আফ্রিকান টিকওক গাছ, লাউয়াছড়া- কমলগঞ্জ তথ্য ও বিবরণ | African Teak Oak Tree Lawachara kamalgonj . বাংলাদেশের একমাত্র বিরল উদ্ভিদ আফ্রিকান টিকটক গাছটির লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে অবস্থান। উদ্ভিদটির বৈজ্ঞানিক নাম ক্লোরোফরা chlorophora spp এবং বাংলা নাম আফ্রিকান টিকওক গাছ।
আফ্রিকান টিকওক গাছ, লাউয়াছড়া- কমলগঞ্জ

আফ্রিকান টিকওক গাছ, লাউয়াছড়ায়। মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে ১৬৭ প্রজাতির উদ্ভিদ এর মধ্যে দুটি বিরল প্রজাতির আফ্রিকান টিকওক গাছের সন্ধান মিললো। এর মধ্যে প্রায় ১৫ বছর পৃর্বে বড় আকৃতির আফ্রিকান টিকওক গাছটি ঝড়ে পরে যায়। বর্তমানে লাউয়াছড়া উদ্যানের প্রধান প্রবেশ পথে জীবিত আছে একটি আফ্রিকান টিকওক গাছ। , যা বাংলাদেশের একমাত্র বিরল উদ্ভিদ।
আফ্রিকান টিকওক গাছগুলো কত বছরের পুরোনো?
আফ্রিকান টিকওক গাছটি জানা যায় প্রায় শত বছরের পুরনো। কয়েকশত ফুট উপরে ডালপালা মেলে দাড়িয়ে আছে কালের সাক্ষী হয়ে আফ্রিকান টিকওক গাছটি। বিরল উদ্ভিদ আফ্রিকান টিকওক গাছটি সম্পর্কে সঠিক তথ্য পাওয়া না গেলেও ধারনা করা হচ্ছে- কোন ব্রিটিশ নাগরিক উদ্ভিদটিকে লাউয়াছড়া বনে রোপণ করেছিলেন।
লাউয়াছড়া উদ্যানটির উৎপত্তি কবে হয়?
লাউয়াছড়া উদ্যানটি মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম ভানুগাছ রির্জাব ফরেষ্টের ২৭৪০ হেক্টর সংরক্ষিত বনের ১২৫০ হেক্টরকে বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ সংশোধন আইন ১৯৭৪ অনুযায়ী ১৯৯৬ সালে লাউয়াছড়া বনটিকে জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ব্রিটিশ সময়ে লাউয়াছড়া প্রাকৃতিক বনের অধিকাংশ গাছ কেটে কৃত্রিম ভাবে চাপালিশ, সেগুন, গর্জন, লোহাকাট, রক্তন সহ বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদ রোপন করা হয়। ধারনা করা হচ্ছে তখনকার সময়েই এই আফ্রিকান টিকওক উদ্ভিদটি রোপণ করা হয়েছে। উদ্যানের ইকো ট্যুরিষ্ট গাইড মোঃ ইউসুফ মিয়া জানান লাউয়াছড়া ভ্রমণে আসা আগত দর্শনার্থীরা বিরল প্রজাতির উদ্ভিদ আফ্রিকান টিকওক গাছটি সম্পর্কে পরিচয় করিয়ে দেয়। আমরা ইকো ট্যুরিষ্ট গাইডরা গাছটি সম্পর্কে কোন বিশেষ প্রশিক্ষণ পাইনি। বন বিভাগের কাছ থেকে যা শিখেছি তাই পর্যটকদের বলি। বিরল উদ্ভিদ আফ্রিকান টিকওক গাছটি সম্পর্কে বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক শ্যামল কান্তি মিত্র বলেন, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে আফ্রিকান টিকওক প্রজাতির ২ টি গাছ ছিলো। একটি মারা গেছে। বর্তমানে একটি জীবিত রয়েছে। যা দেশের একমাত্র বিরল উদ্ভিদ। বন বিভাগের সিলভিকালচার টিচার্স বিভাগ সূত্রে জানা যায় গাছটি থেকে কোন বংশবিস্তার হচ্ছে না। কারন এই গাছের কোন বিচি নেই। ফুল ধরে আবার ঝড়ে পরে যায়। তবে কয়েক বছর পৃর্বে গাছ থেকে কাটিং সংগ্রহ করা হয়েছে।
কলাম ও তথ্য সংগ্রাহকঃ আহাদ মিয়া সাংবাদিক ও পরিবেশ কর্মী ।
African Teak Oak Tree Lawachara kamalgonj
আফ্রিকান টিকওক গাছগুলো দেখতে লাউয়াছড়া কিভাবে যাবেনঃ গাছগুলো দেখতে ঢাকা থেকে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে যেতে ট্রেন হচ্ছে সবচেয়ে ভাল মাধ্যম। ঢাকা থেকে ট্রেনে করে শ্রীমঙ্গল যেতে কমলাপুর কিংবা বিমান বন্দর রেলওয়ে স্টেশান হতে উপবন, জয়ন্তিকা, পারাবত অথবা কালনী এক্সপ্রেস ট্রেনকে বেছে নিতে পারেন আপনার ভ্রমণ সঙ্গী হিসাবে। শ্রেণী ভেদে জনপ্রতি ট্রেনে যেতে ভাড়া ২৪০ থেকে ৫৫২ টাকা। ট্রেনে যেতে সময় লাগে পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা।
বাসে করে ঢাকা থেকে শ্রীমঙ্গল যেতে ফকিরাপুল অথবা সায়দাবাদ থেকে ৪৭০ থেকে ৬০০ টাকা ভাড়ায় হানিফ এন্টারপ্রাইজ, শ্যামলী পরিবহন, সিলেট এক্সপ্রেস, এনা ইত্যাদি এসি/নন এসি বাস পাওয়া যায়। বাসে যেতে সময় লাগে ৪ ঘন্টার মত।
চট্টগ্রাম থেকে বাসে বা ট্রেনে শ্রীমঙ্গল যেতে পারবেন। চট্টগ্রাম থেকে ট্রেনে শ্রীমঙ্গল যেতে, পাহাড়িকা এবং উদয়ন এক্সপ্রেস নামের দুটি ট্রেন সপ্তাহে ৬ দিন চলাচল করে। ট্রেন ভাড়া ক্লাস অনুযায়ী ৩০০ থেকে ৬৮৫ টাকা।
শ্রীমঙ্গল পৌঁছে সেখান থেকে আপনার চাহিদা অনুযায়ী কোন গাড়ি নিয়ে যেতে পারবেন লাউয়াছড়া উদ্যানে। ইজিবাইক/সিএনজি/জীপ/মাইক্রোবাস যে কোন কিছুতেই যাওয়া যায়। যাওয়া আসা ও সেখানে ঘুরে বেড়ানোর সময়সহ রিজার্ভ নিলে সিএনজি ৪০০-৫০০ টাকা নিবে।
লাউয়াছড়ায় প্রবেশে টিকেট মূল্য কত?
আফ্রিকান টিকওক গাছটি দেখতে হলেঃ লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে ছাত্র ও অপ্রাপ্ত বয়স্কদের জন্যে প্রবেশ মূল্য ২০ টাকা (জনপ্রতি), প্রাপ্ত বয়স্ক পর্যটক (দেশী) এর প্রবেশ মূল্য ৫০ টাকা। আর বিদেশী পর্যটকদের ক্ষেত্রে প্রবেশ মূল্য ৫০০ টাকা। গাড়ি, জীপ ও মাইক্রোবাস পার্কিং এর জন্য আপনাকে গুনতে হবে ২৫ টাকা। যদি গাইড নিতে চান তবে এখানে তিন ক্যাটাগরির গাইড পাওয়া যায় যাদের ২০০ থেকে ৬০০ টাকা মধ্যে সাথে নিতে পারবেন।
লাউয়াছড়ায় এক দিনের ভ্রমণ পরিকল্পনা
আফ্রিকান টিকওক গাছটি দেখার জন্যঃ লাউয়াছড়া ঘুরে দেখার জন্যে হয়ত ২-৪ ঘন্টা সময়ই যথেষ্ট মনে হতে পারে। বাকি সময় চাইলে ঘুরে দেখতে পারবেন শ্রীমঙ্গল এর আশেপাশের অন্যান্য দর্শনীয় স্থান। তারমধ্যে মাধবপুর লেক, বাংলাদেশ চা গবেষনা ইনস্টিটিউট, সীতেশ বাবুর চিড়িয়াখানা, নীলকন্ঠ চা কেবিন, বাইক্কাবিল ও সুন্দর সুন্দর চা বাগানগুলো। আপনার সময় এবং আগ্রহ অনুযায়ী সাজিয়ে নিতে পারেন পরিকল্পনা। এক দিনে ঘুরে দেখার জন্যে আপনি একটি সিএনজি রিজার্ভ করে নিতে পারেন। চা বাগানের ভিতর সুন্দর করে সাজানো মাধবপুর লেক দেখার জন্যে সকাল বা বিকেলের সময়টাই ভালো। সকালে ভোরে চলে যান মাধবপুর লেক, সেখান ঘন্টাখানেক সময় ঘুরে দেখার পর দপুরের আগেই চলে আসেন লাউয়্যাছড়া উদ্যানে। আপনার পছন্দমত ট্রেইলে ঘুরে ফিরে যেতে পারেন শ্রীমঙ্গল শহরে। দুপুরের খাওয়া দাওয়া পর্ব শেষ করে বিকেলে চলে যান বাংলাদেশ চা গবেষনা ইনস্টিটিউটে, বিকেল ৫টার আগেই বের হয়ে পড়ুন সেখান থেকে, তারপর চলে যান বিখ্যাত সাত রঙের চায়ের দোকান নীলকন্ঠ চা কেবিনে। সন্ধ্যায় চা খেয়ে আবার চলে আসুন শ্রীমঙ্গলে। সারাদিনের জন্যে সিএনজি রিজার্ভ নিবে ১২০০-১৫০০ টাকা। তবে ঠিক করার আগে অবশ্যই কোথায় যাবেন, কতক্ষণ থাকবেন, কি দেখবেন এইসব ভালো করে আলাপ করে নিন।
লাউয়াছড়ায় খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা কিভাবে করবেন
আফ্রিকান টিকওক গাছটি দেখার পর খাওয়াদাওয়ার জন্যঃ লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে ভিতরে কিংবা আশে পাশে খাবারের তেমন কোন ব্যবস্থা নেই তাই প্রয়োজনে নিজ দায়িত্বে কিছু হালকা খাবার সাথে নিতে পারেন। এছাড়া শ্রীমঙ্গল ফিরে খেতে হবে। নানা ধরণের রেস্তোরা আছে। আছে সবার প্রিয় পানশী রেস্টুরেন্ট। ভর্তা ভাজিসহ নানা পদের খাবার খেতে পারবেন ১০০-৫০০ টাকায়।
লাউয়াছড়ায় কোথায় থাকবেন
আফ্রিকান টিকওক গাছটি দেখার পরঃ শ্রীমঙ্গলে থাকার জন্যে রয়েছে বেশ কিছু সুন্দর মনোরম রিসোর্ট। আছে চা বাগান ঘেঁষা অনেক কটেজ ও সরকারি বেসরকারি গেস্ট হাউজ। শ্রীমঙ্গল শহরেও রয়েছে বিভিন্ন মানের হোটেল। আপনার চাহিদা মত যে কোন জায়গায় থাকতে পারবেন। লাউয়াছড়ার খুব কাছে গ্রান্ড সুলতান গলফ রিসোর্ট নামে পাঁচ তারকা মানের রিসোর্ট রয়েছে। চা বাগান ঘেঁষা ও সুন্দর পরিবেশের রিসোর্ট গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য –
টি রিসোর্ট ও মিউজিয়াম : বাংলাদেশ টি বোর্ডের অধীনে এই রিসোর্ট শ্রীমঙ্গল – ভানুগাছা রোডের পাশে অবস্থিত, বাংলো ধরণের প্রতিটি কটেজে ৪-৮ জন থাকা যাবে। প্রতি রাতের ভাড়া ৫,০০০ – ৮,০০০ টাকা। যোগাযোগঃ 01749-014306 , ওয়েবসাইট।
নভেম ইকো রিসোর্ট : অবস্থানঃ বিশামনি, রাধানগর, শ্রীমঙ্গল। আধুনিক সুযোগ সুবিধা তো দৃষ্টিনন্দন নানা কটেজ রয়েছে। মাটির ঘর, কাঠের ঘর, ফ্যামিলি ভিলা, তাবুতে থাকার ব্যবস্থা আছে। প্রতিরাত ২-৮ জন থাকার জন্যে মান অনুযায়ী ভাড়া ৮,০০০ – ১৭৫০০ টাকা। যোগাযোগঃ 01709 882000, ওয়েবসাইট।
নিসর্গ ইকো কটেজ : এই কটেজ শ্রীমঙ্গল – ভানুগাছা রোডের পাশে অবস্থিত, গ্রামীন আবহে তৈরি কটেজ গুলোতে ৩-৫ জন থাকার ব্যবস্থা সহ ভাড়া প্রতি রাত ২০০০-৩৫০০ টাকা। যোগাযোগঃ 01766-557780, ওয়েবসাইট।
নিসর্গ লিচিবাড়ি কটেজ : এই কটেজ শ্রীমঙ্গল – ভানুগাছা রোডের পাশে অবস্থিত, গ্রামীন আবহে তৈরি কটেজ গুলোতে ৩-৮ জন থাকার ব্যবস্থা সহ ভাড়া প্রতি রাত ২০০০-৪৫০০ টাকা। যোগাযোগঃ 01766-557780, ওয়েবসাইট।
লেমন গার্ডেন রিসোর্ট : লাউয়াছড়া উদ্যানের পাশেই এই রিসোর্টে ইকোনমি, ডিলাক্স, লাক্সারি, সুইট মানের রুম ভাড়া ৩,০০০ – ৮,০০০ টাকা। যোগাযোগঃ 01763555000, ওয়েবসাইট।
শান্তি বাড়ি রিসোর্ট : শ্রীমঙ্গল – ভানুগাছা রোড ধরে লাউয়াছড়ার আগে একটু ভিতরের দিকের এই রিসোর্টে আছে নানা ধরণের কটেজ। এই নাম্বারে যোগাযোগ করে বিস্তারিত জেনে নিন 01716189288, ওয়েবসাইট।
সিজন ও উপলক্ষ্য অনুযায়ী উপরোক্ত রিসোর্ট ও কটেজ গুলোর ভাড়া পরিবর্তন হতে পারে। বিভিন্ন সময় অনেক রকম ডিসকাউন্ট থাকে। কোথায় থাকবেন ঠিক করার আগে তাদের সাথে কথা বলে নিবেন, প্রয়োজনে ভাড়ার ক্ষেত্রে একটু দরদাম করে নিবেন। এছাড়া আরও কম খরচে শ্রীমঙ্গল থাকতে চাইলে শহরে নানা মানের হোটেল আছে, একটু খুঁজে দেখলেই পেয়ে যাবেন আপনার মন মত হোটেল।
লাউয়াছড়ায় উদ্যানে ভ্রমণের সময় যেসব বিষয় মনে রাখবেন
- বনের যেখানে সেখানে ময়লা ফেলবেন না এতে বনের জীব বৈচিত্রের উপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে পারে।
- খুব বেশি হৈ চৈ করবেন না এতে বন্য প্রানীদের স্বাভাবিক চলাফেরা ব্যহত হয়।
- শীতকাল ছাড়া অন্য সময়ে ভ্রমণের ক্ষেত্রে জোঁক ও সাপের থেকে সতর্ক থাকুন।
- অপরিচিত কারো সাথে একা একা বনের গভীরে যাবেন না এতে আপনি ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারেন।
- রেললাইন ধরে হাটার সময় ট্রেনের ব্যাপারে সতর্ক থাকুন।
- কম খরচে ভ্রমণ করতে চাইলে রিজার্ভ গাড়ি না করে শ্রীমঙ্গল-ভানুগাছ রোডের লোকাল সিএনজি অথবা বাস দিয়ে যাতায়াত করতে পারেন।
এছাড়াও আপনারা আমাদের সাইটে জানতে পারবেন নিত্য নতুন নিয়োগ, সরকারি চাকরি, বেসরকারি চাকরি, বিজ্ঞপ্তি, শিক্ষা নিউজ, তথ্য, আইন , দর্শনীয় স্থান ইত্যাদি । সবার আগে এসব সম্পর্কে জানতে আমাদের ফেসবুক পেইজটি লাইক দিয়ে আমাদের সাথে থাকুন।