং নর্থব্রুক ঢাকা সফরে এলে এ সফরকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য এই ভবনটি টাউন হল হিসেবে নির্মাণ করা হয়। এখানে একটি নাট্যালয় রয়েছে। তৎকালিন ঢাকার স্থানীয় ধনাঢ্য ব্যক্তিরা গভর্নর জেনারেল নর্থব্রুকের সম্মানে এই ভবনের নাম দেন নর্থব্রুক হল। ১৯২৬ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি এখানে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে ঢাকা পৌরসভা সংবর্ধনা দেয়। বর্তমানে ভবনটির দায়িত্ব রয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। জরাজীর্ণ হওয়ায় এটি আর মিলনায়তন হিসেবে বর্তমানে (২০১৬ খ্রিঃ) ব্যবহৃত হচ্ছে না। এ ভবনটি সংলগ্ন সড়কটি নর্থব্রুক হল রোড নামে পরিচিত। মূল ভবনের পশ্চাৎভাগে একটি গ্রন্থালয় রয়েছে।

নর্থব্রুক হল এর ইতিহাস

নর্থব্রুক হল, ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দ।

১৮৭৯ সালের শেষের দিকে নর্থব্রুক হলের নির্মাণ কাজ শেষ হয়। ভাওয়াল রাজা রাজেন্দ্র নারায়ণ রায় চৌধুরী এটি নির্মাণের জন্য ১০ হাজার টাকা দান করেন। তবে ভবনটি ১৮৮০ সালের ২৫ মে উদ্বোধন করা হয়। সেসময়ে ঢাকার কমিশনার নর্থব্রুক হলের উদ্বোধন করেন। তৎকালীন পদস্থ রাজকর্মচারি ও ধনাঢ্য ব্যক্তিদের সভা এবং অন্যান্য আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম এ ভবনে আয়োজন করা হতো। পরবর্তী সময়ে নর্থব্রুক হলের নামানুসারে সংলগ্ন সড়কের নামকরণ করা হয় নর্থব্রুক হল রোড। ১৮৮২ সালে ভবনটি টাউন হল থেকে পাঠাগারে রূপান্তর করা হয় এবং এর সাথে জনসন হল নামে একটি ক্লাবঘর সংযুক্ত করা হয়। স্বল্পসংখ্যক বই নিয়ে পাঠাগারটির যাত্রা শুরু হলেও কয়েক বছরের মধ্যে এর বই সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়ে যায়। ১৮৮৭ সালে এই পাঠাগারের জন্য বিলেত থেকে বই আনা হয়েছিল। ১৯২৬ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি এখানে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথকে ঢাকা পৌরসভা সংবর্ধনা দেয়।

পাকিস্তান আমলে নর্থব্রুক হল তার ঐতিহ্য হারাতে শুরু করে। কর্তৃপক্ষের অবহেলায় শ্রীহীন হয়ে পরে পাঠাগারটি। ধীরে ধীরে কমতে থাকে এর পাঠক সংখ্যা। মুক্তিযুদ্ধের সময় এ পাঠাগারের অধিকাংশ বই নষ্ট হয়ে যায়। স্বাধীনতার পরও গ্রন্থাগারের হারানো ঐতিহ্য পুনরুদ্ধারের তেমন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। বিভিন্ন সময়ে নর্থব্রুক হলের আশপাশে নির্মিত হয় সম্মেলন কেন্দ্র ও গণমিলনায়তনের মতো ভবন যা এর আকর্ষণকে অনেকাংশে ম্লান করে দিয়েছে। ২০০৮ এর বিধি অনুযায়ী রাজউক কর্তৃক মহা পরিকল্পনাভুক্ত স্থাপনা হিসেবে নর্থব্রুক হলকে সংরক্ষণের জন্য তালিকাভুক্ত করা হয়। বর্তমানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধানে রয়েছে হলটি। হল এলাকায় বর্তমানে ফরাশগঞ্জ স্পোর্টিং ক্লাব, ৭৯ নম্বর কমিশনারের কার্যালয়। ডিসিসি কমিউনিটি সেন্টার এবং ফরাসগঞ্জ ডায়াবেটিক সমিতির কার্যালয় অবস্থিত। গ্রন্থালয়ের অধিকাংশ বই জ্বীর্ণ হয়ে পড়েছে।

নর্থব্রুক হল এর লালকুঠি নামকরণ

১৮৭২ সালে নির্মিত এই নর্থব্রুক হলটির ইমারতটি লালরঙ্গে রাঙ্গানো ছিল। এবং পরবর্তীতে এই নর্থব্রুক হলটিকে লালকুঠি নামে ডাকা হতো। তাই এর নাম হল নর্থব্রুক হল বা লালকুঠি।

নর্থব্রুক হল এর লালকুঠি স্থাপত্য

বুড়িগঙ্গা থেকে নর্থব্রুক হল, ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দ।

নর্থব্রুক হল ভবনটি মোঘল নির্মাণশৈলী ও কৌশল অবলম্বনে নানাবিধ সুবিধার কথা বিবেচনা করে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে ওয়াইজঘাট এলাকায় এক বিঘা জমির ওপর নির্মাণ করা হয়েছিল। চমকা লালে রাঙা এ ভবনের দুই পাশে দুটি করে মোট চারটি সুশোভিত মিনার আছে। অষ্টভুজাকৃতির মিনারগুলো বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত ও কারুকার্যখচিত। ভবনের উত্তর দিকে রয়েছে প্রবেশ দরজা। সবগুলো দরজাই অশ্বখুরাকৃতি ও অর্ধ-বৃত্তাকার। মুসলিম ঐতিহ্যের স্মারক হিসেবে এ ভবনের চূড়া বেশ উঁচু। চূড়া থেকে অনেক নিচে নকশামণ্ডিত, অলঙ্কারিক নিচু পাঁচিলের অবস্থান। তখনকার দিনে ভবনটি দক্ষিণ দিক থেকে দেখতে একরকম এবং উত্তর দিক থেকে দেখতে ছিল সম্পূর্ণ অন্যরকম। ফলে নতুন কোনো দর্শনার্থী হঠাৎ ভবনটি দেখে ঠিক বুঝে উঠতে পারতো না। বুড়িগঙ্গা নদীর তীর থেকে পরিদৃষ্ট হয় ভবনটির একধাপবিশিষ্ট গায় লাল রঙের বিশাল গম্বুজ, সুউচ্চ চূড়া ও নিচু পাঁচিল। ভবনের বুড়িগঙ্গার পাশের অংশটি দেখতে ছিল অত্যন্ত আকর্ষণীয়। তবে বর্তমানে হলঘরটির দক্ষিণ দিকে নানাবিধ দোকানপাট গড়ে ওঠায় বুড়িগঙ্গা দিয়ে চলার সময় এখন আর ভবনটি দৃষ্টিগোচর হয় না।

৩৬/ নিমতলী কুঠি

নিমতলী কুঠি
নিমতলী কুঠি

নিমতলি কুঠি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহরের নিমতলি এলাকায় অবস্থিত একটি মুঘল আমলের প্রাসাদ। ঢাকার নায়েবে নাজিম জেসারত খানের জন্য নিমতলিতে এই প্রাসাদটি নির্মাণ করা হয়। পরবর্তীতে অন্যান্য নায়েবে নাজিমরাও এই প্রাসাদকে বাসভবন হিসাবে ব্যবহার করেছেন। নবাব গাজীউদ্দিনের মৃত্যুর পরে এটি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি অধিগ্রহণ করে এবং এলাকার ভবনগুলো নিলামে বিক্রি করে দেয়। ক্রেতারা ভবনগুলির অধিকাংশই ভেঙে ফেলে। অবশিষ্ট অংশ পরবর্তীকালে ব্রিটিশ সরকার পুনরায় অধিগ্রহণ করে নেয়। 

নিমতলী কুঠি এর বর্তমান অবস্থা

বর্তমানে নিমতলি কুঠির কেবলমাত্র পশ্চিম ফটকটি টিকে রয়েছে। এশিয়াটিক সোসাইটি অব বাংলাদেশের ভবনের প্রাঙ্গনে এটি অবস্থিত।

৩৭/ পরিবিবির মাজার

পরিবিবির মাজার
পরিবিবির মাজার

পরীবিবির মাজার ঢাকার লালবাগ এ অবস্থিত লালবাগ কেল্লার অবশিষ্ট তিনটি স্থাপনার মধ্যে অন্যতম। এখানে পরীবিবি সমাহিত আছেন। শায়েস্তা খান তার কন্যার স্মরণে এই মনমুগ্ধকর মাজারটি নির্মাণ করেন।

পরিবিবির মাজার এর ইতিহাস

পরিবিবি (যার অন্য নাম ইরান দুখত রাহমাত বানু) ছিলেন বাংলার মুঘল শায়েস্তা খানের কন্যা। মুঘল সম্রাট আওরংগজেবের পুত্র শাহজাদা আজম এর সাথে ১৬৬৮ ইং সালের ৩ মে পরিবিবির বিয়ে হয়। ১৬৮৪ সালে পরিবিবির অকাল মৃত্যুর পর তাকে নির্মানাধীন লালবাগ কেল্লার অভ্যন্তরে সমাহিত করা হয়। তার সমাধীস্থলকে চিহ্নিত করে পরিবিবির মাজার নির্মিত হয়।

পরিবিবির মাজার এর স্থাপত্য

পরিবিবির মাজার এর স্থাপনাটি চতুষ্কোন। মাঝের একটি ঘরে পরিবিবির সমাধিস্থল এবং এই ঘরটি ঘিরে আটটি ঘর আছে। স্থাপনাটির ছাদ পাথরের তৈরী এবং চারকোণে চারটি অষ্টকোণ মিনার ও মাঝে একটি অষ্টকোণ গম্বুজ আছে। গম্বুজটির উপরে পিতলের আচ্ছাদন দেওয়া আছে।

স্থাপনাটির অভ্যন্তর ভাগ সাদা মার্বেল পাথর দিয়ে আচ্ছাদিত।

৩৮/ ফ্যান্টাসি কিংডম

ফ্যান্টাসি কিংডম
ফ্যান্টাসি কিংডম

ফ্যান্টাসি কিংডম থিম পার্ক, মূলত ফ্যান্টাসি কিংডম নামেই পরিচিত বাংলাদেশের ঢাকার অদূরে আশুলিয়া থানার জামগড়া এলাকায় অবস্থিত একটি বিনোদন পার্ক। ফ্যান্টাসি কিংডম ২০০২ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি ইং তারিখে প্রতিষ্ঠিত হয়। এই পার্কটির রক্ষণাবেক্ষণা ও পরিচালনা কনকর্ড এন্টারটেইনমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড; যা কনকর্ড গ্রুপের একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান।   থিম পার্কটি প্রায় ২০ একর জায়গা জুড়ে অবস্থিত, যার মধ্যে একটি থিম পার্ক, একটি ওয়াটার পার্ক, শুষ্ক পার্ক এবং হেরিটেজ কর্নার রয়েছে।

বর্তমান সময়ে, ফ্যান্টাসি কিংডম বাংলাদেশে সর্বাধিক পরিদর্শিত থিম পার্ক, যার গড় বার্ষিক উপস্থিতি ৬ কোটি।

ফ্যান্টাসি কিংডম এর অবস্থান

পার্কটি রাজধানী ঢাকার অদূরে সাভার উপজেলাধীন আশুলিয়া থানার জামগড়া এলাকায় ঢাকা-আশুলিয়া মহাসড়কের পাশে অবস্থিত। এই সম্পত্তি ঢাকা জেলা কর্তৃক পরিচালিত আশুলিয়া ও সাভারের শহরগুলির অন্তর্ভুক্ত। ফ্যান্টাসি কিংডম পৌঁছানোর জন্য বর্তমানে অনেক সড়ক রয়েছে। ঢাকা থেকে সাভার যাওয়ার পথেই পড়ে বাংলাদেশের সর্বপ্রথম থিম পার্ক ফ্যান্টাসি কিংডম।

ফ্যান্টাসি কিংডম এর মূল আকর্ষণ

ফ্যান্টাসি কিংডম

‘ফ্যান্টাসি কিংডম থিম পার্ক’ সমস্ত তরুণদের জন্য প্রায় ২৪ টি রাইড রয়েছে।  যার ভিতর সবচেয়ে মজার উল্লেখযোগ্য কিছু রাইড হল জুজু ট্রেন ও টনি অ্যাডভেঞ্চার।  

  • বাম্পার কার
  • জুজু ট্রেন
  • ঘূর্ণি পাখি
  • হাইওয়ের কনভয়
  • বিহ স্প্ল্যাশ
  • হ্যাপি কাঙারু
  • ইজি ডিজি
  • সূর্য ও চাঁদ
  • থ্রিডি সিনেমা
  • বুল ডোজার
  • সান্তা মারিয়া
  • বাচ্চাদের বাম্পার গাড়ি
  • জাদুর গালিচা
  • পনি অ্যাডভেঞ্চার
  • রোলার কোস্টার
  • স্পিড ওয়ে
  • ঘূর্ণি টানেল
  • স্কাই হপার
  • বাম্পার বোট
  • জিপ প্রায়
  • ইগলু হাউস
  • মুভিং টাওয়ার
  • ফেরিস হুইল
  • জুনিয়র ফেরিস হুইল
  • রিডিম্পশন গেম
  • রক এন রোল এবং ৯ডি সিনেমা হ’ল নতুন রাইড হিসেবে ফ্যান্টাসি কিংডম কমপ্লেক্সে যুক্ত করা হয়েছে

ফ্যান্টাসি কিংডম এর ওয়াটার কিংডম

আশুলিয়ার ফ্যান্টাসি কিংডম কমপ্লেক্সের একটি প্রধান আকর্ষণ হল ওয়াটার কিংডম। এই ওয়াটার পার্কটিতে স্লাইড, একটি ওয়েভ পুল, অলস রিভ রয়েছে। ফ্যান্টাসি কিংডমের পাশে ওয়াটার কিংডম অবস্থিত। এছাড়া, এখানে স্লাইড ওয়ার্ল্ড, লেজি রিভার, পারিবারিক পুল, মাল্টি-স্লাইড এবং ওয়াটার পুল, লস্ট কিংডম, খেলার অঞ্চল এবং নৃত্যের অঞ্চল রয়েছে।

ফ্যান্টাসি কিংডম এর এক্স-ট্রিম রেসিং গো-কার্ট

ফ্যান্টাসি কিংডম এই গো-কার্টগুলি ফ্যান্টাসি কিংডম কমপ্লেক্সে চালু করছে, যা বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক মানের গো-কার্টস চালানোর বিশ্ব মানের অভিজ্ঞতা দেয়।

৩৯/ ঢাকা জেলার বঙ্গবন্ধু চত্বর স্মৃতিস্তম্ভ

বঙ্গবন্ধু চত্বর স্মৃতিস্তম্ভ
বঙ্গবন্ধু চত্বর স্মৃতিস্তম্ভ

বঙ্গবন্ধু চত্বর স্মৃতিস্তম্ভ ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে অবস্থিত, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমান-এর একটি স্মারক ভাস্কর্য। মার্চ ৪, ২০০০ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর ফলক উন্মোচন করেন। স্থানটি গুলিস্তানের মোড় হিসেবে পরিচিত।

৪০/ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটার

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটার
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটার

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটার বা ভাসানী নভো থিয়েটার বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহরের বিজয় সরনিতে অবস্থিত একটি স্থাপনা। এখানে নভোমন্ডল সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য এবং নভো মন্ডলের ধারণা পাওয়ার জন্য কৃত্রিম নভোমন্ডল তৈরি করা আছে। ৫.৪ একর জায়গায় স্থাপিত নভোথিয়েটারটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের পরিচালনায় চলছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটার এর ইতিহাস

১৯৯৫ সালে গৃহীত সরকারি পরিকল্পনা অনুযায়ী বাংলাদেশ সরকার এটি স্থাপনের ব্যবস্থা নেন। এর নকশা করেন তৎকালীন গণপূর্ত অধিদপ্তরের উপপ্রধান আলী ইমাম। নকশাটি ১৯৯৭ সালের ১৭ মার্চ অনুষ্ঠিত একনেকের বৈঠকে অনুমোদিত হয় এবং ২০০০ সালের ১৭ জুলাই এর নির্মাণকাজ আরম্ভ হয়। শুরুতে ঢাকার আগারগাঁওয়ে জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরের পাশে এটি স্থাপিত হবার কথা ছিল। এর যন্ত্রপাতি স্থাপনসহ ভেতরের সব গুরুত্বপূর্ণ কারিগরী কাজ জাপানের অপটিকস্ ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি করেছে। স্থাপনা নির্মাণ করেছে বাংলাদেশী মাসুদ এন্ড কোম্পানি। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যপক আলমগীর হাবিবের নেতৃত্বে একটি উপদেষ্টা কমিটি নির্মাণকাজ তদারকীতে অংশ নেয়। ২০০০ সালের ১৭ জুলাই থেকে ২০০১ সালের ৭ নভেম্বর পর্যন্ত কাজ করার পর তা বন্ধ হয় এবং পরে ২০০২ সালের মাঝামাঝি পুনরায় চালু হয়ে ২০০৩ সালের মে মাসে এর নির্মাণকাজ শেষ হয় এবং ২৫ সেপ্টেম্বর তারিখে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া তা উদ্বোধন করেন। এটির নির্মাণব্যয় ১২০ কোটি টাকা।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটার এর স্থাপত্যশৈলী ও নকশা

স্থপতি আলী ইমাম এই নভো থিয়েটারটির নকশা প্রণয়ন করেন। প্রাচীণ ধ্রুপদী ও আধুনিক নির্মাণরীতির মিশ্রণ অনুসৃত হয়েছে এ নভোথিয়েটারে। সপ্তর্ষীমণ্ডলের সাতটি তারাসহ সাত সংখ্যার বিশেষ গুরুত্ব আছে জ্যোতির্বিজ্ঞানে। এরই প্রতীকী রূপায়ন হিসেবে মূল ভবনের সামনের অংশে দুইপাশে সাতটি করে মোট ১৪টি ফ্রি হাইট রোমান কলাম আছে যার উচ্চতা ৪০ ফুট। ৩২ মিটার ব্যসার্ধ বিশিষ্ট মূল ডোমটির উচ্চতা ৫ তলার সমান। এতে আছে একটি স্পেস থিয়েটার গেম (২৭৫ আসন), একটি রাইড সিমুলেটর (৩০ আসন), চলচ্চিত্র ও স্লাইড প্রদর্শন সুবিধাসহ সম্মেলন কক্ষ প্রভৃতী। নভোথিয়েটারের তিনটি তলা মাটির নিচে এবং দুইটি তলা মাটির উপরে। প্রতিবন্ধীদের জন্য পূর্বদিকে রয়েছে আলাদা সিঁড়ি আর মাটির নিচের দুটি তলায় রয়েছে বিশ্বের সেরা বিজ্ঞানীদের পরিচিতি এবং আলোকচিত্র।

৪১/ বড় কাটরা

বড় কাটরা
বড় কাটরা

বড় কাটরা ঢাকায় চকবাজারের দক্ষিণে অবস্থিত মুঘল আমলের একটি সরাইখানা। সম্রাট শাহজাহানের পুত্র শাহ সুজার নির্দেশে ১৬৪৪ থেকে ১৬৪৬ খ্রিস্টাব্দে দিওয়ান (প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা) মীর আবুল কাসিম দ্বারা বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে এই ইমারতটি নির্মাণ করা হয় । তিনি মীর-ই-ইমারত নামে পরিচিত ছিলেন। প্রথমে এতে শাহ সুজার বসবাস করার কথা থাকলেও পরে এটি মুসাফিরখানা হিসাবে ব্যবহৃত হয়। বর্তমানে এটি জামিয়া হোসাইনিয়া আশরাফুল উলুম, বড় কাটরা মাদ্রাসার তত্ত্বাবধানে রয়েছে।

এক সময় স্থাপত্য সৌন্দর্যের কারণে বড় কাটরার সুনাম থাকলেও বর্তমানে এর ফটকটি ভগ্নাবশেষ হিসাবে দাঁড়িয়ে আছে। এক সময় বড় কাটরার তোরণে ফার্সি ভাষায় শাদুদ্দিন মুহম্মদ সিরাজী লিখিত একটি পাথরের ফলক লাগানো ছিল। যেখানে এই মুসাফির খানার নির্মাতা ও এর রক্ষনাবেক্ষনের ব্যয় নির্বাহের উপায় সম্পর্কে জানা যায়। ফলকে লেখা ছিল:

বড় কাটরা এর স্থাপত্য

বিল্ডিংটি মধ্য এশীয় সরাইখানার ঐতিহ্যবাহী প্যাটার্ন অনুসরণ করে এবং মোগল স্থাপত্য অনুযায়ী শোভিত। মূলত এটি একটি চতুষ্কোণ অঙ্গন ঘেরা স্থাপত্য।

দক্ষিণ শাখাটি ৬৭.৯৭ মিটার প্রসারিত  এবং বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত। উত্তর বাহুও একই মাপের ছিল বলে ধারণা করা হয়। পূর্ব-পশ্চিম বাহুর দৈর্ঘ্য এখন নিরূপণ করা দুঃসাধ্য হলেও আদিতে ৭০.১০ মিটার করে ছিল বলে জানা যায়। তিনতলা বিশিষ্ট এ সদর তোরণ ছিল অতি মনোমুগ্ধকর এবং এটি দক্ষিণে নদীর দিকে প্রায় ৭.৬১ মিটার এবং পূর্ব-পশ্চিমে প্রায় ১২.১৯ মিটার প্রসারিত ছিল। এ প্রবেশপথের দুপাশে ছিল দুটি প্রহরীকক্ষ। প্রহরীকক্ষ দুটির আয়তন ছিল পূর্ব-পশ্চিমে লম্বা ৫.৫১ × ২.৯২ মিটার। এ প্রবেশপথের পরে ছিল পরপর তিনটি অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্র আয়তনের প্রবেশপথ। পূর্ব-পশ্চিমে লম্বা প্রবেশপথের আয়তন ছিল যথাক্রমে ২.৭৪ × ০.৯১ মি. , ৩.৩৫ × ১.৮২ মি, এবং ২.৭৪ × ১.৮২ মি.।

৪২/ বলধা গার্ডেন

বলধা গার্ডেন
বলধা গার্ডেন

বলধা গার্ডেন ঢাকার ওয়ারী এলাকায় অবস্থিত একটি উদ্ভিদ উদ্যান। এই উদ্যানে প্রচুর দূর্লভ প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে। তদানীন্তন ঢাকা জেলা, বর্তমান গাজীপুর জেলার বলধার জমিদার নরেন্দ্রনারায়ণ রায় চৌধুরী ১৯০৯ খ্রিষ্টাব্দে বলধা গার্ডেনের সূচনা করেন। তিনি দুটি উদ্যান তৈরি করেন। প্রথম উদ্যানটির নাম রাখেন “সাইকী”। পরবর্তিতে তৈরি করা হয় দ্বিতীয় উদ্যান “সিবলী”। নরেন্দ্রনারায়ণ রায় চৌধুরীর মৃত্যুর পর কোনো এক সময়ে এ দুটি উদ্যানকে সম্মিলিতভাবে বলধা গার্ডেন নামে আখ্যায়িত করা হতে থাকে। ৩.৩৮ একর জায়গার উপর এই উদ্যান নির্মাণ করা হয়েছে। নরেন্দ্রনারায়ণ এখানে একটি পারিবারিক জাদুঘরও প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

বলধা গার্ডেন এর নামকরণ

বিখ্যাত এই গার্ডেনের মালিক ছিলেন জমিদার নারায়ণ চন্দ্র চৌধুরী। উনিশ শতকের শেষের দিকে এটি ছিল বলধার সেই জমিদারের বাগানবাড়ি। যা তখন ঢাকার উচ্চবিত্তদের সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল। নিয়মিত সেখানে বসতো গান বাজনার আসর। ধারণা করা হয় বলধা নাম থেকেই বলধা গার্ডেনের নামকরণ হয়েছে। 

বলধা গার্ডেন এর ইতিহাস

জমিদার নারায়ণ চন্দ্র চৌধুরী পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে নানারকম ফুলগাছ ও অন্যান্য উদ্ভিদ এনে রোপন করেছেন নিজের তৈরী এ গার্ডেনটিতে। বলধা গার্ডেন প্রকৃতপক্ষে ফুল ও উদ্ভিদের একটি মিউজিয়াম। তবে সত্যিকারের একটি মিউজিয়ামও ছিল বলধা গার্ডেনে। তাতে কয়েকটি ধাতব মূর্তি ছিল। বলধা গার্ডেনে যেমন দেশ বিদেশের বিভিন্ন উদ্ভিদ রয়েছে ঠিক তেমনি দেশ বিদেশের খ্যাতিমান লোকেরা বলধা গার্ডেন দেখতে আসতেন। এখনো বলধা গার্ডেন নিয়ে ঢাকাবাসীর আগ্রহের কমতি নেই। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও বলধা গার্ডেন পরিদর্শন করেছিলেন। তখন তিনি এ গার্ডেনের বহু বিদেশী ফুলের বাংলা নামকরণ করেছিলেন।

বলধা গার্ডেন এর ব্যবস্থাপনা

১৯৪৩ খ্রিষ্টাব্দে নরেন্দ্র নারায়ণচৌধুরীর মৃত্যুর পর কলকাতা হাইকোর্টের নিয়ন্ত্রণ ট্রাস্টের মাধ্যমে এর তদারকি ও পরিচালনা করা হয়। ১৯৫১ খ্রিষ্টাব্দে পাকিস্তান সরকারের আমলে কোর্ট অব ওয়ার্ডস্‌ বাগানের ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত ছিল। কিন্তু তাদের দুর্বল ব্যবস্থাপনাযর কারণে বাগানের অবস্থার অবনতি হওয়ায় পাকিস্তান সরকার বাগানের ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য ১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দে বলধা গার্ডেনের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব দেয় পূর্ব পাকিস্তান সরকারের বন বিভাগকে। বর্তমানে এটি জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের এখতিয়ারভুক্ত দূরস্থ বাগান।

এ বাগানের মোট ৮০০ প্রজাতির প্রায় ১৮,০০০ উদ্ভিদ আছে। শিক্ষার্থী ও দর্শণার্থিদেরজন্য এ বাগান উম্মুক্ত। সীবলী অংশ প্রতিদিন সকাল ৮.০০ থেকে দুপুর ১২.০০টা পর্যন্ত ও বিকাল ২.০০ ঘটিকা হতে ৫.০০ ঘটিকা পর্যন্ত এই উদ্যান দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকে।

বলধা গার্ডেন এর সাইকী ও সীবলী

বলধা গার্ডেন দু’টি অংশে বিভক্ত একটি অংশের নাম সাইকী এবং অন্যটি সিবলী। সাইকী অর্থ আত্মা ও সিবলী অর্থ প্রকৃতির দেবী। দুটি শব্দই গ্রিক পৌরাণিক শব্দ।

বলধা গার্ডেন সাইকী

এর সাইকী অংশের প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে নীল, লাল, সাদা, হলুদ, জাতের শাপলায় ভরা অনেক গুলো শাপলা হাউজ, বিরল প্রজাতির দেশী বিদেশী ক্যাকটাস, অর্কিড, এনথুরিয়াম, ভূজ্জ পত্র গাছ, বিচিত্র বকুল, আমাজান লিলি ও সুরংগ সহ একটি ছায়াতর ঘর।

বলধা গার্ডেন এর সিবলী

এর সিবলী অংশের মূল আকর্ষণ হচ্ছে শংখ নদ, পুকুর, ক্যামেলিয়া, আশোক, আফ্রিকান টিউলিপস। এখানে আরো আছে সূর্যঘড়ি, জয় হাউজ। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ এই জয় হাউসে বসে এখানকার ক্যামেলিয়া ফুলের সৌন্দর্য্যে মুগ্ধ হয়ে তার বিখ্যাত “ক্যামেলিয়া” কবিতাটি লিখেছিলেন।

৪৩/ বাংলাদেশ সামরিক জাদুঘর

বাংলাদেশ সামরিক জাদুঘর
বাংলাদেশ সামরিক জাদুঘর

বাংলাদেশ সামরিক জাদুঘর, বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহরের বিজয় সরণিতে অবস্থিত একটি জাদুঘর। জাদুঘরটি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত হয়। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইতিহাস, ঐতিহ্য, সাফল্য সংক্রান্ত নিদর্শন ও বিভিন্ন অস্ত্র-শস্ত্রের সংগ্রহ নিয়ে জাদুঘরটি সজ্জিত।

বাংলাদেশ সামরিক জাদুঘর এর ইতিহাস

১৯৮৭ সালে প্রথম সামরিক জাদুঘরটি প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ১৯৯৯ সালে জাদুঘরটি স্থায়ীভাবে বিজয় সরণিতে স্থানান্তর করা হয়। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় সেনাবাহিনীর কমান্ডারদের ব্যাজ, পোশাক, অস্ত্র, গোলাবারুদ, ক্যানন, এন্টি এয়ারক্রাফ্ট গান এবং যোগাযোগের জন্য ব্যবহৃত বিভিন্ন যানবাহন জাদুঘরটিতে রক্ষিত রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের পর তৎকালীন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া বিভিন্ন যানবাহন এবং অস্ত্রও এখানে সংরক্ষিত রয়েছে।

৪৪/ বায়তুর রউফ মসজিদ

বায়তুর রউফ মসজিদ
বায়তুর রউফ মসজিদ

বায়তুর রউফ মসজিদ বাংলাদেশের ঢাকা জেলায় অবস্থিত একটি উল্লেখযোগ্য মসজিদ  ২০১২ সালে নির্মান হওয়া এ মসজিদের ডিজাইন করেছেন স্থপতি মেরিনা তাবাসসুম। অনবদ্য ডিজাইনশৈলীে এবং দেশীয় সংস্কুতি ও ঐতিহ্যের ধারক হিসেবে এটি আগা খান অ্যাওয়ার্ড ফর আর্কিটেকচার পুরস্কারে ভূষিত হয়।

বায়তুর রউফ মসজিদ এর বর্ণনা

বায়তুর রউফ মসজিদর অবস্থান রাজধানী ঢাকার দক্ষিণখান থানার ফায়েদাবাদে। জমির মালিক সুফিয়া খাতুন স্থানীয় মুসলিমদের নামাজের জন্য এই যায়গাটি ওয়াকফ করেন। মসজিদটি ৭৫৪ বর্গ মিটার জায়গার উপর নির্মিত। এটি এমন ভাবেই ডিজাইন করা হয়েছে, যার ভেতরে বসেই যেমন ঝকঝকে রোদের দেখা মিলবে, তেমনি ঝম ঝম বৃষ্টিতে এখানে বসেই বর্ষার দারুন আবহ উপভোগ করা যাবে। ভবনটিতে এমন ভাবে বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে, যার ফলে যে কোন ঋতুতেই মসজিদটির ভিতরের তাপমাত্রা থাকবে প্রায় অপরিবর্তিত। ৪ টি আলো প্রবেশের পথ এবং ভবনের ছাদে গোল ছিদ্র করে আলো প্রবেশের ব্যবস্থা এবং একই সাথে আলো নান্দনিক আলো ছায়ার খেলার ব্যবস্থা করা হয়েছে, যার ফলে দিনের বেলা এখানে কখনোই কৃত্রিম আলোর প্রয়োজন পরবে না।

প্রতি জামাতে ৪০০ জন মুসল্লি নামাজ আদায় করেন, ঈদুল আজহায় এখানে ৬ শতাধিক মুসল্লি ঈদের নামাজ পড়তে পারেন। মসজিদের পাশা পাশি এখানে একটি মক্তব চালু করা হয়েছে।মসজিদের পূর্ণাঙ্গতার জন্য ইমামের ঘর ও গ্রন্থাগার তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে । চতুর্দিকে আটটি থামের ওপর তৈরি। কিবলার দিকে ১৩ ডিগ্রি কোনাকুনি করা একটি থাম। মসজিদ বলতে যে পরিচিত অবয়ব কল্পনা করা হয় সেটা অনুপস্থিত এখানে। গম্বুজ বা মিনার নেই।

বায়তুর রউফ মসজিদ এর স্থাপত্য শৈলী

মসজিদটির নির্মাণ শৈলী সুলতানি স্থাপত্য রীতি দ্বারা অনুপ্রাণিত। সনাতন পদ্ধতির ইটের ব্যাবহারের সাথে সমকালীন স্থাপত্য রীতি মিশ্রিত হয়েছে। মসজিদটি সম্পূর্ণ ইটের তৈরি, কোন রঙ বা প্লাস্টারের কাজ এখানে করা হয় নি। লাল ইটের নিযমিত ছিদ্রযুক্ত দেয়াল তৈরী করা হয়েছে যা প্রাচীন মসজিদের জালির প্রতিনিধিত্ব করছে। বিভিন্ন দরজা ও জানালার অনুপাত এবং বিন্যাসও নেয়া হয়েছে ঐতিহ্যবাহী স্থাপনার অনুকরনে। এর স্থাপত্যের বিশেষ দিক হলো, এর বায়ু চলাচলব্যবস্থা ও আলোর চমৎকার বিচ্ছুরণ মসজিদের পরিবেশকে দেয় ভিন্ন মাত্রা। সরাসরি আলো প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে কিন্তু পুরো নামাজ কক্ষই থাকবে আলোকিত। এজন্য চারদিকে রাখা হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। মসজিদের স্থপতি মেরিনা তাবাসসুম মসজিদটির বিশেষত্ব সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেন

’মসজিদটি তৈরি হয়েছে একটু ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে। প্রচলিত মসজিদগুলোর ধরন থেকে আলাদা। আর মসজিদটি নির্মিত হয়েছে স্থানীয় ব্যক্তিদের অংশগ্রহণে, অংশগ্রহণমূলক ধারণা থেকে। খরচও এসেছে সবার কাছ থেকে। পরিবেশবান্ধব এবং আলো-বাতাসের বিষয়টি মাথায় রেখে এর ডিজাইন করেছি। ইতিহাস, সংস্কৃতি, আবহাওয়াসহ নানা বিষয় মাথায় রেখে এর নির্মাণ করা হয়েছে। আর ব্যবহৃত সব উপকরণই স্থানীয়।’

মসজিদের সম্মুখভাগে এক চিলতে পাকা পরিসর। ঢাকা শহরের জনাকীর্ন অবস্তানে এটিও সামাজিক পরিসরে রূপান্তরিত হয়। স্থানীয় মানুষেরা এটিকে নিজেদের ভাবতে পছন্দ করে।

৪৫/ ঢাকা জেলার বাহাদুর শাহ পার্ক

বাহাদুর শাহ পার্ক
বাহাদুর শাহ পার্ক

বাহাদুর শাহ পার্ক বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার পুরানো ঢাকা এলাকার সদরঘাটের সন্নিকটে লক্ষ্মীবাজারে অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক স্থান যেখানে বর্তমানে একটি পার্ক স্থাপন করা হয়েছে। এ স্থান বহু ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী।

বাহাদুর শাহ পার্ক

পার্কটি ডিম্বাকৃতি এবং পার্কটি লোহার রেলিং দিয়ে ঘেরা। এর পূর্ব এবং পশ্চিম পাশে দুটো প্রধান ফটক বা গেট রয়েছে। পার্কটির ভেতরে রেলিং এর পাশ দিয়ে পাকা রাস্তা করা হয়েছে।

পার্কটি ঢাকার অন্যতম প্রধান নৌবন্দর সদরঘাট এলাকায় ঢুকতেই লক্ষ্মীবাজারের ঠিক মাথায় অবস্থিত।[১] পার্কটিকে ঘিরে ৭টি রাস্তা একত্রিত হয়েছে। এর চারপাশে সরকারী গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা সহ বেশ কিছু স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় থাকার কারণে এটি পুরনো ঢাকার একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এলাকা হিসেবে বিবেচিত। পার্কের উত্তর পাশে রয়েছে সেন্ট থমাস চার্চ, উত্তর পাশেই অবস্থিত ঢাকার প্রথম পানি সরবরাহ করার জন্য তৈরি ট্যাংক। উত্তর-পূর্ব কোনে আছে ঢাকার অন্যতম কলেজ কবি নজরুল সরকারি কলেজ এবং ইসলামিয়া হাই স্কুল, পূর্ব পাশে রয়েছে ঢাকার অন্যতম প্রাচীন বিদ্যালয় সরকারি মুসলিম স্কুল, দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে রয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। পার্কের ঠিক উত্তর পশ্চিম পাশেই রয়েছে ঢাকার জজ কোর্ট। এছাড়া বাংলা বাজার, ইসলামপুর, শাখারী বাজারের মত ঢাকার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু এলাকা থেকে বর্তমান ঢাকার নতুন এলাকায় আসতে এ পার্ক এলাকার রাস্তাটিই প্রধান সড়ক।

বাহাদুর শাহ পার্ক এর নামকরণ

আঠারো শতকের শেষের দিকে এখানে ঢাকার আর্মেনীয়দের বিলিয়ার্ড ক্লাব ছিল। যাকে স্থানীয়রা নাম দিয়েছিল আন্টাঘর। বিলিয়ার্ড বলকে স্থানীয়রা আন্টা নামে অভিহিত করত। সেখান থেকেই এসেছে “আন্টাঘর” কথাটি। ক্লাব ঘরের সাথেই ছিল একটি মাঠ বা ময়দান যা আন্টাঘর ময়দান নামে পরিচিত ছিল। ১৮৫৮ সালে রানী ভিক্টোরিয়া ভারতবর্ষের শাসনভার গ্রহণ করার পর এই ময়দানেই এ সংক্রান্ত একটি ঘোষণা পাঠ করে শোনান ঢাকা বিভাগের কমিশনার। সেই থেকে এই স্থানের নামকরণ হয় “ভিক্টোরিয়া পার্ক”। ১৯৫৭ সালের আগে পর্যন্ত পার্কটি ভিক্টোরিয়া পার্ক নামে পরিচিত ছিল। ১৮৫৭ সালের সিপাহি বিদ্রোহের পর এক প্রহসনমূলক বিচারে ইংরেজ শাসকেরা ফাঁসি দেয় অসংখ্য বিপ্লবী সিপাহিকে। তারপর জনগণকে ভয় দেখাতে সিপাহিদের লাশ এনে ঝুলিয়ে দেওয়া হয় এই ময়দানের বিভিন্ন গাছের ডালে। ১৯৫৭ সালে (মতান্তরে ১৯৬১) সিপাহি বিদ্রোহের শতবার্ষিকী পালন উপলক্ষে এখানে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করে পার্কের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় বাহাদুর শাহ পার্ক।। সিপাহী বিদ্রোহ অনুষ্ঠিত হয়েছিল ইংরেজ শাসনের সমাপ্তি ঘটিয়ে মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ এর শাসন পুনরায় আনার জন্য। তাই তার নামানুসারে এর নতুন নামকরণ করা হয় “বাহাদুর শাহ পার্ক”।

বাহাদুর শাহ পার্ক এর ইতিহাস

উনিশ শতকের প্রথমার্ধে ইংরেজরা এটি কিনে নেয়। তারা এটিকে একটি পার্কের রূপ দেয় এবং এর চারদিকে লোহা দিয়ে ঘিরে দিয়ে এর চার কোণায় চারটি দর্শনীয় কামান স্থাপন করে। অচিরেই স্থানটি জীর্ণ হয়ে গেলে ভেঙ্গে নওয়াব আব্দুল গণির উদ্যোগে একটি ময়দান মত তৈরি করা হয়।[তখনো এর চারপাশে অনেক আর্মেনীয় বাস করত। ১৮৪০ সালেও এটি ছিল কয়েকটি রাস্তার মাঝে এক টুকরো খালি জায়গায় বৃত্তাকার একটি বাগান (জেমস্‌ টেলরের বর্ণনা অনুসারে)।

ক্লাবঘরটির পৃষ্ঠপোষক ছিলেন ঢাকার নবাব আব্দুল গণি ও নবাব আহসান উল্লাহ। ক্লাবটিতে ইংরেজরা বিলিয়ার্ড ছাড়াও টেনিস, ব্যাডমিন্টন খেলতো এবং আড্ডা দিতো। এখানে পার্টি-ফাংশনও আয়োজন করা হত। ঢাকা ক্লাবের ইতিহাস এবং পুরনো নথিপত্র অনুযায়ী আন্টাঘর ময়দানের কাছে ঢাকা ক্লাবের এক একর জমি ছিল (সূত্রপুর মৌজাঃ খতিয়ানঃ ৬১৪, প্লট ৬৬৪-৬৬৫)। পুরোন কর্মচারীদের মতে ঢাকা ক্লাব ১৯৫২ সাল পর্যন্ত এ এলাকার তিন একর জমির জন্য খাজনা প্রদান করতো। বিশ শতকের বিশের দশকে ঢাকার নবাবদের ক্ষমতা এবং প্রভাব প্রতিপত্তির ভাটা পরলে ক্লাবটির প্রতি তাদের অনুদান কমে যায়। ঢাকায় রেসকোর্স ময়দানে ঘোড়দোড় আয়োজন এবং আরও অন্যান্য প্রয়োজনে ইংরেজরা ঢাকা ক্লাবটিকে শাহবাগ এলাকায় স্থানান্তরিত করে।

এ ময়দান বিশেষ খ্যাতি অর্জন করে ১৮৫৭ সালে। ১৮৫৭ সালের ২২শে নভেম্বর ইংরেজ মেরিন সেনারা ঢাকার লালবাগের কেল্লায় অবস্থিত দেশীয় সেনাদের নিরস্ত্র করার লক্ষ্যে আক্রমণ চালায়। কিন্তু সেপাহীরা বাধাঁ দিলে যুদ্ধ বেধে যায়। যুদ্ধে আহত এবং পালিয়ে যাওয়া সেনাদের ধরে এনে এক সংক্ষিপ্ত কোর্ট মার্শালের মাধ্যমে তাদের দোষী সাব্যস্ত করে তাদের মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়। বিচারের পর ১১ জন সিপাই কে আন্টাঘর ময়দানে এনে জন সম্মুখে প্রকাশ্যে ফাঁসি দেয়া হয়। স্থানীয় লোকদের মধ্যে ভীতির সঞ্চার করতে লাশগুলো বহু দিন যাবৎ এখানকার গাছে গাছে ঝুলিয়ে রাখা হয়। এ ঘটনার পর বহুদিন পর্যন্ত এই ময়দান এর চারপাশ দিয়ে হাঁটতে ঢাকাবাসী ভয় পেত, কারণ এ জায়গা নিয়ে বিভিন্ন ভৌতিক কাহিনী ছড়িয়ে পরেছিল। সিপাহী বিদ্রোহ দমনের পর ইংরেজরা তাদের সেনাদের স্মরণে আন্টাঘর ময়দানে একটি স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করেছিল।

আর্মেনীয় ক্লাব ঘরের চার কোণায় বসানো সীমানা নির্দেশক চারটি ব্রিটিশ কামাণ পরবর্তীকালে তুলে এনে এই পার্কের চারদিকে বসান হয়। এ পার্কের উন্নয়নে নওয়াব আব্দুল গণির ব্যক্তিগত অবদান ছিল। তার নাতি খাজা হাফিজুল্লাহর মৃত্যুর পর তার ইংরেজ বন্ধুরা জনাব হাফিজুল্লাহর স্মৃতি রক্ষার্থে চাঁদা তুলে ১৮৮৪ সালে এখানে একটি স্মৃতিফলক স্থাপন করেছিলো।

১৯৫৭ সালে, সিপাহী বিদ্রোহের ১০০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ‘ঢাকা ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্ট'(ডি আই টি)এর উদ্যোগে এই স্থানে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়।

বাহাদুর শাহ পার্ক এর স্মৃতিসৌধ

সিপাহী বিপ্লবের স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ

এই পার্কের স্মৃতিসৌধটি চারটি পিলার এর উপর দাঁড়ানো চারকোনা একটি কাঠামো। উপরে রয়েছে একটি ডোম। অপর পাশে রয়েছে একটি ওবেলিস্ক, যা ব্রিটিশ সাম্রাজ্য ও ভারতবর্ষের সম্রাজ্ঞী হিসেবে রানী ভিক্টোরিয়ার সিংহাসনে আরোহণ মনে করিয়ে দেয়।

৪৬/ বিনত বিবির মসজিদ

বিনত বিবির মসজিদ
বিনত বিবির মসজিদ

বিনত বিবির মসজিদ বাংলাদেশের ঢাকা শহরের পুরানো ঢাকা এলাকায় অবস্থিত একটি মধ্যযুগীয় মসজিদ। নারিন্দা পুলের উত্তর দিকে অবস্থিত এই মসজিদটির গায়ে উৎকীর্ণ শিলালিপি অনুসারে ৮৬১ হিজরি সালে, অর্থাৎ ১৪৫৭ খ্রিষ্টাব্দে সুলতান নাসিরুদ্দিন মাহমুদ শাহের শাসনামলে তার কন্যা মুসাম্মাত বখত বিনত বিবি এটি নির্মাণ করান। ঢাকা শহরের নারিন্দায় অবস্থিত বিনত বিবির মসজিদ, ২০১৬ সালে

নারিন্দার যে প্রাচীন পুলের পাশে মসজিদটি অবস্থিত, তার নাম হায়াত বেপারির পুল। মসজিদটি চৌকোনা, এবং এতে দুইটি গম্বুজ ও চারটি মিনার রয়েছে। এই মসজিদটি ঢাকার সবচেয়ে পুরাতন মুসলিম স্থাপনার নিদর্শন হিসাবে অনুমিত।

৪৭/ বিবি চম্পার সমাধি

বিবি চম্পার সমাধি
বিবি চম্পার সমাধি

এটি চম্পা বিবির মাজার নামেই বেশি পরিচিত । পুরনো ঢাকার চকবাজার থানার  সোয়ারীঘাটের চম্পাতলী এলাকার নামকরণ করা হয় চম্পা বিবির নামানুসারে ।তার পরিচয় সমন্ধে সঠিক ইতিহাস পাওয়া যায় নি ।তিনি ছিলেন শায়েস্তা খাঁর উপপত্নী  বা পালিত কন্যা। মুনশী রহমান আলী তায়েশ (গবেষক) তার উর্দু ভাষায় রচিত ‘তাওয়ারিখে ঢাকা’ , ডক্টর আ ম ম শরফুদ্দীন কর্তৃক অনুবাদকৃত বইয়ে সমাধিসৌধটির  ধ্বংস সমন্ধে লিখেছেন, “পাদ্রী শেফার্ড ওটা ধ্বংস করে দিয়েছেন। শেফার্ড বোধহয় কবরটি মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছেন।  এটি ঘটেছিল ১৮১৬ সালে মিশনারি লিওনারদ কর্তৃক ছোট কাটরায় ইংরাজি স্কুল খোলার পর ।মুঘল সাম্রাজ্য, এর সর্বাধিক ব্যাপ্তি অবস্থায় ,১৭০৭ সাল।

বিবি চম্পার সমাধি মুঘল সাম্রাজ্য ও শায়েস্তা খাঁ

মূল নিবন্ধসমূহ: মুঘল সাম্রাজ্য ও শায়েস্তা খাঁদ্যা অক্সফোর্ড স্টুডেন্টস হিস্ট্রি অব ইন্ডিয়া , বইয়ে নবাব শায়েস্তা খাঁর চিত্র

মুঘল সাম্রাজ্য (উর্দু: مغلیہ سلطنت‎‎, Mug̱ẖliyah Salṭanat, ফার্সি: گورکانیان‎‎, Gūrkāniyān)), ছিল ভারত উপমহাদেশের একটি সাম্রাজ্য।উপমহাদেশের অধিকাংশ অঞ্চলজুড়ে মুঘল সাম্রাজ্য বিস্তৃত ছিল। মুঘল সাম্রাজ্য পারস্যের ভাষা, শিল্প ও সংস্কৃতি দ্বারা প্রভাবিত ছিল।ভারত উপমহাদেশে মুঘলরা অনন্য স্থাপত্য শৈলী দান করেছে। এসময়ে নির্মিত অনেক স্থাপত্য নিদর্শন ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে ঘোষিত হয়েছে। তাজমহল মুঘল স্থাপত্যের উৎকৃষ্ট উদাহরণ। অন্যান্য বিশ্ব ঐতিহ্যের মধ্যে রয়েছে হুমায়ুনের মাজার, ফতেহপুর সিক্রি, লালকেল্লা, আগ্রা দুর্গ ও লাহোর দুর্গ।

শায়েস্তা খাঁ মোগল আমলের এক জন বিখ্যাত সুবাদার বা প্রাদেশিক শাসক ছিলেন। তার খ্যাতি মূলত বাংলার সুবাদার হিসাবে। দু’দফায় সর্বমোট ২২ বছর তিনি বাংলা শাসন করেন। প্রথমে ১৬৬৪ থেকে ১৬৭৮ সাল এবং দ্বিতীয় বার ১৬৮০ থেকে ১৬৮৮ সাল। তার শাসনামলে ঢাকায় ব্যাপক উন্নতি সাধিত হয় এবং এই প্রদেশে মুঘল শাসনের শ্রেষ্ঠ সময় অতিবাহিত হয়।শায়েস্তা খাঁ ঢাকা ছেড়ে দিল্লিতে ফিরে যাবার আগে ঢাকাকে স্থানীয় বাণিজ্য, রাজনীতি ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে যান। তার কল্যাণে ঢাকা একটি ছোট দাপ্তরিক কেন্দ্র থেকে বৃহত্ ও উন্নত শহরে পরিণত হয়।শায়েস্তা খাঁ মসজিদটি তার তৈরি একটি সুবৃহত্ কীর্তি যা তার প্রাসাদ সমতলে তৈরি করা হয়েছিল। বাংলা ও মুঘল স্থাপত্য কীর্তির মিশ্রণে তৈরি এই ঐতিহাসিক পুরাকীর্তিটি বর্তমানে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক সংরক্ষিত হয়েছে।ঢাকার লালবাগে শায়েস্তা খাঁর সদর দপ্তর ছিল। পুরনো ঢাকার বিভিন্ন স্থানে তার নির্মিত স্থাপত্য তার স্থাপত্যপ্রীতির পরিচায়ক।

বিবি চম্পার সমাধি এর ছোট কাটরা

মূল নিবন্ধ: ছোট কাটরাছোট কাটরার টাওয়ার

কাটরা বা কাটারা এর আরবি ও ফরাসি অর্থ হলো ক্যারাভ্যানসারাই বা অবকাশযাবন কেন্দ্র (মুসাফিরখানা/সরাইখানা)। বাংলাদেশের ঢাকায় মুঘল শাসনামলে দুটি অন্যন্য কাটরা নির্মাণ করা হয়। এরমধ্যে একটি হলো বড় কাটারা ও অপরটি হলো ছোট কাটারা।ইসলামি সংস্কৃতিতে ক্যারাভ্যানসারাই নির্মাণ একটি পূণ্যের কাজ হিসেবে গণ্য করা হতো , তাই সওয়াবের আশায় শাসকরা অনেক সরাইখানা নির্মাণ করেছিলেন বলে ইতিহাসে রয়েছে । এগুলো সাধারণত বাণিজ্য পথের পাশে নির্মাণ করা হতো ।ক্যারাভ্যানসারাই সাধারণত প্রয়োজনীয় প্রাঙ্গণ বিশিষ্ট ইমারত যার খিলান সারিযুক্ত বারান্দা দিয়ে চারদিক থেকে ঘিরে রাখা হতো ।বারান্দার পাশেই থাকতো অতিথিদের কক্ষ যেখানে পরিব্রাজক ও ব্যাবসায়ীরা বিভিন্ন স্থানে যাওয়ার পথে সাময়িক আশ্রয় নিতেন । বোঝাবহনকারী পশু, গাড়ি ও অন্যান্য সামগ্রি খোলা প্রাঙ্গণে রাখা হতো । কাটরাগুলোতে পরিব্রাজকদের জন্য ঘুমাবার স্থান, রান্নাঘর, গোসলখানা, মসজিদ এমনকি আগত বসবাসকারীদের জন্য হাসপাতালও থাকতো । মুঘল ঢাকার সরাই বা কাটরাগুলো পরবর্তীতে বোর্ডিং হাউজ বা বাজার রূপে পরিবর্তিত হয়েছিল যার অনেকগুলোই এখন বিলুপ্ত হয়ে গেছে । যেমন মৌলভীবাজারে মুকিম কাটরা,বকশীবাজার কাটরা, মুগলটুলী কাটরা, মায়া কাটরা, নবাব কাটরা, নাজির কাটরা, রহমতগঞ্জ কাটরা এবং বাদামতলী কাটরা। কারওয়ান বাজারেও একগুচ্ছ কাটরা ছিল ।এক সময় বড় কাটরার তোরণে ফার্সি ভাষায় শাদুদ্দিন মুহম্মদ সিরাজী লিখিত একটি পাথরের ফলক লাগানো ছিল যার মাধ্যমে এর রক্ষনাবেক্ষনের ব্যয় নির্বাহের উপায় সম্পর্কে জানা যায়।

সুবেদার শায়েস্তা খান ছোট কাটারা নির্মাণ করেছিলেন। আনুমানিক ১৬৬৩ – ১৬৬৪ সালের দিকে এ ইমারতটির নির্মাণ কাজ শুরু হয় এবং এটি ১৬৭১ সালে শেষ হয়েছিল। এটির অবস্থান ছিল বড় কাটারার পূর্বদিকে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে। ইমারতটি দেখতে অনেকটা বড় কাটারার মত হলেও এটি আকৃতিতে বড় কাটারার চেয়ে ছোট এবং এ কারণেই হয়তো এর নাম হয়েছিল ছোট কাটারা। তবে ইংরেজ আমলে এতে বেশ কিছু সংযোজন করা হয়েছিল। শায়েস্তা খানের আমলে ছোট কাটরা নির্মিত হয়েছিল সরাইখানা বা প্রশাসনিক কাজে ব্যবহারের জন্য।বড় কাটরার মতো এটিতেও ছিল দুটো তোরণ, একটি উত্তরে ও অপরটি দক্ষিণে। দক্ষিণের তোরণটিই ছিল প্রধান তোরণ। আয়তাকার কাটরার দক্ষিণ বাহুর দুই কোণায় দুটো আটকোণা বুরুজ বা টাওয়ার ছিল। উভয় তোরণেরই অনেক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। মুগল রীতিতে নির্মিত ত্রিতলবিশিষ্ট দক্ষিণ তোরণ এবং তিন জানালাযুক্ত সুউচ্চ কোণার টাওয়ারগুলোর সাথে পরবর্তী ইংরেজ আমলের সংস্কাররীতি মিশে এগুলো ঔপনিবেশিক চিহ্নও ধারণ করেছে।

১৬৭১ খ্রিষ্টাব্দ শায়েস্তা খাঁ ছোট কাটরার ভেতরে চম্পা বিবির সমাধিসৌধ নির্মাণ করেন । ১৭১৬ সালে মুঘল রাজধানী পরিবর্তনের পর থেকে ছোট কাটরা ও মুঘল ঢাকা এর গুরুত্ব হারাতে থাকে । ১৮২২সালের চার্লস ডয়েল এর বর্ণনাও কাটরার সৌন্দর্যের সাক্ষ্য দেয় । এবং তখনও এর বাসিন্দারা ;ছিল দরিদ্র ।

১৮১৬ সালে লিওনারদ (একজন মিশনারি ) ছোট কাটরায় ঢাকার প্রথম ইংরাজি স্কুল খুলেছিলেন । ১৮৫৭ সালে, এখানে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল ঢাকার প্রথম নরমাল স্কুল। উনিশ শতকের শেষ দিকে অথবা বিশ শতকের প্রথম দিকে ছোট কাটরা ছিল নবাব পরিবারের দখলে। এবং তাতে তখন ‘ কয়লা ও চুণার কারখানার কাজ’ চলত। 

বিবি চম্পার সমাধি এর জীবনী

ছোট কাটরার প্রবেশদ্বারের উপরের অংশ

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ”’অধ্যাপক ড. এ কে এম  শাহনাওয়াজে”’র মতে চম্পা বিবি হলেন শায়েস্তা খাঁর পালিত কন্যা ।বেশিরভাগ ঐতিহাসিকের ও ঢাকা বিশেষজ্ঞ “ঢাকা: স্মৃতি বিস্মৃতির নগরী” গ্রন্থের লেখক অধ্যাপক মুনতাসীর মামুনের মতে চম্পা বিবি হলেন শায়েস্তা খানের ‘উপপত্নী’ । তারা যুক্তি দিয়েছেন যে , যেহেতু চম্পা বিবি ছোট কাটরায় বাস করতেন এবং পরী বিবি শায়েস্তা খাঁর কন্যা তাই এটা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি । এই যুক্তিটা গ্রহণ করা হয়, কারণ ছোট কাটরা নির্মিত হয় ১৬৬৪ সালে এবং সমাধিসৌধটির শিলালিপি কর্তৃক জানা যায়, এর নির্মাণ হয় ১৬৭১ সালে।ইতিহাস থেকে তার সমন্ধে খুবই কম জানা যায় । যেহেতু ছোট কাটরা অবকাশযাপন কেন্দ্র হিসাবে ব্যবহৃত হত তাই এতে সুবা বাংলার অনেক কর্মচারী,ব্যবসায়ী,আগন্তুক অতিথি,ও আত্মীয়স্বজনরা থাকতেন এবং শায়েস্তা খানও অবসর সময় কাটাতেন । তার সেবাযত্নের জন্য সেবিকা ও উপপত্নীরাও থাকতেন ।ধারণা করা হয় সেই উপপত্নীদের ভেতরই একজন হলেন চম্পা বিবি , যাকে তিনি অন্যদের তুলনায় অপেক্ষাকৃত বেশি পছন্দ করতেন। সমাধিসৌধটি নির্মাণের এটিই কারণ । এটা জানা যায় যে , শায়েস্তা খানের বাঙ্গালী বংশধররা চম্পা বিবির পর দীর্ঘ দিন ছোট কাটারায় বসবাস করেছিলেন ।

বিবি চম্পার সমাধি এর স্থাপত্যকর্ম ও বহিরাংশ

ছোট কাটরা ভবনটি আয়তাকৃতির এবং এর বাইরে থেকে পরিমাপ ১০১.২০ মি উ ৯২.০৫ মি এবং ভেতরে ৮১.০৭ মি উ ৬৯.১৯ মি। বাইরের প্রাচীর ০.৯১ মি থেকে ১ মি পুরু এবং এর প্রতিরক্ষা বুরুজের দেয়াল যেখানে সব চেয়ে পুরু সেখানে ১.২২ মিটার। এটি বড় কাটরার পরিকল্পনা অনুসারে তৈরী তবে আকৃতিতে অপেক্ষাকৃত ছোট। শায়েস্তা খাঁ পরবর্তীতে এর চত্বরেই চম্পা বিবির সমাধিসৌধটি নির্মাণ করেছিলেন ।

বিবি চম্পার সমাধি এর অভ্যন্তরভাগ

ভেতরে চম্পা বিবির মাজার রয়েছে । সমাধিসৌধটির একটি গম্বুজ , চারটি কোনা ও প্রতিপাশে ২৪ ফুট দৈর্ঘ্য ছিল । পূর্বে একটি ছোট মসজিদ ও এক গম্বুজ বিশিষ্ট চম্পা বিবির সমাধিসৌধ ছিল । পাদ্রী শেফার্ড মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছেন।। এটি পরবর্তীতে প্রত্নতত্ত্ববিদ দের দ্বারা পুনর্গঠন করা হয়েছিল , কিন্তু এখন চম্পাতলী এলাকার ঘিঞ্জি দোকান গুলোর মধ্যে হারিয়ে গেছে । ১৮১৭ সালে চার্লস ডয়েলের অঙ্কিত চিত্র থেকে বোঝা যায় এটি ছিল কয়েক তবক ওয়ালা সসার আকৃতির গম্বুজওয়ালা সমাধিসৌধ ।

বিবি চম্পার সমাধি এর বর্তমান অবস্থা

বর্তমানে ছোট কাটারা বা চম্পা বিবির সমাধিসৌধ বলতে এখন কিছুই বাকি নেই , শুধু একটি ভাঙা ইমারত ছাড়া। যা শুধু বিশাল তোরণের মত সরু গলির উপর দাঁড়িয়ে আছে। চারদিকে অসংখ্য দোকান এমন ভাবে ঘিরে ধরেছে যে দেখে বোঝার উপায় নেই যে এখানে মুঘল আমলের এমন একটি স্থাপত্য ছিল। এখানে পর্যটকরা তেমন একটা আসেন না ; কারণ সমাধিসৌধটি এখন নেই এবং মাজার চত্বরটি দখল হয়ে গেছে ।ছোট কাটরার প্রবেশদ্বারের দুই পাশের দেয়াল ও প্রধান সড়কটি দখল হয়েছে এবং বহুতল ভবন নির্মাণ হয়ে গেছে । সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় নিয়ন্ত্রণে থাকলেও তারা তেমন কোন ভুমিকা নেয়নি ।রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ) এর মানচিত্রে কাটরা দুটি বিশেষ অঞ্চলের মর্যাদা পায়নি । তবে মাজারের মূল স্থানটি রয়েছে ।

৪৮/ বিবি মরিয়ম কামান

বিবি মরিয়ম কামান
বিবি মরিয়ম কামান

বিবি মরিয়ম কামান ভারতে মোগল শাসনামলের নির্মিত একটি বৃহদাকার কামান যা দুর্ধর্ষ দস্যুদের নিবৃত্ত করতে নির্মাণ করা হয়েছিল। ব্রিটিশ শাসনামলে এটিকে বিবি মরিয়ম নামাকরণ করা হয়। বর্তমানে এটি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহরের কেন্দ্রস্থলে ওসমানী উদ্যানে রক্ষিত। এটি মোগল শাসনামলের একটি বিশেষ নিদর্শন। সপ্তদশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে মোগল সেনাপতি মীর জুমলার আমলে এটি ঢাকায় স্থাপন করা হয়।

বিবি মরিয়ম কামান এর ইতিহাস

বাংলার সুবাদার মীর জুমলা আসাম অভিযানে এটি ব্যবহার করেছিলেন। ৬৪,৮১৫ পাউন্ড ওজনের এই কামানটি পরে তিনি বাংলা সুবার তৎকালীন রাজধানী ঢাকার বড় কাটরার সম্মুখভাগে সোয়ারীঘাটে স্থাপন করেন। পরবর্তীতে এর অর্ধাংশ বালির নিচে তলিয়ে যায়। ১৮৪০ খ্রিস্টাব্দে লেখা কর্নেল ডেভিডসনের রচনায় এ বিষয়টির উল্লেখ রয়েছে। ১৮৪০ সালে ঢাকার তদানিন্তন ব্রিটিশ ম্যাজিস্ট্রেট ওয়াল্টার্স ব্রিটিশ প্রকৌশলীদের সহায়তায় সোয়ারীঘাট হতে উত্তোলন করে চকবাজার এলাকায় স্থাপন করেন। গুলিস্তানে বিবি মরিয়ম কামান।

১৯১৭ (অনেকের মতে ১৯২৫) খ্রিস্টাব্দে ঢাকা জাদুঘরের পরিচালক নলিনীকান্ত ভট্টশালীর উৎসাহে এটিকে সদরঘাটে স্থাপন করা হয়। পরে ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দে ঢাকা ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্ট (ডিআইটি) এর সভাপতি জিএ মাদানী পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রকৌশলীদের মাধ্যমে এটিকে ডিআইটি অ্যাভিনিউ ও জিন্নাহ অ্যাভিনিউয়ের (বর্তমানের বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ) সংযোগস্থলে গুলিস্থানে স্থানান্তর করেন। ১৯৮৩ সালে এটিকে ওসমানী উদ্যান এ স্থানান্তরিত করা হয়।

৪৯/ বেরাইদ ভূঁইয়াপাড়া মসজিদ

বেরাইদ ভূঁইয়াপাড়া মসজিদ
বেরাইদ ভূঁইয়াপাড়া মসজিদ

বেরাইদ ভূঁইয়াপাড়া মসজিদ ঢাকা জেলার বাড্ডা থানাধীন বেরাইদ ইউনিয়নে অবস্থিত বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন একটি মসজিদ ও প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান। এ গ্রামে ছোটবড় মিলিয়ে মোট দশটি প্রাচীন মসজিদ রয়েছে বলে একে মসজিদের গ্রাম বলে ডাকা হয়।

বেরাইদ ভূঁইয়াপাড়া মসজিদ এর ইতিহাস

২০০২ সালের দিকে ভূইয়াপাড়া মসজদিকে বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর সংরক্ষিত পুরাকীর্তি হিসেবে তালিকাভুক্ত করে। প্রত্নতত্ত্ববিদগণ এই মসজিদের স্থাপথ্যরীতির সাথে নারায়ণগঞ্জের বন্দর শাহি মসজিদের অনেক মিল পাওয়া যায় বলে তারা এটিকে প্রাক মুঘল যুগের মসজিদ বলে মনে করেন। তবে জনশ্রুতি অনুসারে, এটি সুলতানী আমলে নির্মাণ করা হয়েছিল। বিভিন্ন মাধ্যমে এই মসজিদটির নির্মাণকাল হিসেবে ১৫০৫ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

বেরাইদ ভূঁইয়াপাড়া মসজিদ এর অবকাঠামো

প্রাচীন ভূঁইয়াপাড়া মসজিদটি এক গম্বুজ বিশিষ্ঠ ও গম্বুজটির আয়তন ২১ বর্গফুট। এছাড়া পুরো মসজিদটির মোট আয়তন ৪ হাজার বর্গফুটের কাছাকাছি। এটি বর্গাকারে নির্মাণ করা হয়েছিল ও মূল স্থাপনা থেকে উপরে বেষ্টনী পর্যন্ত এটির উচ্চতা ১৭ ফুট ৬ ইঞ্চি।

বিভিন্ন সময় মসজিদটি সংস্কার করা হয়েছে। আধুনিককালে মসজিদের পশ্চিমদিক ব্যতীত অন্য দিকে সম্প্রসারণ ও সংস্কার করা হয়েছে ফলে মূলত প্রাচীন অংশ হিসেবে এর পশ্চিম অংশ ও গম্বুজটি বর্তমানে রয়েছে।

৫০/ ঢাকা জেলার ভজহরি লজ

ভজহরি লজ
ভজহরি লজ

ঢাকার টিপু সুলতান রোডে রাধাকৃষ্ণ মন্দির, সূত্রাপুর এর পশ্চিমদিকে ভজহরি লজ নামের একটি দ্বিতল সুরম্য দালান ছিল। উনিশ শতকের গোড়ার দিকে ঢাকার বিত্তশালী সাহা বণিক ভ্রাতৃত্রয়ের জ্যেষ্ঠভ্রাতা ভজহরি সাহা বণিক এটি নির্মাণ করেছিলেন।

ভজহরি লজ এর ইতিহাস

বিশ শতকের শুরুর দিকে লালমোহন সাহা বণিক, ভজহরি সাহা বণিক ও গৌর নিতাই সাহা বণিক ব্যাবসায় বেশ উন্নতি লাভ করেন। বিত্তশালী হওয়ার পর তারা বণিক উপাধি বর্জন করে ‘শঙ্খনিধি’ (শঙ্খের বাহক) উপাধি গ্রহণ করেন। ১৯২০-১৯২৬ সালের দিকে তারা ঢাকার কিছু ভূসম্পত্তির মালিক হন এবং সেখানে কিছু ভবন নির্মিত হয়। ঢাকার টিপু সুলতান রোড থেকে ওয়ারীর র‌্যাঙ্কিন স্ট্রিট পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে এই ভবনগুলো গড়ে ওঠে।১৯২৫ সালে বসবাসের জন্য ভজহরি সাহার এই বাড়িটি নির্মাণ করা হয়।বর্তমান সলিমুল্লাহ কলেজ(২০১৭), আগে এখানেই ভজহরি লজ ছিল

ভজহরি লজ এর গঠনরীতি

ভজহরি সাহার বাড়িটি দুইতলাবিশিষ্ট। এর দক্ষিণমুখী দরজার সামনে প্রায় ১৫০ ফুট দীর্ঘ আঙিনা রয়েছে। এর প্রধান দরজার সাপেক্ষে ভবনটি প্রায় প্রতিসম, যদিও পশ্চিম ভাগটি পূর্বভাগের চেয়ে কিছুটা বড়। তিনটি প্রধান দরজার উপরস্থিত তলায় রয়েছে তিনটি জানালা, কেন্দ্রীয় জানালাটিতে রয়েছে বহকোণী উপরিভাগ আর দুপাশের জানালাগুলোয় অর্ধ-গম্বুজ। কেন্দ্রীয় অংশের উপরের প্যারাপেটে রয়েছে ত্রিকোণাকার সুশোভন প্লাস্টার। প্রত্যেক তলায় ৫০ ফুট বাই ২০ ফুট মাপের তিনটি করে বড় হলঘর আছে যেগুলোর প্রত্যেকটির সাথে ৬ ফুট প্রশস্ত বারান্দা বিদ্যমান। উপরের তলায় যাওয়ার জন্য দক্ষিণপূর্ব কোণে একটি কাঠের সিঁড়ি আছে, এছাড়া পিছনদিকেও আছে একটি। হলঘরের তক্তাগুলো উজ্জ্বল টালি দ্বারা শোভিত।

ভবনের সম্মুখভাগে একটি সুদৃশ্য ফোয়ারা ছিল, যদিও পরে তা সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়।

ভজহরি লজ এর বর্তমান অবস্থা

বর্তমানে এই ভবনটি আর নেই। ভবনটির স্থানে পরবর্তীকালে গ্রাজুয়েট হাইস্কুল ও সলিমুল্লাহ কলেজ নির্মিত হয়। ঢাকার নগর ভবন এর চতুর্থ ফ্লোরে অবস্থিত নগর ভবন যাদুঘরে ভজহরি লজের ছবি রয়েছে।

 ৫১/ মুসা খান মসজিদ

মুসা খান মসজিদ
মুসা খান মসজিদ

মুসা খানের মসজিদ বা মুসা খাঁর মসজিদ বাংলাদেশের ঢাকা শহরে অবস্থিত ছায়া সুনিবিড়, মোগল স্থাপত্যের অনুকরণে নির্মিত মসজিদ। এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর শহীদুল্লাহ হল ছাত্রাবাসের নিকটে ও কার্জন হলের পিছনে অবস্থিত। ধারণা করা হয় যে, এই মসজিদটি ঈসা খাঁর পুত্র মুসা খান নির্মাণ করেন। ঢাকা শহরে বিনত বিবির মসজিদ এর পাশাপাশি এটি প্রাক-মুঘল স্থাপত্যের একটি নিদর্শন।

মুসা খান মসজিদ এর ইতিহাস

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল প্রাঙ্গণে শহীদুল্লাহ হলের উত্তর-পশ্চিম কোণে মুসা খাঁর মসজিদ নির্মিত হয় আনুমানিক ১৬৭৯ সালে। ভৌগোলিক স্থানাঙ্কে মুসা খান মসজিদের অবস্থান ২৩.৭২৬৬৪৭৪° উত্তর ৯০.৪০০৮০৫২° পূর্ব।মসজিদের পিছনে লেখা এর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

মুসা খান মসজিদ নির্মাণ কৌশল

দৃষ্টিনন্দন এ মসজিদে রয়েছে তিনটি গম্বুজ। মসজিদটি নির্মাণ করা হয় তিন মিটার উঁচু একটি ভল্ট প্লাটফর্মের ওপর। ভল্ট প্লাটফর্মটি ১৭ মিটার দীর্ঘ ও ১৪ মিটার চওড়া। প্লাটফর্মের উপর নির্মিত মসজিদটির নিচতলায় কয়েকটি কক্ষ রয়েছে। এগুলোতে আগে মসজিদ সংশ্লিষ্টরা বাস করলেও এর সবগুলোই এখন পরিত্যক্ত। তিন গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদটির একটি গম্বুজে বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। ঐ ফাটল দিয়ে গত বর্ষায় বৃষ্টির পানি মসজিদের ভিতরে পড়েছে বলে জানিয়েছেন মুসল্লিরা। মসজিদের পশ্চিম ও পূর্ব প্রাচীর প্রায় ৬ ফুট পুরু। উত্তর ও দক্ষিণ প্রাচীর ৪ ফুট পুরু। চার দেয়াল, ছাদ এবং গম্বুজ— সবকিছুতেই দীর্ঘদিন ধরে শেওলা জমে কালচে হয়ে গেছে। মসজিদের দুই মূল স্তম্ভে বড় ধরনের ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে। ইতিহাসবিদ আহমদ হাসান দানীর ‘ঢাকা:অ্যা রেকর্ড অব ইটস চেঞ্জিং ফরচুনস’ গ্রন্থে উল্লেখিত বর্ণনামতে, মসজিদটি মুসা খাঁর নামে হলেও স্থাপত্যশৈলী অনুযায়ী এটি শায়েস্তা খাঁর আমলে বা তারপরে নির্মিত হয়েছিল।

মুসা খান মসজিদ এর হুমকি

মেট্রো-রেল প্রকল্পের কারণে দেশের অন্যতম অন্যতম বিরল এই মুঘল কাঠামো হুমকির মধ্যে রয়েছে। মসজিদ সহ প্রায় ৭৫ ঐতিহাসিক গুরুত্ব স্থাপত্য মেট্রো-রেল প্রকল্পের কারণে হুমকির মুখে পড়েছে।

৫২/ মৈনট ঘাট

মৈনট ঘাট
মৈনট ঘাট

মৈনট ঘাট ঢাকার দোহারে পদ্মা নদীর পাড়ে অবস্থিত একটি পর্যটন আকর্ষণ। এটি “মিনি কক্সবাজার” নামেও পরিচিত।

মৈনট ঘাট এর অবস্থান

মৈনট ঘাট ঢাকা জেলার দোহার উপজেলার একটি জায়গা। এপাড়ে দোহার আর ওপাড়ে ফরিদপুর। মৈনট ঘাট থেকে ফরিদপুরের গোপালপুরের স্পিড বোটে পারাপার হন মানুষ। ঘাটের আশপাশে বিশেষ করে পূর্ব পাশে চর আর সামনে পদ্মা।  নদীর ওপারে ফরিদপুরের চর ভদ্রাসন।


৫৩/ ঢাকা জেলার রাজা হরিশচন্দ্রের প্রাসাদ

রাজা হরিশচন্দ্রের প্রাসাদ
রাজা হরিশচন্দ্রের প্রাসাদ

রাজা হরিশচন্দ্রের প্রাসাদ হল বাংলাদেশের ঢাকা জেলার সাভার উপজেলায় অবস্থিত একটি পুরাকীর্তি বা প্রত্নস্থল। এটি রাজা হরিশচন্দ্রের ঢিবিরাজা হরিশচন্দ্রের বাড়িরাজা হরিশচন্দ্রের ভিটা ইত্যাদি নামেও পরিচিত।

রাজা হরিশচন্দ্রের প্রাসাদ এর অবস্থান

প্রত্নস্থলটি রাজধানী ঢাকার গুলিস্তান জিরো পয়েন্ট থেকে ২৪ কিলোমিটার দূরে সাভার উপজেলার অন্তর্গত সাভার পৌরসভার মজিদপুরে (সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ড হতে পূর্ব দিকে) অবস্থিত।

রাজা হরিশচন্দ্রের প্রাসাদ এর প্রত্ন উৎখনন প্রসঙ্গ

রাজা হরিশচন্দ্রের রাজবাড়ি বা ঢিবি ঊনিশ শতকের শেষভাগ পর্যন্ত মাটির নিচে চাপা পড়ে ছিল। স্থানীয় লোকজন মাটিচাপা এই স্থানটিকে রাজবাড়ি ঢিবি হিসেবে চিহ্নিত করত। ১৯১৮ সালের দিকে রাজবাড়ি-ঢিবির কাছাকাছি গ্রাম রাজাসনে ড. নলিনীকান্ত ভট্টশালী এক প্রত্নতাত্ত্বিক খননকাজ পরিচালনা করেন। এই খননকাজের ফলে আবিষ্কৃত হয় বৌদ্ধদের ধর্ম ও সংস্কৃতির সঙ্গে সম্পৃক্ত কিছু প্রত্নবস্তু ও গুপ্ত রাজবংশের অনুকৃত মুদ্রাস্মারক। এতে সেখানকার বৌদ্ধ মূর্তির পরিচয় পাওয়া যায়। এরই সূত্র ধরে ১৯৯০-১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দে হরিশচন্দ্র রাজার প্রাসাদ-ঢিবিতে খননকাজ চালানো হয়।

রাজা হরিশচন্দ্রের প্রাসাদ এর প্রাপ্ত প্রত্ন নিদর্শনসমূহ ও তাৎপর্য

১৯৯০-১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দে রাজা হরিশচন্দ্রের ঢিবি উৎখননের ফলে অনাবৃত হয় মাঝারি আকারের একটি নিবেদনস্তূপ এবং দক্ষিণে একটি বৌদ্ধ বিহারের ভগ্নপ্রায় অবকাঠামো। খ্রিস্ট্রীয় সপ্তম শতকে এখানে বৌদ্ধ ধর্ম সভ্যতা সংশ্লিষ্ট একটি কেন্দ্র ছিল বলে বোঝা যায়। হরিশ্চন্দ্র রাজার প্রাসাদ-ঢিবির উৎখননে অনাবৃত হওয়া বিহারটির মধ্যে একাধিক পুনর্নির্মাণ এবং একাধিক মেঝের চিহ্ন লক্ষ করা যায়। বিহারের স্থাপত্যশৈলীতে চারটি স্তর অনুধাবনযোগ্য। চার স্তরের নির্মাণ কাঠামো পাওয়া যাওয়ায় বোঝা যায়, লম্বা সময় ধরেই এটি ব্যবহৃত হয়েছিল। খননকাজের সময় বিহারের ওপরের স্তর থেকে খ্রিস্টীয় সপ্তম-অষ্টম শতকের স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রা এবং খ্রিস্টীয় অষ্টম-নবম শতকের ব্রোঞ্জ নির্মিত ধ্যানী বুদ্ধ ও তান্ত্রিক মূর্তি আবিষ্কৃত হয়েছে।এখানে প্রাপ্ত অনেক ব্রোঞ্জ নির্মিত মূর্তি দেখে বোঝা গেছে যে, মহাযানী বৌদ্ধ মতাদর্শের একটি কেন্দ্র ছিল এটি। এছাড়াও এখানে নানা ধরনের নিদর্শন পাওয়া গেছে। ধূতি পরিহিত, কিরিট মুকুট, চুড়ি, হার, কোমরবন্ধ ও বাজুবন্ধ সজ্জিত লোকেশ্বর-বিষ্ণু মূর্তি, পদ্মপানি, ধ্যানী বুদ্ধ, অবলোকিতেশ্বর ও প্রজ্ঞা পারমিতা প্রভৃতি ভাস্কর্য নিদর্শন এখান থেকে পাওয়া গেছে।শিল্পশৈলী বিবেচনায় এসব প্রত্নবস্তু খ্রিষ্টীয় সাত থেকে আট শতকের নিদর্শন বলে বিশেষজ্ঞদের অনুমান। বর্তমানে এসব নিদর্শন বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে।

রাজা হরিশচন্দ্রের প্রাসাদ এর ঐতিহাসিক গুরুত্ব

বর্তমান সময়ে স্থান হিসেবে মজিদপুরের প্রসিদ্ধি না থাকলেও প্রাচীনকালে এ অঞ্চলটি ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ঐতিহাসিক কিছু সংশয় ছাড়া বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক বিশেষজ্ঞের ধারণা অনুযায়ী ঢাকা থেকে প্রায় ২৪ কিমি উত্তর-পশ্চিমে (গুলিস্তান জিরো পয়েন্ট হতে সড়ক পথের দূরত্ব) প্রাচীন বংশাবতী বা অধুনা বংশী নদীর বাঁ তীরে অবস্থিত ছিল পাল বংশীয় রাজা হরিশ্চন্দ্রের শাসনাধীন সর্বেশ্বর রাজ্যের রাজধানী। এ রাজধানীর নাম ছিল সম্ভার এবং সম্ভার নাম থেকেই পরবর্তীকালে সাভার নামের উৎপত্তি হয়েছে। খ্রিষ্টীয় সপ্তম-অষ্টম শতকে তৎকালীন সম্ভার রাজ্যের রাজা হরিশ্চন্দ্রের প্রাসাদ-ভিটা সাভারের মজিদপুরে অবস্থিত ছিল। এছাড়াও সাভারের এ এলাকার গুরুত্বের কথা বোঝা যায় রেনেলের মানচিত্রে স্থানটির উল্লেখ দেখে। বিখ্যাত ইতিহাসবিদ ও ভূগোলবিদ জেমস রেনেল সাভার এলাকায় ১৭৬৭ খ্রিষ্টাব্দে জরিপ করে মানচিত্রটির সংশ্লিষ্ট খণ্ড তৈরি করেছিলেন।

৫৪/ রাজাসন ঢিবি

রাজাসন ঢিবি
রাজাসন ঢিবি

রাজাসন ঢিবি বাংলাদেশের ঢাকা জেলাধীন সাভার উপজেলার মজিদপুরে অবস্থিত ঐতিহাসিক ও পুরাতাত্ত্বিক স্থাপনার ধ্বংসাবশেষ। এই ঢিবি সম্ভোগ রাজ্যের রাজা বা শাসক হরিশচন্দ্রের প্রাসাদেরই অস্তিত্বের সাক্ষ্য বহন করে। খৃস্টীয় সপ্তম-অষ্টক শতকে রাজা হরিশচন্দ্র এই এলাকায় বাস করতেন। এই ঢিবি ও আশপাশে বেশ কয়েকবার প্রত্নতাত্ত্বিক খনকার্য করা হয়েছিল, যার ফলে উদ্ধার হয় একটি বৌদ্ধ বিহারসহ অনেক পুরাতাত্ত্বিক বস্ত। বর্তমানে এই ঢিবি সরকারি তালিকাভুক্ত একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা।

রাজাসন ঢিবি এর ইতিহাস

খৃস্টীয় সপ্তম-অষ্টক শতকে বর্তমান সাভার ছিল সম্ভোগ রাজ্যের অন্তর্গত। এটি তৎকালীন ব্যবসা-বাণিজ্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ছিল। আরব ও মধ্য এশিয়া থেকে বণিকরা এখানে বাণিজ্য কাজে আসতেন। বংশী নদীর তীরবর্তী হওয়ায়, নদী পথেই বাণিজ্য চলতো। রাজা হরিশচন্দ্রের প্রাসাদটি অবস্থিত ছিল বর্তমান মজিদপুর এলাকায়। সে প্রাসাদের বহুলাংশই কালের বিবর্তনে ও অবহেলার দরুণ ধ্বংস হয়ে গেছে। প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণায় জানা যায়, এই এলাকা ছিল বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী অধ্যুষিত।

রাজাসন ঢিবি এর প্রত্নতাত্ত্বিক খননকার্য

১৯১৮ সালে ড. নলিনীকান্ত ভট্টশালী রাজাসন ঢিবিতে প্রথম প্রত্নতাত্ত্বিক খননকার্য চালান। এতে পাওয়া যায় একটি বৌদ্ধ বিহার ও বেশ কিছু পুরাতাত্ত্বিক বস্ত, প্রাচীন মুদ্রা। ধারণা করা হয়, সপ্তম শতকে এই অঞ্চলে বৌধ ধর্মের একটি কেন্দ্র ছিল। বৌদ্ধ বিহারটির চার ধরনের নির্মাণ শৈলী দেখে ধারণা করা হয়, দীর্ঘকাল ধরেই তা ব্যবহৃত হয়েছিল। ১৯৯০-৯১ সালে এখানে আরেকবার প্রত্নতাত্তিক খননকার্য হয়, পাওয়া যায়,স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রা এবং ব্রোঞ্জ নির্মিত ধ্যানী বুদ্ধ ও তান্ত্রিক মূর্তি। ব্রোঞ্জের মূর্তি দেখে ধারণা করা হয়, এই অঞ্চল ছিল মহাযানী বৌদ্ধ মতাদর্শের অন্যতম কেন্দ্র। এছাড়া খননকার্যে পাওয়া যায় ধূতি পরিহিত, কিরিট মুকুট, চুড়ি, হার, কোমরবন্ধ, বাজুবন্ধ সজ্জিত লোকেশ্বর-বিষ্ণুমূর্তি, পদ্মপানি, ধ্যানী বুদ্ধ, অবলোকিতেশ্বর ও প্রজ্ঞা পারমিতা প্রভৃতি ভাস্কর্য নিদর্শন।

৫৫/ ঢাকা জেলার রাধাকৃষ্ণ মন্দির, সূত্রাপুর

রাধাকৃষ্ণ মন্দির, সূত্রাপুর
রাধাকৃষ্ণ মন্দির, সূত্রাপুর

রাধাকৃষ্ণ মন্দির, সূত্রাপুর অথবা রাধাবিনোদ মন্দির অথবা শঙ্খনিধি মন্দির ঢাকার টিপু সুলতান রোডের শঙ্খনিধি হাউজ এর উত্তরদিকে অবস্থিত এবং ভজহরি লজ এর পার্শ্ববর্তী একটি মন্দির। এই মন্দিরটি ১৯২১ থেকে ১৯২৬ সালের মধ্যে গড়ে ওঠা শঙ্খনিধি বণিক পরিবারের স্থাপত্যগুলোর একটি।

রাধাকৃষ্ণ মন্দির, সূত্রাপুর এর ইতিহাস

বিংশ শতকের শুরুর দিকে লালমোহন সাহা বণিক, ভজহরি সাহা বণিক ও গৌর নিতাই সাহা বণিক ব্যাবসায় বেশ উন্নতি লাভ করেন। বিত্তশালী হওয়ার পর তারা বণিক উপাধি বর্জন করে ‘শঙ্খনিধি’ (শঙ্খের বাহক) উপাধি গ্রহণ করেন। ১৯২০-১৯২৬ সালের দিকে তারা ঢাকার কিছু ভূসম্পত্তির মালিক হন এবং সেখানে কিছু ভবন নির্মিত হয়। ঢাকার টিপু সুলতান রোড থেকে ওয়ারীর র্যাঙ্কিন স্ট্রিট পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে এই ভবনগুলো গড়ে ওঠে।[১] শঙ্খনিধি পরিবারের স্থাপিত এসব ভবনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ভজহরি লজ, শঙ্খনিধি হাউজ, রাধাকৃষ্ণ মন্দির প্রভৃতি।

১৯৬৫ সালের দাঙ্গায় মন্দিরের পুরোহিতকে হত্যা করা হয়। পুরোহিতের পরিবার দেশত্যাগ করে কলকাতা চলে যায় এবং মন্দিরটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকে। মন্দিরটি এখন দখলদারদের কবলে থাকায় এতে আর কোন ধর্মীয় কৃত্য অনুষ্ঠিত হয় না।

১৯৮৯ সালে এটি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর কর্তৃক সংরক্ষিত পুরাকীর্তির তালিকাভুক্ত হয়। ২০১১ সালের ডিসেম্বরে দখলদাররা এটি ভাঙতে শুরু করে।

রাধাকৃষ্ণ মন্দির, সূত্রাপুর এর স্থাপত্যশৈলী

রাধাকৃষ্ণ মন্দিরটি আয়তাকার, সুসজ্জিত এবং দক্ষিণমুখী। এর ৬০ ফুট বাই ৫০ ফুট দীর্ঘ আঙিনা রয়েছে। উত্তরপাশের মূল মন্দিরটি একতলা, অন্য তিনদিকের ভবন দ্বিতলবিশিষ্ট। প্রশস্ত সোপানের উপরে অবস্থিত মণ্ডপ অংশটির আয়তন প্রায় ৩০ফুট বাই ৪০ ফুট। এর সম্মুখভাগে চারটি করিন্থিয়ান স্তম্ভ এবং মাঝখানে তিনটি সুসজ্জিত তোরণ বিদ্যমান। ৪০ ফুট বাই ১০ ফুট মন্দিরকক্ষটিতে কারুকাজকৃত তিনটি দীর্ঘ কাঠের দরজা রয়েছে। মন্দিরে প্রবেশপথের সিঁড়ি এবং সম্পূর্ণ মেঝে আমদানিকৃত সাদা মার্বেল পাথর দিয়ে নির্মিত। জানালাগুলো লাল ও সবুজ রঙের রঙিন কাচ দ্বারা শোভিত। এই সুদৃশ্য মন্দিরের বিভিন্ন পাশে নানারকম লতাপাতার কারুকাজ রয়েছে, যার মধ্যে শঙ্খনিধি পরিবারের প্রতীক শঙ্খের বিভিন্ন নকশা বিশেষভাবে লক্ষণীয়। অন্য তিনপাশের অংশগুলোয় বিভিন্ন আয়তনের প্রায় ১৫ টি কক্ষ এবং দক্ষিণপূর্ব কোণে একটি কাঠের তৈরী সিঁড়ি আছে।

বেসরকারি সংস্থা আরবান স্টাডি গ্রুপ কর্তৃক ২০১২ সালে মামলা করার পর উচ্চ আদালত থেকে স্থাপনাটি ধ্বংসের উপর স্থগিতাদেশ জারি ছিল। রাজউকের নতুন প্রকাশিত রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী ভবনের তালিকা থেকে এ মন্দিরের নাম বাদ দেওয়া হয়। এরপর ২০১৮ সালের মে মাসে মন্দিরের অবশিষ্টাংশ ও গর্ভমন্দির ভেঙে ফেলা হয়। 

রাধাকৃষ্ণ মন্দির, সূত্রাপুর এর ধ্বংসসাধন

মন্দিরটি বহুদিন তালাবদ্ধ অবস্থায় ছিল।। ২০১১ সালের ১৫ ডিসেম্বর রাতে দখলদাররা মন্দিরটি ভাঙতে শুরু করে এবং মন্দিরের দোতলার ছাদ সম্পূর্ণ ভেঙে ফেলা হয়। পরে রাজউকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন।

৫৬/ রূপলাল হাউজ

রূপলাল হাউজ
রূপলাল হাউজ

রূপলাল হাউজ বাংলাদেশের ঢাকা শহরের পুরান ঢাকার শ্যামবাজার এলাকায় ঊনবিংশ শতকে নির্মিত একটি ভবন। এটি ৯১.৪৪ মিটার দীর্ঘ একটি দ্বিতল ভবন। এর পেছনভাগে বুড়িগঙ্গা নদী প্রবহমান।এটি জমিদার ও বণিকদের তৈরি।

ভবনটি নির্মাণ করেন হিন্দু ব্যবসায়ী ভ্রাতৃদ্বয় রূপলাল দাস ও রঘুনাথ দাস। এটি বুড়িগঙ্গা নদীর উত্তর পারে ফরাসগঞ্জ এলাকায় অবস্থিত। রূপলাল ঢাকার বিখ্যাত আর্মেনীয় জমিদার আরাতুনের কাছ থেকে বাড়িটি কিনে পুনর্নির্মাণ করেছিলেন। এর নির্মাণ কাল ঊনবিংশ শতাব্দীর ষাটের দশক। মার্টিন এন্ড কোং কোম্পানির একজন স্থপতি এর নকশা প্রণয়ন করেছিলেন। দ্বিতল এই ভবনের স্থাপত্য শৈলী অভিনব। এটি দুইটি অসম অংশে বিভক্ত যার প্রতিটিতে কিছুটা ভিন্ন স্থাপত্য শৈলী দেখা যায়। এর ভিত্তিভূমি ইংরেজি E অক্ষরের ন্যায়।, যার বাহুত্রয় শহরের দিকে প্রসারিত। মাঝের দীর্ঘতম বাহুটির দৈর্ঘ্য ১৮.৩৩ মিটার। ভবনটির ছাদ নির্মাণ করা হয়েছিল ‘কোরিনথীয়’ রীতিতে। এর উপরে রয়েছে রেনেসাঁ যুগের কায়দায় নির্মিত ‘পেডিমেন্ট’। রূপলাল হাউজে দ্বিতীয় তলায় দুটি অংশে বিভিন্ন আয়তনের মোট ৫০টিরও বেশি কক্ষ রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে কয়েকটি প্রশস্ত দরবার কক্ষ । ভবনের পশ্চিামংশে দোতলায় অবস্থিত নাচঘরটি আকষণীয়ভাবে তৈরী। এর মেঝে ছিল কাষ্ঠ নির্মিত। পুরো বাড়ি জুড়ে উত্তর-দক্ষিণ পার্ম্বে রয়েছে প্রশস্ত বারান্দা। বারান্দা দুটি ইট-নির্মিত ‘সেমি-কোরিনথীয়’ স্তম্ভ বা সমায়ত ইটের স্তম্ভের ওপর সংস্থাপিত।  নদীর দিকে সম্মুখভাগে ভবনের চূড়াতে একটি বড় ঘড়ি ছিল যা ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দের ভূমিকম্পে ভেঙ্গে পড়ার পড়ে আর ঠিক করা হয়নি।  ১৮৮৮ সালে ভারতের ভাইসরয় লর্ড ডাফরিন ঢাকা সফরের সময় তাঁর সম্মানে এখানে একটি বল নাচবল নাচের আসর আয়োজন করা হয়েছিলো।

১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ভারত বিভাগকালে রূপলালের উত্তরাধিকাররা ঢাকা ত্যাগ করে পশ্চিম বঙ্গে চলে যান। সাম্প্রতিক কালে রূপলাল হাউজ মসলা ও সবজি ব্যবসায়ীদের দখলে চলে গিয়েছিল। তবে বর্তমানে এটিকে অবৈধ দখলমুক্ত করে বাংলাদেশ সরকারের পুরাতত্ত্ব বিভাগের তত্ত্বাবধানে রাখা রয়েছে।

৫৭/ রোজ গার্ডেন

রোজ গার্ডেন
রোজ গার্ডেন

রোজ গার্ডেন প্রাসাদ যা সংক্ষেপে রোজ গার্ডেন নামে সমধিক পরিচিত, বিংশ শতাব্দীর বাংলাদেশের একটি ঐতিহাসিক প্রাচীন ভবন। এটি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহরের টিকাটুলি এলাকায় অবস্থিত একটি অন্যতম স্থাবর ঐতিহ্য। এ প্রাচীন ভবনটি বাংলাদেশের ঐতিহাসিক পুরাকীর্তি হিসাবে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক সংরক্ষিত। বাংলাদেশের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ ১৯৮৯ সালে রোজ গার্ডেনকে সংরক্ষিত ভবন ঘোষণা করে। দেশী-বিদেশী পর্যটকদের নিকট এটি ঢাকার অন্যতম একটি দর্শনীয় স্থান। রোজ গার্ডেন ১৯৭০ থেকে নাটক ও টেলিফিল্ম শুটিং স্পট হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে এসেছে।

রোজ গার্ডেন এর ইতিহাস

ঋষিকেশ দাস ছিলেন ব্রিটিশ আমলের নব্য ধনী ব্যবসায়ী। তবে সাধারণ পরিবার থেকে উঠে আসায় ঢাকার খানদানি পরিবারগুলো তেমন পাত্তা দিত না ঋষিকেশ দাসকে। কথিত আছে যে, একবার তিনি জমিদার নরেন্দ্র নারায়ণ রায় চৌধুরীর বাগানবাড়ি বলধা গার্ডেনের এক জলসায় গিয়ে অপমানিত হয়ে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছিলেন। এরপরই তিনি রোজ গার্ডেন প্যালেস তৈরির সিদ্ধান্ত নেন। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৯৩১ সালে পুরান ঢাকার ঋষিকেশ দাস রোডে একটি বাগানবাড়ি তৈরী করা হয়। বাগানে প্রচুর গোলাপ গাছ থাকায় এর নাম হয় রোজ গার্ডেন। ভবনটি সজ্জিত করণের কাজ সমাপ্ত হওয়ার আগেই ব্যবসায়ী ঋষিকেশ দাস আর্থিকভাবে দেউলিয়া হয়ে যান। ১৯৩৭ সালে তিনি রোজ গার্ডেন প্যালেসটি খান বাহাদুর আবদুর রশীদের কাছে বিক্রয় করে দিতে বাধ্য হন। প্রসাদটির নতুন নামকরণ হয় ‘রশীদ মঞ্জিল। মৌলভী কাজী আবদুর রশীদ মারা যান ১৯৪৪ সালে, তার মৃত্যুর পর রোজ গার্ডেনের মালিকানা পান তার বড় ছেলে কাজী মোহাম্মদ বশীর (হুমায়ূন সাহেব)। ১৯৭১-এ বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার অব্যবহিত পূর্বে ১৯৭০-এ বেঙ্গল স্টুডিও ও মোশন পিকচার্স লিমিটেড রোজ গার্ডেন প্যালেসের ইজারা নেয়। হারানো দিন নামের জনপ্রিয় চলচ্চিত্রের শুটিং এই বাড়িতে হয়েছিল। এ কারণে সে সময় ভবনটি “হুমায়ুন সাহেবের বাড়ি” হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠে। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর ১৯৮৯ সালে রোজ গার্ডেনকে সংরক্ষিত ভবন হিসেবে ঘোষণা করে। কিন্তু আদালতে মামলা করে ১৯৯৩ সালে মালিকানা স্বত্ব ফিরে পান কাজী আবদুর রশীদের মেজ ছেলে কাজী আবদুর রকীব। ১৯৯৫ সালে তার প্রয়াণ হয়। এরপর থেকে অদ্যাবধি তার স্ত্রী লায়লা রকীবের মালিকানায় রয়েছে এই ভবনটি। ২০১৮ এ বাংলাদেশ সরকার এ ভবনটি ৩৩১ কোটি ৭০ লাখ দুই হাজার ৯০০ টাকা মূল্যে ক্রয়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

রোজ গার্ডেন এর আয়তন ও নির্মাণশৈলী

২২ বিঘা জমির উপর স্থাপিত হয়েছিল রোজ গার্ডেন প্যালেস। ভবনটির মোট আয়তন সাত হাজার বর্গফুট। উচ্চতায় পঁয়তাল্লিশ ফুট। ছয়টি সুদৃঢ় থামের উপর এই প্রাসাদটি স্থাপিত। প্রতিটি থামে লতাপাতার কারুকাজ করা। প্রাসাদটির স্থাপত্যে করিন্থীয়-গ্রীক শৈলী অনুসরণ করা হয়েছে। এছাড়া বাগানটি সুদৃশ্য ফোয়ারা, পাথরের মূর্তি ইত্যাদি দ্বারা সজ্জিত ছিল। মূল ভবনের দ্বিতীয় তলায় পাঁচটি কামরা আর একটি বড় নাচঘর আছে। নিচতলায় আছে আটটি কামরা। রোজ গার্ডেন প্যালেসের পশ্চিম ও উত্তর দিকের দেয়ালের মধ্যবর্তী অংশে দুটি মূল ফটক আছে। প্রবেশ ও বর্হিগমনের জন্য স্থাপিত পশ্চিম দিকের ফটক দিয়ে প্রবেশ করলে প্রথমেই আছে একটি বিস্তীর্ণ খোলা প্রাঙ্গণ। এখানে মঞ্চের ওপর দণ্ডায়মান নারী মূর্তি স্থাপন করা হয়েছে। পূর্বাংশের মধ্যবর্তী স্থানে রয়েছে একটি আয়তকার পুকুর। পুকুরের পূর্ব ও পশ্চিম পাশের মাঝামাঝি একটি করে বাঁধানো পাকা ঘাট আছে। এর পূর্ব দিকে আছে পশ্চিমমুখী একটি দোতলা ইমারত যার বর্তমান নাম ‘রশিদ মঞ্জিল’। রশিদ মঞ্জিলের প্রবেশপথের সামনের চত্বরে ইট ও সিমেন্ট নির্মিত একটি সুন্দর ফোয়ারা রয়েছে। একটি সাত ধাপ বিশিষ্ট সিঁড়ি দিয়ে রশিদ মঞ্জিলের প্রথম তলায় যেতে হয়। এর সামনের দিকের মাঝামাঝি অংশের প্রতি কোঠার পাশাপাশি তিনটি খিলান দরজা আছে। ওপরের তলায় প্রতিটি খিলানের ওপর একটি করে পডিয়াম আছে। টিমপেনামগুলো লতাপাতার নকশা এবংবেলজিয়ামে তৈরী রঙিন কাচ দিয়ে শোভিত। এর সামনে আছে বাইরের দিকে উপবৃত্তাকার ঝুল বারান্দা। এর দুপাশে একটি করে করিনথীয় পিলার আছে। পিলারগুলোর দুই পাশের অংশে প্রতি তলায় আছে একটি করে দরজা। এদের প্রতিটির কাঠের পাল্লার ভ্যানিশিং ব্লাইন্ড ও টিমপেনামে লতাপাতার নকশা দেখা যায় এবং সামনেই অপ্রশস্ত উন্মুক্ত ঝুল বারান্দা রয়েছে।এর ওপরের অংশে কার্নিস বক্রাকার যা বেলস্ট্রেড নকশা শোভিত। মধ্যবর্তী অংশ ছাদের সামনের ভাগে আছে আট কোণা এবং খিলান সংবলিত বড় আকারের ছত্রী। এর ছাদ রয়েছে অর্ধগোলাকৃতি একটি গম্বুজে। ইমারতটির দুই কোণে দুটি করিনথীয় পিলার আছে এদের ওপরে দিকেও ছত্রী নকশা আছে। প্রতি তলায় মোট ১৩টি ছোট ও বড় আকারের কোঠা আছে। প্রথম তলায় প্রবেশের পর পশ্চিমাংশের বাম দিকে আছে ওপরের তলায় যাওয়ার জন্য বৃত্তাকার সিঁড়ি।

আওয়ামী লীগ ও রোজ গার্ডেন প্রাসাদ

এ ভবনেই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের গোড়াপত্তন হয়। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন এই বাড়িতেই পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ (বর্তমান আওয়ামী লীগ) গঠনের পরিকল্পনা হয়। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও আবুল হাশেম এর নেতৃত্বাধীন তৎকালীন বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের একাংশের সম্মেলনের মধ্য দিয়ে ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন ঢাকার টিকাটুলীর কে এম দাস লেন রোডের রোজ গার্ডেন প্রাসাদে “পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ” প্রতিষ্ঠিত হয়। এর সভাপতি হন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, শামসুল হক সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। পরে ১৯৫৫ সালে মওলানা ভাসানীর উদ্যোগে ধর্মনিরপেক্ষতার চর্চা এবং অসাম্প্রদায়িক চেতনা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সংগঠনটির নাম থেকে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দেয়া হয় এবং নাম রাখা হয় “পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ”।

১৯৪৯ সালের ২৩ ও ২৪ জুন রোজ গার্ডেনে প্রতিষ্ঠাকালীন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের সভাপতি হন মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, সহ-সভাপতি হন আতাউর রহমান খান, শাখাওয়াত হোসেন ও আলী আহমদ। টাঙ্গাইলের শামসুল হক সাধারণ সম্পাদক, শেখ মুজিবুর রহমান, খন্দকার মোশতাক আহমদ ও এ কে রফিকুল হোসেনকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হয়। কোষাধ্যক্ষ হন ইয়ার মোহাম্মদ খান। এ সময় শেখ মুজিবুর রহমান কারাগারে অন্তরীণ ছিলেন। অন্যদিকে পুরো পাকিস্তানের ক্ষেত্রে সংগঠনটির নাম রাখা হয় নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী লীগ। এর সভাপতি হন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ ছিল তৎকালীন পাকিস্তানে প্রথম বিরোধী দল।

৫৮/ লালবাগের কেল্লা

লালবাগের কেল্লা
লালবাগের কেল্লা

লালবাগের কেল্লা (কিলা আওরঙ্গবাদ) ঢাকার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত একটি অসমাপ্ত মুঘল দুর্গ। এটির নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল ১৬৭৮ সালে, মুঘল সুবাদার মুহাম্মদ আজম শাহ্ কর্তৃক, যিনি ছিলেন সম্রাট আওরঙ্গজেবের পুত্র এবং পরবর্তীতে নিজেও সম্রাট পদপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। তার উত্তরসুরি, মুঘল সুবাদার শায়েস্তা খাঁ ১৬৮০ সালে নির্মাণকাজ পুনরায় শুরু করেন, কিন্তু শেষ করেননি।

লালবাগের কেল্লা এর ইতিহাস

সম্রাট আওরঙ্গজেবের ৩য় পুত্র, মুঘল রাজপুত্র আজম শাহ বাংলার সুবাদার থাকাকালীন ১৬৭৮ সালে এটার নির্মাণকাজ শুরু করেন। তিনি বাংলায় ১৫ মাস ছিলেন। দুর্গের নির্মাণকাজ শেষ হবার আগেই মারাঠা বিদ্রোহ দমনের জন্য পিতা সম্রাট আওরঙ্গজেব তাকে দিল্লি ডেকে পাঠান। এসময় একটি মসজিদ ও দরবার হল নির্মাণের পর দুর্গ নির্মাণের কাজ থেমে যায়। সুবাদার শায়েস্তা খাঁ ১৬৮০ সালে পুনরায় বাংলার সুবাদার হিসেবে ঢাকায় এসে দুর্গের নির্মাণকাজ পুনরায় শুরু করেন। ১৬৮৪ সালে এখানে শায়েস্তা খাঁর কন্যা ইরান দুখত রাহমাত বানুর (পরী বিবি) মৃত্যু ঘটে। কন্যার মৃত্যুর পর শায়েস্তা খাঁ এ দুর্গটিকে অপয়া মনে করেন এবং ১৬৮৪ খ্রিষ্টাব্দে অসমাপ্ত অবস্থায় এর নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেন। লালবাগের কেল্লার তিনটি প্রধান স্থাপনার একটি হল পরী বিবির সমাধি। শায়েস্তা খাঁ ঢাকা ত্যাগ করার পর এটি এর জনপ্রিয়তা হারায়। ঢাকা থেকে মুর্শিদাবাদে রাজধানী স্থানান্তর করা হয়েছিল; এটিই ছিল প্রধান কারণ। রাজকীয় মুঘল আমল সমাপ্ত হওয়ার পর দুর্গটি পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়ে যায়। ১৮৪৪ সালে এলাকাটি “আওরঙ্গবাদ” নাম বদলে “লালবাগ” নাম পায় এবং দুর্গটি পরিণত হয় লালবাগ দুর্গে ।লালবাগ কেল্লার দরবার হলের মধ্যকার জাদুঘরের প্রদর্শিত শিলালিপি।

লালবাগের কেল্লা এর অবকাঠামো

দীর্ঘ সময় যাবত এটি ধারণা করা হত যে, দুর্গটি হচ্ছে তিনটি ভবন স্থাপনার সমন্বয় (মসজিদ, পরী বিবির সমাধি ও দেওয়ান-ই-আম), সাথে দুটি বিশাল তোরণ ও আংশিক ধ্বংসপ্রাপ্ত মজবুত দুর্গ প্রাচীর। বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের সাম্প্রতিক উৎখননে অন্যান্য অবকাঠামোর অস্তিত্ব প্রকাশ পেয়েছে।

দক্ষিণস্থ দুর্গ প্রাচীরের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে একটি বিরাট বুরূজ ছিল। দক্ষিণস্থ দুর্গ প্রাচীরের উত্তরে ছিল কয়েকটি ভবন, আস্তাবল, প্রশাসনিক ভবন, এবং পশ্চিম অংশে জলাধার ও ফোয়ারা সহ একটি সুন্দর ছাদ-বাগানের ব্যবস্থা ছিল।

আবাসিক অংশটি ছিল দুর্গ প্রাচীরের পশ্চিম-পূর্বে, প্রধানত মসজিদটির দক্ষিণ-পশ্চিমে।

দক্ষিণের দুর্গ প্রাচীরে নির্দিষ্ট ব্যবধানে ৫ টি বুরুজ ছিল উচ্চতায় দুই তালার সমান, এবং পশ্চিমের দুর্গ প্রাচীরে ছিল ২ টি বুরুজ যার সবচেয়ে বড়টি ছিল দক্ষিণস্থ প্রধান প্রবেশদ্বারে।

বুরুজ গুলোর ছিল একটি ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গ। কেল্লাটির কেন্দ্রীয় এলাকা দখল করে ছিল তিনটি প্রধান ভবন। পূর্বে দেওয়ান-ই-আম ও হাম্মাম খানা, পশ্চিমে মসজিদটি এবং পরী বিবির সমাধি দুটোর মাঝখানে এক লাইনে, কিন্তু সমান দূরত্বে নয়। নির্দিষ্ট ব্যবধানে কয়েকটি ফোয়ারা সহ একটি পানির নালা তিনটি ভবনকে পূর্ব থেকে পশ্চিমে ও উত্তর থেকে দক্ষিণে সংযুক্ত করেছে।

দেওয়ান-ই-আম

হাম্মাম খানা মূলত সুবেদারদের বাস ভবন হিসেবে ব্যবহার হত । লালবাগ কেল্লার এই দালান কে দুটি কাজে ব্যবহার করা হত এক. হাম্মাম খানা( বাস ভবন হিসেবে) ২. দি ওয়ানে আমি ( বিচারালয় হিসেবে)। এই দালানের নিচ তালা ছিল বাস ভবন তথা হাম্মাম খানা আর উপরের তলা ছিল কোর্ট তথা দি ওয়ানে আম। শায়েস্তা খাঁ এই ভবনে বাস করতেন এবং এটাই ছিল তার কোর্ট। এখান থেকে তিনি সমস্ত বিচার কার্য পরিচালনা করতেন ।

লালবাগের কেল্লা এর পরী বিবির সমাধি

লালবাগ কেল্লার তিনটি স্থাপনার মধ্যে অন্যতম এটি। এখানে পরী বিবি সমাহিত আছেন। শায়েস্তা খান তার কন্যার স্মরণে এই মনমুগ্ধকর মাজারটি নির্মাণ করেন। লালবাগ কেল্লার তিনটি বিশাল দরজার মধ্যে বর্তমানে জনসাধারণের জন্যে উন্মুক্ত । এই দরজা দিয়ে ঢুকলে বরাবর সোজা চোখে পড়ে পরী বিবির সমাধি। আসলে “লালবাগ কেল্লা” বলতে যেই ছবিটি বেশি পরিচিত সেটি মূলত পরী বিবির সমাধির ছবি। পরী বিবি যার অন্য নাম ইরান দুখত রহমত বানু ছিলেন সুবাহ বাংলার মুঘল সুবাহদার শায়েস্তা খানের কন্যা। মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের পুত্র শাহজাদা মুহাম্মদ আজমের সাথে ১৬৬৮ সালের ৩ মে পরী বিবির বিয়ে হয়। ১৬৮৪ সালে পরী বিবির অকালমৃত্যুর পর তাকে নির্মাণাধীন লালবাগ কেল্লার অভ্যন্তরে সমাহিত করা হয়। তার সমাধীস্থলকে চিহ্নিত করে পরী বিবির মাজার নির্মিত হয়। পরী বিবির মাজারের স্থাপনাটি চতুষ্কোণ। মার্বেল পাথর, কষ্টি পাথর ও বিভিন্ন রং এর ফুল-পাতা সুশোভিত চাকচিক্যময় টালির সাহায্যে অভ্যন্তরীণ নয়টি কক্ষ অলংকৃত করা হয়েছিল। মাঝের একটি ঘরে পরী বিবির সমাধিস্থল এবং এই ঘরটি ঘিরে আটটি ঘর আছে। স্থাপনাটির ছাদ করবেল পদ্ধতিতে কষ্টি পাথরে তৈরি এবং চারকোণে চারটি অষ্টকোণ মিনার ও মাঝে একটি অষ্টকোণ গম্বুজ আছে। মূল সমাধিসৌধের কেন্দ্রীয় কক্ষের উপরের এই গম্বুজটি একসময়ে স্বর্ণখচিত ছিল, পরবর্তীতে পিতলের/তামার পাত দিয়ে পুরো গম্বুজটিকে মুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। স্থাপনাটির অভ্যন্তর ভাগ সাদা মার্বেল পাথর দিয়ে আচ্ছাদিত ছিল। ২০.২ মিটার বর্গাকৃতির এই সমাধিটি ১৬৮৮ খ্রিষ্টাব্দের পূর্বে নির্মিত। তবে বিশেষজ্ঞদের অভিমত বর্তমানে এখানে পরি বিবির মরদেহ নেই বলে।

একটি বর্গাকৃতির পানির ট্যাংক (প্রতি পাশে ৪৫ মি) দেওয়ান-ই-আমের পূর্বদিকে স্থাপন করা হয়। সেখানে ট্যাংকে নামার জন্য চার কোণার সিঁড়ি আছে।

৫৯/ ঢাকা জেলার শঙ্খনিধি নাচঘর

শঙ্খনিধি নাচঘর
শঙ্খনিধি নাচঘর

শঙ্খনিধি নাচঘর বাংলাদেশের ঢাকার টিপু সুলতান রোডে শঙ্খনিধি হাউজ এর পূর্বপার্শ্বে প্রায় ৫০ ফুট প্রশস্ত একটি ছোট মনোরম একতলা স্থাপনা ছিল যা শঙ্খনিধি নাচঘর নামে পরিচিত। এর কারুকাজ এবং প্রবেশমুখ দেখতে হিন্দু মন্দিরের মত হলেও এটি মূলত বিনোদন ও সাংস্কৃতিক কাজের জন্যই নির্মাণ করা হয়েছিল, ধর্মীয় উদ্দেশ্যে নয়। কেন্দ্রের মূল নাচঘরটিতে কাঠের কারুকাজসজ্জিত ছাদ এবং দেয়ালগুলো রঙিন টালিতে শোভিত ছিল। বর্তমানে এখানে গ্র্যাজুয়েটস উচ্চ বিদ্যালয় অবস্থিত

শঙ্খনিধি নাচঘর এর ইতিহাস

বিশ শতকের গোড়ার দিকে লালমোহন সাহা বণিক, ভজহরি সাহা বণিক ও গৌর নিতাই সাহা বণিক ১৯২০-১৯২৬ সালের মধ্যে ঢাকার কিছু ভূসম্পত্তির মালিক হয় এবং বেশ কিছু ইমারত গড়ে তোলে।  এসব স্থাপনার মধ্যে শঙ্খনিধি নাচঘর অন্যতম।

এই দক্ষিণমুখী ভবনটি ভূপৃষ্ঠ হতে ৫ ফুট উঁচুতে স্থাপিত। ভবনটি কেন্দ্রীয় অক্ষের সাপেক্ষে প্রতিসম, দুইদিকের প্রান্তে দুটি অষ্টকোণী অংশ বিদ্যমান। অষ্টকোণী অংশদ্বয় দ্বিতলবিশিষ্ট এবং চূড়ায় অষ্টকোণী গম্বুজ দ্বারা আবৃত। এর বারান্দায় প্রবেশের জন্য ২০ ফুট প্রশস্ত সোপান রয়েছে। বারান্দার সম্মুখে ৪ টি সুশোভিত সরু করিন্থিয়ান স্তম্ভ আছে, যাদের মাঝখানে তিনটি বহুখাজযুক্ত অর্ধবৃত্তাকার তোরণ বিদ্যমান। অষ্টকোণী অংশদ্বয়ের জানালাগুলো সুসজ্জিত তোরণ এবং দুইপাশে সরু লম্বা করিন্থিয়ান স্তম্ভ দ্বারা বেষ্টিত। এই ভবনটিতে একটি কেন্দ্রীয় নাচঘরসহ বিভিন্ন আয়তনের মোট পাঁচটি ঘর রয়েছে। এগুলোর আয়তন ২০ফুট * ২৫ ফুট এর কাছাকাছি। মূল নাচঘরের কারুকাজশোভিত কাঠের আচ্ছাদনটি প্রায় ২৫ ফুট উঁচু।

শঙ্খনিধি নাচঘর এর বিলুপ্তি

১৯৯১ সালে শঙ্খনিধি হাউসের একাংশ ও নাচঘর ভেঙে ফেলা হয়। নাচঘরের স্থানটিতে একটি স্কুল স্থাপন করা হয়। 

৬০/ শঙ্খনিধি হাউজ

শঙ্খনিধি হাউজ
শঙ্খনিধি হাউজ

শঙ্খনিধি হাউজ বা শঙ্খনিধি মন্দির পুরান ঢাকার টিপু সুলতান রোডে অবস্থিত একটি শতবর্ষী পুরাতন ভবন। এই ভবনটি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের ঐতিহ্যবাহী ৩২ টি ভবনের তালিকা এবং ঢাকা সিটি কর্পোরেশন ও রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এর ৯৩ টি ঐতিহাসিক নান্দনিক ভবনের তালিকার অন্তর্ভুক্ত।

শঙ্খনিধি হাউজ এর ইতিহাস

শঙ্খনিধি মন্দিরের তালাবদ্ধ প্রবেশদ্বার

বিশ শতকের শুরুর দিকে লালমোহন সাহা বণিক, ভজহরি সাহা বণিক ও গৌর নিতাই সাহা বণিক ব্যাবসায় বেশ উন্নতি লাভ করেন। বিত্তশালী হওয়ার পর তারা বণিক উপাধি বর্জন করে ‘শঙ্খনিধি’ (শঙ্খের বাহক) উপাধি গ্রহণ করেন। ১৯২০-১৯২৬ সালের দিকে তারা ঢাকার কিছু ভূসম্পত্তির মালিক হন এবং সেখানে কিছু ভবন নির্মিত হয়। ঢাকার টিপু সুলতান রোড থেকে ওয়ারীর র‍্যাংকিন স্ট্রিট পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে এই ভবনগুলো গড়ে ওঠে। বণিক ভ্রাতৃত্রয়ের মধ্যে লালমোহন সাহা ১৯২১ সালে শঙ্খনিধি হাউস নির্মাণ করেন।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় ভবনের হিন্দু অধিবাসীগণ ভারতে চলে যায় এবং ভবনটি ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধিকারে আসে। এটি দেবোত্তর সম্পত্তির অন্তর্গত ও এই সংক্রান্ত যাবতীয় প্রমাণ‌ও ভূমি দফতরে সংরক্ষিত থাকা সত্ত্বেও মন্ত্রণালয় ভবনটি অযৌক্তিকভাবে ব্যক্তি মালিকানায় হস্তান্তর করে। ১৯৮০ সালে শঙ্খনিধি হাউস প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৯৯১ সালে শঙ্খনিধি হাউসের একাংশ ও নাচঘর ভেঙে ফেলা হয়।

শঙ্খনিধি হাউজ এর স্থাপত্যশৈলী

শঙ্খনিধি হাউস একটি দ্বিতল ভবন। এতে গোথিক-ইন্ডিয়ান ও ইন্দো-সারাসিন রীতির প্রভাব দেখা যায়। এর সম্মুখভাগে একটি কারুকাজ করা সুদৃশ্য ফটক রয়েছে। কেন্দ্রে রয়েছে ষড়ভুজাকৃতি স্তম্ভ। ভবনের দুইপাশে তিনটি করে প্রবেশ পথ বিদ্যমান। দেয়ালের পলেস্তারায় দৃষ্টিনন্দন লতাপাতা ও ফুলের নকশা নজর কাড়ে। ভবনের উত্তরদিকে রয়েছে একটি মন্দির।

শঙ্খনিধি হাউজ এর বর্তমান অবস্থা

বর্তমানে শঙ্খনিধি হাউস অরক্ষিত অবস্থায় দখলদারদের কবলে পড়ে নিজের জৌলুস হারিয়ে কোনোমতে টিকে আছে। দখলদারদের কেউ কেউ গ্যারেজ ও দোকানপাট বসিয়েছে, কেউ বা সপরিবারে বসবাস করছে। ২০১১ সালের ডিসেম্বরে দখলদাররা উত্তরদিকের মন্দির ভাঙতে শুরু করে এবং দোতলার ছাদ সম্পূর্ণ ভেঙে ফেলে। বর্তমানে (সেপ্টেম্বর ২০১৬) মন্দিরের দরজা তালাবদ্ধ অবস্থায় দেখতে পাওয়া যায়।

শঙ্খনিধি হাউজ এর দূর্গাপুজায় বাঁধা

প্রায় ৫০০ বৎসরের পুরাতন ঢাকার ৩৮ নং, টিপু সুলতান রোড লালমোহন সাহা ষ্ট্রীট ( ঠাকুর বাড়ী ) ওয়ারীর শঙ্খনিধি হাউসের শ্রী শ্রী রাধাগোবিন্দ জিঁউ মন্দির বা শঙ্খনিধি মন্দিরটিতে রাধাগোবিন্দ জিউর‌ পূজা করা হত । ১১ অক্টোবর, ২০২১ শঙ্খনিধি মন্দির কমিটি শঙ্খনিধি হাউসে সকালে শারদীয় দূর্গাপূজা গেলে জবরদখলকারী মুসলিমরা বাঁধা দেয় । ফলে ষষ্ঠীতে মন্দিরে প্রতিমা নিয়ে প্রবেশ সম্ভব হয় না । ঘটনাস্থলে ‌পুলিশ এসে হিন্দুদের উপরে লাঠিচার্জ করে । এক পর্যায়ে মারাত্মক আহত করা হয় বাংলাদেশ হিন্দু পরিষদের সাজন মিশ্রকে। মহিলাদের ওপরেও আঘাত করা হয় । প্রতিমা নিয়ে সারাদিন রাস্তায় বসে থাকার পরেও প্রতিমা নিয়ে মন্দিরে প্রবেশ করতে পারেন না হিন্দুরা। হিন্দুরা তাই রাস্তাতেই প্রতিমা স্থাপন করে পুজো করার প্রস্তুতি নেয় । এরপর বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব অ্যাডভোকেট গোবিন্দচন্দ্র প্রামাণিক সেখানে আসেন । তিনি হিন্দুদের পুজোয় বাধা ও পুলিশের ভূমিকার তীব্র নিন্দা করেন । হিন্দুদের প্রতিবাদে বাধ্য হয়ে সোমবার রাতে পুলিশ ওয়ারির টিপু সুলতান রোডে বলদা গার্ডেনের পাশে রাস্তার উপরে পুজো করার অনুমতি দেয়। এই ঘটনায় আওয়ামি লিগের স্থানীয় সাংসদ এবং প্রশাসনের প্রতিনিধিরা শঙ্খনিধি মন্দিরের দেবোত্তর সম্পত্তির উপর অবৈধ লিজ বাতিল‌ , মন্দির থেকে অবৈধ ‌জবরদখলকারীদের উচ্ছেদ‌ ও ঐতিহাসিক মন্দিরটি পুনরায় চালুর আশ্বাস দেয়। এতে জাতীয় হিন্দু মহাজোট সন্তোষ প্রকাশ করে ।

৬১/ শাঁখারিবাজার

শাঁখারিবাজার
শাঁখারিবাজার

শাঁখারিবাজার বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহরের পুরানো ঢাকার একটি ঐতিহাসিক এলাকা। ঢাকা বিখ্যাত ছিল শাঁখারীদের তৈরী শাঁখার জন্য। এটি বুড়িগঙ্গা নদীর কাছে ইসলামপুর রোড ও নওয়াবপুর রোডের সংযোগস্থলে অবস্থিত। এই এলাকায় বসবাসকারী শাঁখারীদের নামানুসারেই এলাকাটির নামকরণ করা হয়েছে। শাঁখারীরা বংশগত ভাবে শাঁখা তৈরির কাজে নিয়োজিত। ঢাকার শাঁখারীদের আবাসিক এলাকা ছিল শাঁখারী বাজার, যা এখনও বহন করছে সেই ঐতিহ্য।

শাঁখারিবাজার এর ইতিহাস

জেমস ওয়াইজের ১৮৮৩ খ্রিস্টাব্দের বর্ণনা অনুসারে ঢাকায় ঐ সময় ৮৩৫ জন শাঁখারী বসবাস করতেন। ধারণা করা হয় যে, বল্লাল সেনের শাসনামলে শাঁখারীরা পূর্ববঙ্গে আগমন করে। তখন তারা বিক্রমপুর এ একটি বাজার – শাঁখারী বাজার এ অবস্থান করতেন। সতের শতকে মোগল শাসনামলে খাঁজনা বিহীন লাখেরাজ জমি প্রদান করে শাঁখারীদেরকে ঢাকা শহরে নিয়ে আসা হয়। শাঁখারীরা ঢাকায় এসে যে অঞ্চলে বসবাস শুরু করেছিল তা আমাদের কাছে বর্তমানে পরিচিত শাঁখারী বাজার নামে।

সপ্তদশ শতকের মোগল সুবেদার ইসলাম খাঁর সেনাপতি মির্জা নাথান এর লেখায় শাঁখারিবাজারের উল্লেখ রয়েছে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ হানাদার বাহিনী শাঁখারী বাজার গুরিয়ে দিয়েছিল। স্বাধীনতার পর শাঁখারীরা আবার এসে বসবাস শুরু করে সেই জায়গায়।

শাঁখারিবাজার এর স্থাপত্য ও অন্যান্য উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য

শাঁখারীদের বাসগৃহ ও এর স্থাপত্য স্বতত্র ধরনের। জেমস ওয়াইজ এর কারণ দর্শন করেছেন এভাবে যে, শাঁখারীদের যে লাখেরাজ জমি দেয়া হয়েছিল তা ছিল আয়তনে অনেক ক্ষুদ্র। সেই আয়তন মেনেই নির্মিত হত বাসগৃহ। বাসগৃহের সামনের মূল ফটক হত ছয় ফিটের মত। এরপর বিশ-ত্রিশ ফিটের মত লম্বা করিডোর চলে যেত ভিতরে। এরপর দালানগুলো পশ্চাতদিকে বিশ গজ মত প্রসারিত।

বাসগৃহ গুলো অধিকাংশই চারতলা। দুইটি বাসগৃহের মধ্যবর্তী দেয়াল লাগোয়া, দরজা বা জানালা বিহীন এবং মধ্যবর্তী কোন ফাঁকা জায়গা নেই। একতলার উপরের মধ্যবর্তী স্থান ছোট প্রঙ্গনের ন্যায় খোলা রাখা হয়।

৬২/ শাপলা চত্বর

শাপলা চত্বর
শাপলা চত্বর

শাপলা চত্বর বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার কেন্দ্রস্থলের কাছাকাছি মতিঝিলের প্রাণকেন্দ্রে স্থাপিত একটি বিশালাকারের শাপলা ফুলের ভাস্কর্য; বাংলাদেশের জাতীয় ফুল এই শাপলা (জলপদ্ম প্রজাতির শালুক)। ভাস্কর্যটি একটি ঝরনা দ্বারা বেষ্টিত।

এখানে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়কালের একটি গণকবর চিহ্নিত হয়েছে।

৬৩/ সন্ত্রাস বিরোধী রাজু স্মারক ভাস্কর্য

সন্ত্রাস বিরোধী রাজু স্মারক ভাস্কর্য
সন্ত্রাস বিরোধী রাজু স্মারক ভাস্কর্য

সন্ত্রাস বিরোধী রাজু স্মারক ভাস্কর্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টি এস সি প্রাঙ্গনে অবস্থিত ঢাকার একটি অন্যতম প্রধান ভাস্কর্য নিদর্শন। এটি ১৯৯৭ এর শেষভাগে তৈরি হয়। রাজু ভাস্কর্য টি এস সিঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

সন্ত্রাস বিরোধী রাজু স্মারক ভাস্কর্য এর ইতিহাস

১৯৯২ সালের ১৩ই মার্চ গণতান্ত্রিক ছাত্র ঐক্যের সন্ত্রাস বিরোধী মিছিল চলাকালে সন্ত্রাসীরা গুলি করলে মিছিলের নেতৃত্বদানকারী বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় নেতা মঈন হোসেন রাজু নিহত হন। রাজুসহ সন্ত্রাস বিরোধী আন্দোলনের সকল শহীদের স্মরণে নির্মিত এই ভাস্কর্য ১৭ই সেপ্টেম্বর, ১৯৯৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য এ. কে. আজাদ চৌধুরী উদ্বোধন করেন। এই ভাস্কর্য নিমার্ণে জড়িত শিল্পীরা ছিলেন ভাস্কর শ্যামল চৌধুরী ও সহযোগী গোপাল পাল। নির্মাণ ও স্থাপনের অর্থায়নে ছিলেন – ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষক আতাউদ্দিন খান (আতা খান) ও মুন্সিগঞ্জ-বিক্রমপুর সমিতির সভাপতি, লায়ন নজরুল ইসলাম খান বাদল। ভাস্কর্যটির সার্বিক তত্ত্বাবধানে রয়েছে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন।

সন্ত্রাস বিরোধী রাজু স্মারক ভাস্কর্য এর বর্ণনা

এই ভাস্কর্যে ৮ জনের অবয়ব ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। যাদের প্রতিকৃতি ব্যবহার করা হয়েছে তারা হলেন মুনীম হোসেন রানা, শাহানা আক্তার শিলু, সাঈদ হাসান তুহিন, আবদুল্লাহ মাহমুদ খান, তাসফির সিদ্দিক, হাসান হাফিজুর রহমান সোহেল, উৎপল চন্দ্র রায় ও গোলাম কিবরিয়া রনি।

৬৪/ ঢাকা জেলার সাত গম্বুজ মসজিদ

সাত গম্বুজ মসজিদ
সাত গম্বুজ মসজিদ

সাত গম্বুজ মসজিদ ঢাকার মোহাম্মদপুরে অবস্থিত মুঘল আমলে নির্মিত একটি মসজিদ। এই মসজিদটি চারটি মিনারসহ সাতটি গম্বুজের কারণে মসজিদের নাম হয়েছে ‘সাতগম্বুজ মসজিদ’। এটি মুঘল সাম্রাজ্য মুঘল আমলের অন্যতম নিদর্শন। ১৬৮০ সালে মুঘল সুবাদার শায়েস্তা খাঁর আমলে তার পুত্র উমিদ খাঁ মসজিদটি নির্মাণ করান। মসজিদটি লালবাগ দুর্গ মসজিদ এবং খাজা আম্বর মসজিদ এর সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।

সাত গম্বুজ মসজিদ এর অবস্থান

ঢাকার মোহাম্মদপুরে (বাসস্ট্যান্ড) কাটাসুর থেকে শিয়া মসজিদের দিকে একটা রাস্তা চলে গেছে বাঁশবাড়ী হয়ে। এই রাস্তাতে যাওয়ার পথে পড়ে সাত গম্বুজ মসজিদ।

সাত গম্বুজ মসজিদ এর অভ্যন্তরভাগ

এর ছাদে রয়েছে তিনটি বড় গম্বুজ এবং চার কোণের প্রতি কোনায় একটি করে অণু গম্বুজ থাকায় একে সাত গম্বুজ মসজিদ বলা হয়। এর আয়তাকার নামাজকোঠার বাইরের দিকের পরিমাণ দৈর্ঘ্যে ১৭.৬৮ এবং প্রস্থে ৮.২৩ মিটার। এর পূর্বদিকের গায়ে ভাঁজবিশিষ্ট তিনটি খিলান এটিকে বেশ আকর্ষণীয় করে তুলেছে। পশ্চিম দেয়ালে তিনটি মিহরাব রয়েছে। দূর থেকে শুভ্র মসজিদটি অত্যন্ত সুন্দর দেখায়। মসজিদের ভিতরে ৪টি কাতারে প্রায় ৯০ জনের নামাজ পড়ার মত স্থান রয়েছে।

মসজিদের পূর্বপাশে এরই অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে রয়েছে একটি সমাধি। কথিত আছে, এটি শায়েস্তা খাঁর মেয়ের সমাধি। সমাধিটি ‘বিবির মাজার’ বলেও খ্যাত। এ কবর কোঠাটি ভেতর থেকে অষ্টকোনাকৃতি এবং বাইরের দিকে চতুষ্কোনাকৃতির। বেশ কিছুদিন আগে সমাধিক্ষেত্রটি পরিত্যক্ত এবং ধ্বংসপ্রাপ্ত ছিল। বর্তমানে এটি সংস্কার করা হয়েছে। মসজিদের সামনে একটি বড় উদ্যানও রয়েছে। মসজিদের পশ্চিম পাশে বাংলাদেশের বিখ্যাত মাদরাসা জামিয়া রহমানিয়া আরাবিয়া অবস্থিত। একসময় মসজিদের পাশ দিয়ে বয়ে যেত বুড়িগঙ্গা। মসজিদের ঘাটেই ভেড়ানো হতো লঞ্চ ও নৌকা। কিন্তু বর্তমান অবস্থায় তা কল্পনা করাও কষ্টকর। বড় দালানকোঠায় ভরে উঠেছে মসজিদের চারপাশ। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এর দেখাশোনার দায়িত্ব গ্রহণ করেছে।

৬৫/ সাদুল্লাপুর

সাদুল্লাপুর
সাদুল্লাপুর

সাদুল্লাপুর, যা গোলাপ গ্রাম নামেও পরিচিত, ঢাকার অদূূূরে সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নে তুরাগ নদীর তীরে অবস্থিত একটি পর্যটন আকর্ষণ। এই পুরো গ্রামটিই নানা রঙের গোলাপ ফুল দিয়ে ঘেরা। একে গোলাপ গ্রাম বলা হলেও এখানে গোলাপ ছাড়াও অনেক ফুল আছে, যেমন- জারবেরা, গ্লাডিওলাস ইত্যাদি। ঢাকায় ফুলের চাহিদা মেটাতে এই গ্রাম ভূমিকা রাখে।

সাদুল্লাপুর এর অবস্থান

ঢাকার অদূরে সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত সাদুল্লাপুর বা গোলাপ গ্রাম। মিরপুর বেড়িবাঁধের পশ্চিম পাশে সাদুল্লাপুর, শ্যামপুর, মোস্তা পাড়া ইত্যাদি গ্রাম অবস্থিত। এসব গ্রামজুড়ে রয়েছে গোলাপের রাজ্য। গ্রামের রাস্তার দু’পাশ জুড়েই গোলাপের দেখা পাওয়া যায়। তাই এ গ্রামগুলো ‘গোলাপ গ্রাম’ নামেই বেশি পরিচিত। শুধু সাদুল্লাহপুর নয়, আশপাশের শ্যামপুর, কমলাপুর, বাগ্মীবাড়ি গ্রামেও অসংখ্য গোলাপ বাগানের দেখা মেলে।

সাদুল্লাপুর এর বর্ণনা

সাদুল্লাহপুর গ্রামটি একসময় ভাওয়াল রাজার অধীনস্থ ছিল। বাণিজ্যিকভাবে এখানে প্রথম গোলাপ চাষ শুরু হয় ১৯৯০ সালে। গোলাপের চাষ লাভবান হওয়ায় ক্রমে এসব এলাকার অনেকেই এর চাষে যুক্ত হতে থাকে। পরবর্তীতে বিভিন্ন দেশি-বিদেশি ফুল – মিরিন্ডা গোলাপ, চায়না গোলাপ, ইরানি গোলাপ, জারবেরা, রজনীগন্ধা, গ্লাডিওলাস, চন্দ্র মল্লিকা ইত্যাদির চাষ শুরু হয়। গোলাপের চাষ এই অঞ্চলের মানুষের অর্থনৈতিক উন্নতিতে বড় ভূমিকা রেখেছে। গ্রামের পথের ধার ঘেঁষে রয়েছে অসংখ্য গোলাপের বাগান। লাল গোলাপের আধিক্য বেশি হলেও এর মাঝেই কিছু সাদা গোলাপ, গ্লাডিওলাস, জারবেরার বাগানও চোখে পড়ে। বিপুল পরিমাণ গোলাপের ক্রয়-বিক্রয় হতে দেখা যায় এ অঞ্চলে। লাল, নীল, হলুদ, গোলাপী, বেগুনীসহ বিভিন্ন রং ও আকৃতির গোলাপ রয়েছে। মূলত ঢাকা শহর থেকে খুব নিকটে অবস্থান করায় এবং এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বেশ আকর্ষণীয় হওয়ায় এখানে দর্শনার্থীদের আগমন ঘটে। 

সাদুল্লাপুর এর গোলাপের হাট

শ্যামপুর গ্রামে প্রতি সন্ধ্যায় গোলাপের হাট বসে। হাটে পাইকারি ফুল কেনাবেচা হয়। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অসংখ্য ব্যবসায়ীর আনাগোনা ঘটে সেখানে। গভীর রাত পর্যন্ত চলে এই হাট। এ ছাড়া মোস্তাপাড়ায় অবস্থিত সাবু মার্কেটেও গোলাপ বেচাকেনা হয়। গোলাপের চাহিদা সারাবছরই বিদ্যমান থাকায় চাষিরাও সারা বছরই ব্যস্ত থাকেন। তবে বিশেষ উৎসবের দিনগুলোতে চাহিদা বহুগুণ বেড়ে যায়।

৬৬/ ঢাকা জেলার সূত্রাপুর জমিদার বাড়ি

সূত্রাপুর জমিদার বাড়ি
সূত্রাপুর জমিদার বাড়ি

সূত্রাপুর জমিদার বাড়ি পুরান ঢাকার সূত্রাপুর থানার রেবতী মোহন দাস রোডে (আর. এম. দাস রোড) অবস্থিত একটি সুদৃশ্য ভবন। ২০ শতকের গোড়ার দিকে প্রতাপশালী হিন্দু জমিদার রেবতী মোহন দাস এই ভবনটি নির্মাণ করেন। এটি বাংলাদেশের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের পুরাকীর্তির তালিকার অন্তর্ভুক্ত।

সূত্রাপুর জমিদার বাড়ি এর ইতিহাস

ব্রিটিশ আমলের জমিদার রায় বাহাদুর সত্যেন্দ্র কুমার দাস এই বাড়িটির মালিক ছিলেন। তিনি একসাথে জমিদার, ব্যবসায়ী, ব্যাংকার ও প্রেসমালিক হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন। এছাড়া ঢাকা পৌরসভার চেয়ারম্যানের দায়িত্বও পালন করেন। তিনি ওয়াল্টার রোডে বিজলীবাতি স্থাপনের জন্য অর্থপ্রদান করেন, এজন্য ওয়াল্টার রোডের একটি বিরাট অংশের নাম তার পিতা রেবতী মোহন দাসের নামানুসারে রেবতী মোহন দাস রোড বা আর. এম. দাস রোড রাখা হয়। স্থানীয়দের কাছে সত্যেন্দ্র কুমার দাসের বাড়িটি ‘জমিদারবাড়ি’ নামে পরিচিত ছিল। 

দেশবিভাগের সময় জমিদারবাড়ির বংশধরগণ বাড়িটি ত্যাগ করে চলে যায় এবং শত্রুসম্পত্তি হিসেবে বাড়িটি সরকারের অধিকারে আসে। বর্তমানে ভবনটি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কোয়ার্টার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এখানে এখন ফায়ার সার্ভিস ও সরকারি কর্মকর্তাদের পরিবার বসবাস করছে

সূত্রাপুর জমিদার বাড়ি এর গঠনশৈলী

পুরো ভবনটি পাশাপাশি অবস্থিত দুটি পৃথক তিনতলা বিশিষ্ট দালানের সমন্বয় যাদের দক্ষিণস্থিত অংশটি বেশি প্রাচীন বলে মনে হয়। দক্ষিণের মূল দালানে প্রায় ৫০ ফুট উঁচু প্রবেশমুখ আছে যার ছাদ তিনটি করিন্থিয়ান স্তম্ভ দ্বারা স্থাপিত। এর দুইপাশের অংশে বিভিন্ন নকশা ও কারুকাজ দেখা যায়। কয়েকটি লতাপাতামণ্ডিত অর্ধবৃত্তাকার কাঠামো এবং এর নিচে গোলাকার নকশা দেখা যায়। পুরো দালানে বিভিন্ন আয়তনের প্রায় ৩৫ টি কক্ষ বিদ্যমান। সামনের ছোট বারান্দা দিয়ে প্রবেশ করলে প্রায় ৫০ বর্গফুটের একটি উন্মুক্ত আঙিনায় পৌঁছানো যায় যার তিনদিক দালানে বেষ্টিত এবং মুক্ত পূর্বপ্রান্তটি ধোলাইখালে গিয়ে শেষ হয়েছে। দালানটির পিছনদিকও করিন্থিয়ান স্তম্ভ, তিনটি গোলাকার নকশা পরিবৃত অর্ধবৃত্তাকার কাঠামো ও অন্যান্য ফুলপাতার কারুকাজ দ্বারা শোভিত।সূত্রাপুর জমিদারবাড়ির করিন্থিয়ান স্তম্ভ

উত্তরপার্শ্বের তিনতলা ভবনটি রেবতী মোহন দাসের কোন এক আত্মীয় নির্মাণ করেন বলে জানা যায়। এতেও ৫০ ফুট প্রবেশমুখ এবং প্রায় সমানসংখ্যক কক্ষ রয়েছে। এর ভিতরেও অভ্যন্তরীণ আঙিনা এবং ধোলাইখালের খালের দিকে একটি মুক্তপথ(পূর্বদিকে) আছে। এর ছাদের বেষ্টনীতে নির্দিষ্ট দূরত্বে ছোট ছোট রন্ধ্র বিদ্যমান।

ভবন দুটি একত্রে প্রায় এক একর স্থানের উপর নির্মিত।

৬৭/ সেন্ট থমাস চার্চ, ঢাকা

সেন্ট থমাস চার্চ, ঢাকা
সেন্ট থমাস চার্চ, ঢাকা

সেন্ট থমাস চার্চ এংলিকান সম্প্রদায় কর্তৃক নির্মিত একটি উপাসনালয়। এটি ঢাকার লক্ষ্মীবাজারে বাহাদুর শাহ পার্কের কাছে অবস্থিত। ঢাকার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সড়ক জনসন রোড, গির্জাটিকে আদালত-কোর্টকাচারি ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পৃথক করেছে। এটি ‘চার্চ অফ বাংলাদেশ’ নামেও পরিচিত।

সেন্ট থমাস চার্চ, ঢাকা এর ইতিহাস

১৮১৯ খ্রিষ্টাব্দে এর নির্মাণ কাজ শেষ হয়। কলকাতার বিশপ রেজিনাল্ড হেবার, ১৮২৪ সালের ১০ জুলাই ঢাকা এসে এর উদ্বোধন করেন। ১৯৫১ সাল পর্যন্ত এটি ক্যাথেড্রাল চার্চ হিসেবে সক্রিয় ছিল। জানা যায় ঢাকা জেলের কয়েদীরা চার্চ নির্মাণে শ্রম দিয়েছিল। উনিশ শতকের প্রথমভাগে চার্চটি বাংলায় প্রোটেস্ট্যান্ট মতবাদ প্রসারে ভূমিকা রাখে। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রোটেস্ট্যান্টদের চেয়ে ব্যাপ্টিস্টদের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হলেও চার্চ অফ ইংল্যান্ড ও প্রেসবাইটেরিয়ানরাও সক্রিয়। ১৯৪৭ সালে বাংলাদেশ পাকিস্তান এর পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ হিসেবে ভুক্ত হয় এবং ১৯৭১ সালে এটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। ১৯৭০ সালে প্রেসবাইটেরিয়ান ও এংলিকানরা সম্মিলিত হয়ে চার্চ অফ পাকিস্তান এর স্থানীয় প্রশাসন গঠন করে। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যুত্থানে একটি ভয়াবহ যুদ্ধ হয় (১৯৭১) যার কারণে দুই দেশের মধ্যে তিক্ত সম্পর্ক দেখা দেয়। ১৯৭১ সালের পরে কয়েক বছর দাপ্তরিকভাবে চার্চ অফ পাকিস্তানের প্রশাসন দ্বারা চার্চটি পরিচালিত হলেও এটি ধীরে ধীরে চার্চ অফ বাংলাদেশ নামের একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়।

রেভারেন্ড পল এস. সরকার ২০০৩ সালের জানুয়ারিতে চার্চ অফ বাংলাদেশ এর তৃতীয় বিশপ হন যিনি চার্চটি পরিচালনা করে থাকেন। ২০০৫ সালে চার্চের প্রায় ১৫৬০০ সদস্য ছিল। ১৯৭৫ সাল থেকে এটি ওয়ার্ল্ড কাউন্সিল অফ চার্চেস এর অন্তর্ভুক্ত।

সেন্ট থমাস চার্চ, ঢাকা এর স্থাপত্যশৈলী

সেন্ট থমাস চার্চে পূর্বাঞ্চলীয় চার্চের ন্যায় একটি বর্গাকার ঘড়ি টাওয়ার আর দেওয়ালে তোরণসদৃশ জানালা রয়েছে। মূল প্রবেশদ্বারের সামনে চারটি স্তম্ভের উপর স্থাপিত একটি ছোট ছাউনি রয়েছে যা গথিক স্থাপত্যে নির্মিত। এর ছাদে ছোট বর্গাকার বেষ্টনী বা প্যারাপেট রয়েছে। আয়তাকার কেন্দ্রীয় কক্ষের পিছনে দুটি স্তম্ভ আছে যেগুলো একটি তোরণের আকারে পুলপিট অংশে মিলেছে। পুলপিট আয়তাকার, এর পিছনের দেওয়ালে ব্রাসনির্মিত ক্রসচিহ্ন আছে। বেদী কাঠের তৈরি আর এর উপরেও একটি ব্রাসের ক্রসচিহ্ন রয়েছে। বেদীটি পূর্বপ্রান্তে অবস্থিত। ধর্মীয় আলোচনাসভার জন্য কয়েকটি অভিজাত কারুকার্যময় কেদারা আছে। মূল কক্ষের পিছে আছে একটি শিলালিপি। চার্চের দেয়ালে কয়েকজন স্মরণীয় সদস্যের স্মৃতিরক্ষার্থে প্রস্তরফলক রয়েছে। বারান্দার ছাদগুলো ঢালু কড়িকাঠ দিয়ে বানানো। আয়তাকার প্রার্থনাগৃহটি খুবই পরিপাটি এবং এতে ভারবাহী নয় এমন দুটি স্তম্ভ আছে। ছাদে কাঠের ফালি আর মেঝেয় টাইলস লাগানো। ২০০ বছরের পুরনো হলেও সাদা প্লাস্টার করা ভবনটির সুদৃশ্য পাথর আর ইটের কাঠামো এতটুকু বিকারগ্রস্ত হয়নি। এমনকি অধিকাংশ সেগুন কাঠের আসবাব, কাঠের বেদী, অভিষেকপাত্র প্রভৃতি এখনও অক্ষত ও ব্যবহারযোগ্য অবস্থায় আছে।

২০০৫ সালে কর্তৃপক্ষ চার্চের ব্যাপক সংস্কার সাধন করেন। খুব বৃহদায়তন না হলেও চার্চটি ঢাকার একটি বিশেষ পর্যটক আকর্ষণ।

৬৮/ ঢাকা জেলার স্বাধীনতা জাদুঘর

স্বাধীনতা জাদুঘর
স্বাধীনতা জাদুঘর

স্বাধীনতা জাদুঘর বাংলাদেশের ঢাকায় অবস্থিত একটি জাদুঘর যা দেশটির স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস চিত্রিত করে। জাদুঘরটি ঢাকার ঐতিহাসিক সোহ্‌রাওয়ার্দী উদ্যানে অবস্থিত। মুঘল শাসনামল থেকে শুরু করে ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে বিজয় দিবস পর্যন্ত দীর্ঘ সংগ্রাম-ইতিহাসের সচিত্র বর্ণনা প্রদর্শন করছে জাদুঘরটি। সোহ্‌রাওয়ার্দী উদ্যানে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের ৭ মার্চ তার ঐতিহাসিক ভাষণ প্রদান করেন এবং এখানেই একই বছরের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণ করে। স্বাধীনতা জাদুঘর বাংলাদেশের ৪৫তম স্বাধীনতা দিবস, ২০১৫ খ্রিস্টাব্দের ২৫ মার্চে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। স্বাধীনতা জাদুঘর বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর এর এখতিয়ারে একটি শাখা জাদুঘর হিসাবে পরিচালিত।

স্বাধীনতা জাদুঘর এর স্থাপত্য

স্বাধীনতা জাদুঘরটি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নির্মিত একটি বৃহৎ পরিকল্পিত নকশার অংশ। এই নকশায় রয়েছে একটি অ্যাম্ফিথিয়েটার, তিনটি জলাধার, শিখা চিরন্তন, স্বাধীনতা সংগ্রামের চিত্রবিশিষ্ট একটি ম্যুরাল এবং ১৫৫ আসন বিশিষ্ট একটি অডিটোরিয়াম। তবে পুরো নকশাটির প্রধান বিষয় হল একটি ৫০ মিটার বিশিষ্ট আলোক স্তম্ভ, যা স্বাধীনতা স্তম্ভ নামে পরিচিত। স্তম্ভটি কাচের প্যানেল দ্বারা নির্মিত। জাদুঘরটি এই স্তম্ভের নিচে অবস্থিত। পুরো জাদুঘরটি ভূগর্ভস্থ। এটিই বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র ভূগর্ভস্থ জাদুঘর। জাদুঘরটির প্লাজাটি ৫৬৬৯ বর্গমিটার বিশিষ্ট টাইল দ্বারা আবৃত স্থান। জাদুঘরের মাঝখানে রয়েছে একটি ঝর্ণা, যাতে উপর থেকে পানি পরে। বাংলাদেশী স্থপতি কাশেফ মাহবুব চৌধুরী এবং মেরিনা তাবাসসুম ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দে একটি জাতীয় স্থাপত্যিক নকশা প্রতিযোগিতা জয়ের মাধ্যমে এই প্রকল্পটির কাজ বাস্তবায়নের সুযোগ লাভ করেন। ৬৭ একরজুড়ে বিস্তৃত পুরো প্রকল্পটির নির্মাণ ব্যয় প্রায় ১৭৫ কোটি টাকা।

স্বাধীনতা জাদুঘর এর প্রদর্শনী

জাদুঘরটিতে ১৪৪টি কাচের প্যানেলে ৩০০-এরও বেশি ঐতিহাসিক আলোকচিত্র প্রদর্শিত হয়। টেরাকোটা, ঐতিহাসিক আলোকচিত্র, যুদ্ধের ঘটনা সংবলিত সংবাদপত্রের প্রতিবেদনও প্রদর্শিত হয়। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিভিন্ন বিদেশী পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের প্রতিলিপি এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিদেশে প্রচারণা সৃষ্টিতে তৈরিকৃত বিভিন্ন পোস্টারও জাদুঘরটিত প্রদর্শনীতে রয়েছে। বাংলাদেশের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান এবং স্থাপনার চিত্রও রয়েছে এখানে। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরে যে টেবিলে তৎকালী পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পূর্ব জোনের কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজি আত্মসমর্পণ করে স্বাক্ষর করেন, তার একটি অনুলিপি রয়েছে জাদুঘরটিতে। তবে মূল টেবিলটি বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে রয়েছে।

স্বাধীনতা জাদুঘর দর্শনার্থীদের জন্য তথ্য

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ৫টি ফটক দিয়ে ভূ-গর্ভস্থ স্বাধীনতা জাদুঘরে যাওয়া যায়। তবে ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্সটিটিউটের নিকটবর্তী ফটক এবং বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের বিপরীতে অবস্থিত ফটক দিয়ে সহজে প্রবেশ করা যায়। এর শীতকালীন সময়সূচী প্রতি শনিবার থেকে বুধবার সকাল ৯টা থেকে বিকাল সাড়ে ৪টা এবং গ্রীষ্মকালীন সময়সূচী প্রতি শনিবার থেকে বুধবার সকাল ১০টা থেকে বিকাল সাড়ে ৫টা। শুক্রবার বিকেল আড়াইটা থেকে স্বাধীনতা জাদুঘর দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। বৃহস্পতিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন। প্রবেশ মূল্য ২০টাকা (প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য) ও ১০ টাকা (শিশু-কিশোরদের জন্য)। বিদেশীদের জন্য প্রবেশ মূল্য ১০০ টাকা; তবে সার্কভুক্ত দেশের দর্শনার্থীদের জন্য প্রবেশ মূল্য ২০ টাকা।

৬৯/ হাজী শাহাবাজের মাজার ও মসজিদ

হাজী শাহাবাজের মাজার ও মসজিদ
হাজী শাহাবাজের মাজার ও মসজিদ

হাজী শাহাবাজের মাজার ও মসজিদ বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহরের রমনা এলাকায় অবস্থিত একটি প্রাচীন মসজিদ। মোগল শাসনামলে শাহজাদা আযমের সময়কালে ১৬৭৯ খ্রিষ্টাব্দে এটি নির্মিত হয়। মসজিদটি হাইকোর্টের পিছনে এবং তিন নেতার মাজার এর পূর্ব পার্শ্বে অবস্থিত। এর চত্ত্বরে হাজী শাহবাজের সমাধি অবস্থিত। দৈর্ঘ্যে মসজিদটি ৬৮ ফুট ও প্রস্থে ২৬ ফুট। এতে তিনটি গম্বুজ রয়েছে। 

হাজী শাহাবাজের মাজার ও মসজিদ এর ইতিহাস

ঐতিহাসিক মুনতাসীর মামুনের মতানুসারে হাজী শাহবাজ ছিলেন একজন অভিজাত ধনী ব্যবসায়ী, যিনি কাশ্মীর হতে সুবা বাংলায় এসে টঙ্গী এলাকায় বসতি স্থাপন করেন।  ১৬৭৯ সালে তিনি জীবিত থাকাকালেই এই মসজিদ ও নিজের মাজার নির্মাণ করেন। তৎকালে সুবাহদার ছিলেন শাহজাদা মুহম্মদ আজম।

৭০/ হলি রোজারি চার্চ

হলি রোজারি চার্চ

হলি রোজারি চার্চ ঢাকার তেজগাঁও এলাকার একটি রোমান ক্যাথলিক চার্চ। এটি তেজগাঁও চার্চ নামে পরিচিত এবং একসময় এটি জপমালা কুইন চার্চ নামে জনপ্রিয় ছিলো। এই ক্যাথলিক চার্চের অধীনে ১৭,১২০ জন ক্যাথলিক রয়েছে। ফ্রান্সিস কামাল আন্দ্রেয়াস কররায়া এই গির্জার প্রধান যাজক হিসেবে এবং ফ্রান্সিস মিন্টু লরেন্স পলমা, ফ্রান্সিস অ্যান্টনি রিপন ডি’ রোজারিও এবং ফ্রান্সিস সনি মার্টিন রদ্রিগেজ সেখানে সহকারী যাজক হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। প্রতি রবিবার ক্যাথলিকরা রবিবারের মিলনীর জন্য সেখানে সমবেত হয় এবং হাজার হাজার ভক্ত সেখানে যোগ দেয়।

হলি রোজারি চার্চ এর নির্মাণ

পর্তুগিজ অগাস্টিনিয়ান মিশনারিরা ঢাকায় খ্রিস্টধর্মের প্রচলন করেছিল। ১৬৭৭ সালে ঢাকার তেজগাঁওয়ে দ্বিতীয় চার্চটি নির্মিত হয়েছিল। তবে এখন পর্যন্ত টিকে থাকা গির্জাগুলোর মধ্যে এটিই বাংলাদেশের প্রাচীনতম গির্জার উদাহরণ।

হলি রোজারি চার্চ এর সংস্কার

চার্চটি তিনবার সংস্কার করা হয়েছিল। এর মধ্যে প্রথমবার ১৭১৪ সালে, তারপর ১৯৪০ সালে এবং শেষবার ২০০০ সালে সংস্কার করা হয়েছিল।

দেয়ালের প্রস্থ এবং ছাদের অংশগুলোর মধ্যে পার্থক্য থেকে বোঝা যায় যে গির্জার পূর্ব অংশটি পরে নির্মিত হয়েছিল।

আরও পড়ুনঃ

সরকারের আদেশ, গেজেট, বিজ্ঞপ্তি, পরিপত্র, চাকরির খবর ও শিক্ষা সংক্রান্ত তথ্য সবার আগে জানতে প্রজ্ঞাপন এর ফেইসবুক পেইজটি লাইক দিয়ে সাথে থাকবেন।

The post ঢাকা জেলার বিখ্যাত ৭০টি দর্শনীয় স্থান, ইতিহাস, অবস্থান ও বিবরন appeared first on Proggapan.

]]>
https://proggapan.com/%e0%a6%a2%e0%a6%be%e0%a6%95%e0%a6%be-%e0%a6%9c%e0%a7%87%e0%a6%b2%e0%a6%be%e0%a6%b0-%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%96%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%a4-%e0%a7%ad%e0%a7%a6%e0%a6%9f%e0%a6%bf-%e0%a6%a6/feed/ 0
সিলেটের বিখ্যাত ৩৫টি দর্শনীয় স্থান, অবস্থান এবং বিবরণ https://proggapan.com/%e0%a6%b8%e0%a6%bf%e0%a6%b2%e0%a7%87%e0%a6%9f%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%96%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%a4-%e0%a7%a9%e0%a7%ab%e0%a6%9f%e0%a6%bf-%e0%a6%a6%e0%a6%b0%e0%a7%8d/ https://proggapan.com/%e0%a6%b8%e0%a6%bf%e0%a6%b2%e0%a7%87%e0%a6%9f%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%96%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%a4-%e0%a7%a9%e0%a7%ab%e0%a6%9f%e0%a6%bf-%e0%a6%a6%e0%a6%b0%e0%a7%8d/#respond Sun, 09 Jan 2022 14:49:13 +0000 https://proggapan.com/?p=726 সিলেটের বিখ্যাত ৩৫টি দর্শনীয় স্থান অবস্থান এবং বিবরণ। অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর দুটি পাতা একটি কুঁড়ির দেশ সিলেট। বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বে অবস্থিত এই প্রাচীন জনপদ বনজ, খনিজ ও মৎস্য সম্পদে ভরপুর এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মন্ডিত। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ছাড়াও সিলেটের রয়েছে প্রসিদ্ধ ইতিহাস। সিলেটে বসবাসকারি বিভিন্ন আদিবাসীদের রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন ভাষা ও সংস্কৃতি। চা বাগান, জাফলং, রাতারগুল […]

The post সিলেটের বিখ্যাত ৩৫টি দর্শনীয় স্থান, অবস্থান এবং বিবরণ appeared first on Proggapan.

]]>
সিলেটের বিখ্যাত ৩৫টি দর্শনীয় স্থান অবস্থান এবং বিবরণ। অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর দুটি পাতা একটি কুঁড়ির দেশ সিলেট। বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বে অবস্থিত এই প্রাচীন জনপদ বনজ, খনিজ ও মৎস্য সম্পদে ভরপুর এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মন্ডিত। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ছাড়াও সিলেটের রয়েছে প্রসিদ্ধ ইতিহাস। সিলেটে বসবাসকারি বিভিন্ন আদিবাসীদের রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন ভাষা ও সংস্কৃতি। চা বাগান, জাফলং, রাতারগুল জলাবন, হাকালুকি হাওর, লালাখাল, ভোলাগঞ্জ, বিছনাকান্দি, তামাবিল, পাহাড়, ঝর্ণা সব মিলিয়ে নানা বৈচিত্রের সম্ভার এই সিলেট দেশের অন্যতম পর্যটন নগরী।

সিলেটের বিখ্যাত ৩৫টি দর্শনীয় স্থান

সিলেটের বিখ্যাত স্থান অনেক আছে তার মধ্যে অন্যতম ৩৪টি স্থান তুলে ধরলাম। উক্ত দর্শণীয় স্থানগুলো নিম্নে দেওয়া হলোঃ-

  1. আলী আমজদের ঘড়ি
  2. ইরাবতী পান্থশালা
  3. উৎমাছড়া
  4.  ওসমানী জাদুঘর
  5. কুলুমছড়া কৈলাশটিলা
  6. খাদিমনগর জাতীয় উদ্যান
  7. গাজী বুরহান উদ্দীনের মাজার
  8. জাফলং
  9.  জিতু মিয়ার বাড়ী
  10. টিলাগড় ইকোপার্ক
  11. ডিবির হাওর
  12. ড্রিমল্যান্ড পার্ক
  13. তিন নদীর মোহনা
  14. নাজিমগড় রিসোর্ট
  15. পাংতুমাই
  16. বঙ্গবীর ওসমানী শিশু উদ্যান
  17. বাংলাদেশের শেষ বাড়ি
  18.  বিছানাকান্দি
  19.  ভোলাগঞ্জ
  20. মশাজানের দিঘী
  21. বর্ষিজোড়া ইকোপার্ক
  22. মাধবকুণ্ড ইকোপার্ক
  23. মিউজিয়াম অব রাজাস
  24. রাতারগুল জলাবন
  25. রামপাশার জমিদার বাড়ি
  26. লালাখাল
  27. লোভাছড়া
  28. শাহ জালালের দরগাহ
  29. শাহ পরাণের মাজার
  30.  শাহী ঈদগাহ সিলেট
  31. শ্রীপুর, সিলেট
  32. সংগ্রামপুঞ্জি জলপ্রপাত
  33. সাজিদ রাজার বাড়ি
  34. সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার
  35. ৩৪/ হারং হুরং

১/ আলী আমজদের ঘড়ি

আলী আমজদের ঘড়ি
আলী আমজাদের ঘড়ি

আলী আমজদের ঘড়ি (আলী আমজাদের ঘড়ি নামেও পরিচিত) বাংলাদেশের সিলেট শহরে অবস্থিত ঊনবিংশ শতকের একটি স্থাপনা, যা মূলত একটি বিরাটাকায় ঘড়ি, একটি ঘরের চূড়ায় স্থাপিত।

সুরমা নদীর তীর ঘেঁষে সিলেট সদর উপজেলায় অবস্থিত এই ঘড়ির ডায়ামিটার আড়াই ফুট এবং ঘড়ির কাঁটা দুই ফুট লম্বা। যখন ঘড়ির অবাধ প্রচলন ছিল না, সেসময় অর্থাৎ ১৮৭৪ খ্রিষ্টাব্দে সিলেট মহানগরীর প্রবেশদ্বার (উত্তর সুরমা) কীন ব্রিজের ডানপার্শ্বে সুরমা নদীর তীরে এই ঐতিহাসিক ঘড়িঘরটি নির্মাণ করেন সিলেটের কুলাউড়ার পৃত্থিমপাশার জমিদার আলী আহমদ খান, তার ছেলে আলী আমজদের নামকরণে। লোহার খুঁটির উপর ঢেউটিন দিয়ে সুউচ্চ গম্বুজ আকৃতির স্থাপত্যশৈলীর ঘড়িঘরটি তখন থেকেই আলী আমজদের ঘড়িঘর নামে পরিচিতি লাভ করে।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন হানাদার বাহিনীর গোলার আঘাতে এই প্রাচীন ঘড়িঘর বিধ্স্ত হয়। স্বাধীনতার পর সিলেট পৌরসভা ঘড়িটি মেরামতের মাধ্যমে সচল করলেও কিছুদিনের মধ্যেই ঘড়ির কাঁটা বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৮৭ খ্রিষ্টাব্দে আলী আমজদের ঘড়ি মেরামত করে পুনরায় চালু করা হয়। এসময় ঘড়িটি চালু করার পর ঢাকার একটি কোম্পানীর কারিগররা ঘড়িটি চালু রাখার জন্য রিমোট কন্ট্রোলের ব্যবস্থা করে দেয়। পৌর চেয়ারম্যানের অফিসকক্ষ থেকে রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে ঘড়ির কাঁটা ঘুরতো। কিন্তু দুই-চার বছর যেতে না যেতেই ঘড়ির কাঁটা আবার বন্ধ হয়ে যায়। এরপর সিজান কোম্পানীর দ্বারা ইলেক্ট্রনিক পদ্ধতিতে ঘড়িটি পূনরায় চালু করা হয়। কিন্তু বছর না ঘুরতেই ঘড়িটির কাঁটা আবারও বন্ধ হয়ে যায়। ২০১১ খ্রিষ্টাব্দে সিলেট সিটি কর্পোরেশন এই ঘড়িটিকে পূণরায় মেরামত করলে তা আবার দৈনিক ২৪ ঘণ্টাব্যাপী সচল রয়েছে।

২/ ইরাবতী পান্থশালা

ইরাবতী পান্থশালা
ইরাবতী পান্থশালা 

ইরাবতী পান্থশালা বাংলাদেশের সিলেটে অবস্থিত একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা। এটি ছিল জৈন্তিয়া রাজ্যের রাজকুমারী ইরাবতী’র নামে এই পান্থশালার নাম।

অবস্থান

এই স্থানটি সিলেট শহর থেকে ৩০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্ব দিকে জৈন্তাপুরের সারিঘাট নামক স্থানে অবস্থিত। পর্যটন আকর্ষণ লালাখাল যেতে এই স্থাপনাটি দেখা যায়।

৩/ উৎমাছড়া

উৎমাছড়া
উৎমাছড়া

উৎমাছড়া বিছানাকান্দির প্রতিরূপ। চারপাশে সারি সারি পাহাড়, পাহাড়ের বুকে গাঢ় সবুজের প্রলেপ, গাছপালা আর ঝোপঝাড় দিয়ে ভরা। পাহাড়ের বুক চিড়ে বয়ে চলেছে শীতল স্বচ্ছ জলরাশি। 

অবস্থান

উৎমাছড়া সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার উত্তর রণিখাই ইউনিয়নে অবস্থিত। শীতল স্বচ্ছ জলরাশি। ভারতের মেঘালয় রাজ্য থেকে নেমে আসা সিলেটের সীমান্তবর্তী এক নদের নাম ধলাই। মেঘালয় পাহাড়ের ঝরনার পানি এই নদের জলপ্রবাহের উৎস। ধলাই নদের উৎসমুখই হচ্ছে সাদাপাথরের রাজ্য। পাহাড়ি ঢলে উৎসমুখে পাঁচ একর জায়গা জুড়ে পড়েছে পলির মতো করে পাথরের স্তূপ। সাদা সাদা পাথর। 

ভূপ্রকৃতি

রূপ-লাবণ্যে যৌবনা উৎমাছড়া পরতে পরতে সাজিয়ে রেখেছে সম্মোহনী সৌন্দর্য্য। সারি সারি পাহাড়। পাহাড়ের বুকে গাঢ় সবুজের আস্তরণ। প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য্যের লীলাভূমি হচ্ছে উৎমাছড়া।

বর্ণনা

পাথর ছড়ানো সর্বত্র। আকাশে নীলের ছায়া। যে স্থানকে সিলেটের নতুন ‘বিছনাকান্দি’ বলে অভিহিত করা হচ্ছে। সৌন্দর্য্যটা আসলে বর্ষাকালেই বেশি উপভোগ করা যায়। আর তা ছাড়া বর্ষার সময়ে উৎমাছড়ার সৌন্দর্য্য সবচেয়ে বেশি ধরা দেয়। অন্যান্য মৌসুমে উতমাছড়াকে মরুভূমির বুকে গজিয়ে ওঠা উদ্যানের মতো মনে হয়। যে দিকেই  যাবেন শুধু পাথর আর পাথর । সে সব পাথরের কোনোটাতে মোটা ঘাসের আস্তরণ, আবার কোনোটা বা ধবধবে সাদা।

৪/ ওসমানী জাদুঘর

ওসমানী জাদুঘর
ওসমানী জাদুঘর

ওসমানী জাদুঘর হচ্ছে বাংলাদেশের সিলেট জেলার কোতোয়ালী থানায় অবস্থিত একটি জাদুঘর। বাংলাদেশ সামরিক বাহিনীর সর্বাধিনায়ক (১২ এপ্রিল ১৯৭১– ৭ এপ্রিল ১৯৭২) বঙ্গবীর জেনারেল মুহাম্মদ আতাউল গনি ওসমানীর পৈতৃক নিবাস থেকে পরিবর্তন করে বর্তমান ওসমানী জাদুঘরে স্থানান্তর করা হয়। এটি সিলেটের ধোপা দিঘীর পাড় এলাকায় অবস্থিত।

অবস্থান এবং বিবরণ

ওসমানী জাদুঘরের প্রবেশপথ। ওসমানী জাদুঘর সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে এবং সিলেট রেলওয়ে স্টেশন থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।

স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বাংলাদেশের মহান মুক্তিযোদ্ধা এম এ জি ওসমানীর অসামান্য অবদানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর কর্তৃক এই জাদুঘরটি রক্ষণাবেক্ষণ এবং পরিচালিত হয়।

এই জাদুঘর নতুন প্রজন্মের জন্য নিঃসন্দেহে উদ্দীপনার উৎস হয়ে কাজ করবে। এই জাদুঘরের ভিত্তি প্রস্তর ১৯৮৫ সালের ১৬ই ফেব্রুয়ারি স্থাপন করা হয় এবং ৪ মার্চ ১৯৮৭ সালে তৎকালীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ কর্তৃক উদ্বোধন করা হয়।

নূর মঞ্জিল হচ্ছে পাশের এবং কিছু কক্ষ সমেত টিনের-চালার একটি বিশাল ভবন যার সামনে একটি বারান্দা রয়েছে। জাদুঘরে পৌঁছানোর জন্য প্রধান গেট থেকে মাত্র কয়েক মিটার হাঁটতে হয়। প্রবেশকক্ষে দর্শনার্থীদের অভ্যর্থনা জানাতে জেনারেলের বিপুল প্রতিকৃতি রয়েছে। অথিতিদের স্বাগত জানানোর জন্য অভ্যর্থনাকারীরা রয়েছেন। অভ্যর্থনা কক্ষে একজন দর্শনার্থীদের নাম এবং ঠিকানা লিখায় নিয়োজিত থাকেন। প্রবেশকক্ষে বসার জন্য একটি মানানসই জায়গাও রয়েছে। ঐতিহাসিক এই জাদুঘরটিতে তিনটি গ্যালারী আছে, যেখানে জেনারেল ওসমানীর ব্যক্তিগত জিনিসপত্র এবং উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ঐতিহাসিক আলোকচিত্র সংরক্ষিত করে রাখা হয়েছে। ভবনের পশ্চিম এবং পূর্ব উভয় পাশে দুটি ছোট্ট কক্ষ বিদ্যমান, যেখানে সহকারী রক্ষক এবং তত্ত্বাবধায়কের কামরা অবস্থিত।

গ্যালারী ১

সম্পূর্ণ কক্ষটি নানান ধরনের শোপিস দিয়ে শয়নকক্ষের মতো করে সাজানো হয়েছে। বেতের তৈরি ৪ টি চেয়ার এবং দুটি কেন্দ্রীয়-টেবিল, একটি সাধারণ ওয়ারড্রব এবং উভয় দিকে টেবিল সহ একটি কাঠের পালঙ্ক রয়েছে। জেনারেল ওসমানীর হাতঘড়ি, যা তিনি মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত পড়েছেন; সামরিক লাঠি, দুটি ব্রিফক্যাস, একটি টেলিফোন সেট, কিছু সংখ্যক বইপত্র এবং ব্যবহৃত মাটির বাসনপত্র একপাশে রয়েছে। অন্যপাশে একটি আলনা, যেটাতে দুটি স্যুট, দুটি ইউনিফিরম (খাকি এবং গাঁড় সবুজ), দুটি শার্ট (সাদা এবং ঈষৎ নীল), দুটি পাঞ্জাবী, বাদামী হাতাসহ একটি কোট, চার জোড়া জুতা যার মধ্যে একজোড়া হচ্ছে মিলিটারি বুট, একটি কালো ছাতা এবং পিঙ্গলবর্ণের সুসজ্জিত চলার লাঠি দিয়ে কক্ষটি সাজানো। একটি চক্রাকার টেবিল এবং কাঠের বইয়ের-তাক আছে যেটাতে “হোজ হো ইন দ্য ওয়ার্ল্ড” (সংস্করণ: ১৯৭৮–১৯৭৯ এবং ১৯৮০–১৯৮১) সহ দেশি বিদেশি বই ও ম্যাগাজিন এক কোণায় রয়েছে। ওসমানীর অতিপ্রিয় পিতার কোলে ছবি সহ দেয়ালে একজন মানবসম প্রতিকৃতি রয়েছে এমনকি প্রদর্শনের জন্য অনেক আলোকচিত্রও রয়েছে।

গ্যালারী ২

বসার কক্ষের মতো করে সাজানো কক্ষে রয়েছে, বেতনির্মিত কিছু আসবাবপত্র, যেমন– চারটি ১-আসন বিশিষ্ট, একটি ৩-আসন বিশিষ্ট এবং একটি ২-আসন বিশিষ্ট চেয়ার, একটি কেন্দ্রীয় টেবিল, দুটি পার্শ্ব টেবিল ইত্যাদি। বহু মূল্যবান এবং ঐতিহাসিক জিনিসপত্র সমেত তিনটি সোকেস রয়েছে। এর প্রথমটিতে জেনারেলের ব্যাজসমূহ, পদক, পদমর্যাদা ক্রম এবং জেনারেল ওসমানীর পাসপোর্ট রয়েছে। দ্বিতীয়টিতে স্মারকচিহ্ন, স্মরণিকা এবং ক্রেস্টসমূহ রয়েছে। এবং তৃতীয় সোকেসে বহুসংখ্যক প্রমাণপত্রাদি প্রদর্শন করা হয়, যেগুলোর মধ্যে স্বাধীনতা পুরস্কার-১৯৮৫ এবং এর নিমন্ত্রণ পত্র, একই সাথে পুরস্কার বিজেতার সংক্ষিপ্ত জীবনীও রয়েছে। একটি কার্ডে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর অটোগ্রাফ সংবলিত খাম রয়েছে যা তিনি জেনারেল ওসমানীর কাছে প্রেরণ করেছিলেন। আটটি বিশাল চিত্রকর্ম উপরের দেয়ালে টাঙানো আছে। কক্ষটির দেয়ালে অনেক ঐতিহাসিক ছবিও রয়েছে। সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু হল; ১৯৭২ সালে সিলেট বিমানবন্দরে অবতরণের পর, জেনারেল ওসমানী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশে প্রত্যাবর্তনের পর আগমন উপলক্ষে ১০ মার্চ ১৯৭২ সালে সেনাবাহিনী কর্তৃক আয়োজিত সম্মান প্রদর্শন অনুষ্ঠানে দর্শকদের সামনে বক্তৃতা দিচ্ছেন, জেনারেল ওসমানী বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডারদের সাথে, মুজিবনগর সরকারের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের সাথে, বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর সাথে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সাথে,বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদের সাথে, ১৯৮১ সালে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট কেন্দ্রে শহীদ পরিবারের সাথে ইত্যাদি।

গ্যালারী ৩

কালো বর্ণের একটি পড়ার টেবিল এবং চেয়ার, পালঙ্ক, নামাযের চৌকি, জায়নামাজ, নামাযের টুপি ইত্যাদি প্রদর্শনের জন্য নিখুঁতভাবে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। অন্যান্য যেসব জিনিসপত্র আছে তার মধ্যে- একটি কৃষ্ণকায় আলমারি, একটি ফ্রিজ, ছয়টি চেয়ার সহ একটি খাবার-টেবিল, প্রাচীন চীনামাটির বাসনকোসন এবং অন্যান্য জিনিস উল্লেখযোগ্য। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে জেনারেলের ব্যবহৃত বাংলাদেশের অপারেশনাল মানচিত্রও (স্কেল ১: ২,৫০,০০) প্রদর্শনের জন্য এই কামরায় রাখা হয়েছে, যেখানে সভ্য সমাজ কর্তৃক উপস্থাপিত বহু প্রমাণপত্রাদিও রয়েছে।

ওসমানী জাদুঘর সম্পর্কিত তথ্য

ওসমানী জাদুঘর শুধুমাত্র বৃহস্পতিবার ছাড়া বাকি দিনগুলোতে খোলা থাকে। রবি থেকে বুধবার পর্যন্ত এটি সকাল ১০ঃ৩০ থেকে বিকাল ৫ঃ৩০ পর্যন্ত খোলা থাকে। শুক্র এবং শনিবার এটি বিকাল ৩ঃ৩০ থেকে ৫ঃ৩০ পর্যন্ত খোলা থাকে। জাদুঘর কর্তৃপক্ষ এম এ জি ওসমানীর জন্মদিন (১লা সেপ্টেম্বর) এবং মৃত্যুবার্ষিকী (১৬ ফেব্রুয়ারি) উদ্‌যাপন করে থাকে, এর পাশাপাশি জাদুঘর প্রাঙ্গণে বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস (২৬শে মার্চ) এবং বিজয় দিবস (১৬ই ডিসেম্বর) পালন করা হয়।

সিলেটের বিখ্যাত কুলুমছড়া কৈলাশটিলা

কুলুমছড়া
কুলুমছড়া

কুলুমছড়া কৈলাশটিলা বর্ণনা

কুলুমছড়া বাংলাদেশের সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলায় । এটি মূলত ভারত থেকে আসা একটি ঝর্ণার শেষের অংশ। সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার সোনার হাট সীমান্তবর্তী কুলুমছড়া একটি গ্রাম। এখানে ভারত সীমান্তের ঝরনাটিই কুলুমছড়া ঝরনা নামে পরিচিত। ভারতের মেঘালয় থেকে বয়ে আসা ঝর্ণার পানি থেকে এই কুলুমছড়ার উৎপত্তি।

কৈলাশটিলা
কৈলাশটিলা

কৈলাশটিলা  সিলেটের ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্থান। শাহজালাল ইয়েমেনীর ৩৬০ আওলিয়ার সফর সঙ্গী শাহ নূর এখানে আস্তানা গাড়ে ছিলেন। ইবাদতের জন্য কৈলাশটিলার উপরে একটি গুহা নির্মাণ করেন যা আজও বিদ্যমান। প্রায় ৪০০ ফুট উঁচু টিলার উপরে ঈদগা অবস্থিত যেখানে স্থানীয় লোকজন ঈদের নামাজ পড়েন। কৈলাশটিলা বাংলাদেশের একমাত্র খনিজ তেলক্ষেত্র হওয়ায় জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্ব ভুমিকা রাখছে। কৈলাশটিলা একইসাথে খনিজতেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাসক্ষেত্র।

কৈলাশটিলা ভূতাত্ত্বিক গঠন

সিলেট শহর থেকে ২৫ কিমি দক্ষিণপূর্বে গোলাপগঞ্জ উপজেলার লক্ষণাবন্দ ইউনিয়নে অবস্থিত। এই ভূতাত্ত্বিক গঠনটি বঙ্গীয় পুরঃখাতের বলিত বলয়ের পার্শ্বে অর্থাৎ সিলেট খাদের পূর্ব পার্শ্বে অবস্থান করে। এটি উত্তরে সিলেট ভূতাত্ত্বিক গঠন, পূর্বে বিয়ানীবাজার এবং দক্ষিণে ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা দ্বারা বেষ্টিত। এই ভূতাত্ত্বিক গঠনটিকে গিরিশিরার মাঝখানের সামান্য চাপা অংশ ফেঞ্চুগঞ্জ ঊর্ধ্বভাঁজটি থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে। এই ঊর্ধ্বভাঁজটি ডুপিটিলা স্তরসমষ্টি সমেত ভূ-পৃষ্ঠে প্রকটিত। এটি একটি উত্তর-উত্তরপূর্ব ও দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিম দিকে বিন্যস্ত অসম ঊর্ধ্বভাঁজ। একটি ঘাত চ্যুতি উত্তর দিকে সিলেট ভূতাত্ত্বিক গঠন থেকে কৈলাস টিলা ভূতাত্ত্বিক গঠনকে পৃথক করেছে। ভূতাত্ত্বিক গঠনটি ৬ কিমি লন্বা এবং ৩ কিমি চওড়া। পূর্ব পার্শ্ব অপেক্ষা পশ্চিম পার্শ্ব খাড়া।

কৈলাশটিলা ইতিহাস

পাকিস্তান শেল অয়েল কোম্পানি ১৯৬২ সালে এটি আবিষ্কার করে। এটি বাংলাদেশের ২য় বৃহত্তম গ্যাসক্ষেত্র। এখানে প্রমাণিত ও সম্ভাব্য গ্যাস মজুত ৩.৬৫ ট্রিলিয়ন ঘনফুট এবং উত্তোলনযোগ্য মজুত ২.৫২ ট্রিলিয়ন ঘনফুট। গ্যাসের সঙ্গে এখানে প্রচুর পরিমাণে কনডেনসেটও পাওয়া যায়। ১৯৮৩ সাল থেকে অদ্যাবধি এই ক্ষেত্র থেকে গ্যাস উত্তোলন করা হচ্ছে। অবাণিজ্যিকভাবে এই ক্ষেত্রের গভীরে খনিজ তেলও পাওয়া যায়।

কৈলাশটিলা অবস্থান

৪০০ ফুট উঁচু কৈলাশটিলার উপরে উঠার সিঁড়ি।

দেশের ঐতিহ্যবাহী একটি টিলা সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার কৈলাশ টিলা | যার খ্যাতি ছড়িয়ে আছে দেশ বিদেশে। এ কৈলাশ টিলা থেকে উত্তোলিত গ্যাস দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। কিন্তু এ কৈলাশ টিলায় যাতায়াতের একমাত্র রাস্তা মুকিতলা গ্রামের ‘কৈলাশ টিলা সড়ক’।

৬/ খাদিমনগর জাতীয় উদ্যান

 খাদিমনগর জাতীয় উদ্যান
খাদিমনগর জাতীয় উদ্যান

খাদিমনগর জাতীয় উদ্যান বাংলাদেশের সিলেট জেলায় অবস্থিত একটি জাতীয় উদ্যান। ২০০৬ সালের ১৩ এপ্রিল এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ৬৭৮.৮০ হেক্টর (১৬৭৭ একর) জমি নিয়ে এই জাতীয় উদ্যানটি গঠিত।

খাদিমনগর জাতীয় উদ্যান প্রাণ বৈচিত্র্য

খাদিমনগর জাতীয় উদ্যানে প্রায় ২১৭ প্রজাতির গাছ এবং ৮৩ প্রজাতির প্রাণী রয়েছে।

উদ্ভিদ

খাদিমনগর জাতীয় উদ্যানে আছে প্রচুর সেগুন গাছ। এছাড়াও দেখা যায় ঢাকি জাম, গর্জন, চম্পা ফুল, চিকরাশি, চাপালিশ, মেহগনি, শিমুল, চন্দন, জারুল, আম, জাম, কাউ, লটকন, বন বড়ই, জাওয়া, কাইমূলা, গুল্লি, পিতরাজ, বট, আমলকি, হরিতকি, বহেড়া, মান্দা, পারুয়া, মিনজিরি, অর্জুন, একাশিয়া প্রভৃতি। বাঁশের প্রজাতিগুলো হচ্ছে জাইবাশ, বেতুয়া বাঁশ, পেঁচা বাঁশ, পারুয়া বাঁশ এবং বেতের প্রজাতিগুলো হচ্ছে তাল্লাবেত, জালিবেত।

প্রাণী

এই উদ্যানে পাখির মধ্যে রয়েছে দোয়েল, ময়না, শ্যামা, কাক, কোকিল, টিয়া, কাঠ ঠোকরা, মাছরাঙ্গা, চিল, ঘুঘু, বক, টুনটুনি, চড়ুই, বুলবুলি, বনমোরগ, মথুরা, শালিক। স্তন্যপায়ীর মধ্যে রয়েছে বানর, হনুমান, শিয়াল, বনবিড়াল, বেজি, কাঠবিড়াল, ইঁদুর, খরগোশ, মেছো বাঘ। সাপের মধ্যে আছে অজগর, দারাইশ, উলুপুড়া, চন্দ বুড়াসহ নানা বিষধর সাপ।

শকুনের নিরাপদ এলাকা

শকুনের নিরাপদ এলাকা-১ তফসিল অনুসারে খাদিমনগর জাতীয় উদ্যান শকুনের জন্য নিরাপদ বলে ঘোষিত।

খাদিমনগর জাতীয় উদ্যান পর্যটন

বনের ভেতর বসার জন্য সিমেন্ট নির্মিত ব্যাঙের ছাতা। ঘন বনে ভ্রমণের প্রশান্তি পেতে বিভিন্ন সময়েই ভীড় করে থাকে ভ্রমণ পিপাসুরা। কেউ কেউ মূল শহর থেকে ব্যক্তিগতভাবে সাইকেলে চড়েও বনভ্রমণে চলে আসেন। বর্ষায় কোথাও কোথাও পানির নালাও পার হতে হয়, তবে শীতেও বেশ পাতাবহুল থাকে বন। তবে বনের পথ ধরে কাঁটা জাতীয় উদ্ভিদের মোটামুটি সুলভ প্রাপ্তি দেখা যায়।

৭/ গাজী বুরহান উদ্দীনের মাজার

গাজী বুরহান উদ্দীনের মাজার
গাজী বুরহান উদ্দীনের মাজার

গাজী বুরহান উদ্দীনের মাজার সিলেট বিভাগের প্রথম মুসলমান বুরহান উদ্দীনের সমাধী। সিলেট শহরের দক্ষিণ পূর্ব সীমান্তে সুরমা নদীর তীরে এ মাজার অবস্থিত। সিলেট পৌরসভার আওতাধীন কুশিঘাট এলাকায় গাজী বুরহান উদ্দীনের ঐতিহাসিক বাড়িতেই তার সমাধী বা মাজারের অবস্থান। শ্রীহট্ট (আধুনা সিলেট) অঞ্চলে বসবাসকারী খ্রিস্টিয় দ্বাদশ শতাব্দির প্রথম মুসলমান পরিবারের স্মৃতি বিজড়িত এ স্থানটি সিলেটের অন্যতম পূণ্য তীর্থ হিসেবে পরিচিত। প্রাচীন শ্রীহট্টের গৌড় রাজ্যের রাজা গৌড়-গোবিন্দের অত্যাচারে নিহত গাজী বুরহান উদ্দীনের ছোট শিশু গুলজারে আলমের মাজার বা সমাধি সহ এখানে আরো কয়েকটি মাজার পরিলক্ষিত হয়। উক্ত মাজার গুলোকে কেন্দ্র করে এখানে প্রতি দিন শত শত দেশ-বিদেশী দর্শনার্থীর আগমন ঘটে।

৮/ জাফলং

জাফলং
জাফলং

জাফলং: বাংলাদেশের সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার অন্তর্গত, একটি পর্যটনস্থল। জাফলং, সিলেট শহর থেকে ৬২ কিলোমিটার উত্তর-পূর্ব দিকে। ভারতের মেঘালয় সীমান্ত ঘেঁষে খাসিয়া-জৈন্তা পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত, এবং এখানে পাহাড় আর নদীর অপূর্ব সম্মিলন বলে এই এলাকা বাংলাদেশের অন্যতম একটি পর্যটনস্থল হিসেবে পরিচিত। পর্যটনের সাথে জাফলং পাথরের জন্যও বিখ্যাত। শ্রমজীবি মানুষেরা পাথরের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে সেই বহু বছর যাবত৷

বিবরণ

বাংলাদেশের সিলেটের সীমান্তবর্তী এলাকায় জাফলং অবস্থিত। এর অপর পাশে ভারতের ডাওকি অঞ্চল। ডাওকি অঞ্চলের পাহাড় থেকে ডাওকি নদী এই জাফলং দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।মূলত পিয়াইন নদীর অববাহিকায় জাফলং অবস্থিত। সিলেট জেলার জাফলং-তামাবিল-লালখান অঞ্চলে রয়েছে পাহাড়ী উত্তলভঙ্গ। এই উত্তলভঙ্গে পাললিক শিলা প্রকটিত হয়ে আছে, তাই ওখানে বেশ কয়েকবার ভূতাত্ত্বিক জরিপ পরিচালনা করা হয়েছে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে।

বাংলাদেশে চার ধরনের কঠিন শিলা পাওয়া যায়, তন্মধ্যে ভোলাগঞ্জ-জাফলং-এ পাওয়া যায় কঠিন শিলার নুড়ি। এছাড়া বর্ষাকালে ভারতীয় সীমান্তবর্তী শিলং মালভূমির পাহাড়গুলোতে প্রবল বৃষ্টিপাত হলে ঐসব পাহাড় থেকে ডাওকি নদীর প্রবল স্রোত বয়ে আনে বড় বড় গণ্ডশিলাও (boulder)। একারণে সিলেট এলাকার জাফলং-এর নদীতে প্রচুর পরিমাণে পাথর পাওয়া যায়। আর এই এলাকার মানুষের এক বৃহৎ অংশের জীবিকা গড়ে উঠেছে এই পাথর উত্তোলন ও তা প্রক্রিয়াজাতকরণকে ঘিরে।

জাফলং-এ পাথর ছাড়াও পাওয়া গেছে সাদামাটি বা চীনামাটিও, যদিও সেখানে মাটি বা বালি পরিশোধন করার মতো কোনো অবকাঠামো নেই।

এই এলাকায় যেমন সাধারণ বাঙালিরা বসবাস করেন, তেমনি বাস করেন উপজাতিরাও। জাফলং-এর বল্লা, সংগ্রামপুঞ্জি, নকশিয়াপুঞ্জি, লামাপুঞ্জি ও প্রতাপপুর জুড়ে রয়েছে ৫টি খাসিয়াপুঞ্জী। আদমশুমারী অনুযায়ী জাফলং-এ ১,৯৫৩ জন খাসিয়া উপজাতি বাস করেন।

জাফলং ইতিহাস

ঐতিহাসিকদের মতে বহু হাজার বছর ধরে জাফলং ছিল খাসিয়া জৈন্তা-রাজার অধীনে থাকা এক নির্জন বনভূমি। ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দে জমিদারী প্রথার বিলুপ্তির মধ্য দিয়ে খাসিয়া-জৈন্তা রাজ্যের অবসান ঘটলেও বেশ কয়েক বছর জাফলংয়ের বিস্তীর্ণ এলাকা পতিতও পড়েছিল। পরবর্তিতে ব্যবসায়ীরা পাথরের সন্ধানে বিভিন্ন এলাকা থেকে নৌপথে জাফলং আসতে শুরু করেন, আর পাথর ব্যবসার প্রসার ঘটতে থাকলে একসময় গড়ে ওঠে নতুন জনবসতি।

মুক্তিযুদ্ধে জাফলং

মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের গণ কবর,তামাবিল, জাফলং

১৯৭১ সালের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় সিলেটে মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্প ছিল জাফলংয়ের সীমান্তের ওপারে ভারতের ডাউকিতে। ১৩ জুলাই ইপিআর ও ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সদস্যদের একটি সশস্ত্র দল জাফলংয়ে ঢোকে। পিয়াইন নদীর ভাটিতে বাংলাদেশ অংশে রাজাকার আজিরউদ্দিনের বাড়িতে ছিল একদল পাকিস্তানি সেনা। উভয় পক্ষের মধ্যে দুই দফা যুদ্ধ শেষে পাকিস্তানি বাহিনীর ৫ সেনা নিহত হলে পাকিস্তানিরা পলিয়ে যায়। একই সময় দুজন মুক্তিযোদ্ধাও আহত হন। এছাড়া জাফলংয়ের পাশে সারি নদীতেও বড় আকারের যুদ্ধ হয়। আর এভাবেই শত্রুমুক্ত হয়ে স্বাধীনতা পায় জাফলং। আর আজ জাফলং বাংলাদেশের অভ্যন্তরে একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থানের রূপ পরিগ্রহ করেছে। তামাবিল স্থল বন্দরের শুল্ক অফিসের পাশেই রয়েছে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের গণ কবর।

জাফলং দর্শনীয় স্থান

বিজিবি ক্যাম্প থেকে পাহাড়ের দৃশ্যজাফলং-এ নদীর মনোরম দৃশ্যআখ্‌তা ঝরণা, জাফলং। জাফলং-এর বাংলাদেশ সীমান্তে দাঁড়ালে ভারত সীমান্ত-অভ্যন্তরে থাকা উঁচু উঁচু পাহাড়শ্রেণী দেখা যায়। এসব পাহাড় থেকে নেমে আসা ঝরণা পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ। এছাড়া ভারতের ডাউকি বন্দরের ঝুলন্ত সেতুও আকর্ষণ করে অনেককে।এছাড়া সর্পিলাকারে বয়ে চলা ডাওকি নদীও টানে পর্যটকদের। মৌসুমী বায়ুপ্রবাহের ফলে ভারত সীমান্তে প্রবল বৃষ্টিপাত হওয়ায় নদীর স্রোত বেড়ে গেলে নদী ফিরে পায় তার প্রাণ, আর হয়ে ওঠে আরো মনোরম। ডাওকি নদীর পানির স্বচ্ছতাও জাফলং-এর অন্যতম আকর্ষণ। পহেলা বৈশাখে বাংলা নববর্ষকে ঘিরে জাফলং-এ আয়োজন করা হয় বৈশাখী মেলা। এই মেলাকে ঘিরে উৎসবে মুখরিত হয়ে উঠে পুরো এলাকা। বর্ষাকাল আর শীতকালে জাফলং-এর আলাদা আলাদা সৌন্দর্য ফুটে ওঠে। বর্ষাকালে বৃষ্টিস্নাত গাছগাছালি আর খরস্রোতা নদী হয় দেখার মতো। তাছাড়া পাহাড়ের মাথায় মেঘের দৃশ্যও যথেষ্ট মনোরম।

জীব ও উদ্ভিদ বৈচিত্র

জাফলং অঞ্চলের উদ্ভিদ প্রজাতির মধ্যে খাটো জাতের পাম গাছ (Licuala species) দেখা যায়। জাফলং-এ নারিকেল আর সুপারির গাছকে কেন্দ্র করে বাস করে প্রচুর বাদুড়। এছাড়া জাফলং বাজার কিংবা জাফলং জমিদার বাড়িতে আবাস করেছে বাদুড়। যদিও খাদ্যসংকট, আর মানুষের উৎপাতে, কিংবা অবাধ বৃক্ষনিধনে অনেক বাদুড় জাফলং ছেড়ে চলে যাচ্ছে জৈয়ন্তিয়া আর গোয়াইনঘাটের বেঁচে থাকা বনাঞ্চলে, কিংবা প্রতিবেশী দেশ ভারতে।

পবিবেশ বিপর্যয়

জাফলং-এর পাথর শিল্প একদিকে যেমন ঐ এলাকাকে সকল অঞ্চলের কাছে পরিচিত করেছে, তেমনি এই পাথর শিল্পের যথেচ্ছ বিস্তারে এলাকার বাতাস হয়ে পড়েছে কলুষিত। যন্ত্রের সহায়তায় উন্মুক্ত উপায়ে পাথর ভাঙার কারণে ভাঙা পাথরের গুঁড়া আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে আর সাধারণ্যের শ্বাস-প্রশ্বাসকে ব্যাহত করছে। এছাড়া সরকারি বিধিনিষেদের তোয়াক্কা না করে নদী থেকে যথেচ্ছ পাথর উত্তোলন নদীর জীববৈচিত্র্য আর উদ্ভিদবৈচিত্র্যকে করে তুলেছে হুমকির সম্মুখিন। এছাড়া অনুমোদনহীনভাবে ৩০-৩৫ ফুট গর্ত করে পাথর উত্তোলন নদী এবং নদী অববাহিকার ভূমিকে করছে হুমকির সম্মুখিন। এলাকার প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপে বিপুল পরিমাণ গাছ কেটে ফেলার কারণে প্রায়ই সেখানে নানা রোগব্যাধির প্রকোপ লক্ষ্য করা যায়। তাছাড়া উজান থেকে নেমে আসা পাথর আর বালুতে সয়লাব হয়ে যাওয়ায় পিয়াইন নদীর নাব্যতা কমে গেছে। ফলে হঠাৎই উজান থেকে নেমে আসা ঢলে ক্ষতিগ্রস্ত হয় নিকটবর্তি অঞ্চলের মানুষের জীবন-জীবিকা; যেমন: ১৯৮৮ খ্রিষ্টাব্দে ডাউকি সীমান্তে এরকমই উজান থেকে ধেয়ে আসা ঢলে বিডিআর ক্যাম্পসহ বেশ কিছু এলাকা লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দের ২০ মে তারিখেও অনুরূপ ঢলে ক্ষতিগ্রস্ত হয় চা-বাগানসহ বস্তি। এছাড়া নিষিদ্ধ “বোমা মেশিন” (স্থানীয় নাম) দিয়ে নদী থেকে পাথর উত্তোলনের কারণে স্থানীয় পিয়াইন নদী বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে বিপুল সম্পদের অপচয়ও পরিবেশ বিপর্যয়ের অন্যতম একটি উদাহরণ (প্রেক্ষিত জুলাই ২০১২)।

যাতায়াত ব্যবস্থা

১৯৮০’র দশকে সিলেটের সাথে জাফলং-এর ৫৫ কিলোমিটার সড়ক তৈরি হওয়ার মাধ্যমে দেশের অন্যান্য সকল অঞ্চল থেকে এই এলাকার সাথে সড়ক-যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হয়। সড়কপথে সিলেট সদর থেকে এই স্থানের দূরত্ব ৫৬ কিলোমিটার।  জাফলং জিরো পয়েন্টে রয়েছে তামাবিল স্থল বন্দর, এই বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতের সাথে পণ্য আমদানি রপ্তানী করা হয়। বিশেষ করে ভারত থেকে কয়লা আমদানি করা হয়।

সিলেটের বিখ্যাত ৩৪টি দর্শনীয় স্থান

৯/ জিতু মিয়ার বাড়ী

 জিতু মিয়ার বাড়ি
জিতু মিয়ার বাড়ি

জিতু মিয়ার বাড়ি হল সিলেটের জায়গীরদার খান বাহাদুর আবু নছর মোহাম্মদ এহিয়া ওরফে জিতু মিয়ার আবাসস্থল। এটি সিলেটের অন্যতম প্রধান দর্শনীয় স্থাপনা।

অবস্থান

এই বাড়ীটি সিলেট নগরীর শেখঘাটে কাজীর বাজারে অবস্থিত। পূর্বে এটি বর্তমান কাজীর বাজার পশুর হাটের স্থলে অবস্থিত ছিলো যা ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হলে ১৯১১ সালে বর্তমান স্থানে স্থানাস্তর ও সংস্কার করা হয়।

বর্ণনা

মূল বাড়ীটি জিতু মিয়ার বাবা মাওলানা আবু মোহাম্মদ আবদুর কাদির ১৮৮৬ সালে নির্মাণ করেন। ১৮৯৭ সালের প্রলয়ঙ্করকারী ভূমিকম্পে সিলেট ও আসামের অধিকাংশ স্থাপনার মতো এটিও ক্ষতিগ্রস্ত হলে ১৯১১ সালে জিতু মিয়া বাড়িটির সামনের অংশে একটি নতুন দালানটি নির্মাণ করেন; যা বর্তমানে মূল ভবন হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এটি একটি দ্বিতল ভবন, যা চুন ও সুরকি দিয়ে মুঘল আমলের মুসলিম স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত। বাড়ীটির মোট ভূমির পরিমাণ ১ দশমিক ৩৬৫ একর।

বর্তমান অবস্থা

বাড়ীটির নিচ তলার মূল কক্ষটি ড্রয়িং রুম হিসেবে ব্যবহৃত হত যেখানে রয়েছে জিতু মিয়ার সংগৃহিত ক্যালিওগ্রাফি করা পবিত্র কুরআন ও হাদিসের বাণী। এই কক্ষের ডান দিকের অপর একটি কক্ষে রয়েছে একটি লম্বা কালো টেবিল ও ২০টি চেয়ার, যা তৎকালীন সময়ে সভা কক্ষ হিসেবে ব্যবহৃৎ হতো। বর্তমানে এই বাড়ীটিকে একটি জাদুঘর হিসেবে রূপান্তর করার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে, যেখানে সিলেটের বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী জিনিস প্রদর্শন করা হবে।

১০/ টিলাগড় ইকোপার্ক

টিলাগড় ইকোপার্ক
টিলাগড় ইকোপার্ক

টিলাগড় ইকোপার্ক বাংলাদেশের সিলেট জেলার টিলাগড় এলাকায় অবস্থিত দেশের তৃতীয় ইকোপার্ক। টিলাগড় ইকোপার্কটি কয়েকটি ছোট ছোট টিলা নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে। এই ইকোপার্কের ছোটবড় টিলার মধ্য দিয়ে বয়ে গিয়েছে একটি ছড়া। ইকোপার্কটিতে রয়েছে ঘন গাছ-গাছালি। এখানে বেশকিছু ফল গাছের পাশাপাশি রয়েছে জীববৈচিত্রের সমাহার। এখানে রয়েছে পিকনিক কর্নার এবং শিশুদের জন্য চিলড্রেন’স কর্নার। বিষুবরেখা অঞ্চলে অবস্থিত এই চিরসবুজ জায়গাটিতে লাক্কাতুরা চা বাগান ছাড়াও রয়েছে শেভরন গ্যাসক্ষেত্র।

অবস্থান

গড়ান গাছ সিলেট নগরীর উত্তর-পূর্ব কোণে শহর থেকে মাত্র ৮ কিলোমিটার দূরে ইকোপার্কটির অবস্থান। শহরের পূর্ব দিকে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং সিলেট প্রকৌশল কলেজের কাছে অবস্থিত একটি রিজার্ভ ফরেস্টে টিলাগড় ইকোপার্ক অবস্থিত।

ইতিহাস

সিলেট জেলা সদরের পূর্ব প্রান্তে টিলাগড় রিজার্ভ ফরেস্টের ১১২ একর জায়গা নিয়ে ২০০৬ সালে টিলাগড় ইকোপার্ক স্থাপন করা হয়।  এটি সিলেট বনবিভাগ, বন অধিদপ্তর, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের ইকোপার্ক প্রকল্প।

উদ্ভিদ বৈচিত্র্য

ইকোপার্কটিতে রয়েছে ঘন গাছ-গাছালি এবং নানা প্রকার প্রাকৃতিক উদ্ভিদ ও বৃক্ষরাজি। এগুলোর মধ্যে চাপালিশ, শাল, গর্জন, চম্পাফুল, জারুল, মিনজিরি, চাউ, ঝাউ, কড়ই, জলপাই, আম, কাঁঠাল, নারিকেল, সুপারি, কামরাঙ্গা, চালতা, আগর, কৃষ্ণচূড়া, শিমুল, বাজনা, নাগেশ্বর, বকুল, হিজল, ডুমুর এবং বিবিধ বেত উল্লেখযোগ্য। নানা প্রজাতির গুল্ম, বীরুত্ এবং লতা এই পার্কটিকে অপূর্ব রূপ দিয়েছে।

জীববৈচিত্র্য

টিলাগড় ইকোপার্কে বিভিন্ন ধরনের প্রাণীকে বন্য পরিবেশে ঘুরে দেখতে পাওয়া যায়। এদের মধ্যে রয়েছে শিয়াল, বানর, খেঁকশিয়াল, খরগোশ, সিভিট, বনমোরগ, মথুরা, হনুমান এবং ময়না, টিয়া, ঘুঘু, হরিডাস, সাত ভাই চম্পা পাখি।

শকুনের নিরাপদ এলাকা

শকুনের নিরাপদ এলাকা-১ তফসিল অনুসারে টিলাগড় ইকোপার্ক শকুনের জন্য নিরাপদ বলে ঘোষিত।

১১/ ডিবির হাওর

ডিবির হাওর
ডিবির হাওর বা শাপলার লেক

ডিবির হাওর বা শাপলার লেক জৈন্তাপুর উপজেলায় অবস্থিত একটি হাওর। এটি “লাল শাপলার বিল” নামে ও পরিচিত। এখানে রয়েছে ডিবি বিল, ইয়াম বিল, হরফকাট বিল ও কেন্দ্রীবিল। এই চারটি বিলকে একত্রে লাল শাপলার বিল বলা হয়ে থাকে, চারটি সংযুক্ত বিলের আয়তন ৯০০ একর বা ৩.৬৪ বর্গকিমিঃ। প্রাকৃতিক ভাবে এইখানে লাল শাপলার জন্ম।

বিবরণ

ডিবির হাওর, ইয়াম, হরফকাটা কেন্দ্রী বিলসহ রয়েছে চারটি বিল। বিলগুলোকে কেন্দ্র করেই নাম করা হয়েছে ডিবির হাওর। চারটি বিলের অবস্থান বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী মেঘালয় পাহাড়ের পাদদেশে। বিলগুলো রূপ নিয়েছে শাপলার রাজ্যে।  বিলে ফুটে থাকে অজস্র লাল শাপলা। ডিবির হাওরের আকর্ষণ হলো হাওরের পারেই পাহাড়ের সারি।

ইতিহাস

এই বিলে আগে কোনো ধরনের শাপলা ছিল না। ৩০ বছর আগে সীমান্তের ওপারে খাসিয়া সম্প্রদায় লাল শাপলা দিয়ে পূজা-অর্চনা করত। খাসিয়া পরিবার ডিবি বিলে লাল শাপলার চারা রোপণ করেন পূজা-অর্চনায় ফুলের চাহিদা মেটাতে। সেই থেকে একে একে ডিবি বিল, কেন্দ্রি বিল, হরফকাটা বিল, ইয়ামবিলসহ পার্শ্ববর্তী জনসাধারণের পুকুর-নালা পরিপূর্ণ হয়ে পড়ে লাল শাপলায়। চারটি বিলের অন্তত ৭০০ একর জায়গা লাল শাপলা দখল করে আছে। জৈন্তা রাজ্যের রাজা রাম সিংহকে এ হাওরে ডুবিয়ে মারা হয়েছিলো। সেই স্মৃতিতেই নির্মিত দুইশত বছরের পুরাতন একটি মন্দির ও আছে সেখানে। 

অতিথি পাখি

প্রতিবছর অসংখ্য পরিযায়ী পাখি আসে এই ডিবির হাওরে। যার মধ্যে রয়েছে বালিহাঁস পাতিসরালি, পানকৌড়ি, সাদাবক ও জল ময়ুরী।

পবিবেশ বিপর্যয়

ডিবির হাওরে চেড়াপুঞ্জি থেকে নেমে সাদা পাথর। একে ঘিরে পাথর ভাঙ্গার অঞ্চল করতে প্রশাসন হাওর এলাকার ৯০০ একর জায়গার মধ্যে ৬২৫ একর জায়গার শ্রেণি পরিবর্তন করেছে। পবিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কায় ডিবির হাওরে পাথর ভাঙার কল স্থাপনের পরিকল্পনা বাতিলের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) ও আন্তর্জাতিক পরিবেশবাদী সংগঠন ওয়াটারকিপারস বাংলাদেশ।

১২/ ড্রিমল্যান্ড পার্ক

ড্রিমল্যান্ড পার্ক
ড্রিমল্যান্ড পার্ক

ড্রিমল্যান্ড ওয়াটার পার্ক সিলেট শহর থেকে মাত্র কিলোমিটার ১৫ দূরে এই থিম পার্কটি সিলেট জকিগঞ্জ রোডে গোলাপগঞ্জ উপজেলার হিলালপুরে অবস্থিত। বিনোদনের জন্য এই পার্কে আছে নানান রাইড এবং আয়োজন।

অবস্থান

ড্রিমল্যান্ড সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কের ৮ কিলোমিটার সামনে গোলাপগঞ্জ উপজেলার হেলালপুরে অবস্থিত। প্রায় ১০০ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত ড্রিমল্যান্ড বিনোদন পার্কটি বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় বিনোদন পার্ক। পার্কটি সোমবার থেকে শনিবার সপ্তাহে ৬ দিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকে।

বৈশিষ্ট্য

মোঘল ঐতিহ্যে নির্মিত হয়েছে এর প্রবেশদ্বার। বিনোদনের জন্য এই পার্কে আছে ২৫টি রাইড। এতে স্থাপন করা হয়েছে বৃহত্তম ওয়েবপুলসহ আন্তর্জাতিক মানের ৯টি ওয়াটার রাইড। রয়েছে গানের তালে তালে জলরাশির নৃত্য।

ইতিহাস

পার্ক ড্রীমল্যান্ড ৪০ বিঘা জমি নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯ জানুয়ারী ২০০২ সালে। পরবর্তী সময়ে আরো ৬০ বিঘা জমি যুক্ত হয়। সিলেট-গোলাপগঞ্জ সড়কের পাশে গড়ে ওঠা ড্রীমল্যান্ড পার্কে পর্যটকদের জন্য রয়েছে বাম্পার কার, স্কাই ট্রেন, রোলার কোস্টার, মিউজিক্যাল ফাউন্টেইন, জায়ান্ট উটল, প্যারাট্রুপার, মিনি ট্রেন, সুইমিং বোর্ড, ডেঞ্জার হোন্ডার রাইড, নাইনডি মুভিসহ বিভিন্ন ধরনের ভিডিও গেমস।

সময়সূচি ও প্রবেশ মূল্য

সপ্তাহের ৭ দিনই এই পার্ক খোলা থাকে। প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে সন্ধ্যা ৮টা পর্যন্ত উন্মুক্ত থাকে। প্রবেশমূল্য ১০০ টাকা।

১৩/ সিলেটের বিখ্যাত তিন নদীর মোহনা

তিন নদীর মোহনা
তিন নদীর মোহনা

তিন নদীর মোহনা বাংলাদেশের সিলেট জেলার জকিগঞ্জ উপজেলার একটি দর্শনীয় স্থান। এটি ভারতের মণিপুর থেকে বয়ে আসা বরাক নদী এবং বাংলাদেশের উপরদিয়ে বয়ে যাওয়া সুরমা নদী ও কুশিয়ারা নদী এর সংযোগস্থলই তিন নদীর মোহনা । স্থানীয়দের মধ্যে এটা তি-গাঙ্গা নামে পরিচিত।

অবস্থান

তিন নদীর মোহন এটা জকিগঞ্জ উপজেলা এর অন্তর্গত বারঠাকুরী ইউনিয়নে অবস্থিত। বারঠাকুরী ও আমলশীদের ঠিক মাঝামাঝি সিলেট-জকিগঞ্জ মেইন সড়কের পাশে একটা বাঁকের দক্ষিণমুখী রাস্তায় সোজা ‘তিন নদীর মোহনা। ‘মনোমুগ্ধকর হিমশীতল হাওয়ার সাথে এক অপরূপ দৃশ্য আপনার মনকে জুড়িয়ে দিবে। বিঃদ্রঃ এর পাশ ঘেষেই আছে ঐতিহাসিক বারঠাকুরী গায়বী দীঘি।

বরাক

বরাক নদীটি ভারতের মণিপুর রাজ্যের কাছার পর্বতে উৎপন্ন হয়ে মণিপুর, আসাম, মিজোরামের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে অমলসিধের কাছে সুরমা ও কুশিয়ারা নামে দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। অমলসিধ থেকে সুরমা প্রায় ২৮ কিলোমিটার এবং কুশিয়ারা কিলোমিটার সীমান্ত নদী হিসাবে প্রবাহিত। বরাকের উজানের অংশটি ভারতের আসাম ও মনিপুর রাজ্যে বিস্তৃত। আর এর ভাটির প্লাবন সমভূমি বাংলাদেশের অভ্যন্তরে।

১৪/ নাজিমগড় রিসোর্ট

নাজিমগড় রিসোর্ট
নাজিমগড় রিসোর্ট

নাজিমগড় রিসোর্ট বাংলাদেশের সিলেট শহর থেকে সামান্য দূরে খাদিমনগরে এক নির্জন দ্বীপ গড়ে তুলেছে এই রিসোর্ট। তাদেরই ব্যবস্থাপনায় মেঘালয় সীমান্তে লালাখালে তৈরি হয়েছে পিকনিক স্পট।

অবস্থান

সিলেট শহর থেকে মাত্র ১৫ মিনিটের রাস্তা। সিলেট-জাফলং মহাসড়কের পাশেই প্রায় ৬ একর জায়গার উপর গড়ে উঠেছে এই রিসোর্টটি। যেখানে রয়েছে প্রায় ২ শতাধীক লোকের খাওয়া দাওয়া সহ রাত্রিযাপনের সুবিধা।

নাজিমগড় পিকনিক স্পট

মেঘালয় সীমান্তে লালাখালে তৈরি হয়েছে এই পিকনিক স্পট। ব্রিটিশ আমলে প্রতিষ্ঠিত লালাখাল চা-বাগান ভারত বাংলাদেশের সীমামত্ম ঘেঁষা এলাকায় অবস্থিত। এখানে রয়েছে ছোট বড় অনেক উচু নিচু টিলা আর চা-বাগান। চা-বাগানের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে সারী নদী।

বিবরণ

পাহাড়ের ঢেউ দেখার দারুণ জায়গা এটি। ১৫টি কটেজ আছে এখানে। রয়েছে রেস্টুরেন্টের হরেক পদের খাবার। রিসোর্টে আছে বিশাল এক বাগান, সুইমিং পুল, পিকনিক ও ক্যাম্পিং স্পট। নদীতে ঘুরে বেড়ানোর জন্য নিজস্ব স্প্রিডবোট। স্প্রিডবোটে চড়ে সারি নদী হয়ে লালাখাল ভ্রমণ। সূর্যোদয়, সূর্যাস্ত ও মেঘালয় পাহাড় দেখার জন্য পাহাড়ের উপরে ওয়াচ টাওয়ার। পাশেই খাসিয়া পল্লী, পানের বরজ। প্রতিটি স্থাপনাই গাছপালা-জঙ্গলে ছাওয়া টিলার ধারে। বাংলোর বারান্দায় বসে হাত বাড়ালেই যেন পাওয়া যায় গাছগাছালির ছোঁয়া।

অ্যাওয়ার্ড ও অন্যান্য

ট্রিপঅ্যাডভাইজারের সার্টিফিকেট অব এক্সেলেন্স অ্যাওয়ার্ড লাভ করেছে ২০১২ ও ২০১৩ সালে। পর্যটকদের প্রশংসাসূচক মতামতের ভিত্তিতে ট্রিপঅ্যাডভাইজারের এই সম্মাননা প্রদান করা হয় নাজিমগড় রিসোর্টকে।

১৫/ পাংতুমাই

পাংতুমাই
পাংতুমাই

পাংতুমাই সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলার পশ্চিম জাফলং ইউনিয়নে অবস্থিত একটি সুন্দর গ্রাম।আমাদের প্রতিবেশী ভারতের মেঘালয়ের গহীন অরণ্যের কোল ঘেঁষে বাংলাদেশের বুকে নেমে এসেছে অপরূপ সুন্দর এক ঝরনাধারা।  ঝরনাটি প্রতিবেশী দেশ ভারতের মধ্যে পড়লেও পিয়াইন নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে খুব কাছ থেকে উপভোগ করা যায় একে। সীমান্তের কাছাকাছি না গিয়েও ঝরনাটির সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। ঝরনাটির স্থানীয় নাম ফাটাছড়ির ঝরনা। কেউ কেউ একে ডাকেন বড়হিল ঝরনা বলে। পান্তুমাই গ্রামকে যদিও অনেকে “পাংথুমাই” বলে ডাকে কিন্তু এর সঠিক উচ্চারণ “পান্তুমাই” । 

অবস্থান

এটি জাফলং থেকে প্রায় ২০-২৫ কিমি দূরে। ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পাহাড়ের নিচে, একেবারে সীমান্ত ঘেঁষা এই গ্রামটির অবস্থান। মেঘালয় রাজ্যের সারি সারি পাহাড়, ঝর্ণা, ঝর্ণা থেকে বয়ে আসা পানির স্রোতধারা, আর দিগন্ত বিস্তৃত চারণভূমি দেখা যায় এই গ্রামটি থেকে। স্থানীয়রা ঝরনাটিকে ফাটাছড়ির ঝরনা বা বড়হিল ঝরনাও বলেন। 

যা যা দেখবেন

পাহাড় ঘেঁষা আঁকাবাঁকা রাস্তা। পাহাড়ি গুহা থেকে হরিণীর মতোই লীলায়িত উচ্ছল ভঙ্গিমায় চলা ঝরনার জলরাশি। গাঁয়ের মেঠো পথ, বাঁশ বাগান, হাঁটু জলের নদী পার হয়ে প্রতাপ্পুর গ্রাম। এর পরের গ্রাম পান্তুমাই।

যাতায়াত ব্যবস্থা

ঢাকা থেকে সিলেট গিয়ে আম্বরখানা পয়েন্ট থেকে সিএনজি ট্যাক্সি নিয়ে গোয়াইনঘাট বাজারে থানা সংলগ্ন বাজারে গিয়ে ট্যাক্সির সাহায্যে এখানে আসা যায়। পাংথুমাইয়ে যাওয়া যায় দুটি রাস্তায়। একটি হচ্ছে গোয়াইনঘাটের সালুটিকর হয়ে আর অন্যটি জৈন্তাপুরের সারিঘাট হয়ে।

অরক্ষিত পর্যটন স্পট

প্রকৃতি সিলেটকে দুই হাত ভরে দিলেও এসব সৌন্দর্য সুরক্ষায় নেই কোনো উদ্যোগ। উল্টো অরক্ষিতভাবে ফেলে রাখায় একেকটি স্পট পরিণত হয়েছে মৃত্যুকূপে। ভয়ঙ্কর সুন্দরে রূপ নিয়েছে পর্যটন কেন্দ্রগুলো। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে অনন্য সিলেট অঞ্চলে সারা বছরই ভিড় থাকে পর্যটকের। বিভিন্ন ছুটি বা উৎসবে এখানকার পর্যটন স্থানগুলোয় ঘুরতে আসেন তারা। অথচ পর্যটন স্পটগুলোর অধিকাংশই অরক্ষিত বলে প্রায়ই ঘটে প্রাণহানির ঘটনা।

সিলেটের বিখ্যাত বঙ্গবীর ওসমানী শিশু উদ্যান

 বঙ্গবীর ওসমানী শিশু উদ্যান
বঙ্গবীর ওসমানী শিশু উদ্যান

বঙ্গবীর ওসমানী শিশু উদ্যান (যা বঙ্গবীর ওসমানী শিশু পার্ক নামেও পরিচিত) সিলেট শহরের একটি অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র। এটি সিলেট বিভাগের প্রাণ কেন্দ্র (ধোপা দিঘীর পার) সিলেট সিটি কর্পোরেশন এলাকায় অবস্থিত।

বঙ্গবীর ওসমানী শিশু উদ্যান নামকরণ

বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল আতাউল গণি ওসমানীর অবদানকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করতে ওসমানীরই শেষ ইচ্ছা অনুয়ায়ী তার নামে ২০০০ সালে স্থাপিত হয় এটি।

অবস্থান এবং বিবরণ

নগরীর প্রাণকেন্দ্র ধোপা দিঘীর পারে দেখার মত বিনোদনকেন্দ্র এই বঙ্গবীর ওসমানী শিশু পার্ক। এই পার্ক স্থাপনে ব্যয় হয়েছে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা। প্রায় ৮ একর আয়তনের এই পার্কে এখন দর্শনার্থীদের ভিড় দেখার মত। নানা ধরনের গেমস ছাড়াও এখানে শিশুরা চড়তে পারে ঘোড়া, ট্রেন, নৌকা, চড়কি। আর দেখতে পারে বন থেকে আনা স্নো চিতা, বানর ও ছোট বড় সব অজগর সাপ।

১৭/ বাংলাদেশের শেষ বাড়ি

বাংলাদেশের শেষ বাড়ি
বাংলাদেশের শেষ বাড়ি

বাংলাদেশের শেষ বাড়ি হচ্ছে বাংলাদেশের একটি আবাসিক জায়গা, যা সিলেট জেলার তামাবিলের জৈন্তিয়া হিল রিসোর্টের বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের আগে অবস্থিত। জৈন্তিয়া হিল রিসোর্টের পাশ থেকে পাহাড়-পর্বতের সাথে দুটি জলপ্রপাত দেখতে পাওয়া যায়। বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পে এটি একটি জনপ্রিয় জায়গা, যা হাজার হাজার দর্শনার্থীদের আকর্ষণ করে।

১৮/ বিছানাকান্দি

বিছানাকান্দি
বিছানাকান্দি

বিছানাকান্দি বাংলাদেশের সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলায় অবস্থিত রুস্তমপুর ইউনিয়নের একটি গ্রামের মধ্যে অবস্থিত। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এখানকার নদী দেখতে পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

বিছানাকান্দি ভূপ্রকৃতি

বিছানাকান্দি পর্যটন এলাকাটি মূলত একটি পাথর কোয়েরি যেখানে নদী থেকে পাথর সংগ্রহ করা হয়। এই জায়গায় খাসিয়া পর্বতের বিভিন্ন স্তর এসে একবিন্দুতে মিলিত হয়েছে। খাসিয়া পর্বত থেকে নেমে আসা একটি ঝরনা এখানে একটি হ্রদের সৃষ্টি করেছে যা পিয়াইন নদীর সাথে গিয়ে সংযুক্ত হয়েছে। এখানকার শিলা-পাথর গুলো একদম প্রাকৃতিক এবং এগুলো পাহাড়ি ঢলের সাথে পানির মাধ্যমে নেমে আসে।

১৯/ ভোলাগঞ্জ সাদাপাথর

ভোলাগঞ্জ সাদাপাথর
ভোলাগঞ্জ

ভোলাগঞ্জ  সিলেটের একটি উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থান। ভোলাগঞ্জ দেশের সর্ববৃহত্তম পাথর কোয়ারির অঞ্চল। এখান থেকে ছাতক পর্যন্ত ১১ কিলোমিটার এলাকা নিয়ে দাঁড়িয়ে ভোলাগঞ্জ রোপওয়ে বা রজ্জুপথ।

অবস্থান

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার চমৎকার একটি গ্রাম ভোলাগঞ্জ। রোপওয়ে, পাথর কেয়ারী, নদী আর পাহাড়ে মিলে এই ভোলাগঞ্জ। সিলেট শহর থেকে ভোলাগঞ্জ এর দূরত্ব ৩৩ কিলোমিটার। ধলাই নদী বাংলাদেশ অংশে প্রবেশ করে দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে প্লান্টের চারপাশ ঘুরে আবার একীভূত হয়েছে। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা সদরের কাছে ধলাই নদী মিলিত হয়েছে পিয়াইন নদীর সাথে। একশ একর আয়তনের রোপওয়েটি তাই পরিণত হয়েছে বিশেষ আকর্ষণীয় স্থানে।

ভোলাগঞ্জ সাদাপাথর ইতিহাস

ভারতের তৎকালীন আসাম প্রদেশের রাজধানী শিলংয়ে একসময় লোকজন এ রাস্তা দিয়েই যাতায়াত করতেন। কালের পরিক্রমায় এখানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে রজ্জুপথ। নাম ভোলাগঞ্জ রোপওয়ে। দেশের সর্ববৃহৎ ভোলাগঞ্জ পাথর কোয়ারির অবস্থানও এ এলাকায়। রোপওয়ে, পাথর কোয়ারি আর পাহাড়ি মনোলোভা দৃশ্য অবলোকনে প্রতিদিনই পর্যটকদের আনাগোনা চলে।

বর্ণনা

পৃথিবীর সর্বাধিক বৃষ্টিবহুল এলাকা চেরাপুঞ্জির অবস্থান ভারতের পাহাড়ী রাজ্য মেঘালয়ে। ধলাই নদীর উজানে এ রাজ্যের অবস্থান। খাসিয়া জৈন্তিয়া পাহাড় ঘেরা এ রাজ্যের দৃশ্য বড়ই মনোরম। ভোলাগঞ্জ রোপওয়ে এলাকায় অবস্থান করে পাহাড় টিলার মনোরম দৃশ্যাবলি অবলোকন করা যায়। বর্ষাকালে চেরাপুঞ্জির বৃষ্টির পানি ধলাই নদীতে পাহাড়ী ঢলের সৃষ্টি করে। গ্রীষ্মকালে অনেকে =ধলাই নদীকে মরা নদী হিসাবে অভিহিত করলেও বর্ষাকালে নদীটি ফুলে ফেঁপে উঠে। ধলাই নদীর মনোলোভা রূপ, সবুজ পাহাড় বন্দী এলাকা জুড়ে অজস্র সাদা পাথর, আকাশের নীল ছায়া রেখে যায় পাথরে জমে থাকা স্ফটিক জলে। দূরের পাহাড়গুলোর উপর মেঘের ছড়াছড়ি, সাথে একটা দুটো ঝর্ণার গড়িয়ে পড়া। নদীর টলমলে হাঁটু পানির তলায় বালুর গালিচা। চিক চিক করা রূপালী বালু আর ছোট বড় সাদা অসংখ্য পাথর মিলে এ যেন এক পাথরের রাজ্য। প্রকৃতির খেয়ালে গড়া নিখুঁত ছবির মত সুন্দর এই জায়গাটির নাম ভোলাগঞ্জ। 

কাস্টমস স্টেশন

ভোলাগঞ্জে রয়েছে একটি ল্যান্ড কাস্টমস স্টেশন। আমদানি রপ্তানি কার্যক্রম চলে এ স্টেশন দিয়ে। ভারত সীমান্তের জিরো লাইনের এই কাস্টমস স্টেশনে দাড়িয়ে অপারের সৌন্দর্য্য প্রত্যক্ষ করা যায়।

২০/ মশাজানের দিঘী

মশাজানের দিঘী
মশাজানের দিঘী

বাংলাদেশের সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জ জেলা শহরের পাঁচ মাইল দক্ষিণে মশাজান গ্রামে এই দিঘীর অবস্থান। দিঘীটি স্থানীয় ভাবে মশাজানের দিঘী নামে পরিচিত, ষোল’শ শতকের প্রথম দিকে দুইশত একর সীমানার মধ্যভাগে অবস্থিত এ দীঘির প্রতিষ্ঠাতা আধ্যাত্নিকপুরুষ খ্যাত সৈয়দ গোয়াস উদ্দীন। তিনি ছিলেন মধ্য যোগীয় মহাকবি সৈয়দ সুলতানের জ্যেষ্ঠসন্তান এবং সিলেট ও তরফ বিজয়ী সিপাহসালার সৈয়দ নাসির উদ্দিন’র ষষ্ঠ অধস্থনপুরুষ। দৃষ্টিনন্দন ও সুবিশাল এ দীঘিটি বাংলাদেশের দর্শনীয় স্থান হিসাবে স্বীকৃত।

মশাজানের দিঘীর বৈশিষ্ট্য

চারপাশে ঘন গাছগাছালি পরিবেষ্টিত লম্বাটে চৌকোণা আকৃতির দিঘীটির তলভাগে কোন রহস্যজনক কারণে অসংখ্য ছোটবড় নিকষকাল রঙের অমসৃণ শিলাখণ্ড বিদ্ধমান। দৃশ্যত (পরীক্ষিত নয়) এই পাথরগুলো উল্কাপিণ্ডের সাথে হুবহু সামঞ্জস্যপূর্ণ। হয়তো এই পাথরগুলোর প্রভাবেই এর পানি কাঁচের ন্যায় এতটাই স্বচ্ছ যে অনেক গভীরের তলদেশ পর্যন্ত স্পষ্টত দেখা যায়। এই দিঘীর পানিতে বিভিন্ন রকম মাছ থাকা স্বত্বেও আশ্চর্যজনক ভাবে লক্ষ্যণীয় বিষয় যে এতে কোনও ধরনের কচুরিপানা, জলজ উদ্ভিদ, সাধারণ কীটপতঙ্গ বা জোঁক-ব্যাঙ একেবারেই টিকে থাকতে পারেনা। তাছাড়াও স্থানীয় জনগণের পরীক্ষিত বিষয় হিসেবে এটাও স্বীকৃত যে এই দিঘীতে কয়েকবার গোসল করলে সাধারণ চর্মরোগ সেরে যায়। কিন্তু এসবের কারণ নিরূপণে স্মরণকাল যাবত অলির কেরামত বলে প্রচলিত একটা লোকশ্রুতি ব্যতীত বিজ্ঞানভিত্তিক কোন পরীক্ষা নিরীক্ষা হয়েছে বলে জানা যায়নি।

দিঘী সৃষ্টির উপাখ্যান

আবহমান কাল থেকে প্রচলিত লোকশ্রুতি বা স্থানীয়দের লালিত কিংবদন্তী যে, অত্র বিজন স্থানে একটি সুপেয় জলাশয়ের জন্য আল্লাহ্‌র কাছে তার প্রিয় অলী সৈয়দ গোয়াস উদ্দীন মদদ প্রার্থনার প্রেক্ষিতে আকাশ আলোকিত করে নেমে আসা ফেরেশতাদের দ্বারা এক রাতেই এই দিঘী সৃষ্টি হয়েছে। একারণেই সৃষ্টির পর থেকে কখনও এ দিঘিকে সংস্কার কিংবা পুনঃখননের প্রয়োজন হয়নি, কালক্রমে নিজে থেকেই এটা গভীরতা প্রাপ্ত হয়।

সিলেটের বিখ্যাত বর্ষিজোড়া ইকোপার্ক

বর্ষিজোড়া ইকোপার্ক
বর্ষিজোড়া ইকোপার্ক

বর্ষিজোড়া ইকোপার্ক বাংলাদেশের মৌলভীবাজার জেলায় অবস্থিত। একটি সংরক্ষিত এলাকা। এই ইকোপার্কটি কয়েকটি ছোট ছোট টিলা নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে। ইকোপার্কটিতে রয়েছে ঘন গাছ-গাছালি ও জীববৈচিত্রের সমাহার। এখানে কটেজ ও পিকনিক কর্নার রয়েছে।

ইতিহাস জীববৈচিত্র্য উদ্ভিদবৈচিত্র্য

ইকোপার্কটিতে রয়েছে ঘন গাছ-গাছালি এবং নানা প্রকার প্রাকৃতিক উদ্ভিদ ও বৃক্ষরাজি। এগুলোর মধ্যে চাপালিশ, শাল, গর্জন, চম্পাফুল, জারুল, মিনজিরি, চাউ, ঝাউ, কড়ই, জলপাই, আম, কাঁঠাল, নারিকেল, সুপারি, কামরাঙ্গা, চালতা, আগর, কৃষ্ণচূড়া, শিমুল, বাজনা, নাগেশ্বর, বকুল, হিজল, ডুমুর এবং বিবিধ বেত উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও নানা প্রজাতির গুল্ম, বীরুত্ এবং লতাও এখানে দেখা যায়।

শকুনের নিরাপদ এলাকা

শকুনের নিরাপদ এলাকা-১ তফসিল অনুসারে বর্ষিজোড়া ইকোপার্ক শকুনের জন্য নিরাপদ বলে ঘোষিত।

২২/ মাধবকুণ্ড ইকোপার্ক

মাধবকুণ্ড ইকোপার্ক
মাধবকুণ্ড ইকোপার্ক

মাধবকুণ্ড ইকোপার্ক বাংলাদেশের সিলেট বিভাগের অন্তর্গত মৌলভীবাজার জ়েলার বড়লেখা উপজেলার কাঁঠালতলিতে অবস্থিত একটি ইকোপার্ক। পর্যটনকেন্দ্র হিসাবে অন্যতম বিখ্যাত এই স্থানটিতে বর্তমানে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের রেস্টহাউজ ও রেস্টুরেন্ট রয়েছে। এই ইকোপার্কের অন্যতম আকর্ষণ হলো মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত, পরিকুণ্ড জলপ্রপাত, শ্রী শ্রী মাধবেশ্বরের তীর্থস্থান, এবং চা বাগান।

অবস্থান

মৌলভীবাজার জেলার সীমান্তবর্তী থানা বড়লেখার ৮ নম্বর দক্ষিণভাগ ইউনিয়নের অধীন গৌরনগর মৌজার অন্তর্গত পাথারিয়া পাহাড়ের গায়ে এই মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতের স্রোতধারা বহমান এবং এই পাহাড় থেকে পতনশীল। মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতকে ঘিরেই এই ইকোপার্কটি গড়ে ওঠে। এই পাথারিয়া পাহাড়, সিলেট সদর থেকে ৭২ কিলোমিটার, মৌলভীবাজার জেলা থেকে ৭০ কিলোমিটার, কুলাউড়া রেলওয়ে জংশন থেকে ৩২ কিলোমিটার এবং কাঁঠালতলী থেকে ৮ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত।

দর্শনীয় স্থান ও স্থাপনা মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত

মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত, বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ জলপ্রপাত হিসেবে সমধিক পরিচিত। পাথারিয়া পাহাড় (পূর্বনাম: আদম আইল পাহাড়) কঠিন পাথরে গঠিত; এই পাহাড়ের উপর দিয়ে গঙ্গামারা ছড়া বহমান। এই ছড়া মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত হয়ে নিচে পড়ে হয়েছে মাধবছড়া। অর্থাৎ গঙ্গামারা ছড়া হয়ে বয়ে আসা জলধারা [১২ অক্টোবর ১৯৯৯-এর হিসাবমতে] প্রায় ১৬২ ফুট উঁচু থেকে নিচে পড়ে মাধবছড়া হয়ে প্রবহমান। সাধারণত একটি মূল ধারায় পানি সব সময়ই পড়তে থাকে, বর্ষাকাল এলে মূল ধারার পাশেই আরেকটা ছোট ধারা তৈরি হয় এবং ভরা বর্ষায় দুটো ধারাই মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় পানির তীব্র তোড়ে। জলের এই বিপুল ধারা পড়তে পড়তে নিচে সৃষ্টি হয়েছে বিরাট কুণ্ডের। এই মাধবছড়ার পানি পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হতে হতে গিয়ে মিশেছে হাকালুকি হাওরে।

কুণ্ডের ডানপাশে পাথরের গায়ে সৃষ্টি হয়েছে একটি গুহার, যার স্থানীয় নাম কাব। এই কাব দেখতে অনেকটা চালাঘরের মতো। মধুকৃষ্ণা ত্রয়োদশী তিথিতে স্নানর্থীরা কাবের নিচে দাঁড়িয়ে ভিজা কাপড় পরিবর্তন করে থাকেন।

পরীকুণ্ড জলপ্রপাত

মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত ছাড়াও এই ইকোপার্কে রয়েছে আরেকটি জলপ্রপাত, যা মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত থেকে অনতিদূরে অবস্থিত। শিবমন্দির-এর বিপরীত দিকের ছড়া ধরে গেলে এই জলপ্রপাতের দেখা পাওয়া যায়। এই জলপ্রপাতটি পরীকুণ্ড জলপ্রপাত নামে পরিচিত। তবে এই জলপ্রপাতটি কেবল বর্ষাকালেই প্রাণ ফিরে পায়।

তীর্থক্ষেত্র

কথিত আছে, পুরাকালে গৌরী দেহান্তরিত হলে মহাদেব (মাধবেশ্বর)প্রিয়াবিরহে ব্যথাকাতর মনে প্রিয়ার নিষ্প্রাণ দেহ কাঁধে নিয়ে অনির্দিষ্টের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন। এই যাত্রায় গৌরীর দেহের অংশ যেখানে যেখানে পড়েছে, সেখানে সৃষ্টি হয়েছে তীর্থক্ষেত্রের। আর পাথারিয়ার গভীর অরণ্যে গৌরীর একটা অংশ পড়েছে বলে দাবি করা হয়, যার কোনো ঐতিহাসিক প্রমাণ মিলেনি।

শিবমন্দির উদ্ভিদবৈচিত্র্য

মাধবকুণ্ড ইকোপার্ক এলাকায় এককালে কমলা বাগান ছিল; ছিলো আম, কাঁঠাল, কলা, পেঁপে, পেয়ারা, সুপারি ও পানের বাগান। এখানে ফলতো লেবুসহ অন্যান্য ফলমূল। এছাড়া ছিল বিভিন্ন প্রকার বনজ গাছপালা। কিন্তু বর্তমানে এর অধিকাংশই অতীত। “সামাজিক বনায়ন”-এর নামে প্রাকৃতিক গাছপালা কেটে ফেলে রোপণ করা হয়েছে বিভিন্ন হাইব্রিডজাতীয় গাছপালা, যেমন: একাশিয়া (স্থানীয় নাম আকাশি)। ঔষধি ও অর্থকরি গাছ আগরও আছে রোপণ তালিকায়। কিন্তু প্রাকৃতিক বন নষ্ট করে এই সামাজিক বনায়ন শ্রেফ পরিবেশ ধ্বংসই করেছে বেশি।

শকুনের নিরাপদ এলাকা

শকুনের নিরাপদ এলাকা-১ তফসিল অনুসারে মাধবকুণ্ড ইকোপার্ক শকুনের জন্য নিরাপদ বলে ঘোষিত।

আদিবাসী নৃগোষ্ঠী

মাধবকুণ্ড এলাকায় বাস করে আদিবাসী খাসিয়ারা। খাসিয়ারা গাছে গাছে পান চাষ করে থাকে। মাধবছড়াকে ঘিরে খাসিয়াদের জীবনযাত্রা আবর্তিত হয়।

২৩/ মিউজিয়াম অব রাজাস

মিউজিয়াম অব রাজাস
হাসন রাজার জাদুঘর

রাজার জাদুঘর’ যা হাসন রাজার জাদুঘর নামেই সমধিক পরিচিত, বাংলাদেশের সিলেট জেলায় অবস্থিত একটি লোক জাদুঘর।

অবস্থান

একদা হাসন রাজার উত্তরসূরিদের রাজবাড়িটিই বর্তমানের বিখ্যাত হাসন রাজা জাদুঘর। জাদুঘরটি সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রাণকেন্দ্র জিন্দাবাজারে অবস্থিত। এটি সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ১০ কিলোমিটার সিলেট রেল স্টেশন থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।

বর্ণনা

জাদুঘরটি দেখাশোনা ও রক্ষণাবেক্ষণের দ্বায়িত্বে আছে শিক্ষাবিদ দেওয়ান তালিবুর রাজা ট্রাস্ট। দেওয়ান তালিবুর রাজা হাসন রাজার প্রপৌত্র। সিলেটের জমিদার এবং কবি দেওয়ান হাসন রাজা চৌধুরীকে কেন্দ্রে রেখে লোক সংগীত এবং কবিতা দিয়ে সাজানো হয়েছে জাদুঘর টি। ২০০৬ সালের ৩০ জুন জাদুঘরের উদ্যোগে সহস্র সংগীত প্রেমী সমবেত হয়ে একই সঙ্গে এক তারা বাজায় যা এক অনন্য ব্যতিক্রম আয়োজন।

রাজাকুঞ্জ হচ্ছে শতবর্ষী পুরাতন টিন শেডের দালান যাতে অল্প কয়েকটি কক্ষ আছে। প্রধান ফটকের কয়েক মিটার পরেই জাদুঘরের অবস্থান। দর্শনার্থীদের প্রবেশ পথে দেওয়ান হাসন রাজা এবং তার পুত্র একলিমুর রাজা চৌধুরীর প্রতিকৃতি স্থাপিত আছে। জাদুঘরটিতে দুটি গ্যালারী আছে।

২৪/ রাতারগুল জলাবন

রাতারগুল জলাবন
রাতারগুল জলাবন

রাতারগুল জলাবন সিলেটের গোয়াইনঘাটে অবস্থিত বাংলাদেশের একমাত্র মিঠাপানির জলাবন। পৃথিবীতে মিঠাপানির যে ২২টি মাত্র জলাবন আছে, “রাতারগুল জলাবন” তার মধ্যে একটি। এই জলাবনের আয়তন ৩,৩২৫.৬১ একর। একে রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট হিসাবেও অভিহিত করা হয়ে থাকে। এর ৫০৪ একর এলাকাকে বাংলাদেশ সরকার ১৯৭৩ সালে বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করে। এছাড়াও ৩১ মে ২০১৫ তারিখে বাংলাদেশের বন অধিদপ্তর ২০৪.২৫ হেক্টর বনভুমিকে বিশেষ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এলাকা হিসবে ঘোষণা করে। এই এলাকাকে বিশেষ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এলাকা (রাতারগুল) হিসাবেও উল্লেখ করা হয়ে থাকে।

চিরসবুজ এই বন গোয়াইন নদীর তীরে অবস্থিত (গোয়াইন নদী সারি গোয়াইন নদীর সাথে মিলিত হয়েছে) এবং চেঙ্গির খালের সাথে একে সংযুক্ত করেছে। এখানে সবচেয়ে বেশি জন্মায় করচ গাছ (বৈজ্ঞানিক নাম: Millettia pinnata)। এখানকার গাছপালা বছরে ৪ থেকে ৭ মাস পানির নিচে থাকে। বর্ষাকালে এই বন ২০–৩০ ফুট পানির নিচে নিমজ্জিত থাকে। বাকি সারা বছর, পানির উচ্চতা ১০ ফুটের মতো থাকে। বর্ষাকালে এই বনে অথৈ জল থাকে চার মাস। তারপর ছোট ছোট খালগুলো হয়ে যায় পায়ে-চলা পথ। আর তখন পানির আশ্রয় হয় বন বিভাগের খোঁড়া বিলগুলোতে। সেখানেই আশ্রয় নেয় জলজ প্রাণীকুল।

অবস্থান

ওয়াচ টাওয়ার থেকে জলাবনের দৃশ্য।

সিলেট জেলার গোয়াইনঘাটের ফতেহপুর ইউনিয়নে, গুয়াইন নদীর দক্ষিণে এই বনের অবস্থান। বনের দক্ষিণ দিকে আবার রয়েছে দুটি হাওর: শিমুল বিল হাওর ও নেওয়া বিল হাওর। সিলেট শহর থেকে এর দূরত্ব ২৬ কিলোমিটার।

নামকরণ

সিলেটের স্থানীয় ভাষায় মুর্তা বা পাটি গাছ “রাতা গাছ” নামে পরিচিত। সেই রাতা গাছের নামানুসারে এ বনের নাম রাতারগুল।

জলবায়ু

সিলেটের উত্তর-পূর্ব দিকে অবস্থিত ক্রান্তীয় জলবায়ুর এই বনটিতে প্রতিবছর ভারী বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে । বনের সবচাইতে কাছে অবস্থিত সিলেট আবহাওয়া কেন্দ্রের তথ্যমতে এখানে বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৪১৬২ মিলিমিটার । জুলাই মাসটি সবচাইতে আর্দ্র যখন বৃষ্টিপাতের পরিমাণ প্রায় ১২৫০ মিলিমিটার, অন্যদিকে বৃষ্টিহীন সবচাইতে শুষ্ক মাসটি হল ডিসেম্বর । মে এবং অক্টোবরে গড় তাপমাত্রা গিয়ে দাঁড়ায় ৩২° সেলসিয়াসে, আবার জানুয়ারিতে এই তাপমাত্রা নেমে আসে ১২° সেলসিয়াসে । ডিসেম্বর মাসে এখানকার আপেক্ষিক আর্দ্রতার পরিমাণ প্রায় ৭৪ শতাংশ, যা জুলাই-আগস্টে ৯০ শতাংশেরও বেশি ।

উদ্ভিদবৈচিত্র্য

বৈশিষ্ট্যমন্ডিত এই মিঠাপানির জলাবনটিতে উদ্ভিদের দু’টো স্তর পরিলক্ষিত হয়। উপরের স্তরটি মূলত বৃক্ষজাতীয় উদ্ভিদ নিয়ে গঠিত যেখানে নিচের স্তরটিতে ঘন পাটিপাতার (মুর্তা) আধিক্য বিদ্যমান । বনের উদ্ভিদের চাঁদোয়া সর্বোচ্চ ১৫ মিটার উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত । এছাড়াও অরণ্যের ৮০ শতাংশ এলাকাই উদ্ভিদের আচ্ছাদনে আবৃত । বনের স্বাস্থ্য সন্তোষজনক । এখন পর্যন্ত এখানে সর্বমোট ৭৩ প্রজাতির উদ্ভিদের সন্ধান পাওয়া গেছে ।

এই বন মূলত প্রাকৃতিক বন হলেও পরবর্তিতে বাংলাদেশ বন বিভাগ, বেত, কদম, হিজল, মুর্তাসহ নানা জাতের জলসহিষ্ণু গাছ লাগিয়েছে। এছাড়া জলমগ্ন এই বনে রয়েছে হিজল, করচ আর বরুণ গাছ ;আছে পিঠালি, অর্জুন, ছাতিম, গুটিজাম। আছে বট গাছও।

প্রাণিবৈচিত্র‍্য

জলমগ্ন বলে এই বনে সাপের আবাস বেশি, আছে জোঁকও; শুকনো মৌসুমে বেজিও দেখা যায়। এছাড়া রয়েছে বানর, গুঁইসাপ; পাখির মধ্যে আছে সাদা বক, কানা বক, মাছরাঙ্গা, টিয়া, বুলবুলি, পানকৌড়ি, ঢুপি, ঘুঘু, চিল এবং বাজপাখি। শীতকালে রাতারগুলে আসে বালিহাঁসসহ প্রচুর পরিযায়ী পাখি, আসে বিশালাকায় শকুনও। মাছের মধ্যে আছে টেংরা, খলিসা, রিটা, পাবদা, মায়া, আইড়, কালবাউশ, রুই সহ বিভিন্ন জাত।

পর্যটন আকর্ষণ

রাতারগুলে ভ্রমণের জন্য ব্যবহৃত ডিঙ্গি নৌকা

জলে নিম্নাংঙ্গ ডুবিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা বনের গাছগুলো দেখতে বিভিন্ন সময়, বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে এখানে ভিড় করেন পর্যটকগণ। বনের ভিতর ভ্রমণ করতে দরকার হয় নৌকার, তবে সেগুলো হতে হয় ডিঙি নৌকা— ডিঙিতে চড়ে বনের ভিতর ঘুরতে ঘুরতে দেখা যায় প্রকৃতির রূপসুধা। তবে বনে ভ্রমণ করতে অনুমতি নিতে হয় রাতারগুল বন বিট অফিস থেকে।

সিলেটের বিখ্যাত রামপাশার জমিদার বাড়ি

রামপাশার জমিদার বাড়ি
রামপাশার জমিদার বাড়ি

রামপাশার জমিদার বাড়ি বাংলাদেশ এর সিলেট জেলার বিশ্বনাথ উপজেলা অবস্থিত এক ঐতিহাসিক জমিদার বাড়ি। এটি বিশেষ করে মরমি কবি হাছন রাজার বাড়ি হিসেবে বেশ পরিচিত এবং ঐতিহাসিক। 

ইতিহাস

অন্যান্য জমিদার বাড়ি থেকে এই জমিদার বাড়িটি একদমই ভিন্ন। এটি ইতিহাসের পাতায় আলাদা করে জায়গা করে নিয়েছে। কারণ এটি মরমি কবি হাছন রাজার জমিদার বাড়ি। হাছন রাজার জমিদার বাড়ি হিসেবে এটি অধিক পরিচিত। হাছন রাজার পূর্ব পুরুষরা ছিলেন হিন্দু ধর্মালম্বী। এই জমিদার বাড়ির মূল প্রতিষ্ঠাতা কে তা সঠিকভাবে জানা যায়নি। একটি সূত্র অনুযায়ী এই জমিদার বাড়ির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে ধরা যায় বিরেন্দ্রচন্দ্র সিংহদেব (বাবু খান)। তিনিই হিন্দু ধর্ম পরিবর্তন করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। হাছন রাজার পিতা দেওয়ান আলী রাজা চৌধুরী ছিলেন উক্ত জমিদারী এলাকার একজন প্রভাবশালী জমিদার। তার আওতায় দুই এস্টেটের অর্থাৎ দুই এলাকার জমিদারী ছিল। একটি ছিল রামপাশার, আরেকটি ছিল লক্ষণশ্রীর। হাছন রাজারা ছিলেন দুই ভাই। তার বাবার পরে রামপাশার জমিদারী দেখাশুনা করতেন তার বড় ভাই। আর লক্ষণশ্রীর জমিদারী দেখা করতেন হাছন রাজা। কিন্তু হঠাৎ ৩৯ বছর বয়সে তার বড় ভাই মারা গেলে। দুই জমিদারীর দায়িত্ব এসে পড়ে হাছন রাজার হাতে। এরপরই তিনি এই দুই জমিদারী এলাকা একাই সামলাতে থাকেন। প্রথম জমিদারী বয়সে হাছন রাজা ছিলেন একজন ভোগবিলাসী জমিদার। পরবর্তীতে এক আধ্যাত্নিক স্বপ্নের মাধ্যমে তার জীবনের মোড় পাল্টে যায়। তিনি বিলাসবহুল জীবন ছেড়ে সাধারণভাবে চলাফেরা করতে শুরু করেন। শেষপর্যন্ত পরিণত বয়সে তিনি বিষয় সম্পত্তি বিলিবণ্টন করে দরবেশ-জীবন যাপন করেন। তার উদ্যোগে হাসন এম.ই. হাই স্কুল, অনেক ধর্ম প্রতিষ্ঠান, আখড়া স্থাপিত হয়।

অবকাঠামো বর্তমান অবস্থা

অযত্ন ও অবহেলায় হাছন রাজার একমাত্র স্মৃতি বিজড়িত এই জমিদার বাড়িটি এখন ধ্বংসের মুখে। বাড়ির দেয়ালে ময়লা-আবর্জনায় পরিপূর্ণ হয়ে রয়েছে।

২৬/ লালাখাল

লালাখাল
লালাখাল

লালাখাল’ সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলায় একটি পর্যটন এলাকা এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থান। লালাখালের পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে সারি গোয়াইন নদী। সেই নদীতে অসংখ্য বাঁক রয়েছে। নদীটির কূলে পাহাড়ি বন, চা-বাগান এবং নানা প্রজাতির বৃক্ষরাজি রয়েছে।

বিবরণ

ভারতের চেরাপুঞ্জির ঠিক নিচেই লালাখালের অবস্থান। চেরাপুঞ্জি পাহাড় থেকে উৎপন্ন এই নদী বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত। লালাখালের পানি নীল। মুলতঃ জৈন্তিয়া পাহাড় থেকে আসা প্রবহমান পানির সাথে মিশে থাকা খনিজ এবং কাদার পরিবর্তে নদীর বালুময় তলদেশের কারনেই এই নদীর পানির রঙ এরকম দেখায়। লালাখাল নদীতে অসংখ্য বাঁকের দেখা মেলে।

ইতিহাস

এ নদী দিয়েই পর্যটক ইবনে বতুতা বাংলাদেশে এসেছিলেন। জায়গাটার নামের সঙ্গে ‘খাল’ শব্দ যুক্ত হলেও এটি মূলত একটা নদীরই অংশ। নদীর নাম সারি। কেননা, চেরাপুঞ্জি পাহাড় থেকে বেয়ে আসা পানি গড়িয়ে চলেছে লালাখাল দিয়ে। লালাখালকে কেন লালাখাল বলা হয়, তা জানা যায়নি। 

পবিবেশ বিপর্যয়

সরকারি বিধিনিষেধের তোয়াক্কা না করায় উদ্ভিদবৈচিত্র্যকে করে তুলেছে হুমকির সম্মুখিন। এছাড়া অনুমোদনহীনভাবে পাথর উত্তোলন নদী এবং নদী অববাহিকার ভূমিকে হুমকির সম্মুখিন করেছে। এলাকার প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপে বিপুল পরিমাণ গাছ কেটে ফেলার কারণে প্রায়ই সেখানে নানা রোগব্যাধির প্রকোপ লক্ষ্য করা যায়। তাছাড়া উজান থেকে নেমে আসা পাথর আর বালুতে সয়লাব হয়ে যাওয়ায় নদীর নাব্যতা কমে গেছে। ফলে হঠাৎই উজান থেকে নেমে আসা ঢলে ক্ষতিগ্রস্ত হয় নিকটবর্তি অঞ্চলের মানুষের জীবন-জীবিকা।

২৭/ লোভাছড়া

লোভাছড়া
লোভাছড়া

লোভাছড়া সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার লক্ষ্মীপ্রসাদ ইউনিয়নে অবস্থিত এক মনোহরিণী স্থান। মূলত এর নাম লোভাছড়া চা বাগান। আর এই চা বাগানের সূত্র ধরেই পুরো গোটা একটা বিশাল এলাকার নাম হয়েছে লোভাছড়া। 

অবস্থান

মুলাদি বাজার যাওয়ার পথেই পড়বে “লোভাছড়া চা বাগান”। কানাইঘাট উপজেলার লক্ষীপ্রসাদ ইউনিয়নের অর্ন্তভূক্ত এই সীমান্তবর্তী লোভাছড়া নদীর পাশেই ব্রিটিশ আমলে প্রায় ১৮৩৯ একর জমির উপর ইংরেজ মালিকানায় গড়ে ওঠে লোভাছড়া চা-বাগান। বাগানের উত্তরে ভারতের মেঘালয় রাজ্য এবং পশ্চিমে বাংলাদেশের একটি সুন্দর পিকনিক স্পট ও লালাখাল চা-বাগান অবস্থিত। পাহাড়ের কোল জুড়ে গাছপালার সবুজ বর্ণিল রঙয়ে আচ্ছাদিত হয়ে আছে লোভাছড়া চা-বাগান। 

বর্ণনা

চা বাগান, প্রাকৃতিক লেক ও ঝরনা, ঝুলন্তসেতু, মীরাপিং শাহর মাজার, মোগল রাজা-রানির পুরাকীর্তি, প্রাচীন দীঘি, পাথর কোয়ারি ও বন বিভাগের সামাজিক বনায়ন। লোভাছড়ার চা বাগান রাস্তার দুই পাশে সারি সারি গাছ, ঘন সবুজ বনানী প্রাকৃতিক লেক আর স্বচ্ছ পানির ঝরনা।বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব সীমান্ত এলাকায় খাসিয়া-জৈইন্তা পাহাড়ের পাদদেশে রয়েছে বালুভরা বেশ কিছু স্বচ্ছ পানির নদী। এরমধ্যে লোভা নদী অন্যতম। লোভার মুখ হচ্ছে সুরমা ও লোভা নদীর সঙ্গমস্থল। পাহাড়, মেঘ আর স্বচ্ছ নদীর পানির সঙ্গে নীল আকাশের মিতালি।

২৮/ শাহ জালালের দরগাহ

শাহ জালালের দরগাহ
শাহ জালালের দরগাহ

শাহ জালালের দরগাহ, সিলেট শহরের একটি আধ্যাত্মিক স্থাপনা, যা মূলত ১৩০৩ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশে আগত পাশ্চাত্যের ইসলাম ধর্মপ্রচারক শাহ জালালের বাসস্থান ও শেষ সমাধি। এই দরগাহ সিলেট শহরের উত্তর প্রান্তে একটি টিলার উপর অবস্থিত। কারো কারো মতে সিলেট ভূমির মুসলিম সভ্যতা ও ধর্মমত এই দরগাহকে কেন্দ্র করে প্রসার লাভ করেছে। শাহ জালালের লৌকিক ও অলৌকিক স্মৃতি বিজড়িত এই স্থান সিলেটের অন্যতম পূণ্য তীর্থ হিসেবে পরিচিত। ঐতিহাসিক অচ্যুৎচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধির মতে এই দরগাহ থেকে প্রেরিত শাহ জালালের সঙ্গী অনুসারীদের দ্বারা ঢাকা, ময়মনসিংহ, ত্রিপুরা, কুমিল্লা ও আসাম প্রভৃতি স্থানে মুসলিম সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রচার ও প্রসার হয়েছে। বাংলাদেশ ও ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বাৎসরিক উরস (স্থানীয় উচ্চারণ: উরুস) উপলক্ষে প্রতিবছর হাজার হাজার লোক এখানে এসে শাহ জালালের উপলক্ষ ধরে (অসিলা) স্রষ্টার কাছে ভক্তি নিবেদন ও কৃতজ্ঞতা জানান।

দরগাহের ইতিহাস

দরগাহ প্রধান ফটক সিলেট বিজয়ের পর দিল্লীর সুলতান শামসুদ্দীন ফিরোজ শাহ, শাহ জালালকে সিলেটের শাসনভার গ্রহণের প্রস্তাব করেন। কিন্তু শাহ জালাল এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। পরবর্তিতে সুলতান বিশেষ ঘোষণা জারি করে সিলেট শহরের (কসবে সিলেট) খাজানা মুক্ত করে দরবেশকে সম্মানীত করেন যা এখনো (দরগাহর সংশ্লিষ্ট এলাকা) বলবত আছে। সুলতানি আমল হতে প্রথা অনুযায়ী নবাব, বাদশা বা রাজকর্মচারীদের মধ্যে যারা সিলেট আসতেন, নানা প্রকার দালান ইত্যাদি নির্মাণ করে সম্মানের সাথে দরগাহের সংস্কার ও প্রসার সাধন করতেন। দরগাহ চত্বরে অবস্থিত স্থাপনা গুলো সুলতান ও মোগলদের আমলের নির্মিত বলে তাম্রফলক ও প্রস্তরফলকে লিখিত বিভিন্ন নিদর্শন রয়েছে। যেমন; সিলেট শহরের সর্ব বৃহৎ দরগাহ মসজিদের ফলকে লিখিত তথ্যে আছে, ‘বাংলার সুলতানদের কর্তৃক ১৪০০ সালে ইহা নির্মিত। শাহ জালালের সমাধি ঘিরে যে দেওয়াল রয়েছে তা লুত্ফুল্লাহ আমীন বকশী কর্তৃক নির্মিত বলে একটি ফলক সূত্রে উল্লেখ পাওয়া যায়। এভাবে বিভিন্ন দালান, মসজিদ ও পুকুর ঘাট ইত্যাদি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন শাসনকর্তা সহ বাদশা ও সুলতানদের দ্বারা শাহ জালালের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের মাধ্যমে তৈরি বলে উল্লেখ আছে। এছাড়া দরগাহের লঙ্গখানায় অর্থ সাহায্য, খাদেমগনের জন্য জায়গির ব্যবস্থা, দরগাহের আলোক সজ্জা ইত্যাদি অনুদান সুলতানগণ ও মোগল বাদশাহদের দরবেশের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের বিভিন্ন বিবরণীতে পাওয়া যায়। যখনই দিল্লীর রাজপুরুষগণ সিলেটের শাসনকর্তা নিযুক্ত হতেন, প্রথা অনুযায়ী; শাসন ভার গ্রহণের পূর্বে দরগাহে এসে জিয়ারত সম্পন্য করে দরগাহের স্থলাভিষিক্ত খাদেমগণ কর্তৃক স্বীকৃত হয়েই কার্যভার গ্রহণ করতেন এবং এ প্রথা ব্রিটিশ রাজত্বের প্রারম্ভ কাল পর্যন্ত প্রচলিত ছিল। দরগাহের পুরানো রেকড পত্র অনুসন্ধানে পরিলক্ষিত হয়, দিল্লীর রাজপুরুষগণ রাজকীয় আড়ম্বরে দরগায় এসে পৌছলে পরে, খানকার শেখ রাজপুরুষদের মাথায় পাগড়ি বেঁধে অনুষ্ঠানিকভাবে তাদের প্রতি শাহ জালালের মনোনয়ন জ্ঞাপন না করা পর্যন্ত জনসাধারণ তাদেরকে শাসনকর্তা হিসেবে গ্রহণ করতেন না।

দরগাহর পরিক্রমা

দরগাহ মিনারের মাথায় অবস্থিত আলোকোজ্জ্বল আল্লাহু শব্দ। শাহ জালালের সমাধিকে দরগাহ টিলা বলে অভিহিত করা হয়। টিলার উত্তর প্রান্তে প্রাচীর বেষ্টিত স্থানে শাহ জালালের সমাধি অবস্থিত। চার কোণে চারটি উঁচু স্থম্ভ দ্বারা তা নির্মিত। দরবেশের সমাধির পশ্চিম প্রান্তে প্রাচীর সীমা ঘেঁষে একটি ছোট মসজিদ রয়েছে। যা সিলেটের তদানীন্তন মাজিষ্ট্রেট ও কালেক্টর উইলস দ্বারা পুনঃনির্মিত হয়। দরবেশের সমাধির পুর্ব পশ্চিমে যথাক্রমে ইয়ামনের যুবরাজ শেখ আলী ও ভারতের গৌড় রাজ্যের উজির মকবুল খানের কবর রয়েছে। শাহ জালালের দরগাহর দক্ষিণ দিকে প্রবেশ পথে বাহির হতে পাশে ছিল্লাখানা ও দরবেশের সহাধ্যায়ী হাজি ইউছুফ, হাজী খলিল ও হাজী দরিয়া নামক এই তিন জন অলির সমাধি বিদ্যমান। তাদের পাশে দরগাহের ভূতপূর্ব মোতওয়াল্লী আবু তুরাবের কবর। এখান থেকে পশ্চিমের প্রবেশ পথে বাহির হতে আরেকটি বেষ্টনীর পাশে দরগাহের আরো দুই জন মোতওয়াল্লী আবু নাসির ও আবু নসর পাশাপাশি অন্তিম শয্যায় শায়িত আছেন। ইহার দক্ষিণে একটি উচুঁ স্থানে গম্বুজ বিশিষ্ট ঘড়ি ঘর নামে এক দালান দেখতে পাওয়া যায়। এই ঘড়ি ঘরের পূর্ব দিকে প্রকাণ্ড গম্বুজ ওয়ালা বৃহৎ অট্টালিকা, যা এই অঞ্চলে সুদৃঢ় অট্টালিকা বলে খ্যাত।এটি সাধারণত গম্বুজ বলে অভিহিত। এই গম্বুজটি সম্রাট আওরঙ্গজেবের আমলে তার বিশ্বস্ত কর্মী ফরহাদ খান দ্বারা নির্মিত। গম্বুজের দক্ষিণে দরগাহ মসজিদ নামে খ্যাত মুসলমানদের একটি বৃহৎ উপসানাগার রয়েছে। বাংলার সুলতান আবু মুজাফফর ইউসুফ শাহের সময় কালে ( ১৪০০ খ্রিষ্টাব্দে ) মন্ত্রী মজলিশে আতার কর্তৃক দরগাহ চত্বরে নির্মিত হয়ে ছিল। পরবর্তিতে বাহারাম খান ফৌজদারের সময়ে (১৭৪৪ খ্রিঃ) পূর্ণনির্মিত হয়। সিলেট শহরের মুসলমানদের উপাসনাগার হিসেবে এই মসজিদই সর্ব বৃহৎ। উক্ত মসজিদের সম্মুখে উত্তর দক্ষিণ হয়ে লম্বালম্বি প্রকাণ্ড প্রাঙ্গণ রয়েছে। টিলার উপর পাথরের গাঁথুনী দিয়ে অতি সুদৃঢ়ভাবে প্রাঙ্গণটি প্রস্তত করা হয়েছে। টিলা হতে নিচে অবতরণের জন্য উক্ত প্রাঙ্গণের পূর্ব ও দক্ষিণ দিকে সিঁড়ি আছে। সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসলে দরগাহ টিলা ঘেঁষে একচালা একটি ঘর পাওয়া যায়। এই ঘর মহিলা দর্শনার্থীদের উপাসনার জন্য নির্মিত। ইহার উত্তরে মুসল্লীদের অজুর জন্য (নতুন ভাবে প্রস্তত) টাব সিস্টেমে পানির ব্যবস্থা রয়েছে। এখান থেকে অল্প পরিসর উত্তরে একটি বড় পুকুরে গজার জাতীয় মাছ সাঁতার কেটে বেড়ায় এবং খাবার দেখিয়ে ডাক দিলে কুলে এসে ভীড় জমায়। দরগাহ পুকুরের গজার মাছ সম্পর্কে প্রচলিত লোককাহিনী অনুসারে, শাহ জালাল এগুলোকে পুষেছিলেন। যে কারণে জিয়ারতকারী সহ সিলেটের আধিবাসীরা আজও প্রথাগতভাবে গজার মাছের প্রতি স্নেহ দেখিয়ে আসছেন। ২০০৩ সালের ডিসেম্বর মাসে অজ্ঞাত লোকেরা বিষ প্রয়োগে পুকুরের প্রায় ৭শ’রও বেশি গজার মাছ হত্যা করে। ফলে পুকুরটি গজার মাছ শুন্য হয়ে পড়ে। পরে হযরত শাহ জালালের এর অপর সফরসঙ্গী মৌলভীবাজারের শাহ মোস্তফার মাজারের পুকুর থেকে ২০০৪ সালের জানুয়ারি মাসে ২৪ টি গজার মাছ এনে পুকুরে ছাড়া হয়। বর্তমানে পুকুরের গজার মাছের সংখ্যা কয়েক শতকে দাঁড়িয়েছে বলে জানা যায়।দরগাহ পুকুরের ঠিক উত্তর পাশে ও দরগাহ টিলার পূর্বে একটি বড় আঙ্গিনা রয়েছে। উক্ত আঙ্গিনার উত্তর-পূর্বে একটি বৃহৎ লঙ্গরখানা ছিল। অনেক কাল পূর্বে ইহা পর্যটক, বিদেশাগত দর্শক ও গরীব দুঃখিদের আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার হতো। যা বর্তমানে পরিবেশজনিত কারণে বন্ধ আছে। লঙ্গরখানার পূর্বদিকে অন্য একটি ঘরে তামার নির্মিত দুটি বড় বড় ডেগচী রয়েছে। যার একেকটিতে সাতটি গরু ও সাত মন চাউল এক সাথে পাক করা যায়। উক্ত ডেগচীর কিনারায় ফার্সী ভাষা লিখিত, জাহাঙ্গীর নগর (ঢাকা পুরানো নাম) নিবাসী ইয়ার মোহাম্মদের পুত্র শায়খ আবু সাঈদ ইহা (ডেগচী) তৈরি করিয়ে মুরাদ বখস কর্তৃক দরগাহে পাঠানো হলো। সন তারিখঃ- রমজান ১১০৬ হিঃ (১৬৯৫ খ্রিঃ)। দরগাহের আঙ্গিনার পূর্ব সীমায় ও ডেগচী ঘরের অল্প পরিসর দহ্মিণে উত্তর দক্ষিণে লম্বালম্বি একটি প্রশস্থ দেওয়াল ইহার মধ্যস্থলে দরগাহের প্রধান প্রবেশ পথ। যা দরগাহ গেইট হিসেবে খ্যাত। দরগাহ গেইটের দক্ষিণ দিকে ছাত্রাবাস সহ হাফিজিয়া মাদ্রাসা রয়েছে ।

অলৌকিক ঝরণা

দরগাহ টিলার পশ্চিমে অল্প দুরে হযরত শাহ জালালের অলৌকিক উৎস বা ঝরণা অবস্থিত। ঝরণাকে কেন্দ্র করে দরবেশের নানা অলৌকিক কীর্তি কিংবদন্তী রুপে এখনও প্রচলিত আছে। সিলেটের লোক বিশ্বাস মতে, ঝরণায় প্রবাহিত পানি জমজমের পানির সদৃশ, রোগীরা এই পানি পান করে আরোগ্য লাভ করে। অনেক কাল পূর্বে দরগাহ টিলায় শাহ জালাল এর বাসস্থান ও উপাসনা গৃহের উত্তর পূর্ব দিকে একটি পুকুর ছিল। সিলেটের সর্বসাধারণ হিন্দু ও মুসলিম সকলেই ইহার জল ব্যবহার করত। শাহ জালাল অজু গোসল সম্পর্কিত পানি ব্যবহারে পবিত্রতা বিষয়ে চিন্তিত হয়ে দরগাহ টিলার পশ্চিমে একটি কুপ খনন আদেশ দেন। কুপ তৈরি হওয়ার পর আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করলেন আল্লাহ যেন এই কুপটিকে জমজমের পানির সাথে সম্পর্ক যুক্ত করেন। এরপর তিনি নিজ হাতের লাটি দিয়ে কুপের মাটিতে ইসলামী বাক্য (বিছমিল্লাহ) পড়ে আঘাত করলে সাথে সাথে কুপের মধ্যে পানি প্রবাহিত হতে লাগলো এবং সোনা ও রুপার রঙ্গের মাছের জন্ম হল। যা আজও এই কুপের মধ্যে দেখতে পাওয়া যায়। এরপর উক্ত কুপের চার পাশে দেওয়াল করে কুপের উত্তর পাশে দুটি পাথর বসিয়ে দেয়ার পর পাথরের মধ্য হতে অনবরত পানি বইতে থাকে। পূর্ব কালে যে পানি লোকে বিশ্বাস ও ভক্তি করে পান করতো। আজকাল ঐ ঝরনার পানি বোতলে করে বিক্রি হয় ।

শাহ জালালের ব্যবহারিক দ্রব্যাদি

শাহ জালালের সমাধিতে সোনার কৈ, মাগুর ইত্যাদি দরগাহের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ছাড়াও শাহ জালালের ব্যবহৃত বিভিন্ন দ্রব্যাদি দর্শনার্থীদের দেখার ব্যবস্থা রয়েছে। যার মধ্যে দরবেশের ব্যবহৃত তলোয়ার, কাঠের তৈরি খড়ম, হরিণের চাম্রা দ্বারা নির্মিত নামাজের মোসল্লা, তামার নির্মিত প্লেট এবং বাটি। উল্লেখ্য যে, তামার নির্মিত বাটি বা পেয়ালায় আরবিতে কিছু কালাম লিখিত আছে। রোগমুক্তির উছিলা হিসেবে ঐ বাটিতে পানি ঢেলে পান করলে আরোগ্য লাভ হয় বলে লোকের বিশ্বাস রয়েছে ।

ভক্তি ও শ্রদ্ধা

কিংবদন্তী মতানুসারে শাহ জালাল মক্কা হতে আসার কালে তদীয় মুরশীদ কর্তৃক দেয়া এক মুঠো মাটি সঙ্গে এনেছিলেন। ঐ মাটির সাথে সিলেটের মাটির স্বাদ, গন্ধ ও বর্ণ যখন মিশে গেল, স্বীয় মুরশীদের আদেশ অনুযায়ী এখানেই তিনি আস্তানা গড়েন এবং ধর্ম প্রচার করেন। সিলেটের মানুষের কাছে তিনি শ্রদ্ধার পাত্র হয়ে আছেন এবং তার পূণ্যময় প্রত্যেক স্মৃতি গুলো আজও অত্র অঞ্চলের মানুষ ভক্তি ও শ্রদ্ধার সাথে মান্য করে। লোক বিশ্বাস আছে; শাহ জালালের কবর জিয়ারতের উছিলায় মনের বাসনা পূর্ণ হয়। তাই প্রতি দিন হাজার হাজার মানুষ তার দরগাহ’তে আসা যাওয়া করে এবং তাকে অসিলা বা উপলক্ষ করে বিভিন্ন উদ্দেশ্য হাসিলে জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা নিবেদন করে। এছাড়া বাংলাদেশের ভেতর ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে থাকা প্রচুর বাংলাদেশী খোদার করুনা হিসেবে মান্য করে। বাংলাদেশ সহ বিদেশেও শাহ জালালের নামে অগণিত প্রতিষ্ঠান স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, মক্তব, মসজিদ, হোস্টেল, শহর, দোকান ও বাজার ইত্যাদির নাম করণ করা হয়েছে। এভাবেই তার ভক্তরা ভক্তি ও শ্রদ্ধা ভরে শাহ জালালের সিলেট আগমনকে উপলক্ষ করে তার স্মৃতিকে যুগের পর যুগ স্মরণে ধারণ করে আসছেন। তার স্মরণে লিখা হয়েছে অগণিত পুথিপুস্তক, গজল, কবিতা ও গান।

সিলেটের বিখ্যাত শাহ পরাণের মাজার

শাহ পরাণের মাজার
শাহ পরাণের মাজার

শাহ পরাণের মাজার সিলেট শহরের একটি পুণ্য তীর্থ বা আধ্যাতিক স্থাপনা। যা হচ্ছে ১৩০৩ খ্রিষ্টাব্দে মধ্যপ্রাচ্য হতে বাংলাদেশে আসা ইসলাম ধর্ম প্রচারক শাহ জালালের অন্যতম সঙ্গী অনুসারী শাহ পরাণের সমাধি। এটি সিলেট শহরের পূর্ব দিকে খাদিম নগর এলাকায় অবস্থিত। শাহ জালালের দরগাহ থেকে প্রায় ৮ কিঃমিঃ দুরত্বে শাহ পরাণের মাজার অবস্থিত। শাহ জালালের দরগাহর মতো এ মাজারেও প্রচুর দর্শনার্থীর আগমন ঘটে। ঐতিহাসিক মুমিনুল হক সহ অনেকেই লিখেছেন; সিলেট বিভাগ ও ভারতের বিভিন্ন এলাকায় শাহ পরাণের দ্বারা মুসলিম ধর্ম বিশ্বাস ও সংস্কৃতির প্রচার ও প্রসার হয়েছে। 

মাজার পরিক্রমা

সিলেট শহরের পূর্ব দিকে খাদিমনগর এলাকায় টিলার উপর একটি প্রকাণ্ড বৃক্ষের নিচে রয়েছে শাহ পরাণের কবর। মাজার টিলায় উঠা নামার জন্য উক্ত মাজার প্রাঙ্গনে উত্তর ও দক্ষিণ হয়ে সিঁড়ি আছে। যা প্রায় ৮ থেকে ১০ ফুট উঁচু দেখায়। এই সিঁড়িটি মোগল আমলে নির্মিত বলে লোক মুখে শোনা যায়। মাজারের পশ্চিম দিকে মোগল বাদশাদের স্থাপত্বকীর্তিতে নির্মিত তিনটি গম্বুজ বিশিষ্ট একটি মসজিদ রয়েছে। এই মসজিদে প্রায় ৫ শত মুসল্লী এক সাথে নামাজ আদায় করে থাকেন। মাজার টিলা থেকে প্রায় ১৫/২০ ফুট দহ্মিণ পশ্চিমে মহিলা পর্যটকদের জন্য এক ছালা বিশিষ্ট দালান ঘর রয়েছে। উক্ত দালানের অল্প পরিসর দহ্মিণ পুর্বে আরেকটি ঘর দেখতে পাওয়া যায়। এ ঘরখানা মুলত বিদেশাগত পর্যটকদের বিশ্রামাগার হিসেবে ব্যবহার হয়। এই ঘরের পাশেই একটি পুকুর রয়েছে, যা অজু গোসলের জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে। 

সংক্ষিত পরিচিতি

শাহ পরাণের পুর্ব পুরুষগণ মুলত বোখারীর শহরের অধিবাসী ছিলেন। তার উধ্বতন ৪র্থ পুরুষ শাহ জামাল উদ্দীন, বোখারী হতে ধর্ম প্রচারে জন্য প্রথমে সমরকন্দ ও পরে তুর্কিস্থানে এসে বসবাস করেন। বংশ সূত্রে শাহ পরাণের পিতা মোহাম্মদও একজন খ্যাতনামা ধার্মিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তার মাতা শাহ জালালে আত্মিয় সম্পর্কে বোন ছিলেন। সে হিসেবে তিনি (শাহ পরাণ) হচ্ছেন শাহ জালালের ভাগ্নে। শাহ পরাণের বয়স যখন ১১ বত্সর তখন তিনি তার পিতাকে হারান। পরবর্তিকালে তার আত্মীয় প্রখ্যাত দরবেশ সৈয়দ আহমদ কবিরের কাছে তিনি ধর্ম শিক্ষায় দীক্ষিত হন। সেখান থেকে তিনি আধ্যাত্মিক দীক্ষা লাভে নেশাপুরের বিখ্যাত দরবেশ পাগলা আমীনের স্মরণাপন্ন হয়ে আধ্যাত্মিক শিক্ষায় দীক্ষিত হন। শাহ জালাল যখন বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে যাত্রার উদ্যোগ নেন। এ সময় তিনি (শাহ পরাণ) খবর পেয়ে মামার সহচার্য লাভের আশায় হিন্দু স্থানে এসে মামার সঙ্গী হন। সিলেট বিজয়ের পর শাহ জালালের আদেশে তিনি ইসলাম প্রচারের কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেন। শাহ পরাণ সিলেটের নবীগঞ্জ, হবীগঞ্জ সহ বিভিন্ন স্থানে ইসলাম প্রচার করেন। পরবর্তিকালে অলৌকিক ঘটনা প্রকাশ হলে শাহ জালালের নির্দেশে তিনি (শাহ পরাণ) সিলেট শহর হতে ছয় মাইল দুরবর্তি দহ্মিণকাছ পরগণাস্থিত খাদেম নগর এলাকায় এসে ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে বসতি স্থাপন করেন এবং এখানেই জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত ইসলাম প্রচার করে বর্তমান মাজার টিলায় চির নিদ্রায় শায়িত হন।

অলৌকিক ঘটনা

শাহ জালাল সিলেট আগমন কালে দিল্লী থেকে আসার সময় নিজামুদ্দিন আউলিয়া প্রদত্ত এক জোড়া কবুতর (সিলেটি উচ্চারণ – কৈতর) সঙ্গে আনেন। কবুতর জোড়া সিলেট নিয়ে আসার পর বংশ বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং শাহ জালালের কবুতর বলে জালালী কৈতর নামে খ্যাত হয়। ধর্মীয় অনূভূতির কারণে এ কবুতর কেহ শিকার করতো না। শাহ পরাণ এ বিষয়টি আমলে না নিয়ে, প্রতি দিন একটি করে কবুতর খেতেন। কবুতরের সংখ্যা কম দেখে শাহ জালাল অনুসন্ধানে মুল ঘটনা জেনে রুষ্ট হন। একথা শাহ পরাণ জানতে পেরে গোপন করে রাখা মৃত কবুতরের পাক হাতে উঠিয়ে বাতাসে উড়িয়ে দিয়ে বললেন; আল্লাহর হুকুমে কবুতর হয়ে শাহ জালালের কাছে পৌছে যাও। সাথে সাথে পাক গুলো এক ঝাক কবুতর হয়ে শাহ জালালের কাছে পৌছে গেল। শাহ জালাল ভাগিনেকে ডেকে বললেন; তোমার অলৌকিক শক্তি দেখে আমি সন্তুষ্ট হয়েছি । কিন্তু এ ভাবে প্রকাশ্যে কেরামত প্রকাশ করা সঠিক নয়। সব মানুষের বুঝ শক্তি এক রকম হয় না। এ ভাবে কেরামত প্রকাশের কারণে মানুষ ভুল ব্যাখ্যায় পতিত হতে পারে। এরপর শাহ পরাণকে খাদিম নগর এলাকায় ইসলাম প্রচারের নির্দেশ দিয়ে সেখানে পাঠিয়ে দেন। শাহ পরাণ খাদিম নগরে ইসলাম প্রচারে তার জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত নিজেকে ব্যস্ত রাখেন এবং এখানেই তিনি চির নিদ্রায় শায়িত হন।

৩০/ শাহী ঈদগাহ সিলেট

শাহী ঈদগাহ সিলেট
 শাহী ঈদগাহ

সিলেট শহরের উত্তর সীমায় শাহী ঈদগাহ বা ঈদগাহ মাঠের অবস্থান। বাংলাদেশের প্রাচীনতম ঐতিহাসিক স্থাপনা সমুহের মধ্যে ১৭০০ সালের প্রথম দিকে নির্মিত সিলেটের শাহী ঈদগাহকে গণ্য করা হয়। 

শাহী ঈদগাহ ইতিহাস

১৭০০ সালে প্রথম দশকে সিলেটের তদানীন্তন ফৌজদার ফরহাদ খাঁ নিজের ব্যক্তিগত উদ্যোগে, তদারকি ও তত্বাবধানে এটি নির্মাণ করেন। প্রতি বছর ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা উপলক্ষে এখানে বিশাল দুটি ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয় এবং প্রায় দেড় থেকে দুই লাখ মুসল্লী এক সাথে এখানে ঈদের নামাজ আদায় করে থাকেন। উলেখ্য যে, সিলেট শহরের এ স্থানটি নানা কারণে মানুষের কাছে আকর্ষণীয় ও স্মরণীয়। ১৭৭২ সালে ইংরেজ বিরোধী ভারত – বাংলা জাতীয়তাবাদীর প্রথম আন্দোলন সৈয়দ হাদী ও মাদী কর্তৃক এই ঈদগাহ মাঠেই শুরু হয়েছিল। অতীতে সিলেটের বড় বড় সমাবেশের স্থান ছিল এটি। এখানে ইংরেজ বিরোধী আন্দোলনের নেতা মহাত্মা গান্ধী, কায়দে আযম, মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ, মাওলানা মোহাম্মদ আলী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী এবং শেরে বাংলা আবুল কাশেম ফজলুল হকের মতো নেতারা এসেছেন এবং ইংরেজ বিরোধী গণ আন্দোলের আহবান জানিয়েছেন। যে কারণে এ স্থানটির ঐতিহাসিক গুরুত্ব অনেক।

পরিক্রমা

একটি উচু টিলার উপর সিলেটের ঐতিহ্যবাহী এই শাহী ঈদগাহ অবস্থিত। মুল ভূ-খণ্ডে কারুকার্যখচিত ২২টি বৃহৎ সিঁড়ি রয়েছে। সিঁড়ি মাড়িয়ে উপরে উঠলে ১৫টি গম্বুজ সজ্জিত ঈদগাহ দেখা যায়। ঈদগাহের প্রাচীর সীমার চার দিক ঘিরে রয়েছে ছোট বড় ১০ টি গেইট। ঈদগাহের সামনে মুসল্লীদের অজুর জন্য রয়েছে বিশাল পুকুর । ঈদগাহের উত্তরে শাহী ঈদগাহ মসজিদ, পাশে সুউচ্চ টিলার ওপর বন কর্মকর্তার বাংলো, দক্ষিণে বাংলাদেশ টেলিভিশনের সিলেট কেন্দ্র, পূর্ব দিকে হযরত শাহজালালের সফরসঙ্গী শাহ মিরারজী (র:) এর মাজারের পাশের টিলার ওপর রয়েছে সিলেট আবহাওয়া অফিস।

যাতায়াত

সিলেট শহরের কেন্দ্রবিন্দু হতে প্রায় দুই কিঃমিঃ দুরত্ব শাহী ঈদগাহ। ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর হতে ৭ কিঃমিঃ এবং সিলেট রেলওয়ে স্টেশন থেকে ৫ কিঃমিঃ দুরত্বে শাহী ঈদগাহ’র অবস্থান।

৩১/ শ্রীপুর, সিলেট

শ্রীপুর, সিলেট
শ্রীপুর

শ্রীপুর বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের একটি পর্যটন কেন্দ্র। এটি সিলেট জেলার জৈন্তাপুর উপজেলার জৈন্তাপুর ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত। এটি শ্রীপুর ঝরনা ও শ্রীপুর চা বাগানের জন্য বিখ্যাত, যা বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত বরাবর অবস্থিত।

ভৌগোলিক অবস্থান

শ্রীপুর পিকনিক স্পট সিলেট-তামাবিল মহাসড়কের পাশে পিয়াইন নদীর তীরে অবস্থিত। জাফলং জিরো পয়েন্ট থেকে শ্রীপুর পিকনিক সেন্টার ৮৫০ মিটার দূরত্বে অবস্থিত।

শ্রীপুর যাতায়াত

সিলেট-তামাবিল মহাসড়কের মাধ্যমে শ্রীপুরে যাতায়াত করা যায়। পর্যটকদের জন্য এখানে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

৩২/ সংগ্রামপুঞ্জি জলপ্রপাত

সংগ্রামপুঞ্জি জলপ্রপাত
সংগ্রামপুঞ্জি জলপ্রপাত

সংগ্রামপুঞ্জি জলপ্রপাত বাংলাদেশের সিলেট বিভাগের সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলার অন্তর্গত একটি জলপ্রপাত। সিলেট শহর থেকে ৬২ কিলোমিটার উত্তর-পূর্ব দিকে, ভারতের মেঘালয় সীমান্ত ঘেঁষে খাসিয়া-জৈন্তা পাহাড়ের পাদদেশে জাফলং জিরো পয়েন্ট থেকে প্রায় ১ কি.মি. পশ্চিমে অবস্থিত সংগ্রামপুঞ্জি জলপ্রপাত। এখানে পাহাড়, জলপ্রপাত এবং নদীর সম্মিলন স্থানটিকে পর্যটকদের নিকট আকর্ষনীয় করে তুলেছে।

বিবরণ

জলপ্রপাতটি বাংলাদেশের সিলেটের সীমান্তবর্তি পর্যটন এলাকা জাফলংয়ে অবস্থিত। এর অপর পাশে ভারতের ডাওকি অঞ্চলের পাহাড়সারি।

জাফলং-এর বল্লা, সংগ্রামপুঞ্জি, নকশিয়াপুঞ্জি, লামাপুঞ্জি ও প্রতাপপুর জুড়ে রয়েছে ৫টি খাসিয়াপুঞ্জী।আদমশুমারী অনুযায়ী জাফলং-এ ১,৯৫৩ জন খাসিয়া উপজাতি বাস করেন। জলপ্রপাতটি সংগ্রামপুঞ্জিতে অবস্থিত বলে এটি সংগ্রামপুঞ্জি জলপ্রপাত নামে সমধিক পরিচিত।

দর্শনীয় বিষয়

ভারত সীমান্ত-অভ্যন্তরে থাকা ডাউকির উঁচু পাহাড়শ্রেণী থেকে নেমে আসা একটি ঝরণা হলো সংগ্রামপুঞ্জি জলপ্রপাতের উৎস। পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ। মৌসুমী বায়ুপ্রবাহের ফলে বর্ষাকালে প্রবল বৃষ্টিপাতে প্রান ফিরে পায় জলপ্রপাতটি, আর হয়ে ওঠে জলে টইটম্বুর। জলপ্রপাতের পানির স্বচ্ছতাও এর আকর্ষণের অন্যতম কারণ। তাছাড়া পাহাড়ের মাথায় মেঘের দৃশ্যও যথেষ্ট মনোরম। বৃষ্টির সময় মেঘ, বৃষ্টি, পাহাড়, নদীর স্বচ্ছধারা এক অপার্থিব মায়াবি সৌন্দর্য্যের অবতারনা করে। তাই অনেকে কাছে এটি মায়াবী ঝর্ণা নামেও পরিচিত।

কয়েক ধাপবিশিষ্ট প্রপাতটির খানিকটা দূর থেকেই এর পাহাড় বেয়ে নেমে আসা পানির গর্জন কানে আসে। সামনে যেতেই চোখে পড়ে গাছ, পাথর আর পানির অপূর্ব মেলবন্ধন। পাহাড়ের গা-বেয়ে বেশ কয়েকটি ধারায় নেমে আসে স্বচ্ছ পানির স্রোত। কখনো সবুজ ঝোপের ভেতর দিয়ে, কখনোবা নগ্ন পাথরের বুক চিরে নেমে আসে এ ধারা। ঝরনার জল এসে জমা হয়ে ছোট্ট পুকুরের মতো সৃষ্টি হয়েছে নিচে, যার তিন দিকেই রয়েছে বড় বড় পাথরের চাই। বর্ষাকালে সৌন্দর্যপ্রেমী সবার সমাগমে মুখরিত হয়ে ওঠে প্রপাতটি। তবে এখনও মাধবকুণ্ড বা বিছনাকান্দির মতো পরিচিতি না পাওয়ায় ভিড় তুলনামূলক কম হয়।

যাতায়াত ব্যবস্থা

১৯৮০’র দশকে সিলেটের সাথে জাফলং-এর ৫৫ কিলোমিটার সড়ক তৈরি হওয়ার মাধ্যমে দেশের অন্যান্য সকল অঞ্চল থেকে এই এলাকার সাথে সড়ক-যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হয়। সড়কপথে সিলেট সদর থেকে জাফলং-এর দূরত্ব ৫৬ কিলোমিটার। জাফলং জিরো পয়েন্টে অবস্থিত পিয়াইন নদী বোটে পাড়ি দিয়ে যেতে হয় সংগ্রামপুঞ্জিতে। বর্ষাকালে জলপ্রপাতের সামনে পর্যন্ত বোট যাতায়াত করলেও শুকনা মৌসুমে বোট থেকে নেমে ১০/১৫ মিনিট হাটলেই পাওয়া যাবে সংগ্রামপুঞ্জি জলপ্রপাত।

সিলেটের বিখ্যাত সাজিদ রাজার বাড়ি

সাজিদ রাজার বাড়ি
সাজিদ রাজার বাড়ি

সাজিদ রাজার বাড়ি সিলেটের একটি ঐতিহাসিক স্থাপনা। ১৮ শতকের প্রথম দিকে জমিদার সাজিদ রাজা কর্তৃক নির্মিত হয় এই বাড়িটি।

অবস্থান

সিলেটের সীমান্ত উপজেলা জকিগঞ্জের কাজলসার ইউনিয়নের সুরমা নদীর তীরবর্তী চারিগ্রামে অবস্থিত সাজিদ রাজার বাড়ি। জকিগঞ্জের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসাবে গণ্য করা হয় আটগ্রাম বাজারের সন্নিকটে সুরমা নদীর তীরে অবস্থিত বিখ্যাত এ জমিদার বাড়িটিকে।

ইতিহাস

১৮ শতকের প্রথম দিকে জমিদার সাজিদ রাজা জকিগঞ্জের উপজেলা ও এর আশপাশ শাসন করতেন। প্রাজাদের দেখভাল করার জন্য কাঠ দ্বারা নির্মিত গাড়ি ও হাতিতে সওয়ার হয়ে পুরো রাজ্য ঘুরে বেড়াতেন। তার দ্বারা নির্মিত বাড়ি, বিচারালয়, মসজিদ ও পুকুর এখনও ইতিহাস ঐতিহ্যের নিদর্শন হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

১৩ চালা টিনের ঘর

প্রায় ১৫ একর জমির উপর এই বাড়িতে রয়েছে ১৩ চালার একটি টিনের ঘর। ব্রিটিশ আমলে জমিদার সাজিদ রাজার বোনের উত্তরাধিকারী তার বাবা মৌলভী দেওয়ান দিগার উদ্দিন আহমদ চৌধুরী ও তার দুই চাচা দেওয়ান আজিজ উদ্দিন আহমদ চৌধুরী, মইন উদ্দিন আহমদ চৌধুরী শখের বশে এ ঘর তৈরি করেন। তৎকালীন ১৩ হাজার টাকা মজুরিতে কলকাতার মিস্ত্রিরা তেরটি চাল তৈরি করেন। টিন এবং কাঠের কারুকার্যমণ্ডিত চালাগুলো। কাঠ-বাঁশের খানার বেড়ার ওপর চুনসুরকির ব্যবহার করা হয়েছে যা কিনা প্রাচীন ঐতিহ্যের নিদর্শন বহন করে। ঘরগুলোর পুরো ছাদ ও খুঁটিগুলো কাঠের তৈরি এবং মেঝে পাকা। এক কক্ষের বিশাল একটি ঘর বৈঠকখানা হিসেবেই ব্যবহার হত যেখানে একসময় হাসন রাজাসহ জমিদারদের আড্ডা বসত।

মসজিদ

ধর্মপ্রাণ সাজিদ রাজা নামাজ পড়ার সুবিধার্তে ১৭৪০ খৃষ্টাব্দে তার বাড়ির সামনে পিলার ও গম্ভুজের তৈরী সুদৃশ্য মসজিদটি নির্মাণ করেন। একটি উঁচু ভিত্তির উপর মসজিদের মূল স্থাপনাটি প্রতিষ্টিত হওয়ায় মুসল্লীদের উঠানামার জন্য তেরী করা হয় সুদৃশ্য ও মজবুত সিঁড়ি।

পুকুর

বরাক নদীর উজান ঢলে ভেসে যাওয়ার জন্য জনগণের মাঝে পানির জন্য হাহাকারের সৃষ্টি হত। পানির হাহাকার দূর করার জন্য বাড়ির আঙ্গিনায় ৮ একর ভূমির উপর খনন করেন রাজা।

৩৪/ সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার

সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার
সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার

সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার হল বাংলাদেশের সিলেট মহানগরীর চৌহাট্টা এলাকায় অবস্থিত সিলেট জেলার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার।

স্থপতি

সিলেটের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের মূল নকশাকার শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগের শিক্ষক শুভজিত চৌধুরী। এছাড়াও কৌশিক সাহা, সিপাউল বর চৌধুরী, ধীমান চন্দ্র বিশ্বাস ও জিষ্ণু কুমার দাস এটি নির্মাণে সহযোগী স্থপতি হিসেবে কাজ করেন।

স্থাপত্য ও তাৎপর্য

সিলেটি ঐতিহ্যকে মিশিয়ে তৈরি করা হয়েছে এই শহীদ মিনার। সিলেটের চা বাগানের ফাঁক দিয়ে নতুন ভোরে নবদিগন্তে যেভাবে রক্তিম সূর্যের দেখা মেলে, সেই রূপ আর আবহমান বাংলার সংগ্রামী চেতনাকে প্রস্ফুটিত করে নির্মাণ করা হয়েছে এটি। সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকার আয়তন ৩৩ শতাংশ। এর মধ্যে ৮ শতাংশ জায়গার উপর স্থাপিত হয়েছে শহীদ মিনারটি। এতে সমতল ভূমি থেকে ১০০ ফুট চওড়া আন্দোলিত ভূমি তৈরি করা হয়েছে। এই আন্দোলিত ভূমিকে শহীদ মিনারের মুখ্য বিষয়বস্তু হিসেবে প্রকাশ করা হয়েছে। উক্ত ভূমি থেকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে তিনটি স্তম্ভ। মাঝের স্তম্ভের উচ্চতা ৪৫ ফুট। আন্দোলিত ভূমির উপর ৪৫ ফুট উচ্চতার স্তম্ভটির মাধ্যমে আন্দোলিত ভূমি থেকে জেগে উঠা বাঙালির আবহমান সংগ্রামী চেতনাকে নির্দেশ করে। স্তম্ভ তিনটির সম্মিলিত প্রস্থ ৩০ ফুট। স্তম্ভগুলো কংক্রিট দিয়ে তৈরি করে এর উপর শ্বেত পাথর বসানো হয়েছে। মাঝের স্তম্ভটিতে বসানো হয়েছে রক্তিম সূর্য। সূর্যোদয়ের মাধ্যমে নতুন দিনের কথা জানাতে সূর্যটি স্তম্ভটিতে স্থাপন করা হয়েছে। স্টিলের তৈরি লাল রঙের এই সূর্যের ব্যাস সাড়ে পাঁচ ফুট। মাঝের স্তম্ভের ডানে-বাঁয়ে যে দুটি স্তম্ভ রয়েছে, সেগুলোতে জানালার মতো চারটি অংশ রয়েছে। এসব জানালায় বাঙালির মুক্ত জীবনকে প্রতীকীভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।

ইতিহাস

১৯৮৮ সালে সিলেট মহানগরীর চৌহাট্টা এলাকায় মুক্তিযোদ্ধা মরহুম ইয়ামিন চৌধুরী বীরবিক্রম, ইফতেখার হোসেন শামীম, ছদরউদ্দিন চৌধুরী ও মোঃ শওকত আলীর উদ্যোগে শহীদ মিনারটি নির্মিত হয়। শুরুতে এটি সাধারণ শহীদ মিনার হিসেবে ব্যবহৃত হলেও পরবর্তীকালে এটি সিলেটের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের মর্যাদা লাভ করে। ২০১৩ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ভাংচুর চালায় একদল বিক্ষোভকারী। এতে শহীদ মিনারটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরপর তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের উদ্যোগে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনায় তিন কোটি টাকা ব্যয়ে শহীদ মিনারটি পুনর্নির্মিত হয়। ২০১৪ সালের ১০ ডিসেম্বর, বুধবার সন্ধ্যা সোয়া ৬টায় পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এর উদ্বোধন করেন।

৩৫/ হারং হুরং

হারং হুরং
হারং-হুরং

হারং-হুরং  বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলের একটি প্রাচীন সুড়ঙ্গের নাম। হারং-হুরং শব্দ দুটি সিলেটি প্রাচীন আঞ্চলিক ভাষার শব্দ। সিলেটি ভাষায় ‘হারং’ শব্দের অর্থ হচ্ছে সাঁকো বা বিকল্প পথ আর ‘হুরং’ মানে ‘সুড়ঙ্গ’। অর্থাৎ ‘হারং হুরং’ শব্দ দ্বারা বিকল্প সুড়ঙ্গ পথ বোঝায়। কথিত আছে যে, ১৩০৩ সালে রাজা গৌড় গৌবিন্দ যখন হজরত শাহজালাল (র.)-এর সিলেট আগমনের খবর পান, তখন তার সৈন্যবাহিনীসহ পেঁচাগড় গিরিদুর্গের এই সুড়ঙ্গপথ দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার পর নিরুদ্দেশ হয়ে যান।

ব্যুৎপত্তি

হুরং হলো সুড়ঙ্গ শব্দের সিলেটি অপভ্রংশ এবং সিলেট ও সুনামগঞ্জের অনেক এলাকায় সাঁকো অর্থেই হারং শব্দটি ব্যবহার হয়ে থাকে। সুতরাং সাঁকো বলতে যদি প্রতিবন্ধকতা ডিঙিয়ে কোন আড়াআড়ি বা বিকল্প পথ বোঝানো হয়, তাহলে হারং-হুরং অর্থ হবে কোথাও যাবার বিকল্প সুড়ঙ্গ পথ। এই সুড়ঙ্গটিকে বাগানের লোকেরা গৌর গবিন্দ রাধা গুহা নামে চিনে; যেখানে প্রতি শনি এবং মঙ্গলবার পূজা দেয়া হয়।

অবস্থান

উপমহাদেশের প্রথম বাণিজ্যিক চা বাগান মালনীছড়ার গহীনে ‘হারং হুরং’ সুড়ঙ্গ অবস্থিত। হারং হুরং সুড়ঙ্গটি তেলাহাটির দক্ষিণে হিলুয়াছড়া চা বাগানের ১৪নং সেকশনের পাশে অবস্থিত।

লোক কাহিনী

সুড়ঙ্গটি প্রায় সাতশত বছর বা তারও বেশি আগেকার সময়ের। ফলে এটাকে কেন্দ্র করে স্থানীয়দের মাঝে নানা লোককাহিনী প্রচলিত রয়েছে। অনেকের ধারণা এ সুড়ঙ্গটি জৈন্তা পর্যন্ত বিস্তৃত। যেসব ব্যক্তি গুহাটিতে প্রবেশ করেছেন, তাদের কেউই জীবিত বের হয়ে আসেনি বলে জনশ্রুতি আছে। আর যদিও বা কেউ বের হয়েছে তবে কিছুদিনের মধ্যে অপ্রকৃতস্থ হয়ে সে মারা গিয়েছে। ভারতের তিনজন তান্ত্রিক এখানে প্রবেশ করেছিলেন। তাদের মধ্যে মাত্র একজন ফিরে এসেছেন আর খুব অল্পদিন বেঁচে ছিলেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনিও স্বাভাবিক ছিলেন না। সিলেটের একজন ধনাঢ্য ব্যবসায়ী খননের উদ্যোগ নেন, কিন্তু তিনি অস্বাভাবিক স্বপ্ন দেখে সংস্কারকাজ মাঝপথে বন্ধ করে দেন। এই গ্রামের এক বৃদ্ধ যৌবনকালে ঢুকেছিল। ভিতরে কিছু একটা দেখে সে ভয়ে বেড়িয়ে আসে। এরপর থেকে লোকটি পাগল, তেলিহাটির বিখ্যাত কবিরাজও তার চিকিৎসা করতে পারেনি।

আরও পড়ুনঃ

সরকারের আদেশ, গেজেট, বিজ্ঞপ্তি, পরিপত্র, চাকরির খবর ও শিক্ষা সংক্রান্ত তথ্য সবার আগে জানতে প্রজ্ঞাপন এর ফেইসবুক পেইজটি লাইক দিয়ে সাথে থাকবেন।

The post সিলেটের বিখ্যাত ৩৫টি দর্শনীয় স্থান, অবস্থান এবং বিবরণ appeared first on Proggapan.

]]>
https://proggapan.com/%e0%a6%b8%e0%a6%bf%e0%a6%b2%e0%a7%87%e0%a6%9f%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%96%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%a4-%e0%a7%a9%e0%a7%ab%e0%a6%9f%e0%a6%bf-%e0%a6%a6%e0%a6%b0%e0%a7%8d/feed/ 0