ব্যাংকে চাকরির যোগ্যতা নিয়োগ প্রক্রিয়া ও সুযোগ সুবিধা। ব্যাংক কি? (প্রচলিত অপর বানান: ব্যাঙ্ক) হলো এক ধরনের আর্থিক প্রতিষ্ঠান যা সাধারণ মানুষের সঞ্চয় এবং প্রতিষ্ঠানের উদ্বৃত্ত অর্থ আমানত হিসেবে সংগ্রহ করে পুঁজি গড়ে তোলে এবং সেই পুঁজি ব্যবসায়ীদের ঋণ হিসেবে প্রদান করে। এই কর্মপ্রক্রিয়ায় ব্যাংক আমানত সরবরাহকারীকে সুদ প্রদান করে এবং ঋণ গ্রহণকারীর নিকট থেকে সুদ আদায় করে। কোন কোন ক্ষেত্রে ব্যাংক নিজেই ব্যাবসায়ে বিনিয়োগ করে মুনাফা অর্জন করে।
এই পোস্টের বিষয়বস্তুসমূহ:
ব্যাংকে চাকরির যোগ্যতা নিয়োগ প্রক্রিয়া ও সুযোগ সুবিধা
ব্যাংক আমানত গ্রহণ ও ঋণ সেবার বাইরেও বিভিন্ন আর্থিক পরিষেবা প্রদান করে যার মধ্যে প্রধান হলো দুই পক্ষের মধ্যে লেন-দেন সম্পন্ন করা। যেমন আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ব্যাংক ক্রেতা কর্তৃক বিক্রেতাকে পণ্যের মূল্য পরিশোধ নিশ্চিত করে। এছাড়া ব্যাংক রাষ্টীয় সঞ্চয়েরও হেফাযতকারীর ভূমিকা পালন করে থাকে।
আধুনিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় ব্যাংক একটি দেশের প্রধান অর্থনৈতিক চালিকা শক্তি কেননা অর্থনীতির বিকশের জন্য প্রয়োজন উৎপাদনখাতে বিনিয়োগ আর ব্যাংকের কাজ হলো উক্তরূপ বিনিয়োগের জন্য পুঁজি সংগ্রহ ও সরবরাহ করা। তাই দেশের আর্থিক ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণের স্বার্থে রাষ্ট্র কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্থাপন করে যেমন বাংলাদেশের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নাম বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দায়িত্ব হলো বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর সুষ্ঠু পরিচালনা নিশ্চিত করা।
ব্যাংকে চাকরির যোগ্যতা নিয়োগ প্রক্রিয়া ও সুযোগ সুবিধা
ব্যাংকে চাকরির যোগ্যতাঃ
যে কোন বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রীধারীরা এ পদে আবেদন করতে পারে। তবে কিছু ব্যাংক নির্দিষ্ট বিষয়ে ডিগ্রিধারীদের প্রাধান্য দিয়ে থাকে (যেমন-এম বি এম ডিগ্রি)। প্রত্যেক পরীক্ষায় কমপক্ষে ২য় শ্রেণী প্রাপ্ত হতে হবে। Management Trainee Officer (M.T.O) or Probationary Officer (P.O) Recruitment প্রত্যেকটি ব্যাংকের M.T.O বা P.O পদের জন্য বিশেষভাবে অত্যন্ত যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে কর্মী নিয়োগ করা হয়ে থাকে। আকর্ষণীয় বেতনের পাশাপাশি এই পদধারী ব্যক্তিদের পদোন্নতিও হয় খুব তাড়াতাড়ি। M.T.O বা P.O দের জন্য প্রাথমিক অবস্থায় কোনো পদ থাকে না। উপযুক্ত প্রশিক্ষণ এবং প্রবেশনারী পিরিয়ড শেষ হওয়ার পর তাদেরকে সিনিয়র অফিসার অথবা প্রিন্সিপাল অফিসার পদে নিয়োগ দেওয়া হয়ে থাকে। বর্তমানে যারা ম্যানেজিং ডিরেক্টর পদে বিভিন্ন ব্যাংকে রয়েছেন, তাদের অনেকেই চাকরি জীবনের শুরুতে M.T.O বা Probationary Officer হিসাবে শুরু করেছিলেন। তবে এই দুটি পদের মধ্যে বেশ কিছু সামঞ্জস্য থাকলেও সামান্য কিছু পার্থক্যও রয়েছে। কোন কোন ব্যাংকে সদ্য স্নাতকদের M.T.O হিসেবে বা P.O পদে নিয়োগ করা হয়ে থাকে। M.T.O ও Probationary Officer পদে নিয়োগ প্রাপ্তদের প্রাথমিক বেতন ২৫ থেকে ৩৫ হাজার টাকা হয়ে থাকে। অভিজ্ঞতার সাথে সাথে বেতনের পরিমাণ বাড়ে।
M.T.O দের বলা হয়ে থাকে ‘They are the future leaders of the bank’। অর্থাৎ তারাই হচ্ছেন একটি ব্যাংকের ভবিষ্যতের কাণ্ডারি। প্রবেশনারি পিরিয়ড শেষে একজন MTO-কে কি পদে অধিষ্ঠিত করা হবে তা নির্ভর করে উক্ত ব্যাংকের নীতিমালা, MTO-এর প্রবেশনারি পিরিয়ডের কর্মদক্ষতা এবং প্রশিক্ষণের এর উপর।
সাধারণত সব বিভাগের ডিগ্রিধারী ছাত্র-ছাত্রীরা M.T.O বা P.O পদে আবেদন করতে পারেন। তবে কিছু কিছু বেসরকারি ব্যাংকে নির্বাচিত কিছু বিষয়ে ডিগ্রিধারীদের প্রাধান্য দিয়ে থাকে।
- যেমন- ব্যবসায় প্রসাশন,
- ইংরেজি,
- পরিসংখ্যান,
- অর্থনীতি,
- গণিত ইত্যাদি।
- সাধারণত চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা সর্বোচ্চ ৩০ বছর নির্ধারণ করা হয়।
ব্যাংকে চাকরির যোগ্যতা নিয়োগ প্রক্রিয়া ও সুযোগ সুবিধা
নিয়োগ প্রক্রিয়া
সরকারি ব্যাংক এবং বেসরকারি ব্যাংকের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সাধারণত কিছু পার্থক্য রয়েছে। সরকারি ব্যাংকগুলোর নিয়োগ প্রক্রিয়ায় যখন সকল অনুষদের শিক্ষার্থীরা আবেদন করতে পারে, তখন বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে ব্যবসায় শিক্ষার ছাত্র ছাত্রীদেরকে বেশী প্রাধান্য দেওয়া হয়।
সরকারী যে কোন ব্যাংকের চাকুরির বিজ্ঞাপন এর জন্য প্রধানত বিভিন্ন গণমাধ্যম ব্যবহার করা হয়। অর্থাৎ, জাতীয় পত্রিকা থেকে শুরু করে চাকরির ওয়েবসাইট এবং ব্যাংকগুলোর নিজস্ব ওয়েবসাইটে কর্মী নিয়োগের বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়ে থাকে।
সরকারি ব্যাংকে নিয়োগ প্রক্রিয়া
- সরকারী ব্যাংকগুলোতে মূলত তিনটি পদের জন্য সদ্য স্নাতকদের নিয়োগ করা হয়-
- ১। সুপারভাইজার
- ২। অফিসার
- ৩। সিনিয়র অফিসার
- এছাড়াও কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিশেষ কিছু লোক নিয়োগ দেওয়া হয়ে থাকে। যেমন- IT (Information Technology), Accounting ইত্যাদি শাখায় নিয়োগ। একে ব্যাংকিং এর ভাষায় বলা হয়ে থাকে ‘Special Recruitment’। কিন্তু এ ধরনের নিয়োগ সচরাচর দেয়া হয়না। সাধারণত কোনো একটি বিষয়ে পারদর্শী এবং অভিজ্ঞতা সম্পন্ন লোকদেরকে এক্ষেত্রে নিয়োগ করা হয়ে থাকে।
বেসরকারি ব্যাংকের নিয়োগ প্রক্রিয়া
সাধারণত বেসরকারি ব্যাংকের নিয়োগ প্রক্রিয়া নির্ভর করে ব্যাংকগুলোর নিজস্ব (নীতিমালার) উপর। কিছু ব্যাংক আছে যাদের নিয়োগের প্রক্রিয়া অনেকটা একইরকম হয়ে থাকে, আবার কিছু কিছু ব্যাংক আছে, যারা নিজেদের মতো করে নিয়োগ প্রক্রিয়াটি সাজিয়ে নেয়।
- মূলত চারটি এন্ট্রি পয়েন্ট থেকে বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে কর্মী নিয়োগ করা হয়ে থাকে। এই এন্ট্রি পয়েন্ট গুলো হচ্ছে:
- Tailored Recruitment,
- General Banking Recruitment,
- Management Trainee Officer (M.T.O) or Probationary Officer (P.O) Recruitment, Lateral Recruitment।
Tailored Recruitment
বেসরকারী ব্যাংকের Tailored Recruitment এ সাধারনত নতুন চাকরিপ্রার্থীদের কোনো একটি নির্দিষ্ট পদের জন্য নিয়োগ করা হয়ে থাকে।
যেমন-কোনো একটি ব্যাংকে ক্যাশিয়ার পদ খালি থাকলে ব্যাংক তাদের চাকরির বিজ্ঞাপনে সেই কথাটি উল্লেখ করে দিবে। এই পদ্ধতিতে নিয়োগ প্রাপ্তদের পুরো ব্যাংক ক্যারিয়ারটিই সাধারণত ক্যাশ শাখায় কেন্দ্রীভূত হয়ে থাকবে। ব্যাংকিং এর ভাষায় একে ‘Tailored Recrutiment’ বলা হয়ে থাকে।
ব্যাংকে চাকরির যোগ্যতা নিয়োগ প্রক্রিয়া ও সুযোগ সুবিধা
সুযোগ-সুবিধা
ব্যাংকে চাকরির ক্ষেত্রে মূল বেতনের পাশাপাশি আরও কিছু সুযোগ সুবিধা রয়েছে। সেগুলো হলো-
– বছরে দু’টি আনুষ্ঠানিক ভাতা।
– লভ্যাংশে বোনাস বছরে প্রায় দুই-তিনটি।
– চাকরিজীবী ঋণ, কম্পিউটার ঋণ, গৃহ ঋণ ইত্যাদি।
আবার একটি ব্যাংকে চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর বিভিন্ন প্রকল্প, বেসরকারি কোম্পানি, এবং অন্যান্য ব্যাংকেও চাকরির সুযোগ রয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত এবং বৈদেশিক ব্যাংকগুলোর অন্যান্য দেশেও শাখা আছে। ভালো কর্মদক্ষতার উপর নির্ভর করে এসব বৈদেশিক শাখাতেও আপনি চাকরির সুযোগ পেতে পারেন। ব্যাংকে চাকরির ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা ও কর্মদক্ষতার উপর ভিত্তি করে বেতন বাড়তে থাকে।
আরও পড়ুনঃ
- বাংলাদেশ আনসারের কাজ বেতন ও পদবিন্যাস
- চাকরির দরখাস্ত বা আবেদন প্রত্র
- এস আই লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি প্রশ্ন ও সমাধান
- বাংলাদেশ বিমান বাহিনী পদপদবী বেতন ভাতা ও শ্রেণীবিন্যাস।
- বাংলাদেশ নৌবাহিনী ,পদবিন্যাস ,বেতন ও ভাতা
- ২০২২ সালের বাংলা ক্যালেন্ডার । Bangla calendar 2022
সরকারের আদেশ, গেজেট, বিজ্ঞপ্তি, পরিপত্র, চাকরির খবর ও শিক্ষা সংক্রান্ত তথ্য সবার আগে জানতে প্রজ্ঞাপন এর ফেইসবুক পেইজটি লাইক দিয়ে সাথে থাকবেন।